× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

নির্বাচনে অযোগ্য হচ্ছে আওয়ামী লীগ

আকতার হোসেন

প্রকাশ : ১২ মে ২০২৫ ০৯:১২ এএম

নির্বাচনে অযোগ্য হচ্ছে আওয়ামী লীগ

নির্বাচনে অযোগ্য হচ্ছে আওয়ামী লীগ

আনুষ্ঠানিকভাবে আজ সোমবার নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। ফলে নির্বাচনি আইন অনুযায়ী দলটি নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল হিসেবে স্বীকৃতি এবং আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের যোগ্যতা হারাবে।  দলটির নিবন্ধন বাতিল হবে ১৯৭২ সালের ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)’-এর ৯০এইচ (১) (বি) ধারার বিধান অনুযায়ী। একই সঙ্গে আরপিওর ৯০সি (১) (৩) ধারা অনুযায়ী সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত হলে দলটিকে পুনরায় আর নিবন্ধন দেবে না নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ফলে দলীয় ব্যানারে জাতীয় সংসদসহ সকল নির্বাচনে অযোগ্য হয়ে যাবে দলটি।

এ বিষয়ে গতকাল রোববার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন বলেন, আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ইসি এখন সরকারি গেজেট প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে। তিনি বলেন, আজ সোমবার গেজেট প্রকাশ হলে আমরা নির্বাচন কমিশন বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় বসব। কমিশনের আলোচনার পরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কারণ আমাদের বর্তমান বাংলাদেশের স্পিরিট বুঝেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

এদিকে জুলাই অভ্যুত্থান দমাতে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সেই সময়ের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকে বিচারের মুখোমুখি করতে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন সংশোধন করে গেজেট জারি হয়েছে। আইনের দুটি ধারায় এই সংশোধনের মধ্য দিয়ে সম্ভাব্য মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত রাজনৈতিক দল বা সংগঠন, তার অঙ্গ বা সহযোগী সংগঠন বা সমর্থক গোষ্ঠীর বিচারের সুযোগ তৈরি করার পাশাপাশি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে ট্রাইব্যুনালকে।

সংশোধিত আইনে বলা হয়েছে, কোনো সংগঠন যেমন রাজনৈতিক দল বা তার সহযোগী কোনো সত্তা যদি এ আইনের আওতাভুক্ত কোনো অপরাধে জড়িত থাকে বলে ট্রাইব্যুনালের কাছে প্রতীয়মান হয়, তাহলে ওই সংগঠনের কার্যক্রম স্থগিত বা নিষিদ্ধ করা, নিবন্ধন বা লাইসেন্স বাতিল এবং সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার ক্ষমতা ট্রাইব্যুনালের থাকবে। এমনকি এই আইনে নিষিদ্ধ ঘোষিত দলটির সমস্ত সম্পদ বাজেয়াপ্ত করারও পথ খুলে দিয়েছে সরকার। এই আইনের মাধ্যমেই আওয়ামী লীগের দলীয় সব সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করার পথ খুলেছে।

অন্যদিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও এর নেতাদের বিচার সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দলটির সব কার্যক্রম নিষিদ্ধের পাশাপাশি অনলাইনেও আওয়ামী লীগের সব ধরনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। গতকাল রোববার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব এ তথ্য জানিয়েছেন।

ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্তের পরিপত্রের জন্য অপেক্ষা করছি। পরিপত্র জারি হলে এসব পেজ নিষিদ্ধ করতে বিটিআরসির মাধ্যমে মেটাসহ সব অনলাইন প্ল্যাটফর্মের কাছে আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠানো হবে। বিটিআরসির মাধ্যমে চিঠি পাঠালে তা দ্রুত কার্যকর হবে বলে আশা করছি।

উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে বলা হয়, দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জুলাই আন্দোলনের নেতাকর্মীদের নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের সুরক্ষার স্বার্থে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যুব ও ক্রীড়া এবং স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে এ সিদ্ধান্তের কথা নিশ্চিত করেছেন।

