ছবি: সংগৃহীত
স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের পদত্যাগ দাবি করেছেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন। তিনি বলেছেন, অসত্য তথ্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করায় পদে থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন আসিফ মাহমুদ।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) দুপুরে ঢাকা দক্ষিণ নগর ভবনে সাংবাদিক ও তার সমর্থকদের উদ্দেশ্যে একটি লিখিত বক্তব্য পাঠের সময় এ মন্তব্য করেন তিনি।
ইশরাক বলেন, আসিফ মাহমুদ দেশের জনগণের ম্যান্ডেটকে অবজ্ঞা করেছেন। তিনি শপথ ভঙ্গ করেছেন। শপথ ভঙ্গের জন্য আমরা তার পদত্যাগ দাবি করছি।
এর আগে, উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেছেন, ইশরাক হোসেনের শপথ গ্রহণের বিষয়টি বিচারাধীন অবস্থায় গেজেটের মেয়াদ শেষ হওয়ায় শপথ পড়ানো যায়নি।
এ প্রসঙ্গে ইশরাক হোসেন বলেন, উপদেষ্টার এই কথা সত্য হলে ভবিষ্যতে কোনো নির্বাচিত প্রতিনিধি শপথ পড়ার সুযোগ পাবেন না।
তিনি অভিযোগ করেছেন, বিজয়ী প্রার্থীর গেজেট হলে পরাজিত প্রার্থী বা যেকোনো নাগরিককে আসিফ মাহমুদের মতো ব্যক্তি ইন্ধন দিয়ে শপথ না পড়ানোর জন্য রিট মামলা দায়ের করাবেন। রিট মামলা ৩০ দিন অনিষ্পন্ন থাকলে গেজেটে উল্লেখিত মেয়াদ এর মধ্যে শেষ হয়ে গেলে ভবিষ্যতে কোনো নির্বাচিত প্রতিনিধি শপথ পড়ার সুযোগ পাবেন না।
ভোরের আকাশ/এসএইচ
সংশ্লিষ্ট
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, রক্তস্নাত জুলাই-আগস্ট আমাদের মাঝে এক বছর পর ফিরে এসেছে। দীর্ঘ ১৬ বছর ফ্যাসিস্টদের নির্মম অত্যাচার, নির্যাতন, গ্রেফতার, গুম-খুনের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে একদলীয় শাসনব্যবস্থা দীর্ঘস্থায়ী করতে চেয়েছিল আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী।মঙ্গলবার (১ জুলাই) রাজধানীর চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ‘গণঅভ্যুত্থান ২০২৪: জাতীয় ঐক্য ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা’ শীর্ষক বিএনপি আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অথিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জুলাই বিপ্লবের বর্ষপূতিতে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে দলটি।বেগম খালেদা জিয়া বলেন, ছাত্র-জনতার সম্মিলিত অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদের পতন ঘটেছে। সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশকে নতুন করে গড়ার। এই আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছে তাদের প্রতি জানাচ্ছি আন্তরিক শ্রদ্ধা, আহতদের সমবেদনা। তাদের এই আত্মত্যাগ জাতি চিরকাল মনে রাখবে।’তিনি বলেন, গুম-খুন, বিচার বহির্ভূত হত্যার শিকার যারা হয়েছেন, তাদের তালিকা প্রস্তুত করতে হবে। দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নিশ্চিত করতে হবে। প্রত্যেকটি পরিবারের সম্মানজনক পুনর্বাসন ও নিরাপদ ভবিষ্যত নিশ্চিত করতে হবে।বেগম খালেদা জিয়া আরো বলেন, ‘প্রিয় দেশবাসী, আমাদের সামনে যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে নতুন করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার, তা আমাদের দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে। জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সর্বোপরি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে হবে যেকোনো মূল্যে।সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এই রক্তস্রোত, মায়ের অশ্রুধারা যেন বৃথা না যায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। ঐক্য বজায় রাখতে হবে। আসুন আমরা সবাই মিলে শহীদ জিয়ার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করি। বাস্তবায়ন করি কোটি মানুষের বাংলাদেশ নির্মাণের স্বপ্নকে।অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, ১৯৭১, ১৯৭৫ এর ৭ নভেম্বর ১৯৯০ এর গণঅভ্যুত্থান এবং ২০২৪ এর জুলাই বিপ্লবে যারা জীবন দিয়েছেন তাদের আত্মত্যাগ আমাদের মনে রাখতে হবে। এছাড়া দেশে গণতান্ত্রিক সব আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্থদের ভুলে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।তিনি বলেন, নতুন বাংলাদেশ হবে গণতান্ত্রিক, সাম্য ও মানবিক মূল্যবোধের। তারেক রহমান বলেন, এখন যারা পিআর পদ্ধতিতে ভোট চাইছেন তাদেরকে ভাবতে হবে বাংলাদেশে এই প্রেক্ষাপটে আসলে সম্ভব নয়।তিনি আরো বলেন, আমাদের মাঝে অনৈক্যের কারণে যেন ফ্যাসিবাদ নতুন করে সৃষ্টি না হয় সেটি খেয়াল রাখতে হবে। তার জন্য বিচার নিশ্চিত করতে হবে। শহীদ পরিবারকে আমাদেরকে মূল্যায়ন করতে হবে।সংস্কার কাজ নিয়ে তারেক রহমান বলেন, এটি চলমান প্রত্রিয়া। বিএনপি ৩১ দফা বেশ আগেই ঘোষণা দিয়েছে। আগামীতে জনগণের ভোটে সরকার গঠন করলে সবাইকে নিয়ে তিনি জাতীয় সরকার গঠন করবে।বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বক্তব্যের শুরুতেই শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের যুদ্ধে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের যেমন বাংলাদেশ ভোলেনি, ২০২৪ সালে দেশ এবং জনগণের স্বাধীনতা রক্ষার যুদ্ধে বীর শহীদদেরও বাংলাদেশ কখনো ভুলবে না।বিএনপি ক্ষমতায় এলে শহীদদের স্মরণে বিভিন্ন স্থাপনা-সড়কের নামকরণ করবে জানিয়ে তিনি বলেছেন, জনগণের রায়ে বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতা পেলে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থাপনা, সড়ক কিংবা গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের নামকরণের ইচ্ছে আমাদের আছে।অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের সদস্য সচিব আবুল হোসেন। এরপর শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন এবং জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে মূল আয়োজন শুরু হয়। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সভাপতিত্ব করেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পলায়নের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন।তিনি বলেন, বিএনপি পরিবর্তনে বিশ্বাস করে বলেই বহু আগেই রাষ্ট্র সংস্কারের ৩১ দফা ঘোষণা দিয়েছিল। সংস্কারের কথা তো বিএনপিই বলেছিল, অথচ এখন প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে বিএনপি সংস্কার মানছে না। শুধু বিএনপিকে দোষারোপ করা ঐক্যের জন্য সহায়ক নয়।বিএনপি মহাসচিব বলেন, গণতন্ত্র ও ঐক্যের প্রশ্নে কোনো আপস নেই বিএনপির। এমনকি ‘জুলাই সনদ’-এর প্রস্তাব আগেই দিয়েছে বিএনপি। এখন সরকারের দায়িত্ব সেটা সামনে নিয়ে আসা। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোনো আপস নেই।অনুষ্ঠানে জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে নিহত ও আহতদের পরিবারগুলোর জন্য সম্মানসূচক আসনের ব্যবস্থা করা হয়। শহীদ পরিবারে কয়েকজন সদস্য অনুষ্ঠানে বক্তব্যও রাখেন। এসময় স্বজনহারাদের কান্নায় অনুষ্ঠানস্থলে আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, ডা, এজেএম জাহিদ হোসেনসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতারা উপস্থিত ছিলেন।ভোরের আকাশ/এসএইচ
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি মঙ্গলবার (১ জুলাই) বিকেল ৩টায় রাজধানীর চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ‘গণঅভ্যুত্থান ২০২৪: জাতীয় ঐক্য ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।দলের মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানিয়েছেন, এই আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া।অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি যুক্তরাজ্য থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।এতে সভাপতিত্ব করবেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।দলীয় সূত্রে জানা গেছে, যারা অতীত রাজনৈতিক আন্দোলনে প্রিয়জন হারিয়েছেন সমাবেশে বক্তব্য রাখবেন সেইসব শহীদ পরিবারের সদস্যরা। সেই সঙ্গে অংশ নেবেন বিএনপির জাতীয় পর্যায়ের নেতারা।ভোরের আকাশ/জাআ
