অর্থনীতি ডেস্ক
প্রকাশ : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১২:০৭ এএম
ক্ষতিগ্রস্ত ঋণগ্রহীতাদের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ নীতি সহায়তা
দেশের বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান রক্ষায় সাম্প্রতিক সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুনরায় টেকসই ব্যবসায় ফিরিয়ে আনতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ বিষয়ে মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, রাজনৈতিক পরিবর্তন, বৈশ্বিক সাপ্লাই চেইনে বিপর্যয়, মুদ্রার অস্বাভাবিক অবমূল্যায়ন, প্রতিশ্রুত ইউটিলিটি সংযোগ না পাওয়া কিংবা অযৌক্তিক বৈষম্যের মতো নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকা নানা কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান ব্যবসায়িক সংকটে পড়ে। এর প্রভাব পড়ে ঋণ পরিশোধে, ফলে খেলাপি ঋণ বাড়তে থাকে। এ অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুনর্গঠন ও পুনঃতফসিলের মাধ্যমে ব্যবসা সচল রাখতে এ নীতি প্রণয়ন করা হয়েছে।
নীতিমালা অনুসারে, ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বিরূপমানে (এসএস, ডিএফ, বিএল) থাকা ঋণগুলো সর্বোচ্চ ১০ বছরের জন্য পুনঃতফসিল করা যাবে। এ সময় সর্বোচ্চ দুই বছর গ্রেস পিরিয়ড থাকবে। পুনঃতফসিলের জন্য ঋণগ্রহীতাকে ন্যূনতম ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিতে হবে। তবে আগের রেকর্ড অনুযায়ী তিনবার বা তার বেশি পুনঃতফসিল করা থাকলে ডাউন পেমেন্টের হার আরও ১ শতাংশ বাড়বে।
সুদের হার ব্যাংক নির্ধারণ করবে, তবে তা নীতিমালায় নির্ধারিত সর্বনিম্ন হারের চেয়ে অন্তত ১ শতাংশ কম হতে হবে। কিস্তি মাসিক বা ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে পরিশোধযোগ্য হবে। গ্রেস পিরিয়ড চলাকালে যে সুদ যোগ হবে, তা আংশিক বা পূর্ণভাবে আদায় করা যাবে। তবে নির্ধারিত কিস্তি তিন মাসিক বা এক ত্রৈমাসিক মিস করলে ঋণ পুনরায় শ্রেণিকরণ হবে।
অশ্রেণিকৃত মেয়াদি ঋণগুলো ৩০ জুন পর্যন্ত সর্বোচ্চ দুই বছর পুনর্গঠনের সুযোগ পাবে। নিয়মিত ঋণের ক্ষেত্রেও বিশেষ এক্সিট সুবিধা দিয়ে এক বছর বাড়তি সময় দেওয়া যাবে। উভয় ক্ষেত্রেই ডাউন পেমেন্ট বাধ্যতামূলক। এছাড়া ২০২২ সালে ইউজেন্স এলসির কারণে মুদ্রা বিনিময় ক্ষতির শিকার হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোও সুবিধার আওতায় আসবে।
ঋণগ্রহীতারা আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আবেদন করতে পারবেন। ব্যাংককে ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে। তবে আবেদন কার্যকর হবে কেবল তখনই, যখন গ্রাহক ডাউন পেমেন্ট জমা দেবেন। ৩০০ কোটি টাকা বা তার বেশি ঋণগ্রহীতার ক্ষেত্রে প্রয়োজনে আন্তঃব্যাংক সভা বা বাংলাদেশ ব্যাংকের “নীতি সহায়তা বাছাই কমিটি”তে বিষয়টি যাবে।
জালিয়াতি বা প্রতারণাজনিত ঋণ, ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণ এবং পরিচালক বা তাঁদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ঋণ এই সুবিধার আওতায় আসবে না। পুনঃতফসিলকৃত ঋণগুলোকে এসএমএ হিসেবে শ্রেণিকরণ করতে হবে এবং পর্যাপ্ত প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হবে। পাশাপাশি প্রাপ্ত ঋণের তথ্য ব্যাংকগুলোকে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠাতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করছে, এ নীতি বাস্তবায়িত হলে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলো আবার ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ পাবে। এতে কর্মসংস্থান টিকে থাকবে, নতুন কর্মসংস্থানের পথ খুলবে এবং ব্যাংকের আটকে থাকা ঋণ আদায় সহজ হবে। সব মিলিয়ে দেশের ব্যাংক খাত ও সামগ্রিক অর্থনীতি আরও স্থিতিশীল হবে।
ভোরের আকাশ//হ.র