পোস্টে তিনি বলেন, উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার নেতাদের বিচারকার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জুলাই আন্দোলনের নেতাকর্মীদের নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের সুরক্ষার জন্য সাইবার স্পেসসহ আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে ক্রমবর্ধমান বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গত শনিবার রাতে জরুরি উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দলটিকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। এ লক্ষ্যে গতকাল রোববার সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত ব্যক্তি বা সত্তা এবং তাদের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করার বিধান যুক্ত করে সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ।

বর্তমান আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি বা সত্তা সন্ত্রাসী কাজের সঙ্গে জড়িত থাকলে সরকার প্রজ্ঞাপন দিয়ে ওই ব্যক্তিকে তফসিলে তালিকাভুক্ত করতে পারে বা সত্তাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে পারে। কিন্তু কোনো সত্তার কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার বিধান ছিল না। এখন সেটিও করা যাবে। গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ খসড়ার অনুমোদন দেওয়া হয়। আজ সোমবার এ বিষয়ে গেজেট জারি করা হবে বলে জানা গেছে।

গতকালের বৈঠকের সারসংক্ষেপে বলা হয়, সন্ত্রাসী কাজ প্রতিরোধ এবং তাদের কার্যকর শাস্তির বিধানসহ আনুষঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে বিধান প্রণয়ন করার জন্য সন্ত্রাসবিরোধী আইন-২০০৯ প্রণয়ন করা হয়। তাতে সরকার কোনো ব্যক্তি বা সত্তা সন্ত্রাসী কাজের সঙ্গে জড়িত রয়েছে বলে যুক্তিসংগত কারণের ভিত্তিতে, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দিয়ে ওই ব্যক্তিকে তফসিলে তালিকাভুক্ত করতে পারে বা সত্তাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা ও তফসিলে তালিকাভুক্ত করতে পারে। তবে বর্তমান আইনে কোনো সত্তার কার্যক্রম নিষিদ্ধকরণের বিষয়ে কোনো বিধান নেই।

বিষয়টি স্পষ্টীকরণসহ বিধান সংযোজন আবশ্যক হওয়ায় সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯-কে সময়োপযোগী করে আইনের অধিকতর সংশোধন করা প্রয়োজন। এমন প্রেক্ষাপটে সন্ত্রাসবিরোধী আইন সংশোধন করে সত্তার কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা, প্রয়োজনীয় বিষয় যুক্ত করা এবং অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার নিষিদ্ধ করার বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

এর আগে শনিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার নেতাদের বিচারকার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জুলাই আন্দোলনের নেতাকর্মীদের নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের সুরক্ষার জন্য সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে সাইবার স্পেসসহ আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

উপদেষ্টা পরিষদের ওই বৈঠকে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইনে একটি সংশোধনীও অনুমোদন করা হয়েছে। এ সংশোধনী অনুযায়ী, এখন থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল যেকোনো রাজনৈতিক দল, তার অঙ্গসংগঠন বা সহযোগী গোষ্ঠীকেও শাস্তির আওতায় আনতে পারবে। বিচারকার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এমন পরিস্থিতিতে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। গতকাল রোববার ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এ কথা বলেন।

ডিসি তালেবুর রহমান জানান, সংঘবদ্ধ হয়ে আইনশৃঙ্খলা বিনষ্ট এবং রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা মিছিল করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির অপচেষ্টার অভিযোগে ঢাকা মহানগর পুলিশ প্রতিদিনই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ চব্বিশের গণহত্যা মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার করছে।

তিনি জানান, জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ সর্বদা সজাগ রয়েছে এবং আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ায় রাজধানীতে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। জনগণের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার চেষ্টা করলে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর দলটির নিবন্ধন বাতিলের দিকে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আজ সোমবার বৈঠক করে পাঁচ সদস্যের কমিশনের সংখ্যাগরিষ্ট মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্তে পৌঁছাবে নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি।

ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পরেই মূলত দলটির আর কোনো কার্যক্রম নেই। প্রথম কয়েক সারির নেতাদের অধিকাংশই দেশের বাইরে, দেশের ভেতরেও অনেকে গা ঢাকা দিয়ে রয়েছেন। এই অবস্থায় দলটি সব কার্যালয় নিষ্ক্রিয় অবস্থায় রয়েছে। আইনে কোনো নিবন্ধিত দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় সক্রিয় না থাকলেও নিবন্ধন বাতিল করার কথা বলা আছে। রাজধানীর গুলিস্তানের শহীদ আবরার ফাহাদ অ্যাভিনিউ (বিলুপ্ত বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ) এলাকায় অবস্থিত দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়। দৃষ্টিনন্দন ভবনটির জৌলুশ এখন আর নেই। ভবনের দরজা, জানালা, ফিটিংস বিক্ষুব্ধ জনতা আগেই ভেঙে ফেলেছে। ভবনটিতে এখন ভবঘুরে, মাদকসেবীরা তাদের আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহার করছে। জেলা ও উপজেলা কার্যালয়গুলোরও একই অবস্থা।

ইসি কর্মকর্তারা আরও বলছেন, নিবন্ধন পাওয়ার পর কোনো দলের সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয় না থাকলেও সেই দলের নিবন্ধন বাতিলের বিধান আইনে রয়েছে। অন্যদিকে সরকার যদি কোনো দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে তাহলে সেই দলের নিবন্ধন বাতিলের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)-১৯৭২ অনুযায়ী, কোনো দলকে নিজেদের প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে চাইলে নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধন পেতে হয়।অন্যথায় সংশ্লিষ্ট দল অন্য দলের সঙ্গে জোট করে নির্বাচন করতে পারলেও নিজেদের পরিচয়ে ভোটে অংশ নিতে পারে না। নবম সংসদ নির্বাচনের আগে নিবন্ধন প্রথা চালু হয়, আর সংশ্লিষ্ট আইনে নিবন্ধন বাতিলের বিধানও অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

আরপিও-এর ৯০ জ(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কী কারণে কোনো দলের নিবন্ধন বাতিল করতে পারে ইসি। (ক) দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী কমিটি, সেটি যে নামেই অভিহিত হোক না কেন, সেই কমিটি যদি দলকে বিলুপ্ত ঘোষণা করে বা নিবন্ধন বাতিলের জন্য দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বা তাদের সমপর্যায়ের পদাধিকারী ব্যক্তি কর্তৃক দলীয় সিদ্ধান্তের কার্যবিবরণীসহ কমিশন বরাবর আবেদন করা হয়; বা (খ) নিবন্ধিত কোনো রাজনৈতিক দল সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়; বা (গ) এই আদেশ ও বিধিমালার অধীন কমিশনে প্রেরিতব্য কোনো তথ্য [একাদিক্রমে তিন বৎসর] প্রেরণ করতে যদি কোনো দল ব্যর্থ হয়; বা (ঘ) কোনো রাজনৈতিক দল কর্তৃক [অনুচ্ছেদ ৯০খ এর দফা (১)(খ)] এর কোনো বিধান লঙ্ঘন করা হয়; বা (ঙ) কোনো রাজনৈতিক দল পরপর দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে; তাহলে সংশ্লিষ্ট দলের নিবন্ধন বাতিল করতে পারে ইসি। অন্তর্বর্তী সরকার ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এক্ষেত্রে আরপিও-এর ৯০জ অনুচ্ছেদের (১)(খ) দফা অনুযায়ী, সরকারের নিষেধাজ্ঞা আলোকে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধি করতে পারে ইসি। অন্যদিকে এই অনুচ্ছেদের (ঘ) দফা অনুযায়ীও [যা ৯০খ অনুচ্ছেদের (১)(খ) দফাতে বর্ণিত] দলটির নিবন্ধন বাতিল করা যাবে। কেননা, ওই দফায় (১)(ক) দফাও প্রতিপালন করতে বলা হয়েছে।

