× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বাস্তব পদক্ষেপ দাবি দলগুলোর

মাহমুদ সালেহীন খান

প্রকাশ : ২০ নভেম্বর ২০২৫ ১২:১৫ এএম

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ আয়োজন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সংলাপে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের নিশ্চয়তা চেয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিরা। তারা ইসির প্রতি আস্থা বজায় রাখতে বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়ার দাবিও জানিয়েছেন। গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে ইসির সংলাপে এসব কথা বলেন তারা। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে চতুর্থ দিনের সংলাপ করে ইসি।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘এক মাসও হয়নি, ২০ দিনও হয়নি, একজন ডিসি চলে গেলেন হঠাৎ করেই। আবার এক সপ্তাহের মধ্যে অনেককে রদবদল করা হয়েছে। এটার পিছনে মনে হয় যেন কোনো একটা ডিজাইন। একটা উদ্দেশ্যে এই কাজটা কোনও জায়গা থেকে হচ্ছে।’

পরওয়ার জানান, তফসিল ঘোষণার পর প্রশাসনিক দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের আওতায় চলে আসবে। এ পরিস্থিতিতে আস্থা নিশ্চিত করতে ডিসি এসপি বদলিতে লটারিভিত্তিক পদ্ধতি গ্রহণের প্রস্তাব দিয়েছিলেন তারা (জামায়াত)। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনায় পরিষ্কার কোনও সমাধান পাননি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এ সময় তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে নিরপেক্ষ এবং আস্থা রাখার মতো একটা উপায় হলো-লটারির মাধ্যমে ট্রান্সফার করে দেওয়া। যার যেখানে তকদির আছে সে চলে যাবে। এটাতে কোনও কোয়েশ্চেন থাকে না।’

নির্বাচনকালীন নিরাপত্তায় সেনা মোতায়েনের বিষয়ে গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘প্রতি ভোটকেন্দ্রে অন্তত  ৫ জন সেনা সদস্য থাকতে হবে। একজন সেনা সদস্য একটা ভোটকেন্দ্রে দিলে এটা খুব বেশি পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্ব পায় না।’

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘জোট করলেও দল যেন নিজের প্রতীকেই ভোট করে ইসির এই সিদ্ধান্তে যেন অটল থাকে নির্বাচন কমিশনের কাছে অনুরোধ জানাবো। একটা সুযোগ এসেছে নিজ দল নিয়ে মানুষের কাছে যাওয়ার। প্রতিটির দলের জন্য একজন কর্মকর্তা নির্দিষ্ট করে দিলে আমরা সহজে যোগযোগ কর পারবো। আমাদের সিরিয়াস কনসার্ন হচ্ছে, ভোটের দিন যাদের বয়স ১৮ হবে, তাদের ক্ষেত্রে কী হবে? আমাদের দাবি তাদেরও ভোটার তালিকায় নিয়ে আসা। এটা করলে তাকে ভোট দেওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করলেন।’

গণভোট নিয়ে তিনি বলেন, ‘গণভোট কী প্রক্রিয়ায় হবে সেই সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা জানাবেন। এতে আমরা কাজ করতে পারবো। আপনাদের প্রস্তুতি নিয়ে সন্দিহান আছি। আপনাদের আমরা সহযোগিতা করবো। অন্যরাও সহযোগিতা করলেও আমরা একটা ভালো নির্বাচন পাবো।’

নাসিরুদ্দিন বলেন, ‘সময় খুবই স্বল্প, গণভোট নিয়ে সরকারের কাছে নির্দেশনা চাইতে পারেন। আমাদের নারীরা প্রতিদিন সাইবার বুলিয়ের শিকার হচ্ছে। এটা নিয়ে কাজ করবে হবে। তরুণ প্রজন্ম যেহেতু অংশ নেবে উৎসবমুখর করতে বাহিনীগুলোকে অ্যাকটিভ করবেন। আরেকটা বিপ্লবের দিকে যেতে হলে আমাদের কারও জন্য সুখকর হবে না।’

সংলাপে প্রচারণার ক্ষেত্রে ছোট ও নতুন দলগুলোর জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে কয়েকটি বিধির বাস্তবসম্মত পরিবর্তনের দাবি জানান গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি।

তিনি বলেন, ‘প্রতীক অবশ্যই স্পষ্টরূপে বড় আকারে ছাপতে হবে, বিশেষত নতুন দলগুলোর জন্য। জোট গঠন করে কোনো দল জোটগত প্রতীকে নির্বাচন করতে চাইলে, সেই সুযোগ রাখা দরকার। এছাড়া গণভোট এবং জাতীয় নির্বাচনের জন্য আলাদা বুথ ও গণনা পদ্ধতি দরকার এবং কেন্দ্রে পুলিশ, আনসার ও ব্যাকআপে সেনা সদস্যের নির্দিষ্ট সংখ্যা জনসম্মুখে জানানো দরকার।’

