বিএনপি-এনসিপির পাল্টা-পাল্টি অভিযোগ
এম. সাইফুল ইসলাম
প্রকাশ : ২০ এপ্রিল ২০২৫ ১০:০৫ এএম
বেকায়দায় মাঠ প্রশাসন
প্রশাসনের অবস্থান প্রশ্নে বিএনপি ও এনসিপির মধ্যে পাল্টা-পাল্টি অভিযোগ চলছে। বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের অভিযোগের পর ফের দল দুটির নেতাদের মধ্যে এ বিষয়ে বাগবিতণ্ডাও পৌঁছেছে চরমে।
এনসিপির নেতাদের অভিযোগ, বর্তমানে প্রশাসনের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা বিএনপির পক্ষে কাজ করছেন। তারা নিরপেক্ষভাবে কাজ করছেন না বলে আমাদের কাছে মনে হয়েছে। ফলে এই প্রশাসন দিয়ে এই মুহূর্তে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। আর ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকেই বিএনপির নেতাদের অভিযোগ ছিল, ছাত্র নেতারা সরকারের অংশ। তাই প্রশাসন তাদের পক্ষে কাজ করছে। দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি এবং গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রনেতাদের দল এনসিপির নেতাদের এমন পাল্টা-পাল্টি অভিযোগে প্রশ্ন উঠেছে, সত্যিকারে প্রশাসন কার পক্ষে কাজ করছে?
বিএনপি নেতারা বলছেন, এনসিপি নেতাদের অভিযোগ ভিত্তিহীন। এটি নির্বাচন পেছানোর নানামুখী ষড়যন্ত্রের অংশ। আর এনসিপি নেতারা তাদের অভিযোগের ভিত্তি দাঁড় করানোর পক্ষে বক্তব্য দিচ্ছেন।
এমন পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক দলের নেতাদের এ ধরনের বক্তব্য ইতিবাচক নয়। তাদের পাল্টা-পাল্টি অভিযোগে কিছুটা হলেও প্রশাসনের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। অনেকক্ষেত্রে প্রশাসন বেকায়দায়ও পড়ে।
জানা গেছে, গত বুধবার বিকেলে ঢাকা সফররত যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক উপ-সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিকোল চুলিকের সঙ্গে বৈঠক করেন জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি নেতারা। ওই বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের কথা বলেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
তিনি অভিযোগ করেন, প্রশাসন অনেক জায়গায় বিএনপির পক্ষে কাজ করছে, এ ধরনের প্রশাসনের অধীনে নির্বাচন করা সম্ভব নয়। কোনো ধরনের ন্যূনতম সংস্কার নয়, বরং মৌলিক সংস্কার নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টি কাজ করছে।
তিনি বলেন, আমরা এখানে রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার, গুণগত পরিবর্তনের জন্য আমরা কাজ করছি। কোনো ধরনের মৌলিক পরিবর্তন ছাড়া নির্বাচনের দিকে গেলে সে নির্বাচনটি গ্রহণযোগ্য হবে না এবং সে নির্বাচনে জাতীয় নাগরিক পার্টি অংশগ্রহণ করবে কি না, সেটাও বিবেচনাধীন থাকবে।
নাহিদের এমন বক্তব্য দেওয়ার পরপরই বিষয়টি নিয়ে বিএনপি নেতারা দলীয় কর্মসূচি থেকে শুরু করে টকশো টেবিলে পাল্টা অভিযোগ করতে শুরু করেন। তারা বলছেন, নাহিদের অভিযোগ একেবারে ভিত্তিহীন। নির্বাচনকে পেছানোর জন্য ওই বক্তব্য কোনো ষড়যন্ত্রের অংশ কিনা তা নিয়েও দলটির কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপি নেতারা।
এ বিষয়ে বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, নাহিদ ইসলামের বক্তব্য ভিত্তিহীন। তার বক্তব্য মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য।
এনসিপির সঙ্গেই প্রশাসনের সখ্যতার পাল্টা অভিযোগ করে তিনি বলেন, প্রশাসনের সঙ্গে ছাত্রদের তথা বৈষম্যবিরোধীদের সখ্যতা সবচেয়ে বেশি। তারা বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সরকারি প্রতিষ্ঠানে নজরদারি করে। কারণ, ছাত্র নেতারা সরকারের অংশ। সরকার থেকে একজন পদত্যাগ করলেও এখনও দুইজন ছাত্র নেতা উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, আমরা ফের দোষারোপ আর পাল্টা-পাল্টি অভিযোগের মধ্যেই যেন ডুবে যাচ্ছি। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি আগে যা করেছে। এখন বিএনপির ও এনসিপি তাই শুরু করেছে। আমি মনে করেছিলাম তরুণরা অন্তত পরিবর্তনের দিকে যাবে। রাজনৈতিক নতুন কমিটমেন্টের দিকে থাকবে। কিন্তু বাস্তবে তার উল্টো হচ্ছে।
তিনি বলেন, এনসিপির অভিযোগ কতটা সঠিক তা নিয়ে প্রশ্ন যে কেউ তুলতে পারে। কারণ, দুইজন ছাত্র নেতা এখনো পর্যন্ত উপদেষ্টা পরিষদে রয়েছে। ফলে, লোকে বলতেই পারেন যে ছাত্ররা সরকারের অংশ।
তিনি আরও বলেন, এমনি প্রশাসন সরকারের কথা শোনে না। এমন পাল্টা-পাল্টি চলতে থাকলে কী অবস্থা দাঁড়াবে?
