মো. রেজাউর রহিম
প্রকাশ : ০৭ অক্টোবর ২০২৫ ১২:০৫ এএম
ছবি: সংগৃহীত
দেশের মাঠ ও কেন্দ্রীয় প্রশাসনে চলছে এক ধরনের অস্থির অবস্থা। সেই সঙ্গে আমলাদের মধ্যে রয়েছে বদলি ও অবসর আদেশের আতঙ্ক। কারণ আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রশাসনের রূপরেখা ও কার্যক্রম কি হবে এবং প্রশাসনের ভূমিকা কি হবে-রাজনীতিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যেও এ নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। ফলে বর্তমানে মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রশাসনের পরিবর্তন এবং চলমান অস্থিরতা।
এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবের পদও প্রায় ১ মাস শূন্য। ফলে অনেকেরই আগ্রহ রয়েছে এই গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের সচিব পদটির দিকে। অন্যদিকে, কোনো কোনো রাজনৈতিক দল মাঠ ও কেন্দ্রীয় প্রশাসনের বিশেষ করে ডিসি, ইউএনও এবং অধিদপ্তরগুলোর মহাপরিচালক পদ এবং সচিব পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে তাদের অনুগত ও দলীয় ঘরানার কর্মকর্তাদের নিয়োগ করতে জোর তৎপরতা শুরু করেছে। আর সার্বিক পরিস্থিতিতে থমকে আছে অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিব পদের পদোন্নতি প্রক্রিয়াও। এছাড়া নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠ প্রশাসন এবং কেন্দ্রীয় প্রশাসনে আরো বড় পরিবর্তন আসছে বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সহ একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, জনপ্রশাসন সচিব পদে কোন কর্মকর্তাকে পোস্টিং দেওয়া হচ্ছে- বর্তমানে প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয় থেকে শুরু করে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মধ্যে এ বিষয়ে রয়েছে ব্যাপক আলোচনা ও আগ্রহ। এছাড়া বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও বেশ তৎপরতা চালোচ্ছে।
সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের বিগত ১৪ মাসে মাঠ ও কেন্দ্রীয় প্রশাসনে কর্মকর্তাদের বারংবার বদলি-পদায়ন-অবসর-বাধ্যতামূলক অবসর এবং পদোন্নতি দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শুরু থেকেই দুবৃত্তায়নমুক্ত প্রশাসন গড়তে আওয়ামী ঘরানার এবং দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ থাকা কর্মকর্তাদের সরিয়ে নিরপেক্ষ, সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তাদের বিভিন্ন পদে নিয়োগে ও বদলি করার ওপর বাড়তি জোর দিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় সচিবদের মধ্যে যিনি গ্রহণযোগ্য, সৎ, যোগ্য এবং প্রশাসন পরিচালনায় দক্ষ কোন কর্মকর্তাকে জনপ্রশাসনের সচিব পদে নিয়োগ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ বিভিন্ন পদে নিয়োগ নিয়ে কিছুটা বিতর্ক থাকলেও সরকার যোগ্যদের বিভিন্ন পদে নিয়োগের বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে। আর অন্যদিকে, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে জনপ্রশাসন সচিব পদে নিয়োগের বিষয়টি বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে কয়েকজন উপদেষ্টা একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের পক্ষের অনুগত কর্মকর্তাদের জনপ্রশাসন সচিবসহ বিভিন্ন পদে নিয়োগের জন্য জোর তৎপরতা চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জনপ্রশাসন সচিবসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে নিয়োগ দেশের স্বার্থে অতি গুরুত্বপূর্ণ। আর এজন্য নিরপেক্ষ, সৎ, গ্রহণযোগ্য ও জনপ্রশাসন ও মাঠ পর্যায়ে অভিজ্ঞ পেশাদার কর্মকর্তাদের এসব পদে নিয়োগ দিতে সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে।
সূত্র জানায়, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে যাওয়ার আগেই প্রধান উপদেষ্টা সম্ভাব্য বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে নিয়োগের বিষয়ে সরকারের কয়েকজন নীতিনির্ধারকের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের চাকরিজীবনের সার্বিক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে ‘খোঁজ-খবর’ নেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। আর এরপর এ সংক্রান্ত সার-সংক্ষেপ প্রস্তুত করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। বিষয়টি অনুমোদনের জন্য শিগগির প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে পাঠানো হবে।