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সরকার গঠন করবে- এটা মোটামুটি নিশ্চিত। এরই মধ্যে দেশ পরিচালনার প্রস্তুতিও নিচ্ছে দলটি। এরই অংশ হিসেবে চীনের সঙ্গে দলটি সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার চেষ্টা করছে। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর এ পর্যন্ত কয়েক দফায় চীন সফর করেছে দেশের অন্যতম বড় এই রাজনৈতিক দলটির বেশ কয়েকটি প্রতিনিধি দল। অন্যদিকে চীনও বিএনপি’কে কাছে টানার চেষ্টা করছে। কেননা, এদেশে তাদের বিপুল বিনিয়োগ রয়েছে। এছাড়া ভূরাজনীতির হিসাব-নিকাশ তো আছেই।সম্প্রতি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দশ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল চীন সফর করেছে। বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফেরাতে চীনের ইতিবাচক মনোভাবের কথা জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। একই সঙ্গে প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখার বিষয়ে চীনের যথেষ্ট আগ্রহ রয়েছে বলেও জানান তিনি। গতকাল সোমবার গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। চীন সফর নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরতেই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।সফর প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা আলোচনা করেছি এবং আমরা আমাদের যে প্রয়োজন সেটি ব্যাখ্যা করেছি। তারা (চীন) ইতিবাচকভাবে সায় দিয়েছেন। এটির ওপর তারা কাজ করছেন। আমরা ভবিষ্যতে সরকার পরিচালনার দায়িত্বে এলে বিষয়গুলো ইতিবাচকভাবে দেখবো। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ইস্যুতেও আলোচনা হয়েছে। বিগত ১৭ বছরের অনাকাক্সিক্ষত রাজনৈতিক বাস্তবতায় ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিকে সহনীয় করতে আমরা ঋণ পরিশোধ সময়সীমা বৃদ্ধি, বিভিন্ন ফি পুনর্বিবেচনা এবং অনুদানের সম্ভাব্যতার বিষয়েও তাদের সহায়তা চেয়েছি। যেটা তারা সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন।তিনি বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সফর বিনিময় চীনা কমিউনিস্ট পার্টির একটি প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্য। এরই ধারাবাহিকতায় এর আগেও বিএনপির প্রতিনিধিদল চীন সফর করেছে।তিনি আরও বলেন, পাঁচদিনব্যাপী এ সফরে আমরা চীনা কমিউনিস্ট পার্টি এবং চীন সরকারের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে মতবিনিময় করার সুযোগ পেয়েছি। যাদের মধ্যে ছিলেন- চীনের কমিউনিস্ট পার্টির পলিটিক্যাল ব্যুরোর সদস্য এবং ন্যাশনাল পিপল’স কংগ্রেসের স্থায়ী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান লি হংসং, সিপিসি কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিভাগের মন্ত্রী লিউ জিয়ানচাও ও ভাইস মিনিস্টার সান হাইয়ান।এর আগে শুক্রবার রাতে চীন সফর শেষে দেশে ফিরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, চীন সফরের মধ্য দিয়ে দেশটির কমিউনিস্ট পার্টির সাথে বিএনপির সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হয়েছে।বিএনপির ওই প্রতিনিধি দলে ছিলেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, সফরটি খুবই ভালো হয়েছে। সামনে নির্বাচনে আমরা যদি সরকার গঠন করি তাদের যেন প্রবেলেম না হয়, ধারাবাহিকতা যেন থাকে, এগুলো নিয়ে আলাপ হয়েছে। তারাও ইতিবাচক বলেছে। আমরাও ইতিবাচকভাবে দেখছি।