স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার:
প্রকাশ : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১১:৪৫ পিএম
জাতিসংঘ সম্মেলনে রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপের দাবি
আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে জাতিসংঘের উদ্যোগে অনুষ্ঠিতব্য ‘রোহিঙ্গা বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে’ রোহিঙ্গারা সংকট সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক মহলের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপের দাবি জানিয়েছেন। তারা সম্মান ও নিরাপত্তার সঙ্গে নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরতে বিশ্ববাসীর সহযোগিতাও চেয়েছেন।
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের থাইংখালীর ১৩ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকালে এক সমাবেশে এই দাবি জানানো হয়। ‘রোহিঙ্গা ইলেক্টেড সিভিল সোসাইটি’ নামে একটি সংগঠন সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশ থেকে রোহিঙ্গারা জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি মিয়ানমারে তাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে মিয়ানমারে সংঘটিত গণহত্যার ন্যায়বিচারেরও দাবি জানান।
দীর্ঘ ৮ বছরের বেশি সময় ধরে আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকার ও স্থানীয় জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন রোহিঙ্গারা। তারা আশা করছেন, ৩০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিতব্য সম্মেলন রোহিঙ্গাদের সমস্যা ও বিশ্ব সম্প্রদায়ের জন্য স্থায়ী ও কার্যকর সমাধানের পথ দেখাবে। বর্তমানে বাংলাদেশে ১৩ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়ে রয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে জাতিগত সহিংসতার কারণে পালিয়ে এসেছে।
১৫ নম্বর ক্যাম্পের মাস্টার ছৈয়দ উল্লাহর সভাপতিত্বে সমাবেশে রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক হাই-লেভেল কনফারেন্সে রোহিঙ্গাদের ওপর সংঘটিত মিয়ানমার সরকার ও আরাকান আর্মির নৃশংসতা তুলে ধরতে হবে। তারা অভিযোগ করেন, রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক বসতভিটা থেকে বিতাড়ন, গণহত্যা, নিপীড়ন, ধর্ষণ, মৌলিক অধিকার ও চলাচলের স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করা, বৈষম্যমূলক আইন প্রয়োগসহ নানা অমানবিক কার্যক্রম আজও চলছে।
সমাবেশে বক্তারা আসন্ন বৈঠকে এসব বিষয় যথাযথভাবে উপস্থাপনের আহ্বান জানান এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে ন্যায়বিচার ও মানবাধিকার নিশ্চিতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান। বক্তারা বলেন, আট বছরেও প্রতিশ্রুতি ছাড়া কিছুই বাস্তবায়িত হয়নি। কেবল মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল জীবন কোনোভাবেই টেকসই নয়।
কমিউনিটি নেতা মাস্টার ছৈয়দউল্লাহ বলেন, “আমরা আর প্রতিশ্রুতি চাই না, চাই নিরাপদে নাগরিক অধিকার নিয়ে নিজ দেশে ফেরার নিশ্চয়তা।”
অন্যান্য বক্তাদের মধ্যে ছিলেন মাস্টার জাহাঙ্গীর আলম (শিক্ষক প্রতিনিধি), মাস্টার কিন মং (সভাপতি, সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম), মাওলানা শফিক (শিক্ষক প্রতিনিধি) ও সাজিদা বেগম (নারী প্রতিনিধি)।
সমাবেশে ইমাম, মুহতামিম, চেয়ারম্যান, সোশ্যাল মিডিয়া কর্মী, হেড মাঝি, শিক্ষক, নারী প্রতিনিধি, কমিউনিটি ডাক্তার, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি, তরুণ সমাজের প্রতিনিধি, ক্যাম্পভিত্তিক সংগঠনের সদস্য এবং সাধারণ রোহিঙ্গারা অংশ নেন।
এর আগে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যৌথ প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত বলে জানান। তিনি আশা প্রকাশ করেন, আসন্ন সম্মেলন থেকে বাস্তব পদক্ষেপ ও প্রয়োজনীয় অর্থায়ন নিশ্চিত হবে।
ভোরের আকাশ/হ.র