এদিকে, জনপ্রশাসন সচিব পদ শূন্য থাকায় অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিব পদোন্নতি প্রক্রিয়া থমকে গেছে। নতুন সচিব যোগ না দেওয়া পর্যন্ত পরবর্তী সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের (এসএসবি) বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। যে কারণে পদোন্নতিপ্রত্যাশী কর্মকর্তা পড়েছেন বিড়ম্বনায়। চলতি সপ্তাহে নতুন জনপ্রশাসন সচিব নিয়োগ হতে পারে। তবে সচিব নিয়োগে খুব সতর্কতা অনুসরণ করছে সরকার। সম্ভাব্য সচিবদের সম্পর্কে গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে তথ্যও সংগ্রহ করা হচ্ছে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রশাসনের বদলি-নিয়োগে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
এছাড়া এবার এমন কর্মকর্তা ডিসি-ইউএনও হিসেবে নিয়োগ পেতে মাঠ প্রশাসনে অভিজ্ঞ ও সাহসীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে, যারা যুগ্ম সচিব পদোন্নতি পেয়ে এখনও ডিসি হিসেবে রয়েছেন, তাদের দ্রুত প্রত্যাহার করা হবে। ইতোমধ্যে ৯ জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। জেলাগুলো হলো- পটুয়াখালী, কুষ্টিয়া, কুড়িগ্রাম, মেহেরপুর, নেত্রকোনা ও খুলনা।
এর মধ্যে তিনজন কর্মকর্তাকে নতুন ডিসি ও তিনজন ডিসিকে বদলি করা হয়েছে। গত ২৫ আগস্ট এসব জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ দিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এ ছাড়া চট্টগ্রাম, নরসিংদী ও নওগাঁয় নতুন জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ দিয়েছে সরকার। গত ২১ সেপ্টেম্বর এ তিন জেলায় ডিসি নিয়োগ দিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ ফিরোজ মিয়া ভোরের আকাশকে বলেন, জনস্বার্থে যোগ্য, নিরপেক্ষ, অভিজ্ঞ, দক্ষ, কৌশলী ও সাহসী কর্মকর্তাদের মাঠ প্রশাসনসহ সর্বস্তরে নিয়োগ দেওয়া জরুরি। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে দক্ষ ও সৎ কর্মকর্তাদের সর্বস্তরে নিয়োগের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেওয়া প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এদিকে, জনপ্রশাসন সচিব কে হচ্ছেন-রাজনৈতিক দলগুলোর বিষয়টি বিশেষ আগ্রহ। আর বদলি-পদায়নের ক্ষেত্রে এ পদটির ভূমিকা মুখ্য হওয়ায় তারা এই নিয়োগের দিকে তীক্ষè দৃষ্টি রাখছেন বলেও জানা গেছে। রাজনীতি সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, নির্বাচনের আগে বিভিন্ন নিয়োগ-বদলি অতি গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, জনপ্রশাসন সচিবসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে নিয়োগ দেশের স্বার্থে অতি গুরুত্বপূর্ণ। আর এজন্য নিরপেক্ষ, সৎ, গ্রহণযোগ্য ও জনপ্রশাসন ও মাঠ পর্যায়ে অভিজ্ঞ পেশাদার কর্মকর্তাকে এসব পদে নিয়োগ দিতে হবে।
সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্রে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে যাওয়ার আগেই প্রধান উপদেষ্টা সম্ভাব্য এমন একজন কর্মকর্তাকে নিয়ে সরকারের এক নীতিনির্ধারকের সঙ্গে কথা বলে গেছেন-যিনি অভিজ্ঞ ও পেশাদার কর্মকর্তা। এর পরপরই এ সংক্রান্ত সার-সংক্ষেপ প্রস্তুত করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
উল্লেখ্য, চুক্তিতে নিয়োগ পাওয়া প্রশাসনের ৮২ ব্যাচের কর্মকর্তা ড. মো. মোখলেস উর রহমানকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব পদ থেকে ব্যাপক অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগে গত ২১ সেপ্টেম্বর পরিকল্পনা কমিশনে সদস্য হিসেবে বদলি করা হয়। এরপর থেকে প্রশাসনের অতি গুরুত্বপূর্ণ এ পদটি শূন্য রয়েছে। এ মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসনের নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতিসহ গুরুত্বপূর্ণ সব প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
