সংগৃহীত ছবি
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ দাবির মিথ্যা অভিযোগ করে শেষ পর্যন্ত সাময়িক বরখাস্ত হয়েছিলেন প্রতিষ্ঠানটির সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজুল ইসলাম। পাশাপাশি বেতন গ্রেডের নিম্নতর ধাপে অবনমিত করা হয়েছে। যদিও পরবর্তীতে বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে।
অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব মো. আবদুর রহমান খানের সই করা আদেশ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। গত ২৫ সেপ্টেম্বর এ বিষয়ে আদেশ করা হয়েছে বলে শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির এক কর্মকর্তা।
বরখাস্তের আদেশ সূত্রে জানা যায়, জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. এনায়েত হোসেনের বিরুদ্ধে তার অধস্তন কর্মকর্তা সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজুল ইসলাম এক লাখ টাকা ঘুষ দাবির অভিযোগ করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে অধিদপ্তর থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্তে প্রমাণিত হয় যে, মো. রিয়াজুল ইসলাম উদ্দেশ্যমূলকভাবে তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মো. এনায়েত হোসেনের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন। অভিযোগটি ভুয়া প্রমাণিত হবে বুঝতে পেরে পরে তিনি তদন্ত কমিটির কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেন। অসত্য অভিযোগ দায়ের করায় রিয়াজুল ইসলামের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮-এর বিধি ৩(খ) অনুযায়ী ‘অসদাচরণ’ এর অভিযোগে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়। একই বিধিমালার ১২(১) অনুযায়ী তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
এরপর কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করা হলে রিয়াজুল ইসলাম জবাব দেন এবং ব্যক্তিগত শুনানির আবেদন করেন। গত ১৬ সেপ্টেম্বর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানি শেষে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় শাস্তি হিসেবে তাকে বেতন গ্রেডের নিম্নতর ধাপে অবনমন করা হয়। জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫-এর ৯ম গ্রেড (বেতন স্কেল ২২,০০০-৫৩,০৬০ টাকা) অনুযায়ী তার নতুন বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৯ হাজার ৫৭০ টাকা। একই সঙ্গে তার সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করা হয়।
ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মো. এনায়েত হোসেনকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে হয়রানি করার কারণে তার বিরুদ্ধে লঘুদণ্ড হিসেবে বেতন গ্রেডের নিম্নতর ধাপে অবনমিত করার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
ভোরের আকাশ/তা.কা
সংশ্লিষ্ট
