ছবি : ভোরের আকাশ
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, এনসিপি আগামী নির্বাচনে শাপলা প্রতীক নিয়েই অংশ নেবে।
রোববার (৫ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে দেবীগঞ্জ পৌরসভার টোল প্লাজা সংলগ্ন উপজেলা এনসিপির কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সারজিস আলম বলেন, আমরা যেহেতু আইনগতভাবে শাপলা প্রতীকের অধিকারী, তাই আমরা অবশ্যই শাপলাই চাই। এমনকি তাদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে আমরা লাল শাপলা কিংবা সাদা শাপলার কথাও বলেছি। কিন্তু এর বাইরে এনসিপি অন্য কোনো প্রতীকের কথা চিন্তাও করছে না। এনসিপি আগামী নির্বাচনে শাপলা প্রতীক নিয়েই অংশ নেবে।
তিনি আরও বলেন, যেহেতু আইনগতভাবে শাপলা প্রতীক পেতে এনসিপির কোনো সমস্যা নেই। তাই এখানে নির্বাচন কমিশন স্পষ্টভাবে স্বেচ্ছাচারিতা করছে। নির্বাচন কমিশনের এই স্বেচ্ছাচারিতা নিশ্চয়ই কোনো প্রভাবকের প্রভাবে ঘটছে। হতে পারে কোনো রাজনৈতিক দল, সংস্থা কিংবা প্রতিষ্ঠানের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তারা এনসিপিকে শাপলা প্রতীক দিচ্ছে না।
পিআর পদ্ধতি প্রসঙ্গে সারজিস বলেন, এনসিপি স্পষ্টভাবে বলেছে—পিআর পদ্ধতি উচ্চকক্ষে প্রয়োগ করা হোক। আমরা মনে করি, নিম্নকক্ষে পিআর পদ্ধতি চালুর মতো পরিবেশ, মানসিকতা ও স্থিতিশীলতা এখনো বাংলাদেশে পুরোপুরি তৈরি হয়নি। তাই প্রথমে উচ্চকক্ষে পিআর বাস্তবায়ন হোক, তার ইতিবাচক ফলাফল দেখলে পরে নিম্নকক্ষেও তা বিবেচনা করা যেতে পারে।
এর আগে, এদিন রাত ৮টায় দেবীগঞ্জ উপজেলা এনসিপির প্রধান সমন্বয়কারী মো. মাসুদ পারভেজের সভাপতিত্বে দলীয় নেতাকর্মী এবং বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির সদস্যদের নিয়ে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন উপজেলা এনসিপির যুগ্ম সমন্বয়কারী মো. ফজলুল করিম, যুব শক্তির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ওয়াসিস আলম, পঞ্চগড় জেলা যুব শক্তির সাধারণ সম্পাদক জিএম আলামিন খন্দকার প্রমুখ।
ভোরের আকাশ/মো.আ.
সংশ্লিষ্ট
বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘দ্রুতই দেশে ফিরে আসব এবং নির্বাচনে অংশ নেব।’দীর্ঘ প্রায় দুই দশক পর কোনও গণমাধ্যমে প্রথমবারের মতো মুখোমুখি সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন। বিবিসি বাংলার নেওয়া এই সাক্ষাৎকারের প্রথম পর্বে তারেক রহমান বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, নির্বাচন এবং নিজের ফেরার সম্ভাবনা নিয়ে বিস্তারিত কথা বলেন।সোমবার (৬ অক্টোবর) সকালে সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করা হয়েছে।বিবিসি বাংলার নেওয়া পুরো সাক্ষাৎকারটির প্রথম পর্ব তুলে ধরা হলো:বিবিসি বাংলা: তারেক রহমান আপনাকে অনেক ধন্যবাদ বিবিসি বাংলার সাথে যোগ দেবার জন্য।তারেক রহমান: আপনাদেরকেও অনেক ধন্যবাদ, আমাকে কথা বলার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য।বিবিসি বাংলা: আপনি কেমন আছেন? আপনার সময় কেমন যাচ্ছে?তারেক রহমান: আলহামদুলিল্লাহ আমি শারীরিকভাবে ভালো আছি। সময় তো স্বাভাবিকভাবে ব্যস্তই যাচ্ছে। ফিজিক্যালি হয়তো আমি এই দেশে আছি, বাট মন মানসিকতা সবকিছু মিলিয়ে তো আমি গত ১৭ বছর ধরে বাংলাদেশেই রয়ে গিয়েছি।