তিনি আরও বলেন, ‘ব্যাংক অ্যাকাউন্টের পাশাপাশি মোবাইল ফাইনান্সিং সার্ভিস (এমএফএস) অ্যাকাউন্ট লেনদেনের তথ্যও নির্বাচন কমিশনকে জমা দিতে হবে। ইউনিয়ন/ওয়ার্ড প্রতি ফেস্টুন/পোস্টার এর সংখ্যা নির্ধারণের নিয়ম পুনর্বিবেচনা করা দরকার, কারণ এটি বাস্তবসম্মত নয় এবং অসম প্রতিযোগিতা তৈরি করে। এছাড়া প্রচারণার জন্য লিফলেট যথেষ্ট নয়। প্রতিটি ইউনিয়নে/ওয়ার্ডে কমপক্ষে একটি মাইক ব্যবহারের সুযোগ এবং পোস্টার/বিলবোর্ড ব্যবহারের নিয়ম পুনর্বিবেচনা করা দরকার।’

পাশাপাশি পোস্টার ব্যাপক ভিত্তিক ছাপা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে, নির্বাচন কমিশন নির্দিষ্ট জায়গায় পোস্টার লাগানোর স্থান তৈরি করবে এবং দল প্রতি নির্দিষ্ট সংখ্যক পোস্টার বরাদ্দ থাকবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশনের পরিপূর্ণ ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) মহাসচিব মোমিনুল আমিন বলেন, ‘ক্ষমতায় সব কিছু থাকবে সিইসির। তার ডিরেকশন, প্রজ্ঞায়, তার ক্ষমতায় একটা গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে।’

বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি-বিএমজেপি’র সভাপতি সুকৃতি কুমার মণ্ডল বলেন, ‘ভোটের আগে ৭ দিন ও ভোটের পরে ১০ দিন সেনাবাহিনীসহ আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।’

বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর ইরান বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনকে আমরা প্রশ্নের ঊর্ধ্বে একটা জায়গায় দেখতে চাই। সুন্দর র্বিাচন চই, একটা ভোট উৎসব চাই।’

বিরাজমান অস্থির পরিবেশে ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেন ইনসানিয়াত বিপ্লব মহাসচিব শেখ রায়হান রহবার। সেক্ষেত্রে মোবাইল ডিজিটাল থাম্ব নামে একটি পদ্ধতি প্রবর্তনের সুপারিশ রাখেন তিনি।

নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘নির্বাচনি আচরণ প্রয়োগের ক্ষেত্রে যদি আরও কোনো পরিপত্র জারি করে স্পষ্টকরণের প্রয়োজন হয়, তা করা হবে। আমি নিশ্চিত কমিশন এগুলো নিয়ে আলোচনা করবে। কয়েকটি বিষয় আছে, যেগুলোর বিষয়ে সম্ভবত একটু ক্লারিফিকেশন প্রয়োজন।’

এআই অপব্যবহার এবং সোশ্যাল মিডিয়ার হ্যারাসমেন্ট নিয়ে এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘আমরা একটি সেল স্থাপন করছি। রাষ্ট্রীয় সক্ষমতাও ব্যবহার করা হবে। এটি একটি গ্লোবাল চ্যালেঞ্জ। আমরা ভালো ইনফরমেশন দ্বারা খারাপ ইনফরমেশন ফাইট করব। ডিনাই, বেটার করা, আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ, সময়মতো সঠিক তথ্য তুলে ধরা- এগুলো সব কার্যক্রমের অংশ।’

পেশি শক্তি মোকাবিলার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অবৈধ অস্ত্র একটি সিরিয়াস চ্যালেঞ্জ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নিচ্ছে। হারিয়ে যাওয়া অস্ত্রের ৮১ শতাংশ এবং মিশন থেকে হারিয়ে যাওয়া ৭৩ শতাংশ রিকভার হয়েছে। নির্বাচনের আগে ক্রস-বর্ডার অ্যাক্টিভিটি বৃদ্ধি পায়। ড্রাগ এবং কিশোর গ্যাংও নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ৮০ হাজার থেকে এক লাখ সদস্য অনুরোধ করা হয়েছে। কেন্দ্র সংখ্যা ৪২ হাজার ৬৭১টি। রিজিয়নাল রিজার্ভ, মোবাইল টিম, স্ট্রাইকিং ফোর্সের জন্য সংখ্যাগত সীমা রয়েছে।’

ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আসতে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি ও আচরণবিধি পরিপালনে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশন এ এম এম নাসির উদ্দিন। গতকাল বুধবার সকালে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে দলগুলোর সঙ্গে ধরাবাহিক সংলাপের চতুর্থ দিনে স্বাগত বক্তব্যে এ আহ্বান জানান সিইসি।

তিনি বলেন, ‘আমাদের সংলাপের মূল উদ্দেশ্য দুটো। আচরণবিধি জারি হয়েছে। আচরণবিধি পরিপাল ও সহযোগিতা চাওয়াই আমাদের লক্ষ্য।’

সংলাপে সকালের পর্বে জামায়াতে ইসলামীসহ সাতটি দলের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিবও উপস্থিত রয়েছেন।

সিইসি বলেন, নির্বাচনের আগে ধারাবাহিকভাবে কমিশন অংশীজনের সাথে আলোচনা করে এসেছে। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দলগুলোর সাথে আলোচনা চলে এসেছে। তবে এবার নির্বাচনের বিষয়ে এ সংলাপ হচ্ছে।

কিছু বিলম্বে এ সংলাপ হওয়ার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘আমরা আনন্দিত আপনারা ইসির আমন্ত্রণে সাড়া দিয়েছেন। সংস্কার কমিশন ও ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করেছে। এতে ইসির কাজ সহজ হয়েছে।’

সিইসি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন একা নয়, দলসহ সবাই সুন্দর গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য জাতির কাছে ওয়াদা দিয়েছেন। দলগুলো দেশের মঙ্গলের জন্য কাজ করছে। আমরাও ওয়াদা দিয়েছি। প্রধান উপদেষ্টাও দিয়েছেন। আমাদের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য এক।’

নাসির উদ্দিনের কথায়, ‘আচরণবিধিতে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের অনেক সুপারিশ ইনকরপোরেট করা হয়েছে খসড়া ওয়েবসাইটে দেওয়ার পর দল ও জনগণ, সংস্থা মতামত দিয়েছে। সবার মতামত পযালোচনা করে চূড়ান্ত করা হয়েছে। আচরণবিধি প্রস্তুত বড় কাজ নয়, পরিপালনটাই গুরুত্বপূর্ণ আমাদের প্রত্যাশা দলগুলো এক্সপেক্টেড রুল প্লে করবে।’

ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে দলগুলোর সহায়তা চান সিইসি। নাসির উদ্দিন বলেন, ‘দেশের ভোটাররা ভোটকেন্দ বিমুখ হয়েছে গত ১৫ বছরে। ফলাফলও জানান এমন মানসিকতা গো করেছিল। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দদের কথায় তৃণমূল সরাসরি প্রভাবিত হয়। আপনারা উদ্বুদ্ধ করেন ভোটকেন্দ্রে আসতে, ভোটারদের উদ্বুদ্ধ করতে। দলীয় প্রার্থীরা যেন আচরণবিধি পরিপালন করে।’

তিনি জানান, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দলগুলো ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। কিভাবে সবাই মিলে, দল ভোটার ইসি আইনশৃঙ্খলাবাহিনী সবাই মিলে কীভাবে জাতিকে সুন্দর নির্বাচন উপাহার দিতে পারি সে চিন্তা করব। সবার সহযোগিতা চাই। আশা করি, আপনাদের পরামর্শ পেলে সুনদরভাবে এগিয়ে যাব।’ 

ধারাবাহিক সংলাপে বুধবার ১৩টি দলের সঙ্গে বসেছে নির্বাচন কমিশন। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি-বিএমজেপি, ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশ, জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি, গণসংহতি আন্দোলন, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম, বাংলাদেশ লেবার পার্টির সঙ্গে সংলাপ চলে।

দুপুর ২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি বিজেপি, গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি), নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশ রিপাবলিকান পার্টি (বিআরপি), বাসদ মার্কসবাদীর সঙ্গে সংলাপ করে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিয়ম-কানুন মানার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ‘রিটার্নিং কর্মকর্তা’ হিসেবে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিজস্ব কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেওয়ার সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। দলটি মনে করে এতে বাংলাদেশে রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আসবে। গতকাল নির্বাচন ভবনে ইসি আয়োজিত সংলাপে অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান।

তিনি বলেন, এই মতবিনিময় নতুন কিছু না। আগের আলোচনাগুলোয় একাধারে আমরা সফল হয়েছি বা ব্যর্থ হয়েছি বলব না। তবে সংলাপের প্রক্রিয়াকে স্বাগত জানাই। রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের একটাই করণীয়। নিয়মনীতি মেনে নির্বাচন করা। আচরণবিধির প্রতিপালন করতেই হবে। এ নিয়ে দ্বিমত নেই। আমরা নিয়ম-কানুন মেনেই নির্বাচন করবো। তফসিলের বাইরে যাওয়ার সুযোগ দেখছি না। আমরা পরামর্শ দিয়েছিলাম। সবকিছুর প্রতিফলন দেখেনি।

আব্দুল মঈন খান বলেন, যতই অঙ্গীকারনামা নেওয়া হোক, নিজেদের সংশোধন না করলে তা কোনো কাজে আসবে না। এক্ষেত্রে শাস্তির বিধান স্পষ্ট না। যত নিয়মনীতি তৈরি করা হবে তত তা লঙ্ঘনের প্রবণতা বাড়বে। কাজেই এটা যত সিম্পল করা যায়।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) অপব্যবহার নিয়ে তিনি বলেন, মিস ইনফরমেশন বিষয়ে আমরা রেসপন্সিবল আচরণ করবো। বর্তমান যুগে বাকস্বাধীনতার নতুন ক্ষেত্র সৃষ্টি হয়েছে। তবে কথা বলার স্বাধীনতা যেহেতু দেওয়া হয়েছে সেহেতু এর অপব্যবহার হবেই। এটা বিরাট সম্ভাবনার দুয়ারও খুলে গেছে। এক্ষেত্রে আশা করি কমিশন, প্রার্থী-সবাই দায়িত্বশীল আচরণ করবে।

বিএনপির এই সিনিয়র নেতা আরও বলেন, দেশ একটা ক্রান্তিকাল পার করছে। এসময় ইসির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। আপনাদের যতটুক লোকবল আছে তার সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করুন। রিটার্নিং অফিসারদের নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব জনবল থেকে দেওয়ার দাবি জানাই। রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা, নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তা হলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন হবে।