বাংলাদেশের জন্য প্রথমবারের মতো বিদেশি ঋণ গ্রহণে সীমা বেঁধে দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সংস্থাটির শর্ত অনুযায়ী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ৮৪৪ কোটি ডলার পর্যন্ত ঋণ নিতে পারবে বাংলাদেশ।গত জুনে ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির ১৩৪ কোটি ডলার ছাড়ের পর আইএমএফ ‘বাংলাদেশ কান্ট্রি রিপোর্ট’ প্রকাশ করে। সেখানে পরবর্তী কিস্তি পেতে যেসব শর্ত মানতে হবে, তার মধ্যে নতুন এ সীমা অন্যতম।শর্ত অনুযায়ী, ত্রৈমাসিকভিত্তিক ঋণের পরিমাণও নির্ধারণ করে দিয়েছে সংস্থাটি। প্রথম তিন মাসে সর্বোচ্চ ১৯১ কোটি, ছয় মাস শেষে ৩৩৪ কোটি, নয় মাসে ৪৩৪ কোটি এবং পুরো অর্থবছরে সর্বোচ্চ ৮৪৪ কোটি ডলার পর্যন্ত ঋণ নেওয়া যাবে। প্রতি তিন মাস অন্তর বিদেশি ঋণের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করবে আইএমএফ।অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) জানিয়েছে, গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সরকার ৮৫৭ কোটি ডলার বিদেশি ঋণ নিয়েছিল। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইতে ঋণ নেওয়া হয়েছে ২০ কোটি ২৪ লাখ ডলার। অর্থাৎ গত অর্থবছরের তুলনায় এবার কিছুটা কম ঋণ নিতে হবে।আইএমএফ ২০২৩ সালে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করলেও তখন এমন কোনো শর্ত ছিল না। তবে গত জুনে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি ছাড়ের সময় ঋণের পরিমাণ আরও ৮০ কোটি ডলার বাড়ানো হয় এবং মেয়াদ ছয় মাস বাড়ে। এরপর থেকেই নতুন শর্ত যুক্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ এ কর্মসূচি থেকে মোট ৩৬০ কোটি ডলার পেয়েছে।অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আইএমএফের সর্বশেষ ঋণ স্থায়িত্ব বিশ্লেষণ (ডিএসএ) অনুসারেই এ সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। ওই বিশ্লেষণে বাংলাদেশকে টানা দুই অর্থবছর ধরে ‘মধ্যম ঝুঁকি’র দেশ হিসেবে মূল্যায়ন করা হয়েছে। আগে ‘কম ঝুঁকি’ বিবেচনায় থাকলেও রপ্তানি ও রাজস্ব আয়ের তুলনায় ঋণ পরিশোধের চাপ বেড়ে যাওয়ায় এখন ঝুঁকির মাত্রা বাড়ানো হয়েছে।ডিএসএ অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ঋণ-রপ্তানি অনুপাত দাঁড়ায় ১৬২.৭ শতাংশে, যা প্রাক্কলিত ১১৬-১১৮ শতাংশের তুলনায় অনেক বেশি। বিদেশি ঋণ-রাজস্ব অনুপাতও বেড়েছে। ফলে নতুন করে ঋণ নেওয়ার সক্ষমতা সীমিত হয়েছে।ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় মেগা প্রকল্প ও করোনা খরচের কারণে বিদেশি ঋণ ব্যাপকভাবে বেড়ে গিয়েছিল। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ১৩ বছরে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ তিনগুণেরও বেশি বেড়েছে—যা দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে দ্রুত ঋণ বৃদ্ধির রেকর্ড।সরকারি তথ্য বলছে, ২০০৯-১০ অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণ ছিল ২০৩ কোটি ডলার, যা ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দাঁড়িয়েছে ৮০২ কোটি ডলারে। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মকর্তাদের মতে, অতীতের তুলনায় এখন ঋণ নেওয়ার প্রবণতা কিছুটা কমেছে।ভোরের আকাশ/তা.কা