বিবিসি বাংলা: আমরা এমন একটা সময় আপনার সাথে কথা বলছি যখন বাংলাদেশ ইতিহাসে একটা গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে বললে ভুল বলা হবে না। ২০২৪ সালে একটি ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের দেড় দশকের শাসনের অবসান হয়েছে। আর কয়েক মাসের মধ্যেই বাংলাদেশ একটি নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে আপনি আপনার অনেক দলীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন, কথা বলেছেন, নিয়মিতই কথা বলে যাচ্ছেন। কিন্তু গণমাধ্যমের সাথে আপনি এই দীর্ঘ সময় কথা বলেননি। এতদিন ধরে আপনি কথা বলেননি কেন?তারেক রহমান: ব্যাপারটা বোধহয় এরকম না, ব্যাপারটা বোধয় একটু ভিন্ন। আসলে আমি কথা ঠিকই বলেছি। আমি দীর্ঘ ১৭ বছর এখানে আছি এই দেশে, প্রবাস জীবনে, তবে আমার উপরে যখন দলের দায়িত্ব এসে পড়েছে তারপর থেকে আমি গ্রামে-গঞ্জে আমার নেতাকর্মীসহ তাদের সাথে বিভিন্ন পর্যায়ে সাধারণ মানুষ যখন যেভাবে অংশগ্রহণ করেছে আমি সকলের সাথে কথা বলেছি।আপনারা নিশ্চয়ই জানেন বিগত স্বৈরাচার সরকারের সময় কোর্ট থেকে রীতি মতন একটা আদেশ দিয়ে আমার কথা বলার অধিকারকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। আমি যদি গণমাধ্যমে কিছু বলতে চাইতাম, হয়তো গণমাধ্যমের ইচ্ছা ছিল ছাপানোর, গণমাধ্যম সেটি ছাপাতে পারতো না।আমি একবার প্রেসক্লাবে কথা বলেছিলাম। তখন পরের দিন দেখলাম যে প্রেসক্লাবে একটি তখনকার যেই প্রেসক্লাবের যারা সদস্য ছিলেন বা কমিটি ছিল, তারা একটি মিটিং ডেকে একটি সভা করে সিদ্ধান্ত নেয় যে, তারা তখন আমাকে আইনের দৃষ্টিতে ফেরারী বলা হয়েছিল যে, সেরকম কোন ব্যক্তিকে তারা প্রেস ক্লাবে কথা বলতে দিবে না। এভাবে তারা চেষ্টা করেছিল আমার কথা বন্ধ করে রাখতে।আমি কথা বলেছি, সামাজিক মাধ্যম সহ বিভিন্ন পন্থায় আমি পৌঁছানোর চেষ্টা করেছি, আমি ইনশাল্লাহ পৌঁছেছি মানুষের কাছে। কাজেই গণমাধ্যমে যে কথা বলিনি তা না। আমি কথা বলেছি হয়তো আপনারা তখন কথা নিতে পারেননি অথবা শুনতে পারেননি। ইচ্ছা থাকলেও ছাপাতে পারেননি হয়তো প্রচার করতে পারেননি। কিন্তু আমি বলেছি আমি থেমে থাকিনি।দেশে ফেরার প্রশ্নে যা বললেনবিবিসি বাংলা: আমি অবশ্য সাক্ষাৎকারের কথা বলছিলাম যে, প্রশ্নোত্তরের বিষয়টি মানে বিশেষ করে গত এক বছরে। বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পেরিয়ে গেছে এবং অনেকের ধারণা ছিল আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আপনি দেশে এসে স্বশরীরে দলের নেতৃত্ব দেবেন। গত এক বছরে যে প্রশ্নটা বারবার ঘুরে ফিরে এসেছে এবং এখনো আসছে যে আপনি এখনো দেশে ফেরেননি কেন। কেন আপনি এখনো দেশে ফেরেননি?তারেক রহমান: কিছু সংগত কারণে হয়তো ফেরাটা হয়ে উঠেনি এখনো। তবে সময় তো চলে এসেছে মনে হয়। ইনশআল্লাহ দ্রুতই ফিরে আসবো।বিবিসি বাংলা: সেটা কবে আমরা কি জানতে পারি?তারেক রহমান: দ্রুতই মনে হয়। দ্রুতই ইনশাআল্লাহ।বিবিসি বাংলা: নির্বাচনের আগে কি তাহলে আপনি দেশে আসবেন এমন সম্ভাবনা বলা যায়?