আর ৯০খ অনুচ্ছেদের ১ এর (ক) এর (ই) দফায় বলা হয়েছে, নিবন্ধনের জন্য সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ অন্যান্য কার্যালয় থাকতে হবে। এছাড়া কমিশন থেকে চাহিদা মোতাবেক কোনো তথ্য পরপর তিন বছর কোনো দল না দিতে পারলে; ২০৩০ সালের মধ্যে দলের সকল স্তরের ৩৩ শতাংশ নারী সদস্য পদ পূরণ করতে না পারলে; শিক্ষক, ছাত্র, আর্থিক, বাণিজ্যিক বা শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বা সংস্থার কর্মচারী বা শ্রমিকদের বা অন্য কোনো পেশার সদস্যদের সমন্বয়ে সহযোগী বা অঙ্গ সংগঠন করলে প্রভৃতি কারণে সংশ্লিষ্ট নিবন্ধন বাতিল করতে পারে ইসি।   সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষণার জন্য কোনো শুনানির প্রয়োজন নেই। তবে অন্য কোনো কারণে নিবন্ধন বাতিল করতে হলে সংশ্লিষ্ট দলকে শুনানির সুযোগ দেওয়ার বিধান রয়েছে আইনে। এছাড়া নিবন্ধন বাতিল হলে সংশ্লিষ্ট নামে অন্য কোনো দল আর পরবর্তী নিবন্ধন পাবে না এবং নিবন্ধন বাতিলের গেজেট প্রকাশ হলে ইসির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করা যাবে।  

উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতৃত্বে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে রাজধানী ঢাকায় বিক্ষোভ শুরু হয়। আন্দোলন চলতে থাকে সরকারের সিদ্ধান্ত ঘোষণার আগপর্যন্ত। গত বছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকেই চরম বিশৃঙ্খল অবস্থায় পড়ে দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে পরিচিত আওয়ামী লীগ।জুলাই অভ্যুত্থানের সূত্রপাত ঘটে সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে শুরু হওয়া আন্দোলনের মাধ্যমে। আওয়ামী সরকার নির্বিচারে বিক্ষোভকারীদের হত্যা শুরু করলে ওই আন্দোলনে হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার একদফা দাবিতে পরিণত হয়। হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার দাবি আরও জোরালো হয়।

এর মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে দিয়েই সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ দেশ ছাড়ার এই দাবি আরও তীব্র হয়। পরে এনসিপি ও অন্যান্য সমমনা দলগুলোর নেতাকর্মীরা রাস্তায় নেমে প্রথমে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে এবং পরে শাহবাগে জড়ো হয়ে আওয়ামী লীগকে অবিলম্বে নিষিদ্ধ করার দাবি জানায়। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের জেরে অন্তর্বর্তী সরকার গত শনিবার রাতে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতাদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি, জামায়াতে ইসলামীসহ ধর্মভিত্তিক কয়েকটি দলের দাবির মুখে শনিবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি বৈঠকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধনের সিদ্ধান্ত হয়। সেসঙ্গে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আওয়ামী লীগ এবং দলটির নেতাদের বিচার কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত দলটির যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়।

উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল শনিবার রাতে বলেছিলেন, পরবর্তী কর্মদিবসে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরিপত্র জারি করা হবে। তবে রোববার ছুটির দিনেই ১০ মের তারিখ দিয়ে আইন সংশোধনের প্রজ্ঞাপন জারি হলো।

এর আগে, গত ২৩ অক্টোবর ‘সন্ত্রাসী’ কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবির মুখে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে আওয়ামী লীগের ভাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করে অন্তর্বর্তী সরকার। এখন বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত একই আইনের আওতায় আওয়ামী লীগও নিষিদ্ধ থাকবে। গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের মুখে ২০১৩ সালে ট্রাইব্যুনাল আইনে যে সংশোধনী আনা হয়, সেখানে ব্যক্তির পাশাপাশি সংগঠনের বিচারের সুযোগও রাখা হয়। কিন্তু সংগঠনের সাজা কী, সেটি উল্লেখ করা ছিল না। একাত্তরের ভূমিকার জন্য দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বিচার করতে সে সময় আইনটি আবারও সংশোধন করবে বলেছিল শেখ হাসিনার সরকার। কিন্তু এক দশক ঝুলিয়ে রেখেও আওয়ামী লীগ সরকার তা করেনি। এখন ট্রাইব্যুনাল আইনে সেই সংশোধনী এনে দল হিসেবে খোদ আওয়ামী লীগের বিচারের পথ তৈরি করা হলো।

ভোরের আকাশ/এসএইচ

  • শেয়ার করুন-
 সাবেক এমপি জেবুন্নেসা আফরোজ গ্রেপ্তার

সাবেক এমপি জেবুন্নেসা আফরোজ গ্রেপ্তার

 ‘বিএনপি শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক দেশ গঠনে কাজ করছে’