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ দাবির মিথ্যা অভিযোগ করে শেষ পর্যন্ত সাময়িক বরখাস্ত হয়েছিলেন প্রতিষ্ঠানটির সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজুল ইসলাম। পাশাপাশি বেতন গ্রেডের নিম্নতর ধাপে অবনমিত করা হয়েছে। যদিও পরবর্তীতে বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে।অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব মো. আবদুর রহমান খানের সই করা আদেশ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। গত ২৫ সেপ্টেম্বর এ বিষয়ে আদেশ করা হয়েছে বলে শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির এক কর্মকর্তা।বরখাস্তের আদেশ সূত্রে জানা যায়, জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. এনায়েত হোসেনের বিরুদ্ধে তার অধস্তন কর্মকর্তা সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজুল ইসলাম এক লাখ টাকা ঘুষ দাবির অভিযোগ করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে অধিদপ্তর থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্তে প্রমাণিত হয় যে, মো. রিয়াজুল ইসলাম উদ্দেশ্যমূলকভাবে তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মো. এনায়েত হোসেনের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন। অভিযোগটি ভুয়া প্রমাণিত হবে বুঝতে পেরে পরে তিনি তদন্ত কমিটির কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেন। অসত্য অভিযোগ দায়ের করায় রিয়াজুল ইসলামের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮-এর বিধি ৩(খ) অনুযায়ী ‘অসদাচরণ’ এর অভিযোগে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়। একই বিধিমালার ১২(১) অনুযায়ী তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।এরপর কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করা হলে রিয়াজুল ইসলাম জবাব দেন এবং ব্যক্তিগত শুনানির আবেদন করেন। গত ১৬ সেপ্টেম্বর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানি শেষে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় শাস্তি হিসেবে তাকে বেতন গ্রেডের নিম্নতর ধাপে অবনমন করা হয়। জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫-এর ৯ম গ্রেড (বেতন স্কেল ২২,০০০-৫৩,০৬০ টাকা) অনুযায়ী তার নতুন বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৯ হাজার ৫৭০ টাকা। একই সঙ্গে তার সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করা হয়।ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মো. এনায়েত হোসেনকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে হয়রানি করার কারণে তার বিরুদ্ধে লঘুদণ্ড হিসেবে বেতন গ্রেডের নিম্নতর ধাপে অবনমিত করার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।ভোরের আকাশ/তা.কা
টানা আট দফা বাড়ার পর কমতে শুরু করেছে স্বর্ণের দাম। তিন দফা বাড়ার পর আবারও ভরিপ্রতি দামে কাটছাঁট করেছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাতে নতুন দাম ঘোষণা করা হয়, যা রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) থেকে কার্যকর হবে।বাজুসের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী—প্রতি ভরি ২২ ক্যারেট স্বর্ণের দাম কমে দাঁড়িয়েছে ১,৯২,৯৬৯ টাকা।২১ ক্যারেট স্বর্ণের দাম হবে ১,৮৪,১৯৮ টাকা।১৮ ক্যারেটের দাম ১,৫৭,৮৮৪ টাকা।সনাতন পদ্ধতিতে প্রতি ভরি স্বর্ণ বিক্রি হবে ১,৩১,০৪৫ টাকায়।এর আগে শনিবার পর্যন্ত প্রতি ভরি ২২ ক্যারেট স্বর্ণের দাম ছিল ১,৯৪,৮৫৯ টাকা, ২১ ক্যারেট ১,৮৬,০০৬ টাকা, ১৮ ক্যারেট ১,৫৯,৪২৪ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতিতে ১,৩২,৩৫২ টাকা।বাজুস জানিয়েছে, পরবর্তী ঘোষণা না আসা পর্যন্ত এই দাম কার্যকর থাকবে। তবে বিক্রয়মূল্যের সঙ্গে ৫ শতাংশ ভ্যাট এবং ন্যূনতম ৬ শতাংশ মজুরি যোগ হবে। গয়নার ডিজাইন ও মানভেদে মজুরি ভিন্ন হতে পারে। ভোরের আকাশ/হ.র
