আল আমীন অর্ণব, নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশ : ০৬ অক্টোবর ২০২৫ ০৫:৩৫ পিএম
ছবি: ভোরের আকাশ
নারায়ণগঞ্জের সদরে বিশ্ব শিক্ষক দিবস-২০২৫ উপলক্ষে “শিক্ষকতা পেশা: মিলিত প্রচেষ্টার দীপ্তি” প্রতিপাদ্য নিয়ে সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের স্বতন্ত্র মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা এবং সহকারী শিক্ষকদের এন্ট্রিপদ ৯ম গ্রেডে উন্নীতকরণের বাস্তবায়নের দাবিতে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
রবিবার (৫ অক্টোবর) বিকাল ৩টায় নারায়ণগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ আতিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। স্বতন্ত্র মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও এন্ট্রিপদ ৯ম গ্রেড বাস্তবায়ন পরিষদ ও বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি (বাসমাশিস)'র আয়োজনে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় বক্তারা বলেন, মাধ্যমিক শিক্ষায় কাঙ্ক্ষিত মানোন্নয়ন ঘটাতে হলে প্রশাসনিক কাঠামোগত সংস্কার এবং শিক্ষকদের ন্যায্য দাবি বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবি। তারা বলেন, ২০২৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত সচিব সভায় মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা প্রত্যেক মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে প্রয়োজনীয় সংস্কার পরিকল্পনা প্রণয়নের নির্দেশনা দেন। তারই ধারাবাহিকতায় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ ২০২৪ সালের ২৮ নভেম্বর যে সংস্কার পরিকল্পনা দাখিল করে, সেখানে ডিসেম্বর ২০২৫ এর মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরকে পৃথক করে ‘মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর’ ও ‘উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর’ গঠনের প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ২০২৫ সালের প্রতিবেদনে শিক্ষা সার্ভিসের সংস্কারের অংশ হিসেবে সুপারিশ করা হয় যে, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে মাধ্যমিক অংশকে পৃথক করে স্বতন্ত্র ‘মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর’ প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাধ্যমিক শিক্ষা বর্তমানে উচ্চ শিক্ষার অধীনে থাকায় তা প্রাপ্য গুরুত্ব পাচ্ছে না, ফলে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার মান ক্রমশ অবনতি হচ্ছে। বক্তারা অভিযোগ করেন, মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ইতিমধ্যে স্বতন্ত্র মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর গঠনের ফাইলে অনুমোদন দিলেও অজানা কারণে তা এখনও কার্যকর হয়নি।
বক্তারা আরও বলেন, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ১৫ হাজার শিক্ষক-কর্মকর্তা কর্মরত, কিন্তু পদোন্নতিযোগ্য পদ রয়েছে মাত্র ৪ শতাংশ। ফলে অধিকাংশ শিক্ষক ৩২-৩৩ বছর চাকরি করেও পদোন্নতি ছাড়া অবসরে যাচ্ছেন। ১৯৭৩ সালের পে-স্কেল অনুযায়ী সরকারি মাধ্যমিকের সহকারী শিক্ষক, পিটিআই ইন্সট্রাক্টর ও থানা শিক্ষা অফিসার একই গ্রেডে ও পরস্পর বদলযোগ্য পদে ছিলেন। কিন্তু বর্তমানে অন্য পদগুলো ৯ম গ্রেডে উন্নীত হলেও সরকারি মাধ্যমিকের সহকারী শিক্ষকরা এখনো ১০ম গ্রেডে রয়েছেন, যা সুস্পষ্ট বৈষম্য।
বক্তারা প্রস্তাব করেন, জাতীয় বেতনস্কেল ২০১৫ অনুযায়ী সৃষ্ট বৈষম্য দূরীকরণে সরকারি মাধ্যমিকের সহকারী শিক্ষকের এন্ট্রিপদ ৯ম গ্রেডে উন্নীত করে চার স্তরবিশিষ্ট পদসোপান (সহকারী শিক্ষক ৯ম গ্রেড, সিনিয়র সহকারী শিক্ষক ৬ষ্ঠ গ্রেড, সিনিয়র শিক্ষক ৫ম গ্রেড ও প্রিন্সিপ্যাল শিক্ষক ৪র্থ গ্রেড) বাস্তবায়ন করা জরুরি। এতে বেতন-বৈষম্য দূর হওয়ার পাশাপাশি পদোন্নতি সংকটও নিরসন হবে এবং মেধাবীদের শিক্ষকতা পেশায় ধরে রাখা সম্ভব হবে।
সভায় জানানো হয়, সরকারি মাধ্যমিকে বর্তমানে সিনিয়র শিক্ষক ২,৫০০টি, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ২৫০টি, সহকারী প্রধান শিক্ষক/সহকারী জেলা শিক্ষা অফিসার ও বিদ্যালয় পরিদর্শক ৫২৫টি, প্রধান শিক্ষক ৩০০টি, জেলা শিক্ষা অফিসার ৩৩টি, বিদ্যালয় পরিদর্শক ও সহকারী পরিচালক ২০টি এবং উপপরিচালক ১০টি পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। অথচ এসব পদে পদোন্নতি দিলে সরকারের কোনো অতিরিক্ত ব্যয় হবে না।
এছাড়া বক্তারা বলেন, সরকারি মাধ্যমিকের প্রায় ৬ হাজার শিক্ষক টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। ২০২৫ সালের ৪ মে আপিল বিভাগের রায় দেওয়া সত্ত্বেও কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি, যা শিক্ষক সমাজে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা তৈরি করেছে।
বক্তারা অবিলম্বে ডিপিসির মাধ্যমে ন্যায্য পাওনা পরিশোধ, পদোন্নতি প্রদানের মাধ্যমে শূন্যপদ পূরণ, এবং মাধ্যমিক শিক্ষকদের এন্ট্রিপদ ৯ম গ্রেডে উন্নীতকরণসহ স্বতন্ত্র মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠার দাবিতে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।
তারা সতর্ক করে বলেন, আগামী ১০ কর্মদিবসের মধ্যে এসব দাবি বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেওয়া না হলে চাকরিবিধি অনুযায়ী মানববন্ধন, মহাসমাবেশসহ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করা হবে।
সভায় নারায়ণগঞ্জ জেলা শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ আতিকুল ইসলাম ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষিক মাসুদা আক্তার, নারায়ণগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফারুক আহমেদ, নারায়ণগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহ: প্রধান শিক্ষক রওশন ফেরদাউসিসহ সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং সভায় বক্তব্য রাখেন শিক্ষক সমাজের বিশিষ্ট প্রতিনিধিরা।
ভোরের আকাশ/এসএইচ