তারেক রহমান: রাজনীতি যখন করি, আমি একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে স্বাভাবিক, নির্বাচনের সাথে রাজনৈতিক দল রাজনৈতিক কর্মীর একটি ওতপ্রত সম্পর্ক। কাজেই যেখানে একটি প্রত্যাশিত, জনগণের প্রত্যাশিত নির্বাচন হবে, সেই নির্বাচনের সময় কেমন করে দূরে থাকবো? আমি তো আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে, ইচ্ছা থাকবে, আগ্রহ থাকবে সেই প্রত্যাশিত যে প্রত্যাশিত নির্বাচন জনগণ চাইছে। সেই প্রত্যাশিত নির্বাচন যখন অনুষ্ঠিত হবে জনগণের সাথে জনগণের মাঝেই থাকবো ইনশাআল্লাহ।বিবিসি বাংলা: একটা বিষয় যেটা আপনার দল থেকে, মাঝে দলের নেতাদের কেউ কেউ কখনো কখনো বলেছেন যে একটা নিরাপত্তার শঙ্কার কথা বলেছেন আপনি না আসার পেছনে, আপনি কি কোনও ধরনের শঙ্কা বোধ করেছেন এর মধ্যে?তারেক রহমান: বিভিন্ন রকম শঙ্কার কথা তো আমরা অনেক সময় বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে তো শুনেছি। সরকারেরও বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকেও তো অনেক সময় অনেক শঙ্কার কথা বিভিন্ন মাধ্যমে, বিভিন্ন মিডিয়াতে প্রকাশিত হয়েছে।ভোরের আকাশ/মো.আ.
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, এনসিপি আগামী নির্বাচনে শাপলা প্রতীক নিয়েই অংশ নেবে।রোববার (৫ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে দেবীগঞ্জ পৌরসভার টোল প্লাজা সংলগ্ন উপজেলা এনসিপির কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।সারজিস আলম বলেন, আমরা যেহেতু আইনগতভাবে শাপলা প্রতীকের অধিকারী, তাই আমরা অবশ্যই শাপলাই চাই। এমনকি তাদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে আমরা লাল শাপলা কিংবা সাদা শাপলার কথাও বলেছি। কিন্তু এর বাইরে এনসিপি অন্য কোনো প্রতীকের কথা চিন্তাও করছে না। এনসিপি আগামী নির্বাচনে শাপলা প্রতীক নিয়েই অংশ নেবে।তিনি আরও বলেন, যেহেতু আইনগতভাবে শাপলা প্রতীক পেতে এনসিপির কোনো সমস্যা নেই। তাই এখানে নির্বাচন কমিশন স্পষ্টভাবে স্বেচ্ছাচারিতা করছে। নির্বাচন কমিশনের এই স্বেচ্ছাচারিতা নিশ্চয়ই কোনো প্রভাবকের প্রভাবে ঘটছে। হতে পারে কোনো রাজনৈতিক দল, সংস্থা কিংবা প্রতিষ্ঠানের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তারা এনসিপিকে শাপলা প্রতীক দিচ্ছে না।পিআর পদ্ধতি প্রসঙ্গে সারজিস বলেন, এনসিপি স্পষ্টভাবে বলেছে—পিআর পদ্ধতি উচ্চকক্ষে প্রয়োগ করা হোক। আমরা মনে করি, নিম্নকক্ষে পিআর পদ্ধতি চালুর মতো পরিবেশ, মানসিকতা ও স্থিতিশীলতা এখনো বাংলাদেশে পুরোপুরি তৈরি হয়নি। তাই প্রথমে উচ্চকক্ষে পিআর বাস্তবায়ন হোক, তার ইতিবাচক ফলাফল দেখলে পরে নিম্নকক্ষেও তা বিবেচনা করা যেতে পারে।এর আগে, এদিন রাত ৮টায় দেবীগঞ্জ উপজেলা এনসিপির প্রধান সমন্বয়কারী মো. মাসুদ পারভেজের সভাপতিত্বে দলীয় নেতাকর্মী এবং বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির সদস্যদের নিয়ে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন উপজেলা এনসিপির যুগ্ম সমন্বয়কারী মো. ফজলুল করিম, যুব শক্তির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ওয়াসিস আলম, পঞ্চগড় জেলা যুব শক্তির সাধারণ সম্পাদক জিএম আলামিন খন্দকার প্রমুখ।ভোরের আকাশ/মো.আ.
