ফাইল ছবি
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন সময়ে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) হিসেবে থাকা ৬৯ উপসচিবকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগে পদায়ন করেছে সরকার।
রোববার (৫ অক্টোবর) এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব জেতী প্রু স্বাক্ষরিত ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, জনস্বার্থে জারীকৃত এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।
ভোরের আকাশ/এসএইচ
সংশ্লিষ্ট
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ জন্য সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শ্রেণি ও পদমর্যাদা অনুযায়ী তালিকা পাঠাতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দিয়েছে জেলা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা।ইসি সূত্রে জানা গেছে, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে ডিসেম্বরের প্রথম দিকে তফসিল ঘোষণা করা হবে। এরই মধ্যে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইসি একটি পূর্ণাঙ্গ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে এবং প্রাথমিক প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে।নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী, অক্টোবর মাসের মধ্যেই ‘ভোট গ্রহণ কর্মকর্তার প্যানেল’ প্রস্তুত করতে হবে। এ বিষয়ে সিনিয়র জেলা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের কাছে সম্প্রতি উপসচিব মোহাম্মদ মনির হোসেন স্বাক্ষরিত চিঠি পাঠানো হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ৩০ অক্টোবরের মধ্যে প্যানেল প্রস্তুতের কাজ শেষ করে ইসি সচিবালয়কে জানাতে হবে।দেশে বর্তমানে মোট ভোটার সংখ্যা প্রায় ১২ কোটি ৬৩ লাখ। চলতি মাসের শেষে আরও প্রায় দশ লাখ নতুন ভোটার যুক্ত হতে পারে বলে জানিয়েছে কমিশন।সবশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৪২ হাজার ভোটকেন্দ্রে ১ লাখ ৬৭ হাজারের বেশি ভোটকক্ষ স্থাপন করা হয়েছিল। সেখানে ৯ লাখের বেশি ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এবার প্রায় ১০ লাখ ৮৯ হাজার কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে ইসি।প্রতিটি কেন্দ্রে একজন প্রিসাইডিং অফিসার, প্রতিটি ভোটকক্ষে একজন সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার এবং দুজন পোলিং অফিসার নিয়োগ দেওয়া হয়। সেই হিসেবে প্রতি কেন্দ্রে ৮ থেকে ১০ জন কর্মকর্তা প্রয়োজন হয়। অতিরিক্ত আরও ১০ শতাংশ জনবল সংরক্ষণের নির্দেশও দিয়েছে কমিশন।ইসির নির্দেশনায় বলা হয়েছে, প্যানেল তৈরির সময় কর্মকর্তাদের সততা, দক্ষতা, সাহস, নিরপেক্ষতা, পদমর্যাদা ও কর্মদক্ষতাকে গুরুত্ব দিতে হবে। কোনোভাবে বিতর্কিত বা রাজনৈতিকভাবে পক্ষপাতদুষ্ট ব্যক্তিকে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। প্রয়োজন হলে বয়স, শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা সম্পর্কেও তথ্য সংগ্রহের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।এবার সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তারাও ভোট গ্রহণে অংশ নেবেন। জানা গেছে, সোনালী, রূপালী ও অগ্রণী ব্যাংকসহ সাতটি সরকারি ব্যাংক এবং ইসলামী ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংকসহ ৩৩টি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের নাম চাওয়া হয়েছে। ইসলামী ব্যাংক একাই ১০ হাজার কর্মকর্তার নাম পাঠাবে বলে জানা গেছে।নারী ভোটকেন্দ্রের জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক নারী সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসার রাখার নির্দেশ দিয়েছে ইসি। এজন্য নারী শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়ে আলাদা প্যানেল তৈরির কাজও চলছে।এ ছাড়া ভোট গ্রহণের বাইরেও রিটার্নিং অফিসার কার্যালয়, নিয়ন্ত্রণ কক্ষ, তথ্য ও ফলাফল সংগ্রহ কেন্দ্র এবং মাঠ পর্যবেক্ষণ কাজের জন্যও পৃথক কর্মকর্তা তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে।কারা থাকছেন কোন পদেপ্রিসাইডিং অফিসার: প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা, ক্ষেত্রবিশেষে দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা, সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত কলেজ-মাদরাসার শিক্ষক, রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাংক-বিমার কর্মকর্তা, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান বা সহকারী প্রধান শিক্ষক।সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার: দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা, কলেজ-মাদরাসার ডেমনস্ট্রেটর, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক।পোলিং অফিসার: সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী ও প্রাথমিক-মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক।তবে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী (জাতীয় বেতন স্কেল ১৭-২০ গ্রেড) প্যানেলে থাকবেন না। প্রয়োজন হলে তাদের জন্য আলাদা সহায়ক তালিকা প্রস্তুত করা যাবে বলে নির্দেশনা দিয়েছে ইসি।ভোরের আকাশ//হ.র
২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে দেশের সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ব্যাচেলর অব মেডিসিন, ব্যাচেলর অব সার্জারি (এমবিবিএস) কোর্সের ভর্তি পরীক্ষা আগামী ১২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে।সোমবার (৬ অক্টোবর) স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় এ তারিখ চূড়ান্ত করা হয়।স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক রুবীনা ইয়াসমীন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও রমজান মাসের সময় বিবেচনায় এনে এবার এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা আগেভাগে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।সভায় উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নাজমুল হোসেন, বিএমডিসি সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. সাইফুল ইসলাম, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের যুগ্ম সচিব মল্লিকা খাতুন, এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক মহিউদ্দিন মাতুব্বরসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে ৫ হাজার ৩৮০টি এবং ৬৭টি অনুমোদিত বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ৬ হাজার ২৯৩টি আসন রয়েছে। এছাড়া একটি আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজ ও পাঁচটি বেসরকারি আর্মি মেডিকেল কলেজ কার্যক্রম পরিচালনা করছে।উল্লেখ্য, গত শিক্ষাবর্ষে (২০২৪-২৫) এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৭ জানুয়ারি। এবার তা এক মাসেরও বেশি আগে নেওয়া হচ্ছে।ভোরের আকাশ//হ.র
ভবিষ্যতে বাংলাদেশে বজ্রপাতের ঘনত্ব ও তীব্রতা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড. মো. আব্দুল মান্নান। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, প্রাথমিক সতর্কতামূলক ব্যবস্থা এবং প্রতিরক্ষা অবকাঠামোর অভাবে গ্রামীণ অঞ্চলের মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়বে।সোমবার (৬ অক্টোবর) বাসসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ড. মান্নান বলেন, “গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের যারা কৃষিকাজ বা মাছ ধরার মতো খোলা আকাশের নিচে কাজ করেন, তারