সিপন আহমেদ, মানিকগঞ্জ
প্রকাশ : ২২ জুলাই ২০২৫ ০৮:৩১ পিএম
সংগৃহীত ছবি
২০২৪ সালের জুলাইয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার প্রতিবাদে মানিকগঞ্জে বিক্ষোভে হামলার অভিযোগে করা মামলায় অভিযুক্ত হয়েছেন একজন এমন ব্যক্তি, যিনি ঘটনার সময় পরিবারের সঙ্গে কক্সবাজার ভ্রমণে ছিলেন। ঘটনাটি ঘটেছে ২০২৪ সালের ১৮ জুলাই। সেদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাক অনুসারে মানিকগঞ্জ জেলা শহরের খালপাড় ব্রিজ এলাকায় বিক্ষোভ করছিলেন স্থানীয় ছাত্র-জনতা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সেই বিক্ষোভে হামলা চালান আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। ঘটনায় বহু মানুষ আহত হন। এ ঘটনার প্রায় ১০ মাস পর, ২০২৫ সালের ৫ মে মানিকগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১ এ মামলা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা মেহেরাব হোসাইন (১৯)। সিআর মামলা নম্বর ৪৮৪। মামলায় নাম উল্লেখ করা হয় ২১৭ জনের। আরও ১০০ থেকে ১৫০ জনকে রাখা হয় অজ্ঞাতনামা আসামির তালিকায়। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
তবে মামলার এজাহার ঘেঁটে দেখা যায়, তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে একজন—এডভোকেট দেলোয়ার হোসেন—দুইবার আসামি হয়েছেন। তিনি মামলার ৪১ ও ৭৭ নম্বর আসামি। ৪১ নম্বরের তালিকায় তাঁর পিতার নাম দেওয়া হয়েছে আবদুল গফুর, ঠিকানা—মহেশখো, হরিরামপুর। আবার ৭৭ নম্বর তালিকায় পিতার নাম অজ্ঞাত, ঠিকানা—রনি মেনশন, মানিকগঞ্জ পৌরসভা।
প্রশ্ন উঠেছে, একজন ব্যক্তি কীভাবে একই মামলায় দুবার আলাদা পরিচয়ে আসামি হতে পারেন?
আরো বিস্ময়ের জন্ম দেয় এই যে, ঘটনার দিন এডভোকেট দেলোয়ার হোসেন পরিবারসহ কক্সবাজারে ছিলেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিনি স্ত্রী আফরোজা বেগম এবং দুই কন্যা এশা ও অরিশাকে নিয়ে ১৭ জুলাই কক্সবাজারে যান। তারা হোটেল সি ওয়াল্ডে তিন রাত অবস্থান করেন এবং ২০ জুলাই মানিকগঞ্জে ফেরেন।
এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে হোটেল সি ওয়াল্ডের বিলের একটি অনুলিপি। তাতে দেখা যায়, ১৫ জুলাই বিকাশের মাধ্যমে ২ হাজার টাকা অগ্রিম পাঠিয়ে ১৭ জুলাই দুইটি রুম বুকিং দেন দেলোয়ার। পুরো থাকার জন্য ২১ হাজার টাকা বিল পরিশোধ করেন তিনি। এ ছাড়া দেলোয়ার হোসেনের কক্সবাজার সফরের বেশ কিছু ছবি পাওয়া গেছে, যেখানে তাকে স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে বিভিন্ন পর্যটন স্থানে দেখা যাচ্ছে।
মামলায় নিজের নাম থাকায় বিস্ময় প্রকাশ করে দেলোয়ার হোসেন বলেন, "ঘটনার আগের দিন থেকেই আমি কক্সবাজারে ছিলাম। পরিবার নিয়ে ঘুরতে গিয়েছিলাম। কিছুদিন আগে জানতে পারি, আমাকে ওই হামলার মামলায় আসামি করা হয়েছে। আমি নাকি ছাত্রদের ওপর হামলা করেছি! বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। আমি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি।"
তবে মামলার বাদী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা মেহেরাব হোসাইনের দাবি, এডভোকেট দেলোয়ার হোসেন ঘটনার দিন মানিকগঞ্জে ছিলেন। হরিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে থেকে তাঁর নেতৃত্বে দুই বাস কর্মী এনে হামলা চালানো হয়েছে।
মানিকগঞ্জ সদর থানার ওসির সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “আদালতের নির্দেশে তদন্ত শুরু হয়েছে। যেহেতু এটি সিআর মামলা, তাই আদালতের নির্দেশনার আলোকে যথাযথভাবে তদন্ত করা হবে। তদন্তে সত্যতা না থাকলে সে অনুযায়ী প্রতিবেদন দেওয়া হবে।”
ভোরের আকাশ/এসএইচ