এনসিপির যুগ্ম-মুখ্য সমন্বয়ক আরিফুর রহমান তুহীন বলেন, সরকার পতনের পর থেকে সারাদেশে বিএনপির নিজেদের মধ্যে মারামারি করছে। চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধে জড়িয়েছে।
দলটির তিন হাজার নেতাকর্মী বহিষ্কার হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এজন্য দলীয় হাইকমান্ড ব্যবস্থা নিয়েছে ঠিক, কিন্তু জড়িতদের কয়জনের বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যবস্থা নিয়েছে? এটি প্রমাণ করে প্রশাসন বিএনপির পক্ষে কাজ করছে। এছাড়া মাঠ প্রশাসনের এখনো যারা দায়িত্বে তারা বিএনপি সরকারের আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত। দুজন ছাত্র নেতা উপদেষ্টা থাকলেও তারা এনসিপির কেউ নন বলেও দাবি তার।
জানা গেছে, গত বছর ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন ওই সরকারের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ উপদেষ্টা হিসেবে যোগ দেন।
পরবর্তীতে আরেক ছাত্র নেতা মাহফুজ আলমও যোগ দিয়েছেন উপদেষ্টা পরিষদে। ওই সময় থেকেই অভিযোগ প্রশাসন ছাত্রদের পক্ষে কাজ করে আসছে। বিশেষ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও পরবর্তীতে তাদের সমন্বয়কদের নিয়ে প্রথমে জাতীয় নাগরিক কমিটি এবং পরে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) গঠন নিয়ে আঙ্গল তোলেন বিএনপি নেতারা।
তাদের অভিযোগ, এই রাজনৈতিক দল গঠনে সরকারের সহযোগিতা ছিল। এনসিপি নামের দল গঠনের আগে থেকেই দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপি এই অভিযোগ করে আসছিল। তাদের অভিযোগের মধ্যেই চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি উপদেষ্টা পরিষদ থেকে পদত্যাগ করেন নাহিদ ইসলাম। আর নাহিদ ইসলামের তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান মাহফুজ আলম। পদত্যাগের তিনদিন পর ২৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্র নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত হয় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। যার আহ্বায়ক করা হয় নাহিদ ইসলামকে।
সরকারে ছাত্র নেতাদের প্রতিনিধিত্ব, ছাত্র নেতাদের সমন্বয়ে দল গঠনসহ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে তাদের তদবিরে নিয়োগ নিয়ে শুরু থেকেই প্রশ্ন তুলেছিল বিএনপি। এবার প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিএনপির প্রতি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলেছে এনসিপি। এছাড়া সরকার পতনের পর থেকেই বিএনপি নেতাদের নামে চাঁদাবাজি ও দখলবাজির নানা অভিযোগ করে আসছিলেন ছাত্র নেতারা।
গতকালও এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বিএনপিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, গণঅভ্যুত্থান হয়েছে একদলকে তাড়িয়ে আরেক দলকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য নয়। পাল্টা-পাল্টি এ ধরনের অভিযোগে কিছুটা হলেও বেকায়দায় পড়বে প্রশাসন। যার ধারণাও দিচ্ছেন বিশ্লেষকরা। এখন আওয়ামী লীগ অনেটাই রাজনীতির বাইরে। তাই দল দুটির পাল্টা-পাল্টি এ অভিযোগ ফের গত বছরের ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাল্টা-পাল্টি দোষারোপের রাজনীতির কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে বলেও মনে করছেন অনেকে।
ভোরের আকাশ/এসএইচ
বিএনপি-এনসিপির পাল্টা-পাল্টি অভিযোগ
এম. সাইফুল ইসলাম
প্রকাশ : ১ ঘন্টা আগে
আপডেট : ৫৫ মিনিট আগে
বেকায়দায় মাঠ প্রশাসন
প্রশাসনের অবস্থান প্রশ্নে বিএনপি ও এনসিপির মধ্যে পাল্টা-পাল্টি অভিযোগ চলছে। বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের অভিযোগের পর ফের দল দুটির নেতাদের মধ্যে এ বিষয়ে বাগবিতণ্ডাও পৌঁছেছে চরমে।