বাংলাদেশের অপার সম্ভাবনাময় আটোমোবাইল ও কৃষি যান্ত্রিকরণের খাত খুলে দিতে পারে অর্থনীতির নতুন দিগন্ত। এই সেক্টরের প্রতি মানুষের আকর্ষণ ও বাজার পূর্বের তুলনায় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ কৃষিনির্ভর হওয়ায় এই সেক্টরের প্রসার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জিকা) গবেষণায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ইঞ্জিনচালিত গাড়ির বিক্রি গড়ে এক বছরে ১ লাখ পর্যন্ত সম্ভব। অথচ বর্তমানে দেশে গড়ে প্রতি বছর ১২ হাজার থেকে ৩৫ হাজার গাড়ি বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে কৃষিপ্রযুক্তি খাতে স্থানীয় বাজার রয়েছে ১২ বিলিয়ন বা ১ হাজার ২০০ কোটি ডলারের। এর অর্ধেকও বাংলাদেশ কাজে লাগাতে পারছে না। বর্তমানে বিশ্বে অটোমোবাইলে প্রায় ৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাজার রয়েছে। স্পেয়ার পার্টসের বাজার প্রায় ৫০০ বিলিয়ন ডলার। যেখানে গার্মেন্টস খাতের মতো প্রসার হওয়ার সুযোগ রয়েছে। এর জন্য সরকারি সহায়তা প্রয়োজন রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে বন্ডেড ওয়্যার হাউস ও রপ্তানি প্রণোদনার মতো সুবিধা। যেটা গার্মেন্টসের রয়েছে। এর মাধ্যমে অল্প দামে বিশ্ব মার্কেটে প্রবেশ করা সহজ হবে।অর্থনীতির বিশ্লেষকরা বলেছেন, বাংলাদেশে অটোমোবাইল শিল্পের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে ১২.৫৬ বিলিয়ন ডলার এক্সপোর্ট আয় করা সম্ভব। অটোমোবাইল খাতের ওপর শতাধিক শিল্প খাত নির্ভরশীল। অটোমোবাইল খাতে গতি এলে ওইসব শিল্পেও গতি বাড়বে। নতুন করে ১০ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান সুযোগ তৈরি হবে। সমগ্র অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। কৃষিপ্রযুক্তি খাতে স্থানীয়ভাবে দেশে প্রায় ২ হাজার থেকে ২৫শ’ ওয়ার্কশপ রয়েছে, এখানে লিড করছে আলিম ইন্ডাষ্ট্রিজ। এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় সম্ভাবনাময় যায়গা এখন কৃষি যন্ত্রপাতি। এ বিষয় কৃষিপ্রযুক্তি উদ্যোক্তা আলিমুল এছান চৌধুরী বলেন, আমরা যারা আধুনিক কৃষি সরঞ্জাম, যন্ত্রপাতি তৈরি করি তাদের জন্য সরকার সুন্দর নীতিমালা দিলে আমরা এই সেক্টরকে অনেক দূর এগিয়ে নিতে পারব। আমাদের দাবি হচ্ছে, আমাদের ব্যবসা মৌসুমভিত্তিক, কৃষি মেশিনের ফলে অল্পসময়ে প্রডাক্টিভিটি বাড়ছে। আমাদের সরকার থেকে স্পেশাল বরাদ্দ ও কম সুদে লোন সহজ করলে আমরা দেশের জন্য অনেক কিছু করতে পারবো।