আব্দুল মঈন খান আরও বলেন, সমমনা দলগুলো দেড় দশক ধরে শুধু একটি উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করছি। একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য। ইসি শক্ত অবস্থানে থাকুন। সংবিধানই আপনাদের ক্ষমতা দিয়েছে। নতজানু হওয়ার কোনো কারণ নেই। ধর্মকে রাজনৈতিক কারণে যেন কোথাও ব্যবহার করা না হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনে নেতৃত্বে সংলাপে অন্য নির্বাচন কমিশনার, ইসি কর্মকর্তারা ও বিভিন্ন দলের নেতারা অংশ নেন।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জনপ্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীতে সাম্প্রতিক রদবদল ‘কোনো জায়গা থেকে করা হচ্ছে’, সেই সন্দেহ প্রকাশ করেছে জামায়াতে ইসলামী। তফসিল ঘোষণার পর মাঠ প্রশাসনের কর্তৃত্ব নির্বাচন কমিশনের হাতে এলে সব ডিসি-এসপিকে একযোগে বদলির দাবি জানিয়েছে দলটি। সেক্ষেত্রে প্রয়োজনে লটারির মাধ্যমে প্রশাসন ও পুলিশে বদলি করার পরামর্শ দিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর নেতারা।

নির্বাচন সামনে রেখে বুধবার নির্বাচন কমিশনের সংলাপে অংশ নিয়ে তারা নিজেদের পর্যবেক্ষণ এবং দাবির বিষয়গুলো ইসির সামনে তুলে ধরেন। জামায়াত, এনসিপিসহ সাতটি দলের নেতারা এদিন সকালের পর্বের সংলাপে অংশ নেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিনসহ নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিব এ সময় উপস্থিত ছিলেন। সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারের নেতৃত্বে জামায়াতের তিন সদস্যের প্রতিনিধি দলে ছিলেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ এবং আইনজীবী শিশির মনির।

গত কিছু দিনে জনপ্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনে রদবদলের প্রসঙ্গ ধরে গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘রদবদলের বিষয়টা একমাসে হয়নি, ২০ দিনও হয়নি, ডিসি সেখানে রদবদল হয়েছে। মনে হয়েছে যেন কোনো ডিজাইন করে একটা উদ্দেশ্যে কোনো জায়গা থেকে এটা হচ্ছে।’

তফসিলের পর লটারির মাধ্যমে বদলির পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রশাসনে নিরপেক্ষতায় আস্থা রাখার উপায় হল লটারির মাধ্যমে ট্রান্সফার হওয়া। যার যেখানে তকদিরে আছে। প্রধান উপদেষ্টাকেও বলেছি, এরকম করলে প্রশ্ন থাকবে না। ‘উনার বক্তব্যে বোঝা গেল- কোনোভাবে কোনো জায়গা থেকে শুরু করেছে। কেউ জানছেন কি, জানছেন না, কিছুটা অস্পষ্ট কথা উনার থেকে বোঝা যায়।’

তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশনকেই ‘আস্থার জায়গা’ হতে হবে বলে মন্তব্য করেন মিয়া গোলাম পরওয়ার।

তিনি বলেন, ‘আগেও দুয়েকটা নির্বাচনে হয়েছে; তফসিল ঘোষণার পর একদিনে, এক রাতে সব ডিসি-এসপি রদবদল ঘটেছে। জাতি আস্থা রেখেছে, কমপ্লেইন ছিল না। নির্বাচন কমিশন এরকম একটা সিদ্ধান্ত না নিলে এখন যেটা হচ্ছে পরিকল্পিত, ইনটেনশনাল।’

আচরণবিধি ও প্রবাসীদের জন্য পোস্টাল ভোটিংয়ে গণভোটের প্রসঙ্গ উঠে না আসার বিষয়টি তুলে ধরে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, জুলাই সনদের ভিত্তিতে গণভোটের আয়োজন এবং প্রচারের দায়িত্বও ইসির। সংসদ নির্বাচনের পাশাপাশি গণভোটের ব্যালট নিয়ে তাদের পরিকল্পনাও জানাতে হবে। ভোটকেন্দ্রে সেনা মোতায়েনের দাবি জানান মিয়া গোলাম পরওয়ার।

তিনি বলেন, ‘একজন সেনা সদস্য নয়, বরং চার-পাঁচজন সদস্য নিয়োজিত করা গেলে ভালো হয়।’

সরিষার মধ্যে ভূত? : বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনগুলোতে অনিয়মের অভিযোগের প্রসঙ্গ টেনে এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ‘সবার প্রত্যাশা, এবার সেটার পুনরাবৃত্তি হবে না। সরকার, ইসি, দল সবার একই প্রতিশ্রুতি, এটা জাতি আশা করছে। ইসির আন্তরিতা, প্রস্তুতি, লক্ষ্য করছি আমরা। এজন্য ইসির প্রতি আস্থাশীল হতে চাই, আশান্বিত হতে চাই।’

