নারী উদ্যোক্তা
পিরোজপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৪:১৭ পিএম
ছবি: ভোরের আকাশ
পিরোজপুরের কাউখালীতে নিলুফার ইয়াসমিন নামে এক নারী উদ্যোক্তা স্থানীয় সুপারি গাছের পরিত্যক্ত খোল দিয়ে নানা তৈজসপত্র তৈরি করছেন। উদ্যোক্তা নিলুফার এর তৈরি পরিবেশবান্ধব থালা, বাটি, বাসন, ট্রে স্থানীয়ভাবে বাজারজাত সহ শহর অঞ্চলে বাজারজাত করে আর্থিক সমৃদ্ধি অর্জন করছেন।
উদ্যোক্তা নিলুফার ইয়াসমীন উপজেলার সদর ইউনিয়নের কেউন্দিয়া গ্রামের কেউন্দিয়া গ্রামের হাফিজুর রহমান জুয়েলের স্ত্রী। সে স্থানীয় নাঙ্গুলী গ্রামে ন্যাচারাল বিউটি প্রাইভেট লিমিটেড নামে একটি কারখানা স্থাপন করে সুপারির খোল দিয়ে নানা তৈষজসপত্র উৎপাদন করে আসছেন। তিনি সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে স্থানীয়ভাবে পরিচিতি লাভ করেছেন।

উদ্যোক্তা নিলুফার ইয়াসমিনের স্বামী হাফিজুর রহমান জুয়েল জানান, তার স্ত্রী বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে জানতে পারেন যে প্লাস্টিকের সামগ্রী পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক। প্লাস্টিক পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছে। সে ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে জানতে পারেন সুপারি গাছের খোল দিয়ে বিভিন্ন প্রকার পরিবেশবান্ধব সামগ্রী তৈরি করা সম্ভব। এতে তার আগ্রহ জন্মে। তার ইচ্ছা অনুযায়ী সুপারির খোল দিয়ে পরিবেশবান্ধব সামগ্রী তৈরি করার কারখানা স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় কারখানার মেশিন আমদানি নিয়ে। মেশিনগুলো ইন্ডিয়া অথবা অন্য কোন দেশ থেকে আমদানি করতে হলে অনেক ব্যয়বহুল। যে কারণে থমকে যায় তার পরিকল্পনা।
নিলুফার অন্য একটি কারখানা দেখে ইণ্ডিয়ান মেশিনের মত করে নিজস্ব পরিকল্পনায় বাংলাদেশই তৈরি করেন সুপারির খোল দিয়ে থালা বাসন তৈরি করার মেশিন। এতে সফল হন তিনি। পরে বাড়ির পাশে কাউখালী - ঝালকাঠি সড়কের পাশে নাাঙ্গুলী সাহাপুরা গ্রামে মামা ফরিদ হোসেনের একটি ঘর ও জায়গা ১০ বছর চুক্তিতে ভাড়া নিয়ে ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে কারখানাটি স্থাপন করা হয়।এতে প্রায় ১৮/২০ লাখ টাকা ব্যয় হয়। কাউখালী সোনালী ব্যাংকের ঋণ সহায়তায় স্থাপনকৃত এ কারাখালাদিয়ে নিলুফার এলাকায় একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। এ কারখানায় স্থানীয়ভাবে সুপারী গাছের পরিপক্ক খোল সংগ্রহ করে উৎপাদন শুরু করে বিভিন্ন প্রকার থালা, বাসন, বাটি, পেয়ালা, ট্রে সহ বিভিন্ন পরিবেশবান্ধব সামগ্রী তৈরী করা হচ্ছে।
উদ্যোক্তা নিলুফার ইয়াসমীন বলেন, কাউখালীতে প্রচুর সুপারীর ফলন ঘটে যা অর্থকারী ফসল। সেই সুপারি গাছের পরিত্যক্ত খোলা এখন আর পরিবেশ দূষণ করবে না। এটি ন্যায্য মূল্যে ক্রয় করে পরিবেশের ভারসাম্য জন্য তৈরি করা হচ্ছে। প্লাস্টিকের বিকল্প সামগ্রী হিসেবে এটি দিনদিন মানুষের কাছে আগ্রহের সৃষ্টি করছে। স্থানীয় সাধারণ মানুষ বিষয়টিতে আশ্বস্ত হয় সকলেই শুরু পরিত্যাক্ত সুপারি গাছের খোল সংগ্রহ কওে কারখানায় সরবরাহ করছেন।
