শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ১২ দিন বন্ধ
মো. রেজাউর রহিম
প্রকাশ : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১২:৩৫ এএম
ছবি: সংগৃহীত
বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা উপলক্ষে টানা চারদিন ছুটি পাচ্ছেন সরকারি চাকরিজীবীরা। আজ রোববার মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে শুরু হবে এ পূজা উৎসব। বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে আগামী ২ অক্টোবর পাঁচ দিনব্যাপী উৎসবের শেষ হবে। দুর্গাপূজা উপলক্ষে টানা চারদিন ছুটি পাচ্ছেন সরকারি চাকরিজীবীরা। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে থাকছে টানা ১২ দিনের ছুটি।
জনপ্রশাসর মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দুর্গাপূজা উপলক্ষে আগামী ১ অক্টোবর নির্বাহী আদেশে ছুটি থাকবে। আগামী ২ অক্টোবর বিজয়া দশমী উপলক্ষে একদিন ছুটি থাকবে। এরপর শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে টানা চারদিন ছুটি উপভোগ করতে পারবেন সরকারি চাকরিজীবীরা।
এদিকে, শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে টানা ১২ দিনের ছুটি থাকছে। আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে এই ছুটি শুরু হয়ে চলবে ৭ অক্টোবর পর্যন্ত। দেশের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক তথা স্কুল-কলেজগুলো এ ছুটির আওতায় পড়বে। এছাড়া দুর্গাপূজা, বিজয়া দশমী, ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম, প্রবারণা পূর্ণিমা ও লক্ষ্মীপূজা উপলক্ষে ১২ দিনের ছুটি থাকছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি)। আজ রোববার থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত (মোট ১২ দিন) বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগ, ইনস্টিটিউট এবং অধিভুক্ত কলেজের পূর্বেনির্ধারিত পরীক্ষা স্থগিত থাকবে। আর ছুটির জন্য স্থগিত পরীক্ষাগুলোর নতুন সময়সূচি পরে জানানো হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পূজার ছুটি সংক্রান্ত বিষয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে গত সপ্তাহেই জরুরি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনায়, শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত হাইস্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো পরীক্ষার তারিখ না দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এই ১২ দিনের মধ্যে ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম, প্রবারণা পূর্ণিমা, লক্ষ্মী পূজার ছুটিও পড়েছে।
মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে এ নির্দেশনা জারি করা আদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। আদেশে বলা হয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ বছরের ছুটির তালিকা প্রণয়ন করা হয়। তালিকায় দুর্গাপূজা, বিজয়া দশমী, ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম, প্রবারণা পূর্ণিমা ও লক্ষ্মীপূজা উপলক্ষে ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত ১২ দিন অবকাশকালীন ছুটি অনুমোদন করা হয়। যথাযথ ভাবগাম্ভীর্যেও সঙ্গে এসব উৎসব উদযাপনের জন্য আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত ১২ দিন সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোনো পরীক্ষার দিন ধার্য না করার জন্য অনুরোধ করা হলো। পঞ্জিকা অনুসারে এ বছর মহাষষ্ঠী ২৮ সেপ্টেম্বর, ২৯ সেপ্টেম্বর মহাসপ্তমী, ৩০ সেপ্টেম্বর মহাষ্টমী, ১ অক্টোবর মহানবমী এবং ২ অক্টোবর মহাদশমী হবে।