তিনি বলেন, ‘যে পরিস্থিতিতে নির্বাচন হচ্ছে বেশকিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। পরিস্থিতিটাই সামগ্রিক অর্থে একটা চ্যালেঞ্জ। রাষ্ট্রকাঠামো পুনরুদ্ধার করতে পারেনি। দুর্বল কাঠামোতে নির্বাচন করতে হচ্ছে। ইসি সাংবিধানিকভাবে স্বাধীন। প্রকৃত অর্থে বিগত দিনে স্বাধীন ছিল না। কমিশনের কাঁধে বন্দুক রেখে শিকার হয়েছে। ইসিকে কাজে লাগিয়ে জাতিকে বোকা বানানো হয়েছে। যার পরিণতিতে তিন কমিশনকে ভুগতে হচ্ছে, এটার পুনরাবুত্তি যেন না হয়।’

বর্তমান ইসির প্রতি ‘আস্থা’ থাকার কথা বললেও স্বচ্ছতা নিশ্চিতের দাবি জানান হামিদুর রহমান আযাদ।

তিনি বলেন, ‘ইসি স্বাধীন হতে হলে অবশ্যই সাহসী হতে হবে। আশাবাদী, আপনারা সাহসী হবেন। সাহস দেখালে হবে না শুধু; স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য আজকের সংলাপ খুবই গরুত্বপূর্ণ, এটা যেন ট্র্যাডিশনাল ধারাবাহিকতা না হয়, ব্যতিক্রম চাই।’

জামায়াতের এ সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘শুধু পলিসি লেভেলে স্বচ্ছতা থাকলে হবে না। পলিসি লেভেলে পরিকল্পনায় স্বচ্ছতা দেখা যাচ্ছে, ন্যায্যতা নিয়ে ডাউট এখনও নেই। এখনও আমরা ইসিকে প্রশ্নবিদ্ধ করার মত বক্তব্য রাখিনি। কনফিডেন্স দেখিয়েছি। কিন্তু এক্সিকিউটিভ লেভেলে প্রশ্ন আছে। এক্সিটিউভ লেভেলে সমন্বয় না হলে চমৎকার উৎসব হবে না। সরিষার মধ্যে ভূত আছে কিনা খতিয়ে দেখতে হবে।’

মাঠ প্রশাসনের ক্ষেত্রেও একই ধরনের পর্যবেক্ষণি দিয়ে আযাদ বলেন, ‘এ চিন্তার প্রতিফলন ঘটবে কিনা ডাউট। রক্ষক যেন ভক্ষক না হয়। আইন প্রতিপালন যেন হয়। সরকার পরিবর্তন হয়েছে, আমলাতন্ত্রের মধ্যে মৌলিক পরিবর্তন কম এসেছে। এখানে অনেক সমস্যা জটিলতা আছে। দলীয় সরকার না হলেও দলকানা লোক সরকারে আছে।’

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) খসড়া আচরণবিধি ও নির্বাচনী প্রস্তুতিকে ঘিরে একের পর এক প্রশ্ন তুলেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটি অভিযোগ করে যে, আচরণবিধির নানা অস্পষ্টতা, তদন্ত প্রক্রিয়ার ধোঁয়াশা, প্রচারসামগ্রীর কঠোর নিয়ম এবং প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা ইসির বাস্তবায়নক্ষমতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। তরুণ ভোটার, প্রবাসী ভোটার, সাইবার নিরাপত্তা ও গণভোটের প্রক্রিয়া নিয়েও তারা গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ তুলে ধরে।

গতকাল নির্বাচন ভবনে ইসি আয়োজিত সংলাপে বসে এমন প্রশ্ন তোলে এনসিপি। এতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) সভাপতিত্বে অন্য চার নির্বাচন কমিশনার, ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি উপস্থিত আছেন।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, দল যেন নিজের প্রতীকেই জোট করলেও ভোট করে ইসির এই সিদ্ধান্তে যেন অটল থাকে নির্বাচন কমিশনের কাছে অনুরোধ জানাবো। কেউ যদি নিজের শরীর আছে কিন্তু অন্যের জামা পড়ে যায়ৃ একটা সুযোগ এসেছে নিজ দল নিয়ে মানুষের কাছে যাওয়ার। প্রতিটির দলের জন্য একজন কর্মকর্তা নির্দিষ্ট করে দিলে আমরা সহজে যোগযোগ কর পারবো। আমাদের সিরিয়াস কনসার্ন হচ্ছে, ভোটের দিন যাদের বয়স ১৮ হবে, তাদের ক্ষেত্রে কী হবে? আমাদের দাবী তাদেরও ভোটার তালিকায় নিয়ে আসা। এটা করলে তাকে ভোট দেওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করলেন।

তিনি বলেন, গণভোট কী প্রক্রিয়ায় হবে সেই সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা জানাবেন। এতে আমরা কাজ করতে পারবো। আপনাদের প্রস্তুতি নিয়ে সন্দিহান আছি। আপনাদের আমরা সহযোগিতা করবো। অন্যরাও সহঙোগিতা করলেও আমরা একটা ভালো নির্বাচন পাবো।