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আসন ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে বিএনপি। দলটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই সমমনাদের সঙ্গে আসন বণ্টন ও সমন্বয়ের কাজ শেষ করতে চাইছে। চলতি মাসের মধ্যেই এই আলোচনায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর পরিকল্পনা রয়েছে।সূত্র জানায়, সেপ্টেম্বরে বিএনপি সমমনাদের কাছ থেকে সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা চেয়েছে। দুই-তিনটি দল ও জোট ছাড়া বেশিরভাগই তালিকা জমা দিয়েছে। তালিকা পাওয়ার পর এসব দল ও জোটের সঙ্গে আসন নিয়ে দর-কষাকষি শুরু হবে।বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, “প্রত্যেক আসনে আমাদের একাধিক যোগ্য প্রার্থী রয়েছে। এখন নিয়মিত প্রার্থী বাছাই চলছে, শিগগিরই একক প্রার্থী মাঠে কাজ শুরু করবেন।”এ সময় বিভিন্ন সমমনা দলের পক্ষ থেকে প্রার্থীর তালিকার তথ্যও প্রকাশিত হয়েছে—লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এলডিপি) ১৩ জনের নাম দিয়েছে।১২ দলীয় জোট ২০ জনের তালিকা বিএনপিকে হস্তান্তর করেছে, তবে জোটের ঐক্য রক্ষার জন্য তা প্রকাশ করা হয়নি।ন্যাশনাল পিপলস পার্টি ৯ জন প্রার্থী তালিকা দিয়েছে।এনডিএম ১০ জন প্রার্থীর তালিকা দিয়েছে এবং বিএনপি তাদের দুই আসন ছাড়ার ইঙ্গিত দিয়েছে।আমজনতার দল ২০ জন প্রার্থী তালিকা জমা দিয়েছে, যদিও বিএনপি শুধুমাত্র ২-৩ জনের নাম চেয়েছে। অন্যদিকে, গণফোরাম আগামী তিন-চার দিনের মধ্যে প্রার্থী তালিকা দেবে। গণঅধিকার পরিষদও এখনও তালিকা দেয়নি, তবে প্রায় ৩০টি আসন চাইতে পারে। গণতন্ত্র মঞ্চও প্রার্থী তালিকা তৈরি করতে কমিটি গঠন করেছে এবং শীঘ্রই তা বিএনপির সঙ্গে আলোচনা করবে। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি প্রার্থী তালিকা সরাসরি জমা দিচ্ছে না, বরং আলোচনার মাধ্যমে আসন নির্ধারণ করবে।সম্প্রতি বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সমমনাদের ৫০টি আসন ছাড়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। পাশাপাশি দলের মনোনয়ন চূড়ান্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।ভোরের আকাশ//হর
আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে জাতিকে ইতিহাসের সেরা একটি নির্বাচন উপহার দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও একই অভিমত ব্যক্ত করেছেন। রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা সরকারের এমন মনোভাবকে সাদুবাদ জানিয়েছেন।কিন্তু সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে, বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি নেতারা প্রশাসনে থাকা কর্মকর্তাদের নিয়ে বিরুপ মন্তব্য করছেন। কেউ বলছেন, আওয়ামী লীগের দোসরারা প্রশাসনে ঘাপটি মেরে আছেন, তাদের দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।আবার কেউ বলছেন, ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর বিএনপি ও জামায়াত প্রতিযোগিতা করে প্রশাসনে নিজেদের ঘনিষ্টদের পদায়ন করেছেন। সুতরাং তাদের নেতৃত্বে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। প্রশাসনে থাকা বিতর্কিত কর্মকর্তা এবং দেশে বিদ্যমান আওয়ামী প্রশাসন দিয়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপক্ষে নির্বাচন করা চ্যালেঞ্জিং মনে করছেন দেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও।তাদের মতে, বিগত ১৬ বছর আওয়ামী সরকারের মেয়াদকালে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু ভোট করা ঝুঁকিপূর্ণ। জাতিকে একটি ইতিহাসের সেরা নির্বাচন উপহার দেওয়া কথা বললেও অন্তর্বর্তী সরকার সেই অনুযায়ী চোখে পড়ার মতো প্রশাসনে কোন পরিবর্তন করেনি। পাশাপাশি নিরপেক্ষ ভোট আয়োজনের লক্ষ্যে সারাদেশের প্রশাসনকে ঢেলে সাজানো হয়নি। তবে ভোট অনুষ্ঠানের পূর্বে এই বিষয়টি অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান ড. মুহম্মদ ইউনূস নজরে নিবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তারা।