উল্লেখ্য, দুর্গাপূজা উপলক্ষে দশমীর দিন সরকারি ছুটি থাকে। আর মহাষষ্ঠীর দিন থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পূজার ছুটি শুরু হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারি করা সরকারি-বেসরকারি মাধ্যমিক ও নিম্নমাধ্যমিক স্কুলের ছুটির তালিকা ও বর্ষপঞ্জি অনুসারে এসব প্রতিষ্ঠানে ছুটি শুরু হবে ২৮ সেপ্টেম্বর। ৭ অক্টোবর পর্যন্ত সাপ্তাহিক ছুটি ছাড়া আট দিন বন্ধ থাকবে স্কুলগুলো। এরপর ৮ অক্টোবর থেকে শুরু হবে ক্লাস। সরকারি-বেসরকারি কলেজের শিক্ষাপঞ্জি ও ছুটির তালিকা অনুসারে এসব প্রতিষ্ঠানের ছুটিও শুরু হচ্ছে ২৮ সেপ্টেম্বর। ৯ অক্টোবর পর্যন্ত সাপ্তাহিক ছুটি ছাড়া ১০ দিন বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজগুলোও বন্ধ থাকবে। ১০ ও ১১ অক্টোবর শুক্র ও গতকাল শনিবার হওয়ায় কলেজগুলোতে ক্লাস শুরু হবে ১২ অক্টোবর। অবশ্য, সরকারি চাকরিজীবীরা বাড়তি ছুটি পেলেও বিভিন্ন উৎসবে দেশের বেসরকারি খাতের কর্মচারীরা সরকার ঘোষিত ছুটি পান না। বিষয়টি দেশের চাকরিজীবীদের মধ্যে একধরনের বৈষম্য সৃষ্টি করে, যা দেশের সংবিধান ও মানবতাবিরোধী বলে মনে করেন তারা বিশ্লেষকরা।
এছাড়া একদেশে দুই ধরনের ‘ছুটিনীতি’ বেসরকারি কর্মচারীদের মধ্যে একধরনের হীনমন্ন্যতাও সৃষ্টি করে। এজন্য দেশের সুষম উন্নয়নে এবং বৈষম্য রোধকল্পে সকল সরকারি ছুটি সরকারি-বেসরকারি খাতে কর্মরতদের একই হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
এদিকে, শারদীয় দুর্গাপূজা ঘিরে রাজধানীসহ সারাদেশে অনেকটা উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে। টানা চার দিনের সরকারি ছুটি উৎসবের আনন্দকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
জানা গেছে, এ বছর সারাদেশে ৩৩ হাজার ৩৫৫টি মণ্ডপ ও মন্দিরে দুর্গাপূজার আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। গত বছরের চেয়ে এ বছর ১ হাজার ৮৯৪টি বেশি মণ্ডপে দুর্গোৎসব পালন করা হবে।
সারাদেশের পুজামণ্ডপগুলোতে বাড়তি নিরাপত্তা : এদিকে, পূজা উপলক্ষে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সারা দেশে বিজিবি মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এছাড়া সীমান্ত এলাকায় ও রাখা হচ্ছে বিশেষ টহলের ব্যবস্থা।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা-২০২৫ উপলক্ষে সীমান্তবর্তী এলাকা এবং রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের দুই হাজার ৮৫৭টি পূজামণ্ডপের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি), মোতায়েন করা হয়েছে ৪৩০ প্লাটুন সদস্য।
এছাড়াও সীমান্ত এলাকায় বিশেষ টহল চালানো হচ্ছে। এছাড়া সীমান্তবর্তী এলাকাসহ সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিজিবির ২৪টি বেইজ ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। উৎসব চলাকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে কাজ করছে তারা।
জানা গেছে, বিজিবির নিরাপত্তাধীন মোট দুই হাজার ৮৫৭টি পূজামণ্ডপের মধ্যে সীমান্তবর্তী (সীমান্তের ৮ কিলোমিটারের মধ্যে এবং পার্বত্য এলাকার ১৫টি পূজামণ্ডপসহ) এলাকায় এক হাজার ৪১১টি এবং সীমান্তবর্তী এলাকার বাইরে রয়েছে এক হাজার ৪৪৬টি পূজামণ্ডপ। পূজা উপলক্ষে যেকোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা প্রতিরোধে বিজিবির গোয়েন্দা নজরদারি শক্তিশালী করার পাশাপাশি সীমান্ত এলাকায় বিশেষ টহল চালানো হচ্ছে। দেশের জনগণ যাতে নির্বিঘ্নে এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশে দুর্গাপূজা উদযাপন করতে পারে সে জন্য বিজিবি সারা দেশে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছে।
ভোরের আকাশ/এসএইচ