× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কা

মাজাহারুল ইসলাম

প্রকাশ : ২৪ অক্টোবর ২০২৫ ০১:০৭ এএম

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

সরকার ও নির্বাচন কমিশন (ইসি) ঘোষণা অনুযায়ী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। জাতিকে ইতিহাসের সেরা একটি নির্বাচন উপহার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও একই অভিমত ব্যক্ত করেছেন। সরকারের এমন মনোভাবকে সাদুবাদ জানিয়ে নির্বাচনমুখী হয়েছেন রাজনৈতিক দলগুলো। কিন্তু সম্প্রতি দলের নেতাদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ লক্ষ্য করা যাচ্ছে, প্রশাসন ও ভোট সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে বিরুপ মন্তব্য করছেন নেতারা। কেউ বলছেন, আওয়ামী সমর্থক ও তাদের দোসরারা প্রশাসনে ঘাপটি মেরে আছেন, তাদের দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।

আবার কেউ বলছেন, ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর প্রশাসনকে জামায়াতীকরণ করা হয়েছে। এছাড়া, এমনকি সরকারের কোন একটি বিশেষ দলের প্রতিনিধি রয়েছে। সুতরাং তাদের নেতৃত্বে সুষ্ঠু নির্বাচন কী সম্ভব। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহনযোগ্য ভোট আয়োজনের পূর্বশর্তই হচ্ছে নিরপেক্ষতা। কাজেই সরকারে ও প্রশাসনে বির্তকিত কর্মকর্তারাই সুষ্ঠু ভোটের অন্তরায় বলে শঙ্কা প্রকাশ করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকসহ রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।

তাদের মতে, প্রশাসন ও ভোট সংশ্লিষ্ট বির্তকিতদের দ্বারা নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু ভোট সম্ভব নয়। বরং উল্টো নির্বাচনকে প্র্রশ্নবিদ্ধ করার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ, নিরপেক্ষতাই নির্বাচনের প্রথম শর্ত। দীর্ঘ ১৬ বছর রাজনৈতিক দলগুলো নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্যই আন্দোলন করেছে। নিরপেক্ষতা না থাকলে অপশক্তি শক্তিশালী হয়, ধোঁয়াশা রেখে ভোট সুষ্ঠু ও গ্রহনযোগ্য করা সম্ভব নয় মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছে, সংসদ নির্বাচনকে অর্থবহ, নিরপেক্ষ ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করতে অন্তর্বর্তী সরকারকে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকা আসতে হবে। এমনকি অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো দলীয় লোক থেকে থাকলে তাদের অপসারণ করাও জরুরি। কাজেই প্রশাসনে যারা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসর রয়েছে, তাদের অপসরণ করার বিকল্প নেই। এমনকি, সচিবালয় ও জেলা প্রশাসনে ফ্যাসিস্টের দোসরদের সরিয়ে নিরপেক্ষ কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে হবে। ভোট সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম চালানোর জন্য নিরপেক্ষ কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেওয়ার পক্ষে মত দেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

বিএনপি বলছে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আমলাতন্ত্রকে ‘জামায়াতীকরণ’ করা হচ্ছেÑ বিএনপির কাছে এমন তথ্য রয়েছে বলে জানা গেছে। দলটির তথ্য মতে, শুধু আমলাতন্ত্র নয়, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগে প্রিসাইডিং অফিসার ও সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ইসলামী ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকের কর্মকর্তা, কৃষি কর্মকর্তা ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান থেকে যাদের বাছাই করা হচ্ছে, তাদেরও বড় অংশ জামায়াতপন্থি। এমনটা হলে নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে বড় প্রশ্ন দেখা দেবে। এই অবস্থায় ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাসহ নিরপেক্ষ প্রশাসন চায় বিএনপি।

এ লক্ষ্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে বিএনপি একটি প্রতিনিধি দল বুধবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনূস সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন। সাক্ষাতকালে প্রধান উপদেষ্টাকে প্রশাসন ও ভোট সংশ্লিষ্ট বিতর্কিত কর্মকর্তাদের সম্পর্কে অবহিত করার পাশাপাশি উদ্বেগের কথাও জানান নেতারা। দলটির নেতারা মনে করছেন, কিছু উপদেষ্টার বক্তব্য, তৎপরতা ও কার্যক্রমে অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ পদে রদবদল-পদায়ন নিয়ে কিছু উপদেষ্টা পক্ষপাতমূলক আচরণও করছে, বিশেষ করে জামায়াতের পক্ষে কাজ করছে।

বিএনপি সূত্রে জানা যায়, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোটের লক্ষ্যে গতকাল ইসির সঙ্গে সাক্ষাত করে ৩৬ দফা প্রস্তাব দিয়েছে বিএনপি। প্রস্তাব অনুযায়ী, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার, নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের শতভাগ নিরপেক্ষতা নিশ্চিতের জন্য এখনই নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আদলে এই সরকারের ও নির্বাচন কমিশনের দৃঢ় ভূমিকা পালন করতে হবে। মাঠ প্রশাসনকে সম্পূর্ণ ঢেলে সাজাতে হবে। যেমন, ডিসি, ইউএনও, এসপি, ওসি এবং ক্ষেত্রমতে কমিশনার, পুলিশ কমিশনার, সকলের জন্য প্রযোজ্য হবে।

বিগত ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের অবৈধ নির্বাচনে সংশ্লিষ্ট সকল বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাদেরকে কোনোরূপ নির্বাচনী দায়িত্ব প্রদান করা যাবে না। নির্বাচনকালীন সময়ে নির্বাচনের সমগ্র প্রক্রিয়ায় জড়িত বেসামরিক প্রশাসন ও সামরিক বাহিনীসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সকল কর্মকর্তার বদলি, পদায়ন, অবস্থান, দায়িত্ব ও তাদের কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণের ভার নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারে নিতে হবে। সকল ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনের কমপক্ষে এক সপ্তাহ পূর্ব হতে সামরিক বাহিনী, বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশসহ সকল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে।

জুলাই ২০২৪ এর ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সারাদেশে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ম্যানেজিং কমিটি/গভর্নিং বডি গঠিত হয়েছে। হঠাৎ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণার ঠিক পূর্ব মুহূর্তে এ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তড়িঘড়ি করে ১ নভেম্বরের মধ্যে নতুন করে নির্বাচন সম্পন্নের জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে হয়।

অবিলম্বে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ম্যানেজিং কমিটি/গভর্নিং বডি নির্বাচন সংক্রান্ত নির্দেশনা স্থগিত করতে হবে। নির্বাচনের নিরপেক্ষতা বজায় রাখার স্বার্থে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা বা পোলিং পারসোনাল তথা প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার নিয়োগের ক্ষেত্রে দলীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে সর্বমহলের নিকট চিহ্নিত এমন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের নিয়োগ প্রদান করা যাবে না। যেমন, ইসলামী ব্যাংক, আল-আরাফাহ ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল, ইবনে সিনা ইত্যাদি। উল্লেখযোগ্য যে, ইতোমধ্যে ইসলামী ব্যাংকে সারাদেশে প্রায় ৫০০০ কর্মকর্তা/কর্মচারীদের নিয়োগ বাতিল করেছে এবং এসব শূন্য পদে তড়িঘড়ি করে দলীয় লোকজন নিয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে মর্মে জনশ্রুতি রয়েছে।

২৪ ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলসমূহের নেতাকর্মীর নামে বিগত স্বৈরাচারী সরকারের আমলে দায়েরকৃত মিথ্যা, বানোয়াট ও গায়েবি মামলাসমূহ নির্বাচনী সময়সূচি জারির পূর্বেই প্রত্যাহারের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পূর্বেই বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে দলীয় বিবেচনায় প্রদত্ত সকল অস্ত্র সরকারের কাছে জমা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। সারাদেশে ছড়িয়ে থাকা অগণিত অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের আশু ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

সীমান্ত পথে আসা অবৈধ অস্ত্র, নকল টাকা, কালো টাকার অনুপ্রবেশ বন্ধের ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানে এবং দূতাবাসগুলোতে চুক্তিভিত্তিক সকল নিয়োগ বাতিল করতে হবে। নির্বাচনের যাবতীয় নিয়মকানুন-ভোটাধিকার, ভোটদান প্রক্রিয়া ইত্যাদি সম্পর্কে ভোটারসহ আপামর জনসাধারণকে পত্র-পত্রিকা, রেডিও-টেলিভিশন, লিফলেট ইত্যাদির মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ভোটার সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের তাদের নিজস্ব জেলায় দায়িত্ব প্রদান করা যাবে না। তাছাড়া রাজনৈতিক মতাদর্শী বা কোনো দলীয় ভাবধারা প্রচার করে এমন পর্যবেক্ষণ সংস্থাকে পর্যবেক্ষণের অনুমতি দেওয়া যাবে না। আনসার ও ভিডিপি মোতায়েনের ক্ষেত্রে কোনোক্রমেই নিজ জেলায় মোতায়েন করা যাবে না। কমিউনিটি পুলিশকে কোনোভাবেই ভোটকেন্দ্রে মোতায়েন করা যাবে না।