জনপ্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মতে, গত ১৫ বছরে প্রায় সবই দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কিছুসংখ্যক চাকরি পেয়েছেন, যারা কোনোমতেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন না। তারা নানা কায়দা-কানুন করে চাকরি বাগিয়ে নিয়েছেন। কিছুসংখ্যক বড় অংকের টাকার বিনিময়ে চাকরি পেয়েছেন। ভিন্নমতের ব্যক্তিদের চাকরি হয়নি। আওয়ামী লীগের বাইরে যেন কেউ যাতে চাকরি না পায় সেজন্য দফায় দফায় তথ্য যাচাই-বাছাই করা হয়েছে।বিশেষ করে ক্যাডার সার্ভিস ও কিছু নন-ক্যাডার সার্ভিসে নিয়োগ দেওয়ার আগে দুটি সংস্থাকে দিয়ে প্রার্থীর তথ্য যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। এরপরও সন্দেহ হলে জেলা প্রশাসন পুনরায় তদন্ত করেছে। সাধারণ চাকরিপ্রার্থীদের বলতে হয়েছে তারা আওয়ামী লীগ সমর্থক। আর লিখিত বা মৌখিক পরীক্ষায় যত ভালো করুক না কেন জামায়াত ও বিএনপি নেতাকর্মীদের জন্য চাকরি পাওয়া ছিল খুবই কঠিন।সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, সচিবালয়সহ দেশের বিভিন্ন দপ্তরের পলাতক স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের সময়ে দলীয় কোটায় প্রমোশন পেয়ে কর্মরত রয়েছেন বিতর্কিত কর্মকর্তারা। প্রশাসনে বিভিন্ন স্তরে রয়েছে প্রায় সাড়ে ১০ লাখ আওয়ামীপন্থি কর্মকর্তা। তার মধ্যে সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে নিয়োগ পেয়েছে প্রায় সাত লাখ। নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সব সংস্থা এখনো আওয়ামী নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কাজেই প্রশাসনে ঘাপটি মেরে থাকা এই সব আওয়ামী দোসর দ্বারা ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট সম্পন্ন করা খুব কঠিন।অপর একটি সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গত ১৫ বছরে জনপ্রশাসনে বঞ্চিত ৭৬৪ জনকে পদোন্নতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। পদোন্নতিপ্রাপ্তদের মধ্যে আছেন সচিব পদে ১১৯ জন, গ্রেড-১ (সচিবের সমান বেতন গ্রেড) পদে ৪১ জন, অতিরিক্ত সচিব পদে ৫২৮ জন, যুগ্ম সচিব পদে ৭২ জন এবং উপসচিব পদে ৪ জন কর্মকর্তা। যারা অবসরে গেছেন, তারা ‘ভূতাপেক্ষভাবে’ পদোন্নতি পাবেন।২০০৯ সাল থেকে গত বছরের ৪ আগস্ট পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে বঞ্চিত দাবি করে ১ হাজার ৫৪০ কর্মকর্তা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। এর মধ্যে মারা যাওয়া কর্মকর্তাদের পক্ষে তাদের পরিবারের সদস্যদের করা ১৯টি আবেদনও ছিল। এ সংক্রান্ত গঠিত একটি কমিটির সুপারিশে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, গত বছর ৫ আগস্টের পরই অনেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সুর পাল্টিয়ে নিজেকে বঞ্চিত সেজে কিছু সুবিধাভোগী, বিতর্কিত ও দুর্নীতিতে অভিযুক্ত কর্মকর্তাও পদোন্নতি পেয়েছেন। পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে এমন ব্যক্তিও রয়েছেন, যার বিরুদ্ধে অপরাধে জড়ানোর অভিযোগে বিভাগীয় মামলা হয়েছিল। তাদের কেউ কেউ আবার নিজেকে বিএনপির অথবা জামায়াতের সঙ্গে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা দাবি করে টিকে রয়েছে। কেউ আবার এনসিপির দোহাই দিয়ে প্রশাসনে বহাল তবিয়াতে রয়েছেন।রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কাজী মো. মাহবুবুর রহমান ভোরের আকাশকে বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের থাকা বিতর্কিত কর্মকর্তা এবং দেশে বিদ্যমান প্রশাসন দিয়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপক্ষে নির্বাচন করা চ্যালেঞ্জিং।তিনি বলেন, বিগত ১৬ বছর আওয়ামী সরকারের মেয়াদকালে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের পাশাপাশি সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলেও নতুন যারা নিয়োগ পেয়েছেন, তাদের দ্বারা স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু ভোট করা ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছেন এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক।