রিফাতুন্নবী রিফাত, গাইবান্ধা
প্রকাশ : ২৪ এপ্রিল ২০২৫ ০৩:৪৫ পিএম
মাটির নিচে ফ্রেন্ডশিপ ট্রেনিং সেন্টার
আধুনিকতা আর প্রাকৃতিক পরিবেশের সমন্বয়ে এক অনন্য স্থাপনার নাম ফ্রেন্ডশিপ ট্রেনিং সেন্টার। এটি গাইবান্ধা শহর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে গাইবান্ধা-বালাসী সড়ক ঘেঁষে বিস্তীর্ণ সবুজ মাঠ। মাঠটির এক পাশে একটি বিশাল ভবন এবং আরেক পাশ দিয়ে চলে গেছে বালাসীঘাট সড়ক। কিন্তু পুরো ভবনটিই দৃষ্টির আড়ালে। বাইরে থেকে দেখে যে কেউ মনে করবে এটি কোনো কৃষিজমি। কিন্তু এই মাঠের ভেতরেই লুকিয়ে আছে অনন্য এক স্থাপনা; যার নাম ‘ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার।’
গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের মদনেরপাড়া গ্রামে অবস্থিত ফ্রেন্ডশিপ সেন্টারটি যেন প্রকৃতির মধ্যে মিশে অদৃশ্য হয়ে আছে। প্রায় আট বিঘা জমির ওপর গড়ে ওঠা এ ভবনের আয়তন ৩২ হাজার বর্গফুট। ফ্রেন্ডশিপ সেন্টারটি সম্পূর্ণ মাটির নিচে অবস্থিত। ভবনের ছাদ ভূমি সমতলে। ছাদে লাগানো হয়েছে নানা জাতের ঘাস, ফুল ও পাশ দিয়ে নানা প্রজাতির গাছ। এই ভবনে চলে দাপ্তরিক নানা কর্মকাণ্ড। অদৃশ্য এ ভবনটিতে রয়েছে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, অভ্যন্তরীণ খেলাধুলা ও থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা। ভেতরের সবকিছুই অবাক করা ও দৃষ্টিনন্দন।
ফ্রেন্ডশিপ সেন্টারটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে পর্যটকদের কাছে। অপরূপ নির্মাণ শৈলীর কারণে প্রতিদিন বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকরা স্থানটিতে ঘুরতে আসেন। স্থানীয় ভাবে তৈরি ইটের গাঁথুনি দিয়ে নির্মিত ভবনটি দেখতে কৌতূহলী মানুষের ভিড় জমে এখানে। মাটির নিচের অন্ধকার দূর করতে সেখানে প্রাকৃতিক আলোর উৎস স্কাইলাইট ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া প্রাকৃতিকভাবে ভেন্টিলেশন ব্যবস্থাও রয়েছে। প্রতিটি ব্লকের উচ্চতা সমান। ভবন এলাকায় ৫টি ওয়াটার পুল রয়েছে। ছাদে যাতে পানি জমে না থাকে, সে জন্য পুরো ছাদে চমৎকার ড্রেনেজ ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ফ্রেন্ডশিপ সেন্টারের সিনিয়ন ম্যানেজার মো. লোকমান হোসেন বলেন, ফ্রেন্ডশিপ সেন্টারটির সম্পূর্ণ অবকাঠামো নির্মাণ করতে সময় লেগেছে প্রায় দুই বছর। প্রতিদিন কাজ করেছেন প্রায় ৫০ থেকে ৬০ জন মিস্ত্রি ও শ্রমিক। সে সময় ভবনটি নির্মাণে ব্যয় হয় প্রায় আট কোটি টাকা।
