ভোরের আকাশ ডেস্ক
প্রকাশ : ০৩ অক্টোবর ২০২৫ ১২:৩৫ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশে গবাদিপশুর ভাইরাসজনিত রোগগুলোর মধ্যে অ্যানথ্রাক্স অন্যতম। তবে বর্তমানে দেশের উত্তর অঞ্চলের মানুষও এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
অ্যানথ্রাক্স হলো ব্যাসিলাস অ্যানথ্রাসিস নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা ঘটিত একটি রোগ; যা প্রথমত গবাদিপশুকে আক্রান্ত করে। পরে আক্রান্ত পশুর মাধ্যমে মানুষও আক্রান্ত হয়। তবে মানুষ থেকে মানুষে এ রোগ ছড়ায় না। তাই অ্যানথ্রাক্সকে জুনোটিক ডিজিজ বলা হয়।
এটি বাংলায় ‘তড়কা রোগ’ নামে পরিচিত। এটি তীব্র ও গুরুতর সংক্রামক রোগ। তাই জেনে নিন অ্যানথ্রাক্সের লক্ষণ, প্রতিরোধ এবং কীভাবে মানবদেহে ছড়ায়।
অ্যানথ্রাক্স কীভাবে মানবদেহে ছড়ায়
গবাদিপশু থেকে তিন ভাবে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে এ রোগ সংক্রমণ ঘটায়:
ত্বকের মাধ্যমে: পশুজাত পণ্য (পশম, হাড়) থেকে ত্বকের কাটা বা আঁচড়ের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে।
শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে: ব্যাকটেরিয়ার রেণু শ্বাস নেওয়ার মাধ্যমে ফুসফুসে প্রবেশ করে।
খাবারের মাধ্যমে: অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত পশুর মাংস খাওয়ার কারণে সংক্রমণ হতে পারে।
অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু মূলত ছড়ায় আক্রান্ত প্রাণীর মাধ্যমে। এ জীবাণু মাটিতেও থাকতে পারে। কেউ যদি অসুস্থ প্রাণীর মাংস খায় কিংবা শ্বাসের মাধ্যমে এ রোগের জীবাণু তার শরীরে প্রবেশ করে, তাহলে তিনি এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। এ ছাড়া ত্বকে কোনো ক্ষত থাকলে সেই ক্ষত দিয়েও অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু শরীরে প্রবেশ করতে পারে।
উপসর্গ
১. কারো দেহে অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু কীভাবে প্রবেশ করছে, এর ওপর উপসর্গ নির্ভর করে।
২. মাংস খাওয়ার মাধ্যমে কেউ আক্রান্ত হলে দেখা দেয় বমিভাব, বমি, রক্তবমি, পেট ব্যথা, মাথা ব্যথা, ক্ষুধামন্দা, জ্বর, গলা ব্যথা বা ঘাড় ফুলে যাওয়ার মতো সমস্যা। এ ছাড়া রক্তমিশ্রিত পাতলা পায়খানা হতে পারে।
৩. শ্বাসের মাধ্যমে অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত হলে দেখা দিতে পারে গলা ব্যথা, জ্বর, ক্লান্তি, পেশি ব্যথার মতো সাদামাটা উপসর্গ। এরপর বুকে অস্বস্তি ও শ্বাসকষ্ট, বমিভাবও হতে পারে। শুধু তাই নয়, কফের সঙ্গে রক্ত আসতে পারে। ঢোঁক গিলতে গেলে গলা ব্যথা হতে পারে। জ্বরের তীব্রতাও বাড়তে পারে। একইসঙ্গে রক্তচাপ কমে যেতে পারে।
৪. ত্বকের মাধ্যমে এ রোগ ছড়ালে ত্বকে পোকার কামড়ের মতো ফোলা ধরনের ক্ষত সৃষ্টি হয়। ক্ষতস্থানের মাঝখানটা কালো হয়ে যায় এবং আশপাশেও ফুলতে থাকে। একই সঙ্গে চুলকানিও হয়। শরীরে জ্বরও থাকে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) প্যারাসাইটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সহিদুজ্জামান বলেন, ‘অ্যানথ্রাক্স রোগের মূল কারণ হলো ব্যাসিলাস অ্যানথ্রাসিস নামক ব্যাকটেরিয়া। এ ব্যাকটেরিয়া দীর্ঘদিন মাটিতে সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে এবং অনুকূল পরিবেশ পেলে সক্রিয় হয়ে গবাদিপশুর মধ্যে সংক্রমণ ঘটায়। সংক্রমণ সাধারণত সংক্রমিত চারণভূমি, দূষিত পানি, দূষিত খাবার বা মৃত পশুর সংস্পর্শে আসার মাধ্যমে ঘটে। এটি মানুষের মধ্যেও ছড়াতে পারে। বিশেষত পশুর মৃতদেহ বা সংক্রমিত মাংসের সংস্পর্শে এলে।’
এ রোগ থেকে বাঁচতে করণীয় সম্পর্কে এই অধ্যাপক বলেন, ‘অ্যানথ্রাক্স থেকে বাঁচার প্রধান উপায় হলো সংক্রমিত প্রাণী ও পশুজাত পণ্যের সংস্পর্শ এড়ানো, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং অসুস্থ পশুর মাংস কাঁচা বা কম রান্না করা অবস্থায় খাওয়া থেকে বিরত থাকা।’
তিনি আরও বলেন, ‘গবাদিপশুকে প্রতি বছর একবার অ্যানথ্রাক্স টিকা দিলে রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকলে আশপাশের সব গরুকে টিকা দেওয়া উচিত। এ ছাড়া চারণভূমি, খাবার ও পানির উৎস পরিষ্কার রাখা জরুরি। সন্দেহজনক মৃত পশু বা নোংরা জায়গা থেকে পশুকে দূরে রাখা জরুরি। আক্রান্ত পশুর জন্য বিশেষ প্রতিষেধক সিরাম আছে, যা প্রাণী চিকিৎসক প্রয়োগ করতে পারেন। তবে রেজিস্টার্ড প্রাণী চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পশুকে চিকিৎসা করাতে হবে।’
মানুষের শরীরে অ্যানথ্রাক্সের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে বলেও জানান ড. মো. সহিদুজ্জামান।
অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধের উপায়
১. খুব ভালোভাবে সেদ্ধ করে রান্না করা হয়নি এমন কোনো মাংস খাওয়া যাবে না।
২. ত্বকে কোনো কাটাছেঁড়া থাকলে কাঁচা মাংস খালি হাতে নাড়াচাড়া করা থেকে বিরত থাকবেন।
৩. গবাদিপশু পালনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকলে পশুকে নিয়মমাফিক অ্যানথ্রাক্সের টিকা দিতে হবে।
৪. যিনি অসুস্থ পশুর দেখাশোনা করেন, তার সুরক্ষাসামগ্রী, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং যত্নের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
৫. অসুস্থ গবাদিপশুর মাংস খাওয়া, কাটাকাটি করা বা নাড়াচাড়া করা থেকে বিরত থাকুন।
৬. অ্যানথ্রাক্স নিয়ন্ত্রণে সচেতন হওয়া জরুরি। এটি ভয়ংকর সংক্রমণ হলেও সঠিক প্রতিরোধ ও চিকিৎসা নিলে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
ভোরের আকাশ/মো.আ.