‘বিএনপি শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক দেশ গঠনে কাজ করছে’

 হ্যাকারের বাড়িতে যৌথ বাহিনীর অভিযান, বিপুল পরিমাণ সিম কার্ড ও মোবাইল জব্দ

হ্যাকারের বাড়িতে যৌথ বাহিনীর অভিযান, বিপুল পরিমাণ সিম কার্ড ও মোবাইল জব্দ

 পিরোজপুরে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রকল্প অনুমোদনের দাবি

পিরোজপুরে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রকল্প অনুমোদনের দাবি

 'ইন্টারনেটের দাম কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার'

'ইন্টারনেটের দাম কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার'

 গাইবান্ধায় বজ্রপাতে মারা গেল কৃষকের গরু

গাইবান্ধায় বজ্রপাতে মারা গেল কৃষকের গরু

 সাতক্ষীরা সিটি কলেজের ম্যানেজিং কমিটি স্থগিত

সাতক্ষীরা সিটি কলেজের ম্যানেজিং কমিটি স্থগিত

 সাত গ্রামের ভরসা বাঁশের সাঁকো

সাত গ্রামের ভরসা বাঁশের সাঁকো

 নারীদের স্বাবলম্বী হওয়ার গল্প

নারীদের স্বাবলম্বী হওয়ার গল্প

 বোর্ডসেরা শিক্ষার্থীরা পাচ্ছে ১০ ও ২৫ হাজার টাকার পুরস্কার

বোর্ডসেরা শিক্ষার্থীরা পাচ্ছে ১০ ও ২৫ হাজার টাকার পুরস্কার

 মশার উৎপাতে দিশাহারা রাজধানীবাসী

মশার উৎপাতে দিশাহারা রাজধানীবাসী

 অবৈধ ভারতীয়দের নিয়ম মেনে ফেরত পাঠানো হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

অবৈধ ভারতীয়দের নিয়ম মেনে ফেরত পাঠানো হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

 ৫৩ বছরেও নির্মাণ হয়নি ফুলবাড়ী বাইপাস সড়ক, ঘটছে দুর্ঘটনা

৫৩ বছরেও নির্মাণ হয়নি ফুলবাড়ী বাইপাস সড়ক, ঘটছে দুর্ঘটনা

 খুলনায় মাহিন্দ্রা-লরির সংঘর্ষে নিহত ৩

খুলনায় মাহিন্দ্রা-লরির সংঘর্ষে নিহত ৩

 প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের সেমিনার অনুষ্ঠিত

প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের সেমিনার অনুষ্ঠিত

 ১৭ বছর পর কানের লাল গালিচায় অ্যাঞ্জেলিনা জোলি

১৭ বছর পর কানের লাল গালিচায় অ্যাঞ্জেলিনা জোলি

 নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হচ্ছে ৮৫ শতাংশ রোগী

নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হচ্ছে ৮৫ শতাংশ রোগী

 মাইক্রোক্রেডিট ব্যাংকের জন্য আলাদা আইন করতে হবে: প্রধান উপদেষ্টা

মাইক্রোক্রেডিট ব্যাংকের জন্য আলাদা আইন করতে হবে: প্রধান উপদেষ্টা

 ইপিএল : ইউনাইটেডকে হারাল চেলসি

ইপিএল : ইউনাইটেডকে হারাল চেলসি

সংশ্লিষ্ট

‘বিএনপি শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক দেশ গঠনে কাজ করছে’

‘বিএনপি শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক দেশ গঠনে কাজ করছে’

এনসিপির ‘জাতীয় যুবশক্তি’র ১৩১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা

এনসিপির ‘জাতীয় যুবশক্তি’র ১৩১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা

ঐকমত্যেও কৌশলী ইসলামী দল

ঐকমত্যেও কৌশলী ইসলামী দল

‘হজযাত্রীর বেশে’ দেশ ছাড়ার সময় আওয়ামী লীগ নেতা আটক

‘হজযাত্রীর বেশে’ দেশ ছাড়ার সময় আওয়ামী লীগ নেতা আটক