তিনি আরো বলেন, পরিবেশ বান্ধব ভবনটিতে আছে একসঙ্গে ২০০ জন প্রশিক্ষণ নেওয়ার ব্যবস্থা। থাকার জন্য আবাসিক কক্ষ রয়েছে ২৪টি, খাওয়ার জন্য আলাদা রেস্তোরাঁ, লাইব্রেরি, হেলিকপ্টারে আসার জন্য হেলিপ্যাডসহ নানা সুবিধা।
গাইবান্ধা শহরের থানা পাড়া থেকে ঘুরতে আসা রাজিবুল হাসান বলেন, এর আগে কখন আসা হয়নি এখানে এবারেই প্রথম আসলাম পরিবারসহ, খুবই চমৎকার একটি জায়গা। এখানে না আসলে বোঝা যেন না যে গাইবান্ধায় এমনি একটি মাটির নিচে ঘড় আছে যেটি দৃষ্টিনন্দন। মাটির নিচে অত্যাধুনিক এই ভবনটির নকশাকার ও স্থপতি কাশেফ মাহবুব চৌধুরী।
ভবনটির নকশা এমনভাবে করা হয়েছে যে, ওপর থেকে দেখতে অনেকটা প্রাচীন বৌদ্ধ বিহারের মতো। এর নির্মাণশৈলীর অনুপ্রেরণাও নেওয়া হয়েছে প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার বগুড়ার মহাস্থানগড় থেকে। ফ্রেন্ডশিপ সেন্টারটি শুধু গাইবান্ধা নয় বরং অবাক করেছে বিশ্বকে। যার ফলশ্রুতিতে মিলেছে একাধিক বিদেশি অ্যাওয়ার্ড।
২০১৬ সালে পেয়েছেন ‘আগা খান অ্যাওয়ার্ড ফর আর্কিটেকচার’ পুরষ্কার। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা ও পরিবেশ বান্ধব এ ভবনটির কাজ শুরু হয় ২০১০ সালে এবং দুই বছরের কাজ শেষে ২০১২ সালের অক্টোবরে এর কাজ শেষ হয় এবং ওই বছরের নভেম্বরেই আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু হয় এই ফ্রেন্ডশিপ সেন্টারটির।
ভোরের আকাশ/এসএইচ
রিফাতুন্নবী রিফাত, গাইবান্ধা
প্রকাশ : ৪ ঘন্টা আগে
আপডেট : ৪ ঘন্টা আগে
মাটির নিচে ফ্রেন্ডশিপ ট্রেনিং সেন্টার
আধুনিকতা আর প্রাকৃতিক পরিবেশের সমন্বয়ে এক অনন্য স্থাপনার নাম ফ্রেন্ডশিপ ট্রেনিং সেন্টার। এটি গাইবান্ধা শহর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে গাইবান্ধা-বালাসী সড়ক ঘেঁষে বিস্তীর্ণ সবুজ মাঠ। মাঠটির এক পাশে একটি বিশাল ভবন এবং আরেক পাশ দিয়ে চলে গেছে বালাসীঘাট সড়ক। কিন্তু পুরো ভবনটিই দৃষ্টির আড়ালে। বাইরে থেকে দেখে যে কেউ মনে করবে এটি কোনো কৃষিজমি। কিন্তু এই মাঠের ভেতরেই লুকিয়ে আছে অনন্য এক স্থাপনা; যার নাম ‘ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার।’
গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের মদনেরপাড়া গ্রামে অবস্থিত ফ্রেন্ডশিপ সেন্টারটি যেন প্রকৃতির মধ্যে মিশে অদৃশ্য হয়ে আছে। প্রায় আট বিঘা জমির ওপর গড়ে ওঠা এ ভবনের আয়তন ৩২ হাজার বর্গফুট। ফ্রেন্ডশিপ সেন্টারটি সম্পূর্ণ মাটির নিচে অবস্থিত। ভবনের ছাদ ভূমি সমতলে। ছাদে লাগানো হয়েছে নানা জাতের ঘাস, ফুল ও পাশ দিয়ে নানা প্রজাতির গাছ। এই ভবনে চলে দাপ্তরিক নানা কর্মকাণ্ড। অদৃশ্য এ ভবনটিতে রয়েছে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, অভ্যন্তরীণ খেলাধুলা ও থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা। ভেতরের সবকিছুই অবাক করা ও দৃষ্টিনন্দন।