এই নেতা বলেন, কমিশন যদি স্বকীয় সত্তা বজায় রেখে, ওথ দলের কাছে না হয় তাহলে ইসি যেভাবে নির্দেশনা দেবে আমরা মেনে চলার চেষ্টা করবো। সময় খুবই স্বল্প, গণভোট নিয়ে সরকারের কাছে নির্দেশনা চাইতে পারেন। আমাদের নারীরা প্রতিদিন সাইবার বুলিয়ের শিকার হচ্ছে। এটা নিয়ে কাজ করবে হবে। তরুণ প্রজন্ম যেহেতু অংশ নেবে উৎসবমুখর করতে বাহিনীগুলোকে অ্যাকটিভ করবেন। আরেকটা বিপ্লবের দিকে যেতে হলে আমাদের কারো জন্য সুখকর হবে না।

যুগ্ম সদস্য সচিব জহিরুল ইসলাম মুসা বলেন, খসড়া আচরণবিধি প্রণয়নকারীদের ভোট প্রক্রিয়ার বাস্তব অভিজ্ঞতা নেই এটা স্পষ্ট। তাঁর অভিযোগ, আচরণবিধি এমনভাবে করা হয়েছে যে তা নিপীড়নমূলক আইনে পরিণত হতে পারে। কোথায় লঙ্ঘন হলে কোন তদন্ত কমিটি কাজ করবে, কমিশন কীভাবে অভিযোগ নেবে বা কত সময়ের মধ্যে প্রার্থিতা বাতিল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে—এসবই অস্পষ্ট। তফসিলের পর এত জটিল প্রক্রিয়া সামলানোর সক্ষমতা কমিশনের নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করে ছট বা কাপড়ের ব্যানার–ফেস্টুন করার নির্দেশনা অধিকাংশ দল, বিশেষ করে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য অবাস্তব। এতে কাঠামোগতভাবে পুরোনো শক্তির সুবিধা পাবে।

দলীয় প্রধান ছাড়া অন্য কারও ছবি ব্যবহার না করার বিধানকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন—এটা বাস্তবে প্রয়োগ করতে পারলে ইসির সক্ষমতা প্রমাণ হবে।

বিলবোর্ড কাপড়ে করার নির্দেশনাও তিনি ‘প্র্যাকটিক্যাল নয়’ বলে উল্লেখ করেন। দলের ব্যয়সীমা ৫০ লাখ টাকা হলেও একটি বড় বিলবোর্ড করতে ২০ লাখ টাকা লাগে ফলে প্রতিযোগিতার ভারসাম্য নষ্ট হবে বলে তিনি মনে করেন।

তিনি আরও বলেন, মাইকে ৬০ ডেসিবল শব্দমাত্রা নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হলেও তা পরিমাপের যথাযথ যন্ত্র মাঠে নেই। নির্বাচন ঘনালে অস্ত্রের ঝনঝনানি ও সহিংসতা নিয়ন্ত্রণ করে প্রার্থীদের নিরাপত্তা দেওয়ার মতো সক্ষমতা ও সদিচ্ছাও ইসির নেই। তরুণ প্রার্থীদের সুযোগ বাড়াতে মুসা এক মঞ্চে মন্ত্রী–এমপি ও প্রভাবশালীদেরও বিতর্কে আনার প্রস্তাব করেন, যাতে ভোটের ওপর পেশিশক্তি বা কালোটাকার প্রভাব কমানো যায়।

এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা বলেন, এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা বলেন, প্রবাসী ভোটারদের জন্য অঞ্চলভেদে পাঁচদিন সময় যথেষ্ট নয় সব জোনের জন্য ১৯ নভেম্বর থেকে ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানো উচিত। নিবন্ধনের সময় এনআইডি বা পাসপোর্ট কেবল স্ক্যান নয়, ম্যানুয়াল তথ্যও দেওয়া যায় এবং ২৪ ঘণ্টার হেল্পলাইন থাকা প্রয়োজন। নারীদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার রোধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীরা দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবি ও পোস্টার ব্যবহার করছেন। এজন্য নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আপত্তি জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।

গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে এসব কথা বলেন দলটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব ও পটুয়াখালী জেলা সমন্বয় কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম মুসা। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন সংলাপে উপস্থিত ছিলেন।

জহিরুল ইসলাম মুসা বলেন, বিএনপির প্রধান ম্যাডাম খালেদা জিয়া। তার ছবি প্রার্থীরা ব্যবহার করলে আমাদের কোনো আপত্তি নেই, কিন্তু দেখা যাচ্ছে প্রার্থীরা তারেক রহমানের ছবি ব্যবহার করছেন। এটাতে আমরা আপত্তি জানিয়েছি। ইসি এটাকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করে সেটাই দেখার বিষয়।

তিনি বলেন, আমরা স্পষ্ট করে একটি বিধিমালা দেখিয়েছি যে বিধিমোতাবেক কোনো প্রার্থী মনোনীত হওয়ার পর তার নিজের ছবি, প্রতীকের ছবি ও দলীয় প্রধানের ছবি ছাড়া অন্য কারও ছবি ব্যবহার করতে পারবে না। কিন্তু আমরা ইসির সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছি।