বিএনপি প্রতিনিধিদলের এই সফরটিকে কুটনৈতিকভাবেও বেশ গুরুত্বের সাথে দেখছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, বিএনপি’র উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদলের এই সফর ভবিষ্যৎ কূটনৈতিক সম্পর্কের জন্য ইতিবাচক ইঙ্গিত বহন করে। চীনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমদ বলেন, প্রথমত চীনকে নিয়ে বাংলাদেশের দলগুলো কী ভাবছে সেটা বোঝার চেষ্টার করা, দ্বিতীয়ত তাদের স্বার্থগুলো আছে সেগুলোর ধারাবাহিকতা কীভাবে থাকবে সেটা নিয়ে আলোচনা করা।তিন দফা চীনে বিএনপির প্রতিনিধি দল: চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খানের নেতৃত্বে বিএনপি ও মিত্র রাজনৈতিক দলের একটি প্রতিনিধি দল চীন সফর করে। এর আগে গত বছর, অর্থাৎ ২০২৪ সালের নভেম্বরে দলের ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান খান রিপনের নেতৃত্বে চীন সফরে যায় বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল। গত ২২ জুন চীনের কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে বিএনপি মহাসচিবের নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল চীন সফরে যায়। এই সফরে আরও ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সেলিমা রহমান, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্যসহ ১০ জন সদস্য।বিএনপি প্রতিনিধি দলের সদস্যরা চীনের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপমন্ত্রী সান ওয়েইডং, কমিউনিস্ট পার্টির আন্তর্জাতিক বিভাগের মন্ত্রী লিউ জিয়ানচাও এবং ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের স্ট্যান্ডিং কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান লি হংঝংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, এসব সফরে শুধু কৌশলগত আলোচনাই নয়, বরং বিএনপি চীনের সঙ্গে নিজেদের রাজনৈতিক যোগাযোগ আরও দৃঢ় করতে চেয়েছে।অর্থনীতি ও ব্যবসায়িক স্বার্থ : গত দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিল আওয়ামী লীগ। এই সময়ে বাংলাদেশের সাথে চীনের অর্থনৈতিক ও ব্যবসায়িক সম্পর্কও ছিল বেশ ইতিবাচক। বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশে চীনের প্রায় ৪২ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ রয়েছে। যে কারণে চীন বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চায়।বাংলাদেশ চীন অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক সাহাবুল হক বলেন, চীন বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান কৌশলগত ও অর্থনৈতিক অংশীদার। যে কারণে তারা বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে যে আলোচনা করছে সেটা মূলত ইকনোমিক ডিপ্লোম্যাসি।বিশ্লেষকরা মনে করছেন, অর্থনৈতিক ও ব্যবসায়িক কারণে শেখ হাসিনা সরকার পতনের জামায়াত, এনসিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছে বিএনপি। সে কারণে বিএনপিকেও বেশ গুরুত্ব দিচ্ছে চীন। চীনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমদ বলেন, অর্থনৈতিক বিষয়টি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এই সফরে বিএনপির সাথে আলোচনার মাধ্যমে আসলে চীন কী চায়, সেটাও বিএনপির কানে দিয়ে রাখছে।অন্যদিকে, বাংলাদেশে চীনের যে বিনিয়োগ আছে সেগুলো নিয়ে আলোচনা করে রেখেছে ভবিষ্যতের নিশ্চয়তার জন্য। ভবিষ্যতে বিএনপি সরকার গঠন করলে যেন এদেশের তাদের বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যে কোনো ধরনের সংকট না থাকে সে কারণটিকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে চীন। এটি অবশ্য বিএনপি মানছে। কেননা, এই সফরে বিএনপির প্রতিনিধি দল যখন চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সাথে বিভিন্ন বৈঠক করেছে সেখানে এসব বিষয়েও নানা আলোচনা হয়েছে।