রাজীব দাস
প্রকাশ : ১২ এপ্রিল ২০২৫ ০৬:০৭ পিএম
আইপিএলে রকেট গতিতে ছুটছেন বিরাট কোহলি
ক্রিকেট মানেই আবেগ, আর টি-টোয়েন্টি মানেই রঙিন এক রোমাঞ্চ। কিন্তু আইপিএল মানে? একটি নামই যেন বারবার সামনে চলে আসে আর সে হলো বিরাট কোহলি। মাঠে তার উপস্থিতি মানেই গ্যালারিতে উত্তেজনা, প্রতিপক্ষের কাঁপুনি, আর পরিসংখ্যানে নতুন রেকর্ডের হাতছানি। আইপিএলের ইতিহাসে এমন রাজসিক উপস্থিতি আর কারো কপালে জোটেনি, যেমনটা পেয়েছেন ‘কিং কোহলি’।
এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ২৫২টি ম্যাচ খেলে ফেলেছেন বিরাট কোহলি। রান সংখ্যা শুনলে চোখ কপালে উঠতে পারে ৮,০০০ রান! ব্যাটিং গড় ৩৮.৬৭, স্ট্রাইক রেট ১৩২ এক কথায় ‘অ্যাগ্রেসিভ কনসিস্টেন্সি’র মূর্ত প্রতীক যেন এই ব্যাটার। আইপিএলে কোহলির সেঞ্চুরি সংখ্যা ৮টি, সঙ্গে আছে ৫৫টি অর্ধশতক। তার সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্কোর ১১৩ রান, যা আজও আইপিএলের অন্যতম সেরা ইনিংস হিসেবে বিবেচিত। চার মারার দিক থেকেও পিছিয়ে নেই তিনি ৭০৫টি বাউন্ডারি আর ২৭২টি ওভার বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন এখন পর্যন্ত।
তবে বিরাট কোহলির আইপিএল ক্যারিয়ারের সবচেয়ে আলোচিত পর্বটি এসেছিল ২০১৬ সালে। সেই মৌসুমে একের পর এক বল বাউন্ডারির বাইরে পাঠিয়ে এবং রান তুলিতে ক্যানভাস সাজিয়ে তিনি গড়েন এক অবিশ্বাস্য রেকর্ড এক সিজনে সর্বোচ্চ ৯৭৩ রান। আইপিএলের ইতিহাসে এখনো কোনো ব্যাটার সে রেকর্ড ছুঁতে পারেননি। ছক্কা মারার ক্ষেত্রেও কোহলি কম যান না। আরেকটি দৃষ্টিনন্দন পরিসংখ্যান হলো রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের হয়ে এক সিজনে তার ছক্কার সংখ্যা ২৩৯টি। যে ব্যাটিংয়ে শৈল্পিকতা ও শক্তির এমন মিশ্রণ, তা বিরাট কোহলির ব্যাটেই যেন সবচেয়ে সঠিকভাবে ধরা পড়ে।
রানের রাজপুত্র থেকে রানের সম্রাটে রূপান্তর: বিরাট কোহলি শুধু রান করেই থেমে যাননি, তিনি আইপিএলকে নিজের মতো করে গড়ে নিয়েছেন। তরুণদের কাছে অনুপ্রেরণা, সমর্থকদের কাছে আশা, আর প্রতিপক্ষের কাছে আতঙ্ক হয়ে ওঠা এই ব্যাটার সময়ের সঙ্গে আরও শাণিত হয়েছেন। প্রতি মৌসুমে তার ব্যাট থেকে আসে নতুন গল্প, নতুন রেকর্ড। আইপিএল মানেই গ্ল্যামার, কিন্তু বিরাট কোহলি প্রমাণ করেছেন আইপিএল মানে দায়বদ্ধতা, পরিশ্রম, এবং ধারাবাহিকতা যেখানে তিনি নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান। এই যখন পরিসংখ্যান বিরাটের তখন স্বাভাবিকভাবেই বিরাট ভক্তদের সামনে একটি প্রশ্ন মনের মধ্যে উঁকি দিচ্ছে আর তা হল আইপিএল ২০২৫ সিজনে