লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশ : ১২ আগস্ট ২০২৫ ১১:০৫ এএম
ছবি: সংগৃহীত
ঘিঞ্জি পরিবেশ আর দূষণের কারণে ক্রমাগত অসুস্থ একটি প্রাণীতে পরিণত হচ্ছে শহুরে মানুষ। যানবাহন, কল-কারখানা আর ধূলা-বালিতে দূষিত শহরের পরিবেশ শিশুদের জন্য খুবই ক্ষতিকর। শহরে নেই শিশুদের জন্য খেলাধূলার কিংবা হাঁটাহাটির জন্য উপযুক্ত স্থান। অন্যদিকে গ্রামে রয়েছে এসব ব্যবস্থা।
বাংলাদেশের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ এখনো গ্রামে বাস করে। আধুনিক জীবনযাত্রা ও নগরায়ণের প্রভাব গ্রামাঞ্চলেও পৌঁছে গেলেও, গ্রামে বসবাসের নিজস্ব এক স্বাদ ও সুবিধা রয়েছে। শহরের ভিড়, শব্দ ও দূষণ থেকে দূরে, প্রকৃতির সান্নিধ্যে থাকা মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
এক. প্রকৃতির সান্নিধ্য গ্রামে থাকার সবচেয়ে বড় সুবিধা। সবুজ ক্ষেত-খামার, গাছপালা, নদী, পুকুর, হাওর বা বিলের সৌন্দর্য মানুষের মনকে প্রশান্ত করে। এ পরিবেশে অক্সিজেনের মান বেশি, যা শ্বাস-প্রশ্বাস ও সার্বিক স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। সকালে পাখির ডাক, শীতল বাতাস ও নির্মল আকাশ মনকে সতেজ রাখে।
দুই. নির্মল পরিবেশ ও দূষণমুক্ত জীবন। শহরের তুলনায় গ্রামে বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ ও আলোকদূষণ কম। এখানে মানুষের চলাফেরা ও যানবাহনের সংখ্যা সীমিত হওয়ায় বায়ু তুলনামূলকভাবে বিশুদ্ধ থাকে। স্বাস্থ্য সচেতনতার জন্য এটি একটি বড় সুবিধা।
তিন. পুষ্টিকর ও তাজা খাবারের প্রাচুর্য। গ্রামে সহজেই পাওয়া যায় তাজা শাকসবজি, ফলমূল, দুধ, ডিম ও মাছ। অধিকাংশ খাবারই রাসায়নিক কম ব্যবহার করা বা প্রাকৃতিক উপায়ে উৎপাদিত হয়। ফলে এগুলো স্বাস্থ্যকর ও স্বাদে ভরপুর। শহরের বাজারে যেসব খাবার আসে, তা অনেক সময় দীর্ঘ পরিবহন ও সংরক্ষণের পর মানুষের হাতে পৌঁছায়, কিন্তু গ্রামে তা সরাসরি ক্ষেত বা পুকুর থেকে ঘরে আসে।
চার. কম খরচে জীবনযাপন। গ্রামে বসবাসের খরচ তুলনামূলকভাবে কম। বাসা ভাড়া, পরিবহন, খাবার, ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম শহরের তুলনায় অনেক কম। ফলে সীমিত আয়ে গ্রামে স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপন করা যায়।
পাঁচ. সামাজিক বন্ধন ও আন্তরিকতা। গ্রামীণ সমাজে প্রতিবেশীদের মধ্যে আন্তরিক সম্পর্ক ও সহযোগিতার মানসিকতা বেশি থাকে। বিপদে-আপদে একে অপরের পাশে দাঁড়ানো, সামাজিক অনুষ্ঠানে সক্রিয় অংশগ্রহণ করা—এসব গ্রামীণ জীবনের গুরুত্বপূর্ণ দিক। এ সম্পর্কগুলো মানুষের নিরাপত্তা ও মানসিক স্থিতি বজায় রাখতে সাহায্য করে।
ছয়. শান্তিপূর্ণ ও ধীরগতির জীবন। শহরের ব্যস্ততা, যানজট ও প্রতিযোগিতার চাপ থেকে মুক্ত হয়ে গ্রামে জীবনযাত্রা তুলনামূলক ধীর ও প্রশান্ত। এতে মানসিক চাপ কমে এবং জীবন উপভোগ করার সুযোগ বাড়ে।
সাত. শিশুদের জন্য সুস্থ পরিবেশ। গ্রামে শিশুদের খেলার জন্য মুক্ত মাঠ, গাছপালা, নদী ও খোলা জায়গা থাকে। প্রাকৃতিক পরিবেশে বেড়ে ওঠা শিশুদের শারীরিক বিকাশে সহায়ক এবং মানসিকভাবে সৃজনশীল করে তোলে।
আট. কৃষি ও স্বনির্ভরতার সুযোগ। গ্রামে বসবাস করলে জমি চাষ, পশুপালন বা মাছ চাষের মাধ্যমে সরাসরি জীবিকা অর্জনের সুযোগ থাকে। নিজের খাদ্য উৎপাদন করা ও অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর হওয়া গ্রামীণ জীবনের একটি বড় সুবিধা।
সবশেষে বলা যায়, গ্রামে থাকার সুবিধা শুধু অর্থনৈতিক নয়, শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার সঙ্গেও গভীরভাবে যুক্ত। প্রকৃতির সান্নিধ্য, স্বাস্থ্যকর খাবার, নির্মল বাতাস, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ও সামাজিক বন্ধন—এসব মিলেই গ্রামীণ জীবনকে পরিপূর্ণ করে তোলে। তাই আধুনিক সুযোগ-সুবিধা পেলেও, গ্রামের জীবনের আসল স্বাদ ও মূল্য অপরিবর্তনীয়।
ভোরের আকাশ/তা.কা