ছবিসহ ভোটার তালিকা পোলিং পার্সোন্যালসহ সকল পোলিং এজেন্টদেরকেও যথাসময়ে সরবরাহ করতে হবে। ভোট গণনা শেষ হবার পরপরই নির্বাচনের ফলাফল প্রতিটি কেন্দ্র হতে সরাসরি ঘোষণা করতে হবে। প্রবাসীদের পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোটাধিকার প্রয়োগ আইনানুগ স্বচ্ছতার সঙ্গে করতে হবে। বিভিন্ন দেশে পোস্টাল ব্যালটে ভোট দানে ইচ্ছুক রেজিস্টার্ড প্রবাসী ভোটারদের তালিকা রাজনৈতিক দলকে যৌক্তিক সময়ের পূর্বেই সরবরাহ করতে হবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কাজী মো. মাহবুবুর রহমান ভোরের আকাশকে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের থাকা বিতর্কিত কর্মকর্তা এবং দেশে বিদ্যমান প্রশাসন দিয়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপক্ষে নির্বাচন করা চ্যালেঞ্জিং।

তিনি বলেন, বিগত ১৬ বছর আওয়ামী সরকারের মেয়াদকালে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের পাশাপাশি সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলেও নতুন যারা নিয়োগ পেয়েছেন, তাদের দ্বারা স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু ভোট করা ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছেন এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক।

মাহবুবুর রহমান বলেন, জাতিকে একটি ইতিহাসের সেরা নির্বাচন উপহার দেওয়া কথা বললেও অন্তর্বর্তী সরকার সেই অনুযায়ী চোখে পড়ার মতো প্রশাসনে কোন পরিবর্তন করেনি। পাশাপাশি নিরপেক্ষ ভোট আয়োজনের লক্ষ্যে সারাদেশের প্রশাসনকে ঢেলে সাজানো হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করছে তবে সুষ্ঠু ভোটের অনুষ্ঠানের পূর্বে এই বিষয়টি অন্তর্বর্তী সরকার নজরে নেওয়া জরুরি বলে মনে করছেন এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক।

মির্জা ফখরুল ভোরের আকাশকে বলেন, প্রশাসনে এখনো আওয়ামী লীগের দোসররা বহাল তবিয়তে কাজ করছে। তারা নতুন করে ষড়যন্ত্র ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছে। এসব আওয়ামী দোসরদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হলে এর দায় পড়বে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর।

তিনি বলেন, প্রশাসনে যারা আছেন, তাদের অনেকেই পুরনো সরকারের আনুগত্য পোষণ করেন, তাদের সরাতে হবে। বিচার বিভাগে এবং সরকারের মধ্যে যারা এখনো রয়েছেন তাদেরকেও সরাতে হবে যাতে নির্বাচনের পরিবেশ আরও সুষ্ঠু হয়।

তিনি আরও বলেন, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অর্থবহ, নিরপেক্ষ ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য এই মুহূর্ত থেকে যেটা প্রয়োজন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আদলে নিতে হবে। অর্থাৎ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ভূমিকায় তাদের যেতে হবে। সরকারের প্রশাসন যে নিরপেক্ষ, সে ধারণা জনগণের মধ্যে তৈরি করতে হবে। সচিবালয় ও জেলা প্রশাসনে ফ্যাসিস্টের দোসরদের সরিয়ে নিরপেক্ষ কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে হবে। পুলিশের নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারকে নিরপেক্ষ অবস্থান নিতে হবে।

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ভোরের আকাশকে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারে থাকা যেসব উপদেষ্টাকে নিয়ে বিতর্ক রয়েছে, নির্বাচনের আগে তাদের সরকার থেকে চলে যেতে হবে।

তিনি বলেন, যেহেতু নির্বাচনের আগে আর কোনো তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসবে না, সেহেতু এই সরকারকে শিগগিরই কেয়ারটেকার (তত্ত্বাবধায়ক) সরকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ, পুরোপুরি নিরপেক্ষ অবস্থানে যাওয়া উল্লেখ করে আমীর খসরু মাহমুদ বলেন, সরকারের ভেতরে-বাইরে যাদের নিরপেক্ষতা ভঙ্গ করার সুযোগ আছে, তাদের রেখে নিরপেক্ষতা বজায় রাখা যাবে না। এই প্রশ্ন আসছে বিভিন্ন কারণে।