অধ্যাপক কাজী মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, জাতিকে একটি ইতিহাসের সেরা নির্বাচন উপহার দেওয়া কথা বললেও অন্তর্বর্তী সরকার সেই অনুযায়ী চোখে পড়ার মতো প্রশাসনে কোন পরিবর্তন করেনি। পাশাপাশি নিরপেক্ষ ভোট আয়োজনের লক্ষ্যে সারাদেশের প্রশাসনকে ঢেলে সাজানো হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করছে তবে সুষ্ঠু ভোটের অনুষ্ঠানের পূর্বে এই বিষয়টি অন্তর্বর্তী সরকার নজরে নেওয়া জরুরি বলে মনে করছেন এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক।বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, প্রশাসনে এখনো আওয়ামী লীগের দোসররা বহাল তবিয়তে কাজ করছে। তারা নতুন করে ষড়যন্ত্র ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, এসব আওয়ামী দোসরদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হলে এর দায় পড়বে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর।বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় সাবেক চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক ভোরের আকাশকে বলেন, প্রশাসনে এখনো স্বৈরাচারের দোসররা বসে আছে। এদের রেখে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না।তিনি বলেন, নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থেই বর্তমান প্রশাসন ব্যবস্থাকেও নিরপেক্ষ করতে হবে। প্রশাসনে ঘাপটি মেরে থাকা স্বৈরাচারের দোসরা নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টায় রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।সাবেক এই চিফ হুইপ বলেন, বর্তমান প্রশাসনে যেসব স্বৈরাচারের দোসরা এখনো বসে আছে। এদেরকে সরানোর জন্য কোনো ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।বিএনপি চেয়ারপারসনের এই উপদেষ্টা আরও বলেন, ভারত ও আওয়ামী লীগ মিলে দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে চায়। রাজনৈতিক স্থতিশীল না হলে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আসবে না। কাজেই অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ ভোটের লক্ষ্যে সবাইকে সতর্ক দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানান তিনি।বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী ভোরের আকাশকে বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতেই হবে। কিন্তু আওয়ামী আমলের প্রশাসন দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে না। তাই প্রশাসন থেকে আওয়ামী ক্যাডারদের অপসারণ করতে হবে।তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য মাঠ পর্যায়ে নিরপেক্ষ কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে হবে।বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার বিশেষ মহল প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে একটি ধর্মভিত্তিক দলের অনুগতদের বসাচ্ছে। এটা দিয়ে কিন্তু অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। জনগণ প্রত্যক্ষ করছে, আমরাও প্রত্যক্ষ করছি। কোনো কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদে এসব বিশেষ রাজনৈতিক দলের মনোভাবাপন্ন প্রশাসক এবং আমলাদের বসানো হচ্ছে। তারা কখনোই নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে দেবে না। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ভোরের আকাশকে বলেন, প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় স্বৈরাচারের দোসররা আছে। ফ্যাসিবাদের সময় নিয়োগকৃত সকল আওয়ামী দোসরদের ফরেন মিনিস্ট্রি থেকে অপরসারণ করার দাবি জানান তিনি।গণঅধিকার পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফারুক হাসান ভোরের আকাশকে বলেছেন, নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব থাকা সব সংস্থা এখনো আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে। তিনি দাবি করেন, পুলিশের শতকরা ৮০ ভাগ সদস্য এবং প্রশাসনের ৭০ ভাগ লোক আওয়ামী লীগের সমর্থক।ফারুক হাসান বলেন, ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য সংসদ নির্বাচন অবশ্যই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হতে হবে এবং সেরকম নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি করতে হবে। প্রশাসনকে পুনর্গঠন করতে হবে। প্রার্থীদের নির্ভয়ে ও নির্বিঘ্নে প্রচারণার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার নিশ্চয়তা সরকারকে দিতে হবে।ভোরের আকাশ/এসএইচ