× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

অপূর্ণাঙ্গই থাকছে জুলাই সনদ

নিখিল মানখিন

প্রকাশ : ০৭ অক্টোবর ২০২৫ ১২:১০ এএম

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

আগামী ১০ অক্টোবরের মধ্যে সুপারিশসহ জুলাই সনদ সরকারের কাছে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এরপর সরকারের মতামতের ভিত্তিতে সনদ স্বাক্ষরের দিন নির্ধারণ করা হবে। আর আগামী ১৫ অক্টোবরের মধ্যে সনদ স্বাক্ষর সম্ভব হতে পারে বলে আশা করছে কমিশন। কিন্তু শেষ বেলাতেও সংস্কারের সব বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছতে পারেনি সব দল। মোট ৮৪টি বিষয়ের ওপর রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতৈক্য হয়েছে। কিন্তু এর কিছু বিষয়ের ক্ষেত্রে নোট অব ডিসেন্ট (আপত্তি) রয়েছে। আর গণভোটের সময় নিয়ে এখনও বিপরীত অবস্থানে বিএনপি ও জামায়াত। সব মিলিয়ে দলগুলোর ঐকমত্যের পূর্ণাঙ্গ সনদ সরকারের হাতে তুলে দিতে পারছে না ঐক্য কমিশন। ঐকমত্য কমিশনের তৃতীয় মেয়াদের বর্ধিত সময় শেষ হবে আগামী ১৫ অক্টোবর। আর এই মধ্যেই সুপারিশ চূড়ান্ত করে সরকারের কাছে দেওয়ার বিষয়ে কমিশন আশাবাদী বলে জানিয়েছেন ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।

তিনি বলেন, এরই মধ্যে আলোচনায় যুক্ত ৩০টি দলের তিন-চতুর্থাংশ দলের পক্ষ থেকে সনদে স্বাক্ষরের জন্য প্রতিনিধিদের নামও পাঠানো হয়েছে। আগামীকাল বুধবার বিকেলে আবারও রাজনৈতিক দল ও জোটগুলোকে নিয়ে বৈঠক হবে। পাশাপাশি আইনি ও সাংবিধানিক কাঠামো স্পষ্ট করার জন্য বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সঙ্গেও পৃথকভাবে বৈঠক করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান আলী রীয়াজ।

জুলাই সনদকেন্দ্রিক জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ও রাজনৈতিকগুলোর গত কয়েক মাসের সিরিজ বৈঠক পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে চলমান দীর্ঘ সংলাপপ্রক্রিয়ায় সমঝোতার অংশ হিসেবেই বেশ কয়েকটি বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছিল কয়েকটি রাজনৈতিক দল। ওই বিষয়গুলো বাস্তবায়নের কথা জুলাই সনদের চূড়ান্ত ভাষ্যের অঙ্গীকারনামায় ছিল না। কারও কারও দ্বিমত থাকা এই বিষয়গুলোর নিষ্পত্তি কীভাবে হবে, তার উল্লেখ না থাকায় প্রশ্ন তুলেছে কয়েকটি দল। এমন অবস্থায় চূড়ান্ত ভাষ্য সংশোধন করে নোট অব ডিসেন্ট বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচনে বিজয়ী দলের ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি যুক্ত করা হচ্ছে।

জুলাই সনদের অঙ্গীকারনামায় সাতটি ধারা রয়েছে। নতুনভাবে যুক্ত হওয়া আট নম্বর ধারায় বলা আছে, সনদের যেসব ক্ষেত্রে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দেওয়া হয়েছে, জাতীয় নির্বাচনে জনগণের ম্যান্ডেট পাওয়া রাজনৈতিক দল সে মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে পারবে।

ঐক্য-অনৈক্যের সনদ : জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি ড. আলী রীয়াজ জানিয়েছেন, ‘মোট ৮৪টি বিষয়ের ওপর রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতৈক্য হয়েছে, যদিও কিছু বিষয়ের ক্ষেত্রে ভিন্নমত রয়েছে।’

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, অভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন বাংলাদেশ গঠনে এবং সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারগুলোতে বিএনপি ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে। অনেকগুলো সংস্কার প্রস্তাব ছিল। তার মধ্যে এই জায়গায় গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারগুলোতে বিএনপি ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে। মনে করেন ৫০টি সংস্কারের চেয়ে ৫টি সংস্কার বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিএনপি সেখানে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে।

