আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ : ১৫ জুলাই ২০২৫ ০৫:৪৯ এএম
ইউক্রেনকে আরও অস্ত্র দেবে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়ার ওপর শুল্ক আরোপের হুমকি ট্রাম্পের
ইউক্রেনকে আরও সামরিক সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। একইসঙ্গে যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়া আলোচনায় না এলে কঠোর শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন তিনি। ট্রাম্পের এই অবস্থান রাশিয়ার প্রতি মার্কিন নীতির কড়া অবস্থানকেই নির্দেশ করছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
সোমবার (১৪ জুলাই) হোয়াইট হাউসে ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটের সঙ্গে বৈঠকে ট্রাম্প জানান, ইউক্রেনকে প্যাট্রিয়ট এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমসহ কোটি কোটি ডলারের অস্ত্র পাঠানো হবে, যার খরচ বহন করবে ন্যাটোর সদস্য রাষ্ট্রগুলো।
তিনি বলেন, “আমরা অত্যাধুনিক অস্ত্র তৈরি করব এবং সেগুলো ন্যাটোর মাধ্যমে ইউক্রেনকে সরবরাহ করা হবে।”
ট্রাম্প আরও বলেন, “যদি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন শান্তি চুক্তিতে সম্মত না হন, তাহলে ৫০ দিনের মধ্যে রাশিয়ার ওপর ১০০ শতাংশ পর্যন্ত কঠোর শুল্ক আরোপ করা হবে।” তিনি অভিযোগ করেন, যুদ্ধ থামাতে পুতিন কোনো সদিচ্ছা দেখাচ্ছেন না, যা তাকে (ট্রাম্পকে) হতাশ করেছে।
উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের সময় ট্রাম্প ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে বাস্তবতা ভিন্ন—মস্কো কিছু সময়ের যুদ্ধবিরতিতে রাজি হলেও সম্প্রতি ৩০ দিনের নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, এতে ইউক্রেন নতুন করে অস্ত্র জোগাড় ও সেনা পুনর্গঠনের সুযোগ পাবে।
ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুট ট্রাম্পের ঘোষণা স্বাগত জানিয়ে বলেন, “এর মাধ্যমে ইউক্রেন পাবে ব্যাপক সামরিক সহায়তা—যার মধ্যে থাকবে ক্ষেপণাস্ত্র, গোলাবারুদ ও আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।” তিনি আরও বলেন, “আমি যদি আজ পুতিনের জায়গায় থাকতাম, তাহলে ট্রাম্পের এই ঘোষণাকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিতাম।”
ট্রাম্প আরও বলেন, “তার (পুতিনের) সঙ্গে আমার আলোচনা সবসময়ই ভালো হতো। কিন্তু আমি বাসায় ফিরে যখন বলতাম—আমার পুতিনের সঙ্গে চমৎকার আলোচনা হয়েছে, তখন ফার্স্ট লেডি বলতেন: ‘আরও একটি শহরে হামলা হয়েছে!’” তিনি বলেন, “আমি আর বিশ্বাস করি না যে আলোচনার মাধ্যমে শান্তি আনা সম্ভব—এখন সময় পদক্ষেপ নেওয়ার।”
আটলান্টিক কাউন্সিলের ইউরেশিয়া সেন্টারের সিনিয়র ফেলো মেলিন্ডা হারিং বলেন, “ট্রাম্প পুতিনকে ছয় মাস সময় দিয়েছিলেন, কিন্তু পুতিন কোনো অগ্রগতি দেখাননি। উল্টো ইউক্রেনের শিশু ও শহরের ওপর প্রতিদিন রাতভর হামলা চালিয়ে যাচ্ছেন।”
রাশিয়ার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহ নতুন কিছু নয়। মস্কোর মতে, শান্তি আলোচনা এখনো গুরুত্বপূর্ণ। তবে রুশ সমাজে যুক্তরাষ্ট্র-ন্যাটোর এ ঘোষণাকে হতাশার চোখে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আল জাজিরার মস্কো প্রতিনিধি ইউলিয়া শাপোভালোভা।
তিনি বলেন, “ট্রাম্পের কাছ থেকে রাশিয়া ভিন্ন আচরণের প্রত্যাশা করেছিল। অনেকে বিশ্বাস করতেন, তিনিই যুদ্ধ বন্ধে উদ্যোগ নেবেন। এখন মনে হচ্ছে, তিনিও ধৈর্য হারাচ্ছেন।”
এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি তার নিয়মিত ভিডিও ভাষণে ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি বড় প্রতিরক্ষা চুক্তি নিয়ে কাজ চলছে। এখনই বিস্তারিত বলার সময় নয়, তবে এটি আমাদের জনগণের জীবন রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ হবে।”
সূত্র: আল জাজিরা
ভোরের আকাশ//হ.র