এনসিপির নেতাদের অভিযোগ, বর্তমানে প্রশাসনের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা বিএনপির পক্ষে কাজ করছেন। তারা নিরপেক্ষভাবে কাজ করছেন না বলে আমাদের কাছে মনে হয়েছে। ফলে এই প্রশাসন দিয়ে এই মুহূর্তে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। আর ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকেই বিএনপির নেতাদের অভিযোগ ছিল, ছাত্র নেতারা সরকারের অংশ। তাই প্রশাসন তাদের পক্ষে কাজ করছে। দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি এবং গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রনেতাদের দল এনসিপির নেতাদের এমন পাল্টা-পাল্টি অভিযোগে প্রশ্ন উঠেছে, সত্যিকারে প্রশাসন কার পক্ষে কাজ করছে?
বিএনপি নেতারা বলছেন, এনসিপি নেতাদের অভিযোগ ভিত্তিহীন। এটি নির্বাচন পেছানোর নানামুখী ষড়যন্ত্রের অংশ। আর এনসিপি নেতারা তাদের অভিযোগের ভিত্তি দাঁড় করানোর পক্ষে বক্তব্য দিচ্ছেন।
এমন পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক দলের নেতাদের এ ধরনের বক্তব্য ইতিবাচক নয়। তাদের পাল্টা-পাল্টি অভিযোগে কিছুটা হলেও প্রশাসনের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। অনেকক্ষেত্রে প্রশাসন বেকায়দায়ও পড়ে।
জানা গেছে, গত বুধবার বিকেলে ঢাকা সফররত যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক উপ-সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিকোল চুলিকের সঙ্গে বৈঠক করেন জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি নেতারা। ওই বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের কথা বলেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
তিনি অভিযোগ করেন, প্রশাসন অনেক জায়গায় বিএনপির পক্ষে কাজ করছে, এ ধরনের প্রশাসনের অধীনে নির্বাচন করা সম্ভব নয়। কোনো ধরনের ন্যূনতম সংস্কার নয়, বরং মৌলিক সংস্কার নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টি কাজ করছে।
তিনি বলেন, আমরা এখানে রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার, গুণগত পরিবর্তনের জন্য আমরা কাজ করছি। কোনো ধরনের মৌলিক পরিবর্তন ছাড়া নির্বাচনের দিকে গেলে সে নির্বাচনটি গ্রহণযোগ্য হবে না এবং সে নির্বাচনে জাতীয় নাগরিক পার্টি অংশগ্রহণ করবে কি না, সেটাও বিবেচনাধীন থাকবে।
নাহিদের এমন বক্তব্য দেওয়ার পরপরই বিষয়টি নিয়ে বিএনপি নেতারা দলীয় কর্মসূচি থেকে শুরু করে টকশো টেবিলে পাল্টা অভিযোগ করতে শুরু করেন। তারা বলছেন, নাহিদের অভিযোগ একেবারে ভিত্তিহীন। নির্বাচনকে পেছানোর জন্য ওই বক্তব্য কোনো ষড়যন্ত্রের অংশ কিনা তা নিয়েও দলটির কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপি নেতারা।
এ বিষয়ে বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, নাহিদ ইসলামের বক্তব্য ভিত্তিহীন। তার বক্তব্য মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য।
এনসিপির সঙ্গেই প্রশাসনের সখ্যতার পাল্টা অভিযোগ করে তিনি বলেন, প্রশাসনের সঙ্গে ছাত্রদের তথা বৈষম্যবিরোধীদের সখ্যতা সবচেয়ে বেশি। তারা বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সরকারি প্রতিষ্ঠানে নজরদারি করে। কারণ, ছাত্র নেতারা সরকারের অংশ। সরকার থেকে একজন পদত্যাগ করলেও এখনও দুইজন ছাত্র নেতা উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, আমরা ফের দোষারোপ আর পাল্টা-পাল্টি অভিযোগের মধ্যেই যেন ডুবে যাচ্ছি। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি আগে যা করেছে। এখন বিএনপির ও এনসিপি তাই শুরু করেছে। আমি মনে করেছিলাম তরুণরা অন্তত পরিবর্তনের দিকে যাবে। রাজনৈতিক নতুন কমিটমেন্টের দিকে থাকবে। কিন্তু বাস্তবে তার উল্টো হচ্ছে।
তিনি বলেন, এনসিপির অভিযোগ কতটা সঠিক তা নিয়ে প্রশ্ন যে কেউ তুলতে পারে। কারণ, দুইজন ছাত্র নেতা এখনো পর্যন্ত উপদেষ্টা পরিষদে রয়েছে। ফলে, লোকে বলতেই পারেন যে ছাত্ররা সরকারের অংশ।
তিনি আরও বলেন, এমনি প্রশাসন সরকারের কথা শোনে না। এমন পাল্টা-পাল্টি চলতে থাকলে কী অবস্থা দাঁড়াবে?