তিনি বলেন, কিন্তু ‘নোট অব ডিসেন্ট’ মানে এমন না যে ঐক্যমত কমিশন সেগুলো বাদ দিয়ে দিবে। এখন পর্যন্ত আমরা ওগুলোকে পাচ্ছি, দেখছি। যেগুলো ঐক্যমত কমিশনে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে এগুলো তারা জুলাই সনদে দেখতে চায় এবং জুলাই সনদের ড্রাফট (খসড়া) তৈরি হয়েছে। আমরা মনে করি ওইগুলো যদি আইনগত ভিত্তি দেওয়া হয়।’

সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের আগে গণভোট ও পিআর (প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) দাবিতে জাতি বিভক্ত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। গতকাল সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের একটি অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, ‘নির্বাচনের আগে গণভোট ও পিআরের দাবিতে জাতিকে বিভক্ত করা হচ্ছে, তা মোকাবিলাই নির্বাচনী চ্যালেঞ্জ।’

সনদ বাস্তবায়নে নির্বাচনের আগে গণভোট দাবি করেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ। গত রোববার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আইনিভিত্তির জন্য গণভোটে বিএনপিসহ সব দল একমত। জনগণ গণভোটে অভ্যস্ত নয়। তবে জামায়াত মনে করে, জাতীয় নির্বাচন কোনো ধরনের সমস্যা ছাড়া করতে গণভোট নভেম্বর অথবা ডিসেম্বরে হতে পারে। সংসদ নির্বাচনের তপশিলের আগেও হতে পারে। গণভোট হয়ে গেলে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হতে কোনো বাধা নেই। এতে আমরাও বাঁচি, জাতিও বাঁচে। তবে গণভোট আগে না পরে– এটি নিয়ে আলোচনার সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

বিএনপির সঙ্গে দূরত্ব নেই দাবি করে তিনি বলেন, গণভোটের ফল বিপক্ষে গেলেও জামায়াত মেনে নেবে। গণভোটের মাধ্যমে সংস্কারের জন্য জামায়াত সব সময় সোচ্চার ছিল। সনদের আইনি ভিত্তির জন্য গণভোটের পক্ষে সবাই মত দিয়েছে।

ঐকমত্য কমিশনের প্রেক্ষাপট : সাড়ে সাত মাস ধরে অনৈক্যের একই আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে জুলাই সনদ। সিরিজ বৈঠকেও মিলছে না সফলতা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, চলমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় জুলাই সনদের ওপরই নির্ভর করছে ফেব্রুয়ারির অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের সফলতা। কিন্তু নিজেদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে দলগুলো। শুধু তাই নয়, সনদকেন্দ্রিক নিজেদের দাবি পূরণ না হলে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার হুমকি প্রদান করে চলেছে অনেক রাজনৈতিক দল। আগামী ১৫ অক্টোবর ঐকমত্য কমিশনের তৃতীয় দফার বর্ধিত মেয়াদ শেষ হবে। 

জুলাই সনদ ঘোষণা নিয়ে ঘটছে একের পর এক অপ্রত্যাশিত ঘটনা। জুলাই সনদের ভিত্তিতেই জাতীয় নির্বাচন- অনেক আগে থেকেই এমন দাবিতে শক্ত অবস্থানে রয়েছে- এনসিপি ও জামায়াত। এই সনদেই  সংস্কার, বিচার, সংবিধানসহ বিভিন্ন মৌলিক ইস্যুর সমাধান থাকতে হবে বলে দল দুটির দাবি। আর এই জুলাই সনদ বাস্তবায়ন না হওয়ায় ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে এনসিপি ও জামায়াতের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ততা ফুটে উঠছে না। ইস্যুটি নিয়ে দলগুলোর বাগযুদ্ধ শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক মাঠযুদ্ধে গড়ানোর পরিস্থিতিও সৃষ্টি হয়েছে। শুধু তাই নয়, জুলাই সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ কয়েকটি অভিন্ন দাবিতে মাঠে নেমেছে জামায়াতে ইসলামীসহ সাতটি দল।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, শুরু থেকেই জুলাই সনদ বাস্তবায়নে আন্তরিকতা দেখিয়ে আসছে অন্তর্বর্তী সরকার। দলগুলোর অনৈক্য দূর করতে একের পর এক উদ্যোগ ব্যাহত রয়েছে। শুধু ঐকমত্য কমিশন নয়, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিজেও একাধিক সংলাপের মাধ্যমে দলগুলোকে ঐকমত্যে পৌঁছানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ছাত্র-জনতার ‘জুলাই সনদ’ ঘোষণার ঘটনা ঘটলে দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা ছিল। দেশকে এমন অস্থিতিশীল অবস্থা থেকে রক্ষা করতে জুলাই সনদ ঘোষণার দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তী সরকার।