আগামী নির্বাচনে ডিসি-ইউএনওসহ মাঠ প্রশাসনে কারা দায়িত্ব পালন করবেন, সেটিও এখন সর্বক্ষেত্রে আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অপসারণের পর গত দু’সপ্তাহে এ মন্ত্রণালয়ে সচিব পদে কাউকে নিয়োগ দিতে পারেনি সরকার। মূলত প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ছিলেন জাতিসংঘে। কেউ কেউ বলছেন, বাংলাদেশের প্রশাসনিক ইতিহাসে সচিব নিয়োগ নিয়ে এমন টানাপোড়েন এর আগে খুব কমই দেখা গেছে। এসব কারণে এখনও কয়েকটি শূন্য সচিব পদে নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হয়নি।
সূত্র জানায়, একটি বিশেষ রাজনৈতিক দল তাদের পছন্দের একজন সচিবকে গুরুত্বপূর্ণ একটি মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসনে বদলি করার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে এ উদ্যোগে পুরোপুরি উল্টো অবস্থানে আছে দেশের বৃহত্তম একটি রাজনৈতিক দল।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ভোরের আকাশ’কে জানান, জনপ্রশাসন সচিব পদে নিয়োগের জন্য ৫-৬ জন কর্মকর্তার নাম আলোচনায় রয়েছে। যাদের মধ্যে বর্তমানে চুক্তিতে নিয়োজিত ২-৩ জন সিনিয়র সচিবও আছেন। এ ছাড়া বাকিরা নিয়মিত ব্যাচের।
বিভিন্ন কারণে জনপ্রশাসন সচিব নিয়োগের বিষয়টি জটিল অবস্থায় রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখনও এ পদে নিয়োগের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি, তবে চলতি সপ্তাহেই বিষয়টি চূড়ান্ত হতে পারে বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়মিত ব্যাচ থেকে নিরপেক্ষ, যোগ্য ও সৎ কাউকে নিয়োগ দেওয়া হলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে। পেশাদার আমলা ছাড়া দলীয়ভাবে চিহ্নিত কাউকে নিয়োগ দেওয়া অনুচিত। অপরদিকে বর্তমানে চুক্তিতে নিয়োজিত সচিবদের মধ্যে যারা নিজ মন্ত্রণালয়ে উল্লেখযোগ্য সফলতা দেখাতে পারেননি তাদেরকেও জনপ্রশাসনসহ কোনো মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ গ্রহণযোগ্য হবে না বলে মনে করেন তারা।
অন্যদিকে, নির্বাচনকে সামনে রেখে যদি বিশেষ একটি রাজনৈতিক দলের ইচ্ছায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ অন্যসব সচিবের শুন্য পদে নিয়োগ দেওয়া হয়, সে ক্ষেত্রে বিএনপি কঠোর অবস্থানে যাবে- বলেছে বিএনপি।
গত শনিবার ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এ্যাব) নবগঠিত কমিটির সদস্যদের নিয়ে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা শেষে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করে বলেছেন, প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে একটি ধর্মভিত্তিক দলের অনুগতদের বসানো হচ্ছে। দল অনুগত প্রশাসন দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে না। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের জন্য জনগণ প্রস্তুত, তারা পূর্বের মতো ডামি নির্বাচন চান না।
নতুন ইস্যু তৈরি করে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের ১৪ মাসে প্রশাসন দখলের জন্য তারা যেটা করছে দেশের মানুষ তা ভালোভাবে নেয়নি।
সূত্র জানায়, অন্তর্বর্তী সরকারের গত ১৪ মাসে সচিব ও জেলা প্রশাসক নিয়োগে একটি ‘সিন্ডিকেট সংস্কৃতি‘ তৈরি হয়েছে-এমন অভিযোগ রয়েছে। তারা এতটাই প্রভাবশালী যে, তাদের ইচ্ছার বাইরে কেউ কিছু করতে পারে না। ফলে সচিব ও ডিসি নিয়োগ এখন প্রশাসনে একটি জটিল পর্যায়ে রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইনি কাঠামো ও ভেটোর প্রশ্নে সরকারি কর্মচারী (চাকরি শর্তাবলি) আইন ২০১৮ অনুযায়ী, সচিব পদে নিয়োগের চূড়ান্ত ক্ষমতা প্রধান উপদেষ্টা বা প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধির হাতে। উপদেষ্টা কমিটি কেবল পরামর্শমূলক।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সচিব ভোরের আকাশকে বলেন, তত্ত্বাবধায়ক বা অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে প্রশাসন নিরপেক্ষভাবে চলবে, এটাই স্বাভাবিক কিন্তু এবারের উপদেষ্টা কমিটির কয়েকজনের কার্যক্রমে কিছুটা ধোয়াশার সৃষ্টি হয়েছে।