ইসিকে বলেছি, আপনারা জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ক্ষেত্রে এটা প্রয়োগ করতে পারবেন কি না। বর্তমানে বিএনপির দলীয় প্রধান ম্যাডাম খালেদা জিয়া। কিন্তু আমরা দেখছি, যারা বিএনপি থেকে মনোনীত হয়েছেন বা হবেন, তারা বিভিন্ন প্রচারপত্রে, পোস্টারে, বিলবোর্ডে, লিফলেটে সব জায়গায় তারেক রহমানের ছবি ব্যবহার করছেন।

‘আমরা ইসিকে বলেছি, এটি কীভাবে স্ট্রিক্টলি প্রয়োগ করবেন, এটা থেকে বিএনপিকে কীভাবে বিরত রাখবেন— এটা দিয়ে আপনাদের (ইসি) সক্ষমতা প্রমাণিত হবে। এছাড়া আপনাদের সক্ষমতার একটা ধাপ জনগণের কাছে পূরণ হবে। এটা ইসি যদি পারে, তাহলে তাদের একটা সক্ষমতা তৈরি হবে।’

তিনি আরও বলেন, যাদের বয়স নির্বাচনের আগে ১৮ বছর পূর্ণ হবে, তাদের ভোটার করতে হবে। তরুণ-জেনজিদের ভোটের আওতায় আনতে হবে। বড় একটি সংখ্যক জেনজি যারা আন্দোলন করেছিলেন, তাদের ভোট দেওয়ার সুযোগ দিতে হবে।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক ও দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, গণভোট নির্বাচনের দিন হওয়ার কথা। অথচ ইসি গণভোট নিয়ে এখনো প্রস্তুত না। গণভোট করার কোনো প্রস্তুতি ইসির দেখছি না। কীভাবে গণভোট হবে, এটা দেখছি না। তাই ইসিকে বলেছি দ্রুত গণভোটের প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য।

তিনি আরও বলেন, স্ব স্ব জামা এই ভোটে গায়ে দিতে হবে। অন্য দলের জামা গায়ে দেওয়া যাবে না। অনেক দল বলেছে, তারা জোটবদ্ধ হলেও অন্যের প্রতীক ব্যবহার করা যাবে। কিন্তু আমরা বলছি, এখন থেকে নিজের দলের কোট (প্রতীক) ব্যবহার করতে হবে, অন্য দলের কোট (প্রতীক) ব্যবহার করা যাবে না। ধার করে কারও মার্কায় ভোট করা যাবে না। জোটের প্রার্থী হলেও স্ব স্ব প্রতীকে ভোট করতে হবে।

তফসিলের পর প্রশাসনিক কর্তৃত্ব যে ইসির হাতে ন্যস্ত হবে, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে এই জামায়াত নেতা বলেন, ‘এখানে কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট তৈরি হয়। এ গভার্নমেন্টের বেনিফিশারি যেন নেক্সট গভার্নমেন্টের সঙ্গে আন্ডাস্ট্যন্ডিং না করতে পারে। এ ধরনের ছিদ্র থেকে গেলে নির্বাচন প্রভাবিত হবে।’

লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিতে সরকারের সঙ্গে সমন্বয়ের আহ্বান জানান আযাদ। তিনি বলেন, ‘ইসির অনেক ভালো উদ্যোগ থাকলেও সেগুলো নষ্ট করে দিতে পারে যদি লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরি না হয়। এখন ইসির দায়িত্ব না থাকলেও সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে এ পরিবেশ তৈরি করা যায়।’
অবৈধ অস্ত্র, বৈধ অস্ত্র উদ্ধারে উপকূলীয়, পার্বত্য এলাকায় বিশেষ নজর দেওয়ার তাগিদ দেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল।

তিনি বলেন, জনগণের নিরাপত্তা ও ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে না পারলে ‘ভালো কাজ নষ্ট হয়ে যাবে’।

জনপ্রশাসনে রদবদলে নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আযাদ বলেন, ‘প্রশাসনে নিয়োগ বদলিতে স্বচ্ছতা না থাকলে হবে না। গোয়েন্দা রিপোর্টের ভিত্তিতে নিয়োগ বদলি হচ্ছে। জামায়াতের সঙ্গে সম্পৃক্ত এমন দেখানো হচ্ছে। একটি দল আছে শুধুৃ এদেরকে নিয়োগ দেওয়া যাবে না। এ রিপোর্টের ভিত্তিতে নিয়োগ হলে কীভাবে নির্বাচন হবে? হৈ চৈ হবে। লটারির ভিত্তিতে ডিসি, এসপি, ওসি, নির্বাচন কর্মকর্তাদের নিয়োগ বদলি করতে হবে।’

বড়ি ওন ক্যামেরার সীমাবদ্ধতা তুলে ধরে ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা রাখার পক্ষে মত দেন তিনি। ব্যালট পেপার ছাপানো নিয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘ব্যালট পেপার নকল নিয়ে কথা এসেছে, ডাকসু, চাকসু নিয়ে অভিযোগ উঠেছে। এক্সট্রা ব্যালট পেপার যেন না যায়। এসব নজর দিতে হবে।’

শিশির মনির বলেন, আচরণবিধি লঙ্ঘনে প্রার্থী, তার পক্ষে একজনকে শাস্তির বিধান কে কার্যকর করবে এবং দলের অর্থদণ্ডের বিধান নিয়ে ‘অস্পষ্টতা’ রয়েছে।