বিএনপির এই নেতা বলেন, বেশ কয়েকজন উপদেষ্টা এ সরকারের বেশকিছু পদে পদায়নের ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করেছেন। তাই যাদের নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে অথবা যারা আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন অথবা যারা কোনো দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত, তারা সরকারে থাকলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যে ভূমিকা, তা ব্যাহত হতে পারে। আমরা ১৭ বছর লড়াই করেছি, একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য। নিরপেক্ষতা না থাকলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে, এটা সবাই জানে।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় সাবেক চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক ভোরের আকাশকে বলেন, প্রশাসনে এখনো স্বৈরাচারের দোসররা বসে আছে। এদের রেখে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না।

তিনি বলেন, নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থেই বর্তমান প্রশাসন ব্যবস্থাকেও নিরপেক্ষ করতে হবে। প্রশাসনে ঘাপটি মেরে থাকা স্বৈরাচারের দোসরা নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টায় রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

সাবেক এই চিফ হুইপ বলেন, বর্তমান প্রশাসনে যেসব স্বৈরাচারের দোসরা এখনো বসে আছে। এদেরকে সরানোর জন্য কোনো ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী ভোরের আকাশকে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রশাসনে পরিকল্পিতভাবে জামায়াতে ইসলামী ও শিবিরপন্থি ব্যক্তিদের বসানো হচ্ছে।

তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদের দোসররা প্রশাসনে তো ছিলই। এখন খুঁজে খুঁজে সেই তরুণদের বসানো হচ্ছে যারা একসময় শিবির করত এবং পরে প্রশাসনে এসেছে। মানসিকভাবে তারা এখনও শিবিরের ক্যাডারই রয়ে গেছে।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, যদি এই ইসলামপন্থি দলের অনুসারীদের প্রশাসনের ‘কিং পয়েন্টে’ বসানো হয়, তাহলে কখনোই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব হবে না। তারা প্রশাসনকে ব্যবহার করে নির্বাচন ব্যাহত করবে।

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেন, ‘প্রশাসন, পুলিশের মধ্যে ৭০ শতাংশ লোক একটি নির্দিষ্ট দলের প্রতিনিধিত্ব করে। এদের দিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়।’

তিনি বলেন, ‘জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি এবং জুলাই সনদের ভিত্তিতে আগামী জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন করার দাবি জানিয়েছি। সনদের সাংবিধানিক ভিত্তি দিতে সরকারের নির্বাহী আদেশের ব্যাপারেও আলোচনা হয়েছে।’

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ভোরের আকাশকে বলেন, প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় স্বৈরাচারের দোসররা আছে। ফ্যাসিবাদের সময় নিয়োগকৃত সকল আওয়ামী দোসরদের অপরসারণ করার দাবি জানান তিনি।

নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা জেনেছি বিভিন্ন দল প্রশাসনে ভাগ-বাঁটোয়ারা করে নিচ্ছে। বড় দলগুলো এসপি-ডিসি পদ ভাগ-বাঁটোয়ারা করছে। এভাবে চলতে থাকলে সরকারের নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন্ন হবে। সরকার যাতে নিরপেক্ষভাবে চলে এবং উপদেষ্টা পরিষদের যাদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, তাদের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছি।

সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নিরপেক্ষ কমিশনের দরকার উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম সরকারের প্রতি প্রশ্ন রেখে বলেন, জনপ্রশাসনের যে পদায়ন হচ্ছে, তা কিসের ভিত্তিতে হচ্ছে? নিরপেক্ষতা নাকি ও যোগ্যতার ভিত্তিতে হচ্ছে।

গণঅধিকার পরিষদ নেতা ফারুক হাসান ভোরের আকাশকে বলেছেন, নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব থাকা সব সংস্থা এখনো আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে। তিনি দাবি করেন, পুলিশের শতকরা ৮০ ভাগ সদস্য এবং প্রশাসনের ৭০ ভাগ লোক আওয়ামী লীগের সমর্থক।

ফারুক হাসান বলেন, ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য সংসদ নির্বাচন অবশ্যই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হতে হবে এবং সেরকম নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি করতে হবে। প্রশাসনকে পুনর্গঠন করতে হবে। প্রার্থীদের নির্ভয়ে ও নির্বিঘ্নে প্রচারণার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার নিশ্চয়তা সরকারকে দিতে হবে।

ভোরের আকাশ/এসএইচ

  • শেয়ার করুন-
ঐক্য নতুবা বহিষ্কার

ঐক্য নতুবা বহিষ্কার

আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে বড় পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে ইইউ

আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে বড় পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে ইইউ