কেন বিরাট কোহলির ব্যাটে রান নেই। বিরাট কেন রান খরায় ভুগছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে ২০১৬ সালে কোহলি সর্বোচ্চ ৯৭৩ রান করেন ঠিক একই সিজনে কিংস এ্যালিভেন পাঞ্জাবের বিপক্ষে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ১১৩ রানের দুর্দান্ত এক ইংনিস খেলেন । যা মাত্র ৫০ বলে সাজানো বিধ্বংসী এক ইংনিস।
পাঠকের মনের মধ্যে হয়তো খটকা লাগছে যে, লেখার সূচনাতেই তো মাত্র ৫০ বলের ইংনিসটির কথা বলা যেতো! হ্যাঁ পাঠক তা বলা যেতো। তবে তা বলিনি তার কারণ বিরাটের প্রতিটি ইংনিস যে ঝলমলে তা বারবার মনে করিয়ে দেওয়ার জন্যই এমন কৌশলের আশ্রয় নেওয়া।
আসলে অনেক দর্শকের মনে প্রশ্ন জেগেছে যে, আইপিএল সিজন ২০২৫-এ বিরাটের ব্যাট সেভাবে হাসছে না কেন। সেভাবে বিরাটের ব্যাট হাসছে না তা হয়তো ঠিক তবে বিরাট কোহলির ব্যাট কিন্তু পারফর্ম করে যাচ্ছে। এই লেখার আগ পর্যন্ত বিরাট কোহলি আইপিএল ২০২৫ সিজনে মোট পাঁচটি ম্যাচ খেলেছেন।
আইপিএল ২০২৫-এ প্রথম ম্যাচে কঠিন প্রতিপক্ষ কোলকাতা নাইট রাইডার্সের বিরুদ্ধে এক দূরন্ত ইংনিস খেলেছেন । মাত্র ৩৬ বলে করেছেন ৫৯ রান যাতে ছিল পাঁচটি চার ও একটি ওভার বাউন্ডারি। পাঁচ ম্যাচে বিরাটের স্ট্রাইক রেট ছিল চোখ ধাঁধানো। প্রায় ১৪৪ স্ট্রাইক রেট টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে অবিশ্বাস্য। কোহলি মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে খেলেন আরও এক বিধ্বংসী ইংনিস যেখানে ৮টি চার আর দুইটি ছক্কার সাহায্যে করেন ৬৭ রান। বল খেলেছেন মাত্র ৪২টি। তিনি আইপিএলে প্রথম ব্যাটার হিসেবে ১০০০ (৭২১ চার ও ২৮০ ছক্কা) বাউন্ডারি পূর্ণ করে ইতিহাস গড়েছেন।
বিরাটের সাফল্যের পিছনে রহস্য কী: একটু ছন্দ করে যদি বলি কোহলির ব্যাটে আগুন জ্বলে, বোলারদের চোখে ভয়, ফিটনেস, ফোকাস জেদে ভরা জয় আসে বারংবার সই! কোহলির শরীরী ভাষায় থাকে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা। প্রতিটি রান, প্রতিটি উইকেটের পিছনে উচ্ছ্বাস। একজন বিরাট কোহলি অফসিজন মানেন না, নেটে ঘন্টার পর ঘন্টা ব্যাটিং করেন যা কিং খ্যাত কোহলির পক্ষেই সম্ভব। আরও আছে ব্যর্থতার পরেও ঘুরে দাঁড়ানোর তীব্র জেদ সেই জেদকে সাফল্যে পরিণত করেই ক্ষান্ত হোন বিরাট কোহলি। টেকনিক ও টাইমিংয়ের অসাধারণ ভারসাম্য একজন ক্রিকেটারকে এনে দেয় চূড়ান্ত সাফল্য। কভার ড্রাইভ, পুল শর্ট বা লেট কাট সবকিছুতেই নিঁখুত টাইমিং বিরাট কোহলির । বিশ্বের যে কয়জন ম্যাচের পরিস্থিতি বুঝে শর্ট সিলেকশন করেন তার মধ্যে বিরাট কোহলি অন্যতম।
ভোরের আকাশ/এসএইচ