এনসিপির যুগ্ম-মুখ্য সমন্বয়ক আরিফুর রহমান তুহীন বলেন, সরকার পতনের পর থেকে সারাদেশে বিএনপির নিজেদের মধ্যে মারামারি করছে। চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধে জড়িয়েছে।
দলটির তিন হাজার নেতাকর্মী বহিষ্কার হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এজন্য দলীয় হাইকমান্ড ব্যবস্থা নিয়েছে ঠিক, কিন্তু জড়িতদের কয়জনের বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যবস্থা নিয়েছে? এটি প্রমাণ করে প্রশাসন বিএনপির পক্ষে কাজ করছে। এছাড়া মাঠ প্রশাসনের এখনো যারা দায়িত্বে তারা বিএনপি সরকারের আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত। দুজন ছাত্র নেতা উপদেষ্টা থাকলেও তারা এনসিপির কেউ নন বলেও দাবি তার।
জানা গেছে, গত বছর ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন ওই সরকারের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ উপদেষ্টা হিসেবে যোগ দেন।
পরবর্তীতে আরেক ছাত্র নেতা মাহফুজ আলমও যোগ দিয়েছেন উপদেষ্টা পরিষদে। ওই সময় থেকেই অভিযোগ প্রশাসন ছাত্রদের পক্ষে কাজ করে আসছে। বিশেষ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও পরবর্তীতে তাদের সমন্বয়কদের নিয়ে প্রথমে জাতীয় নাগরিক কমিটি এবং পরে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) গঠন নিয়ে আঙ্গল তোলেন বিএনপি নেতারা।
তাদের অভিযোগ, এই রাজনৈতিক দল গঠনে সরকারের সহযোগিতা ছিল। এনসিপি নামের দল গঠনের আগে থেকেই দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপি এই অভিযোগ করে আসছিল। তাদের অভিযোগের মধ্যেই চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি উপদেষ্টা পরিষদ থেকে পদত্যাগ করেন নাহিদ ইসলাম। আর নাহিদ ইসলামের তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান মাহফুজ আলম। পদত্যাগের তিনদিন পর ২৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্র নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত হয় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। যার আহ্বায়ক করা হয় নাহিদ ইসলামকে।
সরকারে ছাত্র নেতাদের প্রতিনিধিত্ব, ছাত্র নেতাদের সমন্বয়ে দল গঠনসহ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে তাদের তদবিরে নিয়োগ নিয়ে শুরু থেকেই প্রশ্ন তুলেছিল বিএনপি। এবার প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিএনপির প্রতি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলেছে এনসিপি। এছাড়া সরকার পতনের পর থেকেই বিএনপি নেতাদের নামে চাঁদাবাজি ও দখলবাজির নানা অভিযোগ করে আসছিলেন ছাত্র নেতারা।
গতকালও এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বিএনপিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, গণঅভ্যুত্থান হয়েছে একদলকে তাড়িয়ে আরেক দলকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য নয়। পাল্টা-পাল্টি এ ধরনের অভিযোগে কিছুটা হলেও বেকায়দায় পড়বে প্রশাসন। যার ধারণাও দিচ্ছেন বিশ্লেষকরা। এখন আওয়ামী লীগ অনেটাই রাজনীতির বাইরে। তাই দল দুটির পাল্টা-পাল্টি এ অভিযোগ ফের গত বছরের ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাল্টা-পাল্টি দোষারোপের রাজনীতির কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে বলেও মনে করছেন অনেকে।
ভোরের আকাশ/এসএইচ