নভেম্বরে গণভোট দাবিসহ ইসিতে ১৮ দফা প্রস্তাব জামায়াতের

নভেম্বরে গণভোট দাবিসহ ইসিতে ১৮ দফা প্রস্তাব জামায়াতের

ইসির সঙ্গে বৈঠকে জামায়াত

ইসির সঙ্গে বৈঠকে জামায়াত

গণভোটে ঘোলাটে রাজনীতি

গণভোটে ঘোলাটে রাজনীতি

 ডিজিটাল লেনদেন স্মার্ট বাংলাদেশের মূল চাবিকাঠি: আরিফ হোসেন খান

ডিজিটাল লেনদেন স্মার্ট বাংলাদেশের মূল চাবিকাঠি: আরিফ হোসেন খান

 টাঙ্গাইলে বিএডিসি বীজ ডিলারদের মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান

টাঙ্গাইলে বিএডিসি বীজ ডিলারদের মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান

 খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়: যৌথ গবেষণায় কোলাবরেটিভ গ্রান্টে গুরুত্ব

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়: যৌথ গবেষণায় কোলাবরেটিভ গ্রান্টে গুরুত্ব

 রাকসু ভিপি মোস্তাকুর রহমান জাহিদকে নীলফামারীতে ফুলেল সংবর্ধনা

রাকসু ভিপি মোস্তাকুর রহমান জাহিদকে নীলফামারীতে ফুলেল সংবর্ধনা

 নড়াইলে ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে গুরুতর জখম

নড়াইলে ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে গুরুতর জখম

 পিরোজপুরে একমাত্র নারী মনোনয়ন প্রত্যাশী এলিজা জামান

পিরোজপুরে একমাত্র নারী মনোনয়ন প্রত্যাশী এলিজা জামান

 ঐক্য নতুবা বহিষ্কার

ঐক্য নতুবা বহিষ্কার

 নাজিরপুরে যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ও যুব সমাবেশ

নাজিরপুরে যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ও যুব সমাবেশ

 চীনের সঙ্গে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কের বিস্তার

চীনের সঙ্গে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কের বিস্তার

 ধর্ষণচেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে গৃহবধূর নগ্ন ভিডিও ধারণ,যুবক গ্রেফতার

ধর্ষণচেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে গৃহবধূর নগ্ন ভিডিও ধারণ,যুবক গ্রেফতার

 নির্বাচনে স্বচ্ছতা নিশ্চিতে দ্রুত বডি-অন-ক্যামেরা কেনার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

নির্বাচনে স্বচ্ছতা নিশ্চিতে দ্রুত বডি-অন-ক্যামেরা কেনার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

 লিবিয়া থেকে ফিরলেন ১৭৪ বাংলাদেশি

লিবিয়া থেকে ফিরলেন ১৭৪ বাংলাদেশি

 জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজনের সুযোগ নেই: আমীর খসরু

জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজনের সুযোগ নেই: আমীর খসরু

 এক ধাক্কায় সোনার দাম কমল সাড়ে ১০ হাজার টাকা

এক ধাক্কায় সোনার দাম কমল সাড়ে ১০ হাজার টাকা

 সংবিধানে অটোপাসের মতো বিষয় থাকা হাস্যকর: সালাহউদ্দিন আহমদ

সংবিধানে অটোপাসের মতো বিষয় থাকা হাস্যকর: সালাহউদ্দিন আহমদ

 সেনাপ্রধানের সঙ্গে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সিজেসিএসসির সৌজন্য সাক্ষাৎ

সেনাপ্রধানের সঙ্গে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সিজেসিএসসির সৌজন্য সাক্ষাৎ

 অংশীজনদের সাথে গ্রাম আদালত বিষয়ক মতবিনিময় সভা

অংশীজনদের সাথে গ্রাম আদালত বিষয়ক মতবিনিময় সভা

 চিতলমারীতে শিক্ষার্থীদের মাঝে চারা বিতরণ

চিতলমারীতে শিক্ষার্থীদের মাঝে চারা বিতরণ

 কাপাসিয়ায় যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ও সমাবেশ

কাপাসিয়ায় যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ও সমাবেশ

সংশ্লিষ্ট

ঐক্য নতুবা বহিষ্কার

ঐক্য নতুবা বহিষ্কার

জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজনের সুযোগ নেই: আমীর খসরু

জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজনের সুযোগ নেই: আমীর খসরু

সংবিধানে অটোপাসের মতো বিষয় থাকা হাস্যকর: সালাহউদ্দিন আহমদ

সংবিধানে অটোপাসের মতো বিষয় থাকা হাস্যকর: সালাহউদ্দিন আহমদ

জামায়াত-শিবির এদেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ: ড. মাসুদ

জামায়াত-শিবির এদেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ: ড. মাসুদ