রাজীব দাস
প্রকাশ : ৬ দিন আগে
আপডেট : ৬ দিন আগে
আইপিএলে রকেট গতিতে ছুটছেন বিরাট কোহলি
ক্রিকেট মানেই আবেগ, আর টি-টোয়েন্টি মানেই রঙিন এক রোমাঞ্চ। কিন্তু আইপিএল মানে? একটি নামই যেন বারবার সামনে চলে আসে আর সে হলো বিরাট কোহলি। মাঠে তার উপস্থিতি মানেই গ্যালারিতে উত্তেজনা, প্রতিপক্ষের কাঁপুনি, আর পরিসংখ্যানে নতুন রেকর্ডের হাতছানি। আইপিএলের ইতিহাসে এমন রাজসিক উপস্থিতি আর কারো কপালে জোটেনি, যেমনটা পেয়েছেন ‘কিং কোহলি’।
এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ২৫২টি ম্যাচ খেলে ফেলেছেন বিরাট কোহলি। রান সংখ্যা শুনলে চোখ কপালে উঠতে পারে ৮,০০০ রান! ব্যাটিং গড় ৩৮.৬৭, স্ট্রাইক রেট ১৩২ এক কথায় ‘অ্যাগ্রেসিভ কনসিস্টেন্সি’র মূর্ত প্রতীক যেন এই ব্যাটার। আইপিএলে কোহলির সেঞ্চুরি সংখ্যা ৮টি, সঙ্গে আছে ৫৫টি অর্ধশতক। তার সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্কোর ১১৩ রান, যা আজও আইপিএলের অন্যতম সেরা ইনিংস হিসেবে বিবেচিত। চার মারার দিক থেকেও পিছিয়ে নেই তিনি ৭০৫টি বাউন্ডারি আর ২৭২টি ওভার বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন এখন পর্যন্ত।
তবে বিরাট কোহলির আইপিএল ক্যারিয়ারের সবচেয়ে আলোচিত পর্বটি এসেছিল ২০১৬ সালে। সেই মৌসুমে একের পর এক বল বাউন্ডারির বাইরে পাঠিয়ে এবং রান তুলিতে ক্যানভাস সাজিয়ে তিনি গড়েন এক অবিশ্বাস্য রেকর্ড এক সিজনে সর্বোচ্চ ৯৭৩ রান। আইপিএলের ইতিহাসে এখনো কোনো ব্যাটার সে রেকর্ড ছুঁতে পারেননি। ছক্কা মারার ক্ষেত্রেও কোহলি কম যান না। আরেকটি দৃষ্টিনন্দন পরিসংখ্যান হলো রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের হয়ে এক সিজনে তার ছক্কার সংখ্যা ২৩৯টি। যে ব্যাটিংয়ে শৈল্পিকতা ও শক্তির এমন মিশ্রণ, তা বিরাট কোহলির ব্যাটেই যেন সবচেয়ে সঠিকভাবে ধরা পড়ে।
রানের রাজপুত্র থেকে রানের সম্রাটে রূপান্তর: বিরাট কোহলি শুধু রান করেই থেমে যাননি, তিনি আইপিএলকে নিজের মতো করে গড়ে নিয়েছেন। তরুণদের কাছে অনুপ্রেরণা, সমর্থকদের কাছে আশা, আর প্রতিপক্ষের কাছে আতঙ্ক হয়ে ওঠা এই ব্যাটার সময়ের সঙ্গে আরও শাণিত হয়েছেন। প্রতি মৌসুমে তার ব্যাট থেকে আসে নতুন গল্প, নতুন রেকর্ড। আইপিএল মানেই গ্ল্যামার, কিন্তু বিরাট কোহলি প্রমাণ করেছেন আইপিএল মানে দায়বদ্ধতা, পরিশ্রম, এবং ধারাবাহিকতা যেখানে তিনি নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান। এই যখন পরিসংখ্যান বিরাটের তখন স্বাভাবিকভাবেই বিরাট ভক্তদের সামনে একটি প্রশ্ন মনের মধ্যে উঁকি দিচ্ছে আর তা হল আইপিএল ২০২৫ সিজনে