ভূরাজনৈতিক কারণ: সম্প্রতি বাংলাদেশ ও পাকিস্তানকে নিয়ে চীনের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের একটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে তিন দেশের সমন্বয়ে ‘একটি সম্ভাব্য জোট’ গঠনের উদ্যোগ দেখা গেছে। কূটনীতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এ উদ্যোগের পেছনে ভারতকে একটা ‘বার্তা’ দেওয়ার চেষ্টা থাকতে পারে। এমন এক উদ্যোগের মধ্যেই বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে চীন। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ভারতের সাথে বাংলাদেশের একটা অত্যন্ত সুসম্পর্ক ছিল। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর চীন এই সুযোগটিকে কৌশলে কাজে লাগাতে চাচ্ছে।অধ্যাপক সাহাবুল হক বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সাথে ভারতের যে সম্পর্কের বৈরিতা চলছে, চীনের জন্য সেটাকে একটি সুযোগও বটে। কেননা, এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ কিংবা পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক রাখলে সেটি ভারতের জন্য চাপেরও একটা কারণ। যে কারণে বিএনপি ও বাংলাদেশের সামগ্রিক রাজনীতির জন্য চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ককে বেশ গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।যদিও এই প্রশ্নে কিছুটা ভিন্নমত রয়েছে সাবেক কূটনীতিক মুন্সী ফয়েজ আহমদের। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সাথে চীনের ও বাংলাদেশের সাথে ভারতের সম্পর্ক তুলনা করার মতো না। ভারতের সাথে সম্পর্কে যেসব জিনিস গুরুত্ব পায়, চীনের সাথে সম্পর্কে সেসব জিনিস গুরুত্ব পাবে না। সুতরাং একটা দিয়ে আরেকটা পুষিয়ে নেওয়া যায় না।তিনি আরও বলেন, সম্পর্ক স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে ভারতের সাথে। চীনের কাছ থেকে অর্থনৈতিক সহযোগিতা মিললেও, ভৌগোলিক অখণ্ডতার প্রশ্নে ভারত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ভৌগোলিক নিরাপত্তা চীন না, সেটি নিশ্চিত করতে আমাদের ভারতকে প্রয়োজন হবে।বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাংলাদেশের বর্তমান অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে চীন শুধু বিএনপি নয়, অন্যান্য দলগুলোর সাথে যে সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করছে তা মূলত নিজেদের স্বার্থেই বেশি।ভোরের আকাশ/এসএইচ
ইরানে ইহুদিবাদী ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ঢাকাস্থ ইরান দূতাবাসে শোক বইতে স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর একটি প্রতিনিধি দল।সোমবার (৩০ জুন) বেলা সাড়ে ১১টায় দলের নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ দূতাবাসে উপস্থিত হন। তারা ইরানের রাষ্ট্রদূত মানসুর চাভোসি’র সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন এবং ইসরায়েলি হামলায় নিহতদের স্মরণে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।এ সময় ডা. তাহের দূতাবাসে সংরক্ষিত শোক বইতে স্বাক্ষর করেন এবং নিহতদের ‘শহীদ’ হিসেবে কবুল করার জন্য দোয়া করেন। আহতদের দ্রুত সুস্থতা এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান তিনি।জামায়াতের পক্ষ থেকে বলা হয়, ইসরায়েল আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ ঘোষিত সনদ লঙ্ঘন করে ইরানের সার্বভৌমত্বে হামলা চালিয়েছে, যা ন্যক্কারজনক। তারা এই হামলার নিন্দা জানিয়ে ইরানের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে। রাষ্ট্রদূত চাভোসি জামায়াতের এ অবস্থানকে সাধুবাদ জানান এবং বাংলাদেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।প্রতিনিধি দলের সদস্যরা আশা প্রকাশ করেন, ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ও ইরানের মধ্যকার ভ্রাতৃসুলভ বন্ধন আরও জোরদার হবে।ভোরের আকাশ/এসএইচ