ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশ : ১৬ জুন ২০২৫ ১২:১৯ এএম
হজ থেকে ফিরে কেমন হওয়া উচিত জীবনের ধারা?
হজ ইসলামের পাঁচটি মূল স্তম্ভের একটি। একজন মুসলমানের জীবনে হজের সফর কেবলমাত্র একটি ভ্রমণ নয়—বরং আত্মিক, নৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের এক মহাসুযোগ। আল্লাহ তায়ালা কোরআনে বলেন, ‘আর মানুষের কাছে হজের ঘোষণা করে দিন, তারা আপনার কাছে আসবে... যাতে তারা তাদের জন্য নির্ধারিত কল্যাণ প্রত্যক্ষ করতে পারে।’ (সুরা হজ: ২৭-২৮)।
হজ পালন শেষে হাজিদের জীবন কেমন হওয়া উচিত, তা নিয়ে আলোচনায় ইসলামic পণ্ডিত ও ধর্মবিশারদরা তুলে ধরেছেন কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক। আসুন জেনে নিই হজ-পরবর্তী জীবন কীভাবে পরিচালিত হওয়া উচিত:
নবজাতকের মতো পাপমুক্ত জীবন
বুখারি ও মুসলিম শরিফে বর্ণিত, হজের মাধ্যমে হাজিরা ফিরেন মা–এর গর্ভ থেকে সদ্য জন্ম নেওয়া শিশুর মতো নিষ্পাপ হয়ে। এ অর্জনকে ধরে রাখতে দরকার পাপ ও অপকর্ম থেকে দূরে থাকা।
জান্নাতের আশ্বাস
রাসুল (সা.) বলেছেন, “যে হজ মাকবুল হয়, তার একমাত্র প্রতিদান হলো জান্নাত” (বুখারি: ১৭৭৩)। অর্থাৎ আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে শুদ্ধ মনে হজ পালনকারী জান্নাতের উপযুক্ত হন।
অফুরন্ত সওয়াবের ভাণ্ডার
হজের প্রতিটি কাজ—তওয়াফ, সাঈ, আরাফাতে অবস্থান, হজরে আসওয়াদ স্পর্শ, এমনকি প্রতিটি কদমেও রয়েছে আলাদা সওয়াব। এমনকি জমজম পানির মধ্যেও রয়েছে শিফা।
আত্মনিয়ন্ত্রণ ও সংযমের প্রশিক্ষণ
ইহরামের সময় অনেক বৈধ কাজ থেকেও বিরত থাকতে হয়, যা আত্মনিয়ন্ত্রণের বাস্তব অনুশীলন। এ অভ্যাস হজ-পরবর্তী জীবনেও সহায়ক হতে পারে দুনিয়ার মোহ কাটিয়ে পরকালমুখী হতে।
মৃত্যুর প্রস্তুতির মানসিকতা
হজের সময় কাফনের মতো সাদা ইহরাম পরিধান করা মানুষকে মনে করিয়ে দেয় মৃত্যু ও আল্লাহর দরবারে উপস্থিতির প্রস্তুতি নিতে।
হজ-পরবর্তী জীবনে করণীয়
🔸পাপ ও অশ্লীলতা থেকে দূরে থাকা
কোরআনে বলা হয়েছে, ‘হজের সময় ও পরে গালাগালি, পাপ ও কলহ থেকে বিরত থাকো।’ (বাকারা: ১৯৭)
🔸আল্লাহর জিকির ও কৃতজ্ঞতা
হজে ফিরে বেশি বেশি আল্লাহর স্মরণ ও তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত। কোরআন বলে, ‘হজ শেষে আল্লাহকে স্মরণ করো, যেমনিভাবে বাবা-দাদাকে স্মরণ করো—বরং আরও বেশি।’ (বাকারা: ২০০)
🔸প্রদর্শনেচ্ছা পরিহার
কেউ কেউ হজ করে ফেরার পর নামের সঙ্গে ‘হাজি’ যুক্ত করে তা ফলাও করে জানাতে চান। অথচ রাসুল (সা.) বলেন, “হে আল্লাহ! এ এমন হজ, যাতে নেই কোনো প্রদর্শনেচ্ছা।” (ইবন মাজাহ: ২৮৯০)
🔸আখেরাতমুখী জীবনধারা গড়ে তোলা
হজ কবুলের আলামত হলো, দুনিয়াবিমুখ হয়ে আখেরাতের প্রতি আগ্রহী হওয়া। আল্লাহর সন্তুষ্টি ও জান্নাতের আশা বুকে লালন করা।
🔸পাপ থেকে ফিরে আসা ও জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা
ইমাম গাজালি (রহ.) বলেন, হজের পর হাজি যদি তার আগের পাপপরায়ণ জীবন ত্যাগ করেন, অসৎ সঙ্গ ত্যাগ করে সৎ সঙ্গ গ্রহণ করেন, গানবাজনা ছাড়েন এবং দ্বিনি মজলিসে শরিক হতে শুরু করেন, তবে তা হজ কবুলের একটি লক্ষণ।
উপসংহার
হজ যেন কেবল স্মৃতি না হয়, বরং জীবনের গতিধারায় স্থায়ী প্রভাব ফেলে, সেটাই ইসলামের দাবি। যে হজ মানুষকে আল্লাহর সান্নিধ্যে নিয়ে যায়, সে হজের প্রতিফলন হাজির জীবনেও ফুটে উঠা উচিত—ভাষা, আচার, পোশাক, বন্ধুবান্ধব, সমাজ ও আত্মিক আচরণে। শুধু তখনই হজ হবে বাস্তব অর্থে মাকবুল হজ।
ভোরের আকাশ//হ.র