ভোরের আকাশ/এসএইচ

আতঙ্কে জোটসঙ্গী, চ্যালেঞ্জে বিএনপি

আতঙ্কে জোটসঙ্গী, চ্যালেঞ্জে বিএনপি

আতঙ্কে জোটসঙ্গী, চ্যালেঞ্জে বিএনপি

আতঙ্কে জোটসঙ্গী, চ্যালেঞ্জে বিএনপি

নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন ১২ কোটি ৭৭ লাখ ভোটার

নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন ১২ কোটি ৭৭ লাখ ভোটার

বিএনপি-জামায়াতসহ ১২ দলের সঙ্গে ইসির সংলাপ কাল

বিএনপি-জামায়াতসহ ১২ দলের সঙ্গে ইসির সংলাপ কাল

প্রবাসী ভোটার অ্যাপ উদ্বোধন ১৮ নভেম্বর

প্রবাসী ভোটার অ্যাপ উদ্বোধন ১৮ নভেম্বর

 সঠিক পুষ্টিমান উন্নয়নে সবাইকে সচেতন হতে হবে: আসিফ ফেরদৌস

সঠিক পুষ্টিমান উন্নয়নে সবাইকে সচেতন হতে হবে: আসিফ ফেরদৌস

 ঐক্যের আড়ালে অনৈক্য

ঐক্যের আড়ালে অনৈক্য

 গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বাস্তব পদক্ষেপ দাবি দলগুলোর

গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বাস্তব পদক্ষেপ দাবি দলগুলোর

 জেলায় জেলায় ডিসি বদলি, প্রশাসনে চাপা অসন্তোষ

জেলায় জেলায় ডিসি বদলি, প্রশাসনে চাপা অসন্তোষ

 চৈতা হুজুরের খোঁজ নিতে হাসপাতালে আলতাফ হোসেন চৌধুরী

চৈতা হুজুরের খোঁজ নিতে হাসপাতালে আলতাফ হোসেন চৌধুরী

 ইন্দোনেশিয়ায় জেগে উঠল আগ্নেয়গিরি, সর্বোচ্চ সতর্কতা

ইন্দোনেশিয়ায় জেগে উঠল আগ্নেয়গিরি, সর্বোচ্চ সতর্কতা

 মায়ের কোলই সন্তানের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়: বকুল

মায়ের কোলই সন্তানের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়: বকুল

 বগুড়ায় ফেন্সিডিলসহ স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা গ্রেফতার

বগুড়ায় ফেন্সিডিলসহ স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা গ্রেফতার

 ইউটিউবে সাফল্যের শিখরে ১৩ বছরের রায়াত

ইউটিউবে সাফল্যের শিখরে ১৩ বছরের রায়াত

 আবার বাড়ল সোনার দাম

আবার বাড়ল সোনার দাম

 বরখাস্তের প্রতিবাদে অনশনের ঘোষণা সাত শিক্ষকের

বরখাস্তের প্রতিবাদে অনশনের ঘোষণা সাত শিক্ষকের

 গফরগাঁওয়ে খেলাফত মজলিসের এমপি প্রার্থীর শোডাউন

গফরগাঁওয়ে খেলাফত মজলিসের এমপি প্রার্থীর শোডাউন

 গাজীপুর জেলা কারাগারে হাজতির মৃত্যু

গাজীপুর জেলা কারাগারে হাজতির মৃত্যু

 ময়মনসিংহে দুর্বৃত্তদের ট্রেনে আগুন

ময়মনসিংহে দুর্বৃত্তদের ট্রেনে আগুন

 আইন জারির পর গণভোট নিয়ে সিদ্ধান্ত: সিইসি

আইন জারির পর গণভোট নিয়ে সিদ্ধান্ত: সিইসি

 টঙ্গিবাড়ী নির্মিত হচ্ছে সুবর্ণ স্কুল

টঙ্গিবাড়ী নির্মিত হচ্ছে সুবর্ণ স্কুল

 শ্রীপুরে টিও লাইসেন্স বহালের দাবিতে মানববন্ধন

শ্রীপুরে টিও লাইসেন্স বহালের দাবিতে মানববন্ধন

 সড়ক দুর্ঘটনায় এক মাসে প্রাণ হারাল ৪৪১ জন

সড়ক দুর্ঘটনায় এক মাসে প্রাণ হারাল ৪৪১ জন

 ডেঙ্গুতে আরও ৬ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৭৮৮

ডেঙ্গুতে আরও ৬ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৭৮৮

সংশ্লিষ্ট

গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বাস্তব পদক্ষেপ দাবি দলগুলোর

গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বাস্তব পদক্ষেপ দাবি দলগুলোর

জেলায় জেলায় ডিসি বদলি, প্রশাসনে চাপা অসন্তোষ

জেলায় জেলায় ডিসি বদলি, প্রশাসনে চাপা অসন্তোষ

আইন জারির পর গণভোট নিয়ে সিদ্ধান্ত: সিইসি

আইন জারির পর গণভোট নিয়ে সিদ্ধান্ত: সিইসি

সড়ক দুর্ঘটনায় এক মাসে প্রাণ হারাল ৪৪১ জন

সড়ক দুর্ঘটনায় এক মাসে প্রাণ হারাল ৪৪১ জন