কেন বিরাট কোহলির ব্যাটে রান নেই। বিরাট কেন রান খরায় ভুগছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে ২০১৬ সালে কোহলি সর্বোচ্চ ৯৭৩ রান করেন ঠিক একই সিজনে কিংস এ্যালিভেন পাঞ্জাবের বিপক্ষে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ১১৩ রানের দুর্দান্ত এক ইংনিস খেলেন । যা মাত্র ৫০ বলে সাজানো বিধ্বংসী এক ইংনিস।
পাঠকের মনের মধ্যে হয়তো খটকা লাগছে যে, লেখার সূচনাতেই তো মাত্র ৫০ বলের ইংনিসটির কথা বলা যেতো! হ্যাঁ পাঠক তা বলা যেতো। তবে তা বলিনি তার কারণ বিরাটের প্রতিটি ইংনিস যে ঝলমলে তা বারবার মনে করিয়ে দেওয়ার জন্যই এমন কৌশলের আশ্রয় নেওয়া।
আসলে অনেক দর্শকের মনে প্রশ্ন জেগেছে যে, আইপিএল সিজন ২০২৫-এ বিরাটের ব্যাট সেভাবে হাসছে না কেন। সেভাবে বিরাটের ব্যাট হাসছে না তা হয়তো ঠিক তবে বিরাট কোহলির ব্যাট কিন্তু পারফর্ম করে যাচ্ছে। এই লেখার আগ পর্যন্ত বিরাট কোহলি আইপিএল ২০২৫ সিজনে মোট পাঁচটি ম্যাচ খেলেছেন।
আইপিএল ২০২৫-এ প্রথম ম্যাচে কঠিন প্রতিপক্ষ কোলকাতা নাইট রাইডার্সের বিরুদ্ধে এক দূরন্ত ইংনিস খেলেছেন । মাত্র ৩৬ বলে করেছেন ৫৯ রান যাতে ছিল পাঁচটি চার ও একটি ওভার বাউন্ডারি। পাঁচ ম্যাচে বিরাটের স্ট্রাইক রেট ছিল চোখ ধাঁধানো। প্রায় ১৪৪ স্ট্রাইক রেট টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে অবিশ্বাস্য। কোহলি মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে খেলেন আরও এক বিধ্বংসী ইংনিস যেখানে ৮টি চার আর দুইটি ছক্কার সাহায্যে করেন ৬৭ রান। বল খেলেছেন মাত্র ৪২টি। তিনি আইপিএলে প্রথম ব্যাটার হিসেবে ১০০০ (৭২১ চার ও ২৮০ ছক্কা) বাউন্ডারি পূর্ণ করে ইতিহাস গড়েছেন।
বিরাটের সাফল্যের পিছনে রহস্য কী: একটু ছন্দ করে যদি বলি কোহলির ব্যাটে আগুন জ্বলে, বোলারদের চোখে ভয়, ফিটনেস, ফোকাস জেদে ভরা জয় আসে বারংবার সই! কোহলির শরীরী ভাষায় থাকে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা। প্রতিটি রান, প্রতিটি উইকেটের পিছনে উচ্ছ্বাস। একজন বিরাট কোহলি অফসিজন মানেন না, নেটে ঘন্টার পর ঘন্টা ব্যাটিং করেন যা কিং খ্যাত কোহলির পক্ষেই সম্ভব। আরও আছে ব্যর্থতার পরেও ঘুরে দাঁড়ানোর তীব্র জেদ সেই জেদকে সাফল্যে পরিণত করেই ক্ষান্ত হোন বিরাট কোহলি। টেকনিক ও টাইমিংয়ের অসাধারণ ভারসাম্য একজন ক্রিকেটারকে এনে দেয় চূড়ান্ত সাফল্য। কভার ড্রাইভ, পুল শর্ট বা লেট কাট সবকিছুতেই নিঁখুত টাইমিং বিরাট কোহলির । বিশ্বের যে কয়জন ম্যাচের পরিস্থিতি বুঝে শর্ট সিলেকশন করেন তার মধ্যে বিরাট কোহলি অন্যতম।
ভোরের আকাশ/এসএইচ