এদিকে শিল্প মন্ত্রণালয় প্রণীত সর্বশেষ অটোমোবাইল নীতিমালায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ পৃথিবীর দ্রুত উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। গত ১০ বছরে দেশের শিল্প উৎপাদন সূচক বেড়েছে গড়ে ১০ শতাংশের বেশি। বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে অটোমোবাইল শিল্পকে বিবেচনা করা হয়েছে। তাই এ শিল্প খাতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত হলে উৎপাদনশীলতা বাড়ানো সম্ভব। আধুনিক প্রযুক্তির অভাবে ইঞ্জিনচালিত যান সম্পূর্ণভাবে উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে না। কিছু প্রতিষ্ঠান সংযোজনে আসছে। এখানেও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা বাড়াতে হবে। বিনিয়োগকারীদের পর্যাপ্ত পুঁজি না থাকাও অটোমোবাইল খাতের বিকাশে বাধা। ইঞ্জিনচালিত যানবাহনের দাম কমাতে দেশেই পরিবেশবান্ধব যন্ত্রাংশ উৎপাদন করতে হবে। এসব সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হলে গতিশীল অটোমোবাইল শিল্প খাত গড়ে তোলা সম্ভব। অটোমোবাইল খাতের আমদানি নির্ভরশীলতা কমবে।গবেষণা প্রতিষ্ঠান লাইটক্যাসেল পরিচালিত এক সমীক্ষা থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারের ক্ষেত্রে এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে। বাংলাদেশে প্রতি ১ হাজার মানুষের বিপরীতে ২ দশমিক ৫টি গাড়ি রয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে ব্যক্তিগত গাড়ির বাজার ৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।শিল্প মন্ত্রণালয়ের তৈরি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের বেশির ভাগ গাড়ির চাহিদা পূরণ করে প্রায় ১ হাজার রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান। স্থানীয়ভাবে সম্পূর্ণ গাড়ি উৎপাদন করার চেয়ে সংযোজনশিল্পে আছে বেশি। দেশে এখন ১৪ থেকে ১৫টি বড় অটোমোবাইল পরিবেশক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তাদের মধ্যে পাঁচ-ছয়টি প্রতিষ্ঠানের রয়েছে নিজস্ব সংযোজন কারখানা। বাকিরা শুধু পরিবেশক বা আমদানিকারক।বাংলাদেশে অটোমোবাইলের প্রধান প্রতিষ্ঠানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে : ইফাদ অটোস, আফতাব অটো, নাভানা, র্যাংগস মটরস, রনকন মোটরস, নিটল মোটর, রানার মোটর, এজি অটোমোবাইল, এসিআই মটরস ইত্যাদি।অর্থনীতিবিদ ড. এম মাসরুর রিয়াজ বলেন, অটোমোবাইল খাতে স্থানীয় বাজারের আকার প্রায় ৮ বিলিয়ন বা ৮০০ কোটি ডলার এবং খাতটির বার্ষিক প্রবৃদ্ধি প্রায় ২৮ শতাংশ। বর্তমানে এ খাতে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ কোটি ডলারের রপ্তানি হয়। আগামী ৫ থেকে ৭ বছরের মধ্যে তা ১ হাজার ২০০ কোটি ডলারে উন্নীত করার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশ্বে এগ্রিকালচার মেশিনারি খাতের বাজার ১ দশমিক ৯৭ ট্রিলিয়ন বা ১ লাখ ৯৭ হাজার কোটি ডলারের। বাংলাদেশ এখনো সেই বাজারে তেমন ভূমিকা রাখতে পারেনি। স্থানীয় বাজারেই হালকা প্রকৌশলের সম্ভাবনা প্রায় ১২ বিলিয়ন বা ১ হাজার ২০০ কোটি ডলার। এর অর্ধেকও আমরা কাজে লাগাতে পারছি না।এদিকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্যানুসারে, দেশে মোটরচালিত যানের অধিকাংশই দুই বা তিন চাকার, যেগুলোর বেশির ভাগের নিবন্ধন নেই। দেশে নিবন্ধিত মোটরচালিত যানের সংখ্যা ৫০ লাখের বেশি। মোট নিবন্ধিত অটোমোবাইল খাতের মোটরচালিত পরিবহনের প্রায় ৬০ শতাংশ দুই চাকাবিশিষ্ট। বাকি ১০ শতাংশ যাত্রীবাহী গাড়ি। এর বাইরে বাস, ট্রাক, পিকআপ, অটোরিকশা, ভ্যান এবং মাইক্রোবাস মিলে আছে বাকি অংশ।