ফ্রেন্ডশিপ সেন্টারটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে পর্যটকদের কাছে। অপরূপ নির্মাণ শৈলীর কারণে প্রতিদিন বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকরা স্থানটিতে ঘুরতে আসেন। স্থানীয় ভাবে তৈরি ইটের গাঁথুনি দিয়ে নির্মিত ভবনটি দেখতে কৌতূহলী মানুষের ভিড় জমে এখানে। মাটির নিচের অন্ধকার দূর করতে সেখানে প্রাকৃতিক আলোর উৎস স্কাইলাইট ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া প্রাকৃতিকভাবে ভেন্টিলেশন ব্যবস্থাও রয়েছে। প্রতিটি ব্লকের উচ্চতা সমান। ভবন এলাকায় ৫টি ওয়াটার পুল রয়েছে। ছাদে যাতে পানি জমে না থাকে, সে জন্য পুরো ছাদে চমৎকার ড্রেনেজ ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ফ্রেন্ডশিপ সেন্টারের সিনিয়ন ম্যানেজার মো. লোকমান হোসেন বলেন, ফ্রেন্ডশিপ সেন্টারটির সম্পূর্ণ অবকাঠামো নির্মাণ করতে সময় লেগেছে প্রায় দুই বছর। প্রতিদিন কাজ করেছেন প্রায় ৫০ থেকে ৬০ জন মিস্ত্রি ও শ্রমিক। সে সময় ভবনটি নির্মাণে ব্যয় হয় প্রায় আট কোটি টাকা।
তিনি আরো বলেন, পরিবেশ বান্ধব ভবনটিতে আছে একসঙ্গে ২০০ জন প্রশিক্ষণ নেওয়ার ব্যবস্থা। থাকার জন্য আবাসিক কক্ষ রয়েছে ২৪টি, খাওয়ার জন্য আলাদা রেস্তোরাঁ, লাইব্রেরি, হেলিকপ্টারে আসার জন্য হেলিপ্যাডসহ নানা সুবিধা।
গাইবান্ধা শহরের থানা পাড়া থেকে ঘুরতে আসা রাজিবুল হাসান বলেন, এর আগে কখন আসা হয়নি এখানে এবারেই প্রথম আসলাম পরিবারসহ, খুবই চমৎকার একটি জায়গা। এখানে না আসলে বোঝা যেন না যে গাইবান্ধায় এমনি একটি মাটির নিচে ঘড় আছে যেটি দৃষ্টিনন্দন। মাটির নিচে অত্যাধুনিক এই ভবনটির নকশাকার ও স্থপতি কাশেফ মাহবুব চৌধুরী।
ভবনটির নকশা এমনভাবে করা হয়েছে যে, ওপর থেকে দেখতে অনেকটা প্রাচীন বৌদ্ধ বিহারের মতো। এর নির্মাণশৈলীর অনুপ্রেরণাও নেওয়া হয়েছে প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার বগুড়ার মহাস্থানগড় থেকে। ফ্রেন্ডশিপ সেন্টারটি শুধু গাইবান্ধা নয় বরং অবাক করেছে বিশ্বকে। যার ফলশ্রুতিতে মিলেছে একাধিক বিদেশি অ্যাওয়ার্ড।
২০১৬ সালে পেয়েছেন ‘আগা খান অ্যাওয়ার্ড ফর আর্কিটেকচার’ পুরষ্কার। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা ও পরিবেশ বান্ধব এ ভবনটির কাজ শুরু হয় ২০১০ সালে এবং দুই বছরের কাজ শেষে ২০১২ সালের অক্টোবরে এর কাজ শেষ হয় এবং ওই বছরের নভেম্বরেই আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু হয় এই ফ্রেন্ডশিপ সেন্টারটির।
ভোরের আকাশ/এসএইচ