এভাবে চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় মাসের জন্য কাজ শুরু করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রথম দফার আনুষ্ঠানিক আলোচনা গত ৩১ জুলাই শেষ হয়েছে। পূর্বঘোষিত জুলাইয়ের মধ্যে সনদ ঘোষণা করতে পারেনি কমিশন। তারপর আগস্টের প্রথমার্ধেও সনদ ঘোষণার প্রস্তুতি নিয়েছিল কমিশন। দলগুলোর মধ্যে অনৈক্য থাকায় কমিশনের মেয়াদ বাড়ানো হয় ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এই মেয়াদেও ঐকমত্যে পৌঁছতে পারেনি রাজনৈতিক দলগুলো। ফলে আগামী ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত তৃতীয় দফা মেয়াদ বেড়েছে ঐকমত্য কমিশনের। কিন্তু দলগুলোর মধ্যে ঐক্যের তুলনায় অনৈক্যের তীব্রতাই যেন বেড়েছে।

এর আগে, গত ১২ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে সাত সদস্যের জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়। সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজকে এই কমিশনের সহ-সভাপতি করা হয়। প্রতিবেদন দাখিলের জন্য কমিশনকে ছয় মাস সময় দেওয়া হয়। সেই সময় শেষ হওয়ার তারিখ ছিল আগামী ১৫ আগস্ট। তার পর থেকেই দফায় দফায় বাড়ানো হচ্ছে ঐকমত্য কমিশনের।

ভোরের আকাশ/এসএইচ

  • শেয়ার করুন-
সুস্থ থাকলে ভোটে বিএনপির নেতৃত্ব দেবেন খালেদা জিয়া

সুস্থ থাকলে ভোটে বিএনপির নেতৃত্ব দেবেন খালেদা জিয়া

সোনারগাঁয়ে জিএম সাদরিলের গণসংযোগ

সোনারগাঁয়ে জিএম সাদরিলের গণসংযোগ

তুরস্কের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক জোরদারে আমরা আশাবাদী: মির্জা ফখরুল

তুরস্কের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক জোরদারে আমরা আশাবাদী: মির্জা ফখরুল

নাসিক প্রশাসকের সঙ্গে এনসিপি নেতৃবৃন্দের সাক্ষাৎ

নাসিক প্রশাসকের সঙ্গে এনসিপি নেতৃবৃন্দের সাক্ষাৎ

মির্জা ফখরুলের সঙ্গে তুরস্কের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক

মির্জা ফখরুলের সঙ্গে তুরস্কের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক

 ভোট গ্রহণ কর্মকর্তার তালিকা প্রস্তুতিতে ব্যস্ত নির্বাচন কমিশন

ভোট গ্রহণ কর্মকর্তার তালিকা প্রস্তুতিতে ব্যস্ত নির্বাচন কমিশন

 গাজা যুদ্ধবিরতি: মিসরে ইসরায়েল-হামাসের পরোক্ষ আলোচনা শুরু

গাজা যুদ্ধবিরতি: মিসরে ইসরায়েল-হামাসের পরোক্ষ আলোচনা শুরু

 নির্বাচনের ২৪ ঘণ্টা না যেতেই বিসিবি পরিচালনায় পরিবর্তন!

নির্বাচনের ২৪ ঘণ্টা না যেতেই বিসিবি পরিচালনায় পরিবর্তন!

 খালি পেটে অ্যাপল সিডার ভিনেগার খেলে কী হয়? জানুন আশ্চর্য সব উপকারিতা

খালি পেটে অ্যাপল সিডার ভিনেগার খেলে কী হয়? জানুন আশ্চর্য সব উপকারিতা

 যে ৭ অভ্যাস নীরবে নষ্ট করছে আপনার কিডনি

যে ৭ অভ্যাস নীরবে নষ্ট করছে আপনার কিডনি

সংশ্লিষ্ট

ভোট গ্রহণ কর্মকর্তার তালিকা প্রস্তুতিতে ব্যস্ত নির্বাচন কমিশন

ভোট গ্রহণ কর্মকর্তার তালিকা প্রস্তুতিতে ব্যস্ত নির্বাচন কমিশন

১২ ডিসেম্বর মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা

১২ ডিসেম্বর মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা

বাংলাদেশে বজ্রপাতের ঝুঁকি বাড়ছে: বিশেষজ্ঞের সতর্কবার্তা

বাংলাদেশে বজ্রপাতের ঝুঁকি বাড়ছে: বিশেষজ্ঞের সতর্কবার্তা

অপূর্ণাঙ্গই থাকছে জুলাই সনদ

অপূর্ণাঙ্গই থাকছে জুলাই সনদ