গাছ থেকে একটি সুপারি গাছের খোল পরার সাথে সাথেই সংগ্রহ করছেন বাগানের মালিকরা। উন্নতমানের ভালো সাইজের একটি খোল দুই টাকার বিনিময়ে কারখানা ক্রয় করা হয়। বাকি অংশটি নিজেরাই জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছেন সুপারি গাছের মালিক পক্ষ। যার ফলে এই এলাকায় সুপারি গাছের চাষ এক বছরে কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যান্য আগাছা গাছ কেটে মানুষ এখন ঝুকছে সুপারীর বাগান তৈরি করতে।
সাধারণ মানুষ ও ভোক্তরা স্বল্প মূল্যে মানসম্মত প্লাস্টিকের বিকল্প থালা-বাসন সহ অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পেয়ে বেশ খুশি।
জানা গেছে, বর্তমানে ৫/৬ জন কর্মচারী খোল দিয়ে বিভিন্ন মালামাল উৎপাদন করছেন। খোল সংগ্রহে অনেকে কর্মব্যস্ত থাকেন তারাও লাভবান হচ্ছেন। দৈনিক ৪/৫ শত থালা,বাসন সামগ্রী উৎপাদন করা হয়। সম্পূর্ণ রাসায়নিকমুক্ত স্বাস্থ্যসম্মত পদ্ধতিতে এই মালামাল তৈরি করা হয়। নিয়ম মেনে একাধিকবার ব্যবহার করলেও কোনও সমস্যা হয় না। বর্তমানে বিদ্যুৎ বিল কর্মচারী বেতন দিতে প্রায় ৫০/ ৬০ হাজার টাকা ব্যয় করে লাভবান হচ্ছেন উদ্যোক্তা।
বাসুরী, কাঠালিয়া, নাঙ্গলী, আমরাজুড়ি, সুবিদপুর, চিরাপাড়া গ্রামের কয়েকজন সুপারি চাষীদের সাথে আলাপ করলে তারা জানান, কাউখালীতে দক্ষিণ অঞ্চলের সবচেয়ে বেশি সুপারের উৎপাদন হয়। যেখানে সুপারির খোলগুলো নষ্ট হয়ে পরিবেশের দূষণ ঘটাত সেই জায়গায় সে খোলটি বিক্রি করে টাকা পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে কাউখালী উপজেলা বিএনপি'র সাধারণ সম্পাদক বিশিষ্ট সমাজসেবক এইচ এম দ্বীন মোহাম্মদ বলেন, গৃহবধূ নিলুফার এর অদম্য আগ্রহের কারণে এটা করা সম্ভব হয়েছে। এমন উদ্যোগের ফলে সে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন।
পরিবেশবান্ধব উৎপাদিত এ সামগ্রীর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব এ পণ্য। তবে সরকারের সহযোগিতা পেলে কারখানার পরিধি বৃদ্ধি করা সম্ভব।
কাউখালী উপজেলা মহিলা বিষয়ক অফিসার নূরে জান্নাত ফেরদৌসি বলেন, একজন নারী স্ব উদ্যোগে পরিবেশবান্ধব একটি শিল্প গড়ে দৃষ্টান্ত স্থাপণ করেছেন। তার এ শিল্প উদ্যোগ এলাকায় অন্য নারীদের জন্য একটি দৃষ্টান্ত। মহিলা দপ্তর হতে তাকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।
এ ব্যাপারে কাউখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্বজল মোল্লা বলেন, সুপারির খোল দিয়ে পরিবেশ বান্ধব থালা-বাস উৎপাদন করায় পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা পাবে। অপরদিকে বেকারত্ব হ্রাস পাবে । আমাদের সকল বেকার যুবক যুবতীদের এই জাতীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হবে । তাহলে কারো চাকুরির জন্য ঘুরতে হবে না। বরং উদ্যোক্তারা চাকরি দিতে পারবেন। উদ্যোক্তা নিলুফা ইয়াসমিনের তেমন একজন দৃষ্টান্ত। জাতীয় কাজে যে কোনো সহযোগিতার চাওয়া হইলে উপজেলা প্রশাসন পাশে থাকবে।
ভোরের আকাশ/মো.আ.