ভোরের আকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৭ আগস্ট ২০২৫ ০৫:২৯ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা ও তেজগাঁও বিমানবন্দরের নো-ফ্লাই জোনে স্থাপনা নির্মাণ বিশেষ করে উচু ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে অসংখ্যবার বিজ্ঞপ্তি ও নির্দেশনা দিয়ে আসছে সরকার। কোনো দুর্ঘটনা ঘটলেই বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে। তার কয়েকদিনের মধ্যেই চলে যায় আলোচনার বাইরে। অনেক দিন পর আবার বিষয়টি সরকারের নজরে এসেছে। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মোস্তফা মাহমুদ সিদ্দিক জানিয়েছেন,হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরের আশপাশের ‘নো-ফ্লাই জোনে’ অনুমতি ছাড়াই নির্মিত হয়েছে অন্তত ২৬৩টি উঁচু ভবন। এসব ভবন অপসারণ বা ব্যবস্থা গ্রহণের দায়িত্ব রাজউকের ।
বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) বেবিচকের সদরদপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য তুলে ধরেন তিনি।
বেবিচক চেয়ারম্যান জানান, গত এক দশকে এসব ভবন নির্মাণ করা হয়েছে বেবিচকের অনুমোদন ছাড়াই।
তিনি বলেন, “ভবন ভাঙার বা অপসারণের ক্ষমতা আমাদের নেই। তবে রাজউককে আমরা একাধিকবার চিঠি দিয়ে জানিয়েছি।
এখন এসব ভবনের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে রাজউকের।”
সভায় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাজধানীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজসংলগ্ন এলাকায় অনুমোদনবিহীন কোনো ভবন নেই।
তিনি জানান, ঐ এলাকায় সর্বোচ্চ ১৫০ ফুট উচ্চতার ভবন নির্মাণের অনুমতি রয়েছে, এবং বর্তমানে নির্মিত ভবনগুলোর সর্বোচ্চ উচ্চতা ১৩৫ ফুটের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
তৃতীয় টার্মিনালের উদ্বোধন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বেবিচক চেয়ারম্যান জানান, নির্দিষ্ট তারিখ এখনও নির্ধারণ হয়নি। তবে তিনি আশ্বাস দেন, খুব শিগগিরই পুরোপুরিভাবে তৃতীয় টার্মিনাল চালুর লক্ষ্যে প্রস্তুতি চলছে।
এছাড়া তৃতীয় টার্মিনালের অপারেশন পরিচালনার জন্য একটি জাপানি কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে আলোচনা চলছে বলেও জানান মো. মোস্তফা মাহমুদ সিদ্দিক। সমঝোতায় পৌঁছাতে পারলে উভয় পক্ষের মধ্যে আনুষ্ঠানিক চুক্তি সই হবে বলেও তিনি জানান।
এদিকে, অভিযোগ উঠেছে, বিমানবন্দর সংলগ্ন কাওলা, আশকোনা, উত্তরা, দক্ষিণখান এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে বেবিচকের নির্ধারিত উচ্চতার সীমা লঙ্ঘন করে বহু ভবন নির্মিত হয়েছে।
বেবিচকের একটি সূত্র জানিয়েছে, এসব ভবন অপসারণে রাজউককে বহুবার চিঠি ও নোটিশ দেওয়া হয়েছে, কিন্তু অবৈধ নির্মাণকাজ বন্ধ হয়নি এবং যথাযথ পদক্ষেপও নেওয়া হয়নি। এর ফলে বেবিচক অনেকটা অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছে।
বেচিকের একজন কর্মকর্তা বলেন, আমরা সেই ১০ থেকে ১২ বছর ধরে রাজউককে বিভিন্ন সময়ে চিঠি ও নোটিশ দিয়েছি কিন্তু তারা তা আমলে নিচ্ছে না। তাদের অনুমতি ছাড়া তো এতগুেেলা ভবন গড়ে ওঠেনি।
অনুমোদনের প্রক্রিয়া ও নজরদারির অভাব
বিমানবন্দরের ১৫ কিলোমিটারের মধ্যে বহুতল ভবন নির্মাণ করতে হলে বেবিচকের অনুমতি নিতে হয়। বেবিচক বিমানবন্দরের দূরত্ব অনুযায়ী ভবনের উচ্চতা নির্ধারণ করে অনুমতিপত্র দেয়। এরপর রাজউক এবং অন্যান্য দপ্তর থেকে অনুমোদন নিয়ে ভবন নির্মাণ শুরু করতে হয়। বেবিচকের সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, রাজউকের যথাযথ নজরদারি ও দেখভালের অভাবে এতসব বহুতল ভবন গড়ে উঠেছে।
এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিমানবন্দরের কাছাকাছি উঁচু ভবনগুলো উড্ডয়ন ও অবতরণের সময় বিমানের জন্য মারাত্মক বাধা সৃষ্টি করে। জরুরি অবতরণ বা প্রতিকূল আবহাওয়ায় এটি ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। অবৈধ ভবনগুলো বিমানবন্দরের রাডার এবং অন্যান্য নেভিগেশন সিস্টেমে সংকেত পাঠাতে ও গ্রহণ করতে বাধা দিতে পারে, যা বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণকে ব্যাহত করে। এছাড়া, এই ভবনগুলো বিমানবন্দরের নিরাপত্তার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ, কারণ এগুলো অপ্রত্যাশিত সন্ত্রাসী হামলা বা নাশকতার জন্য ব্যবহৃত হতে পারে। বিমানবন্দরের ভবিষ্যৎ সম্প্রসারণ পরিকল্পনাতেও এই অবৈধ ভবনগুলি বাধা সৃষ্টি করছে।
বাধা ও চ্যালেঞ্জ
বেবিচকের নিয়ম অনুযায়ী, বিমানবন্দরের চারপাশে নির্দিষ্ট উচ্চতার বেশি কোনো কাঠামো নির্মাণ নিষিদ্ধ। এই নিয়ম লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে বেবিচক বহুবার স্থানীয় প্রশাসন, রাজউক এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়ে অবৈধ নির্মাণ বন্ধের অনুরোধ করেছে। তবে, স্থানীয় প্রভাবশালী মহল এবং কতিপয় অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে এই নির্মাণকাজ চলছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আমাদের এখানে তো অনেক জায়গায় আইন থাকে কিন্তু আইন না মানার প্রবণতা আমাদের মাঝে অনেক বেশি। নো ফ্লাইজোনে কী ধরনের স্থাপনা থাকবে, থাকবে না তা কিন্তু ক্লিয়ারলি মার্ক বলা আছে। এই বিষয়টি বেবিচক যেমন জানে তেমনি রাজউকও জানে।
ভোরের আকাশ/এসএইচ