এ বিষয় অটোমোবাইল সমিতির সভাপতি রানার গ্রুপের চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান খান বলেন, বাংলাদেশে এই মুহূর্তে ১২ বিলিয়ন ডলার লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং এর মার্কেট রয়েছে। তার মধ্যে পঞ্চাশ শতাংশ আমরা কাভার করতে পারি। এগ্রো মেশিনারি মার্কেট সাইজ ৭৮.৪৫ বিলিয়ন টাকা, অথচ আমরা প্রডাকশন করছি ৪৫.৫৬ বিলিয়ন টাকা। এটা একটা বড় গ্যাপ, তবে মনে রাখতে হবে এগ্রিকালচার সেক্টর আগামীতে আর বেশি কিছু দিতে পারবে না। যদি না অটোমেশনে আমরা না যাই, আমাদের জমি কিন্তু আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে। তাই অটোমেশনের বিকল্প নাই।তিনি বলেন, আমরা দেখেছি অটোমোবাইল ইন্ডাষ্ট্রিজে ২০২২ সালে ৫ লক্ষ ৭৩ হাজার রেজিষ্ট্রেশন হয়েছে। তার মধ্যে ৫ লক্ষই হলো অটোমোবাইল এবং এই ৫ লক্ষ্যর মধ্যে রয়েছে দুই চাকার মটর ও তিন চাকার অটোমোবাইল। খানে দেখা যাচ্ছে ৯৮শতাংশ ইমপোর্টেড, তাই আমাদের সম্ভাবনা অনেক। এই মুহূর্তে আমাদের কোম্পানিগুলোর দরকার সক্ষমতা। এই সেক্টরের ওপরে কিন্তু আগামীর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সাসটেইনেবিলিটি পুরোপুরি নির্ভর করছে। লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং ডেভলপমেন্টস মানে আমাদের অটোমোবাইল ও এগ্রি মেশিনারিজের সক্ষমতা বৃদ্ধি। অমরা ইমপোর্ট কমিয়ে কর্মসংস্থান বাড়িয়ে এক্সপোর্ট করতে পারবো। লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং এর জন্য দরকার সরকারি, বেসরকারি সংশ্লিষ্ট সকলের সমন্বিত প্রচেষ্টা। এই সেক্টরের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে আমরা সরকারের সাথে বৈঠক করবো।মাহফুজুর রহমান খান বলেন, আমি আমদানির বিষয়ে নজর দেই না। আমি ম্যানুফেকচারিং নিয়ে আসতে আগ্রহী, আমদানির প্রতি আমার কোনো আগ্রহ নেই। তবে যদি কোনো কোম্পানি আমদানি দিয়ে শুরু করার পর উৎপাদনের দিকে যায়, সেটা সাধুবাদ যোগ্য। আজ থেকে ৫ বছর আগে অটো মোবাইল পলিসি ছিল না। ওই সময়ে গাড়ি উৎপাদনে প্রণোদনার ব্যবস্থা ছিল না। এখন প্রণোদনা আসছে, ভ্যাট-ট্যাক্সের সুবিধা আসছে। এমনকি (ইলেকট্রিক) রেজিস্ট্রেশনেও বাড়তি সুবিধা থাকবে। পুরো শিল্প দাঁড়াতে সময় লাগবে। যত সময় যাবে, ততই প্রতিবন্ধকতা দূর হবে।এ খাতের অন্য উদ্যোক্তরা বলেন, হাফিজুর রহমান খানের সাত বছরের প্রচেষ্টায় ২০১৮ সালে মটোর সাইকেল আটো পলিসি হয়। সেখানে হোন্ডা থেকে শুরু করে গ্লোবাল কোম্পানিগুলো ৩ হাজার কোটি টাকার ইনভেস্টে পাবনাতে ও বগুড়াতে কার্যক্রম শুরু হয়ে যায়। ২০২২ সালে একটি পলিসি করা হয়েছে। এই অটোমোবাইল ও এগ্রো মেশিনারিজ মেনুফ্যাকচারিংয়ের ওপরে যদি সরকার থেকে ১০ বছরের একটা প্লানিং সাপোর্ট পাওয়া যায়। থাইলেন্ড, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া কিন্তু জাপানিজ প্রোডাক্টের যত গাড়ি মেনুফেকচারিং আছে তার ৮০ শতাংশ কম্পোনেন্ট কিন্তু তারা করে। বাংলাদেশে অধিকাংশ বাস, ট্রাক ভারত থেকে আসে, তাই আমরাও এই কাজটা করতে পারি।এর আগে গত ২০ সেপ্টেম্বও রাজধানীর তেজগাঁওয়ে দেশে প্রথম বারের মতো শুরু হয় দু’দিন ব্যাপী ‘অটোমোবাইলস অ্যান্ড এগ্রো-মেশিনারি ফেয়ার ২০২৫- রোড টু মেড ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক মেলা। বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান।তিনি বলেন, বাংলাদেশের তিনটি অগ্রাধিকার প্রাপ্ত সেক্টর হল অটোমোবাইলস, এগ্রোমেশিনারি এবং লাইট ম্যানুফ্যাকচারিং। এগুলো আমাদের ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পের বিকাশ, রপ্তানি বহুমুখীকরণ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের জাতীয় শিল্পনীতির উদ্দেশ্য দেশীয় উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি বিদেশী বিনিয়োগকে উৎসাহিত করে বাংলাদেশকে আঞ্চলিক উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা। যেটা সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য। ইতোমধ্যে বিভিন্ন নীতি সহায়তা ট্যাক্স সহায়তা এবং অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে সরকার সেই কাজটি এগিয়ে নিচ্ছে। আমরা প্রতিটা ক্ষেত্রে মেড ইন বাংলাদেশ হিসেবে যে পণ্যগুলো আসছে তাকে বিশ্বমানের ব্র্যান্ড প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা চলছে। এজন্য প্রয়োজন উৎপাদন ভিত্তিক শিল্পের বিকাশ, প্রযুক্তির স্থানান্তর, গবেষণা ও উদ্ভাবন এবং দক্ষ মানব সম্পৃণ গড়ে তোলা।ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকিন আহমেদ বলেন, করোনার আঘাত আসার আগে বাংলাদেশের অটোমোবাইল বাজার গড়ে বার্ষিক ১৫-২০ শতাংশ হারে সম্প্রসারিত হচ্ছিল। অটো পার্টসের বাজার সম্প্রসারণের হার ছিল গড়ে ১২ থেকে ১৫ শতাংশ। গত ১০ বছরে দেশের সড়ক, মহাসড়ক আগের চেয়ে ভালো হয়েছে। ব্রিজ ও টানেল এবং আঞ্চলিক পর্যায়ের রাস্তাঘাটও আগের চেয়ে ভালো। এতে বাংলাদেশে দুই চাকা, যাত্রীবাহী গাড়ি, হালকা ও ভারী বাণিজ্যিক পরিবহন কিংবা তিন চাকার বাহনের মতো অটোমোবাইলেরও চাহিদা বাড়ছে। এ খাতের বিরাজমান সমস্যার সমাধান করতে পারলে অটোমাবাইল খাতের সম্ভাবনা আরো বাড়বে।আকিজ মোটরসের সিইও শেখ আমিনুদ্দিন বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদন না হলেও আমাদের এখানে সংযোজনের মাধ্যমে রপ্তানির সুযোগ আছে। এটা পৃথিবীর অনেক দেশেই করে থাকে। আমাদের দেশে সংযোজন করে উন্নত বিশ্বে সেগুলো রপ্তানি করলে সেখানে শুল্ক সুবিধা পাওয়া যাবে। পাশাপাশি আমরা নিজেরাও পার্শ্ববর্তী দেশ নেপাল ও ভুটানে রপ্তানির চিন্তাভাবনা করছি। এ ব্যাপারে চলতি বছরই কাজ শুরু করব বলে আশা করছি।নিটল-নিলয় গ্রুপের চেয়ারম্যান আব্দুল মাতলুব আহমাদ বলেন, স্থানীয়ভাবে অটোমোবাইল শিল্প খাতের বিকাশে পৃথক অটোমোবাইল শিল্প এলাকা প্রয়োজন। দেশে অটোমোবাইল যন্ত্রাংশ উৎপাদন করতে না পারলে অটোমোবাইলশিল্প খাতে গতি আসবে না। এ খাতের বিকাশে সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।উত্তরা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মতিউর রহমান বলেন, অটোমোবাইল খাতের যানের চাহিদা বাড়লেও এখনো এই খাত অনেক পিছিয়ে আছে। এই খাতকে এগিয়ে নিতে দীর্ঘমেয়াদি নীতিমালা ও প্রণোদনা প্রণয়ন প্রয়োজন। অন্তত ৫-১০ বছরের টেকসই শুল্কনীতি প্রণয়ন করতে হবে।এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আবদুল মজিদ বলেন, অটোমোবাইল খাতে উচ্চ শুল্ক, কর ও ভ্যাটের কারণে এ শিল্পের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। শুল্ক, কর ও ভ্যাট কমানো হলে অটোমোবাই খাতে বিনিয়োগকারী বাড়বে। এতে রাজস্ব আদায় বাড়বে। তাই সরকারকে বিষয়টি ভেবে দেখা প্রয়োজন।ভোরের আকাশ/এসএইচ