সূত্রে জানা গেছে, গত রোববার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির সভাপতি ও অর্থ উপদেষ্টাকে নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় বসেন। রাজনৈতিক দলসমূহের মতামত এবং সার্বিক বিবেচনায় প্রধান উপদেষ্টা বর্তমান চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্য হতে অপেক্ষাকৃত যোগ্যকে জনপ্রশাসন সচিব হিসেবে নিয়োগের নির্দেশনা দেন। এর পর পরই দ্রুত এ-সংক্রান্ত একটি সারসংক্ষেপ পাঠানো হয় প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে।
এদিকে জনপ্রশাসন সচিব হিসেবে সারসংক্ষেপে দুটি নাম চূড়ান্ত করা হয়। কিন্তু তার আগেই জনপ্রশাসনবিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির কয়েকজন সদস্য আপত্তি তোলেন। তারা জানান, কমিটির সিদ্ধান্ত ছাড়া কোনো সচিব নিয়োগ হবে না।
সূত্র জানায়, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া দুজনকে জনপ্রশাসন সচিব হিসেবে নামের প্রস্তাব আসায় জনপ্রশাসনবিষয়ক উপদেষ্টা কমিটি ভেটো দেয়। তাদের যুক্তি হচ্ছে, আর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়াদের নতুনভাবে নিয়োগ না দিয়ে চাকরিতে রয়েছেন এমন-কর্মকর্তাদের সচিব নিয়োগ দিতে হবে। চাকরিরত সচিবদের মধ্য থেকে আলোচনায় রয়েছেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব মো নজরুল ইসলাম (১১তম ব্যাচ) ও স্থানীয় সরকার সচিব রেজাউল মাকসুদ জাহিদ (১৩তম ব্যাচ)।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জনপ্রশাসনের সর্বস্তরে গতিশীলতা বৃদ্ধি, দুর্বৃত্তায়নমুক্ত ও জনকল্যাণমুখী প্রশাসন গড়তে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সচিব পর্যায়ে কর্মরতদের দায়বদ্ধতা-জবাবদিহি-স্বচ্ছতার ক্ষেত্রে স্থিতাবস্থা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সরকারের সদিচ্ছা জরুরি। এজন্য সরকারকে ফিস্টলিস্ট থেকে জেলা প্রশাসক নিয়োগ দিতে হবে। সচিব এবং জেলা প্রশাসক-এ দুটো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদ। কিন্তু প্রশাসন রাজনৈতিক নির্ভরতার দিকে বেশি ঝুঁকে পড়লে তখনই সমস্যা প্রকট হয়। আর এ ধরনের সমস্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশের মানুষ, যা কাম্য নয়।
এদিকে জনপ্রশাসন সচিব পদ শূন্য থাকায় অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিব পদোন্নতি প্রক্রিয়া থমকে গেছে। নতুন সচিব যোগ না দেওয়া পর্যন্ত পরবর্তী এসএসবির বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। যে কারণে পদোন্নতিপ্রত্যাশীদের অপেক্ষার সময় দীর্ঘায়িত হচ্ছে। চলতি সপ্তাহে নতুন জনপ্রশাসন সচিব নিয়োগ হতে পারে। এবার সচিব নিয়োগে খুব সতর্কতা অনুসরণ করছে সরকার। সম্ভাব্য সচিবদের সম্পর্কে গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রশাসনের বদলি-নিয়োগে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এবার এমন কর্মকর্তা ডিসি হিসেবে নিয়োগ পেতে পারেন, যারা মাঠ প্রশাসনে অভিজ্ঞ ও সাহসী হিসেবে পরিচিত। তাদের জীবনবৃত্তান্ত সম্পর্কে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ইতোমধ্যেই খোঁজখবর নিয়েছে।
অন্যদিকে, যারা যুগ্ম সচিব পদোন্নতি পেয়ে এখনও ডিসি হিসেবে রয়েছেন, তাদের দ্রুত প্রত্যাহার করা হবে। ইতোমধ্যে ৯ জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে তিনজন কর্মকর্তাকে নতুন ডিসি ও তিনজন ডিসিকে বদলি করা হয়েছে।
গত ২৫ আগস্ট এসব জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ দিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এ ছাড়া চট্টগ্রাম, নরসিংদী ও নওগাঁয় নতুন ডিসি নিয়োগ দিয়েছে সরকার। গত ২১ সেপ্টেম্বর এ তিন জেলায় ডিসি নিয়োগ দিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
এদিকে, এবার নতুন করে ২৮তম বিসিএসের প্রশাসন ক্যাডারের কিছুসংখ্যক কর্মকর্তাকে ডিসি পদে নিয়োগের চিন্তাভাবনা চলছে। ইতিমধ্যে এই ব্যাচের বেশ কিছুসংখ্যক কর্মকর্তার সাক্ষাৎকারও নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ২৪, ২৫ ও ২৭তম বিসিএসের কর্মকর্তারা ডিসি পদে দায়িত্বে আছেন।
জানা গেছে, ২৪তম বিসিএসের কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করে সেখানে নতুন ডিসি নিয়োগের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে।
ভোরের আকাশ/এসএইচ