আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ : ১৫ জুলাই ২০২৫ ০৫:৫১ এএম
সিরিয়ায় সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষে নিহত ৮৯, উদ্বেগ বাড়ছে দক্ষিণাঞ্চলে
সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় সুইদা প্রদেশে দ্রুজ মিলিশিয়া ও সুন্নি বেদুইন উপজাতিদের মধ্যে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে অন্তত ৮৯ জন নিহত হয়েছেন। সোমবার (১৪ জুলাই) দেশটির একটি পর্যবেক্ষণ সংস্থা এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। সংঘর্ষে বহু মানুষ আহত হয়েছেন এবং পরিস্থিতি এখনও উত্তপ্ত।
প্রথমে রোববার সুইদার রাজধানী শহরে দ্রুজ সম্প্রদায়ের এক সবজি বিক্রেতাকে অপহরণের ঘটনা ঘটে। এর পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় পাল্টা অপহরণ শুরু হলে দুই পক্ষের উত্তেজনা চরমে ওঠে। সোমবার সেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে সুইদার শহরতলি ও আশপাশের গ্রামাঞ্চলে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সোয়াইদা২৪ জানায়, পাল্টাপাল্টি মর্টার হামলায় বহু মানুষ হতাহত হয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা আবু তাইম (৫১) বলেন, “সুইদা এখন এক আতঙ্কের নগরী। রাস্তায় কামানের গোলা ছোড়া হচ্ছে নির্বিচারে। দোকানপাট বন্ধ, যান চলাচল থেমে গেছে।”
ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির এক আলোকচিত্রী জানান, শহরের রাস্তাঘাট প্রায় জনশূন্য, এমনকি জানাজার সময়েও গুলির শব্দ শোনা গেছে।
স্থানীয় পর্যবেক্ষণ সংস্থা জানিয়েছে, দুই গোষ্ঠীর সংঘাতে এখন পর্যন্ত ৮৯ জন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৪৬ জন দ্রুজ, ১৮ জন বেদুইন যোদ্ধা, ৪ জন সাধারণ নাগরিক এবং ৭ জন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি রয়েছেন, যাদের সবাই সামরিক পোশাকে ছিলেন। সংঘাত থামাতে গিয়ে নিহত হয়েছেন দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর ছয় সদস্য।
সিরিয়ার সেনাবাহিনী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সুইদায় সহিংসতা থামাতে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। একইসঙ্গে বেসামরিক নাগরিকদের জন্য নিরাপদ করিডোর গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আনাস খাত্তাব বলেন, “রাষ্ট্রীয় কাঠামোর ব্যর্থতা ও নিরাপত্তা বাহিনীর অনুপস্থিতিই এই সংঘর্ষের প্রধান কারণ।” তিনি বলেন, “শান্তি ফিরিয়ে আনতে পুরনো কাঠামোকে আবার সক্রিয় করতে হবে।”
গত বছরের ডিসেম্বরে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সরকারের পতনের পর ইসলামপন্থী নেতা আহমাদ আল-শারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব নেন। কিন্তু দেশের দীর্ঘস্থায়ী সহিংসতার অবসান ঘটিয়ে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সুইদা প্রদেশে বহুদিন ধরেই দ্রুজ ও বেদুইনদের মধ্যে জাতিগত দ্বন্দ্ব বিদ্যমান। এপ্রিল-মে মাসেও সংঘর্ষে শতাধিক মানুষ নিহত হয়। সেই সময় একটি চুক্তির মাধ্যমে উত্তেজনা প্রশমিত হলেও সাম্প্রতিক উত্তেজনায় পরিস্থিতি আবার জটিল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে দ্রুজ যোদ্ধারাই প্রদেশটির নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে, তবে কিছু এলাকায় বেদুইন যোদ্ধারা এখনও সশস্ত্রভাবে অবস্থান করছে।
ইসরায়েল ইতোমধ্যেই দ্রুজদের নিরাপত্তায় সিরিয়ার কিছু অংশে হামলার দাবি করেছে। মে মাসে এমনকি দামেস্কের প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের কাছেও হামলা চালানোর কথা জানায় তারা।
সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ-পূর্ব সময় পর্যন্ত দেশটিতে দ্রুজ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ছিল প্রায় সাত লাখ। এদের বেশিরভাগই সুইদা অঞ্চলে বসবাস করতেন। ইসরায়েলসহ লেবানন ও সিরিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা এই গোষ্ঠী গোপন ধর্মীয় বিশ্বাসে বিশ্বাসী, যাদের শিয়া ইসলাম থেকে একটি আলাদা ধারায় বিবেচনা করা হয়।
ইসরায়েলের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে দেশটিতে ১ লাখ ৫২ হাজারের মতো দ্রুজ বসবাস করেন। এর মধ্যে ২৪ হাজারের মতো দ্রুজ দখলকৃত গোলান মালভূমিতে বাস করেন, যাদের ৫ শতাংশেরও কম ইসরায়েলের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন।
সূত্র: এএফপি, সোয়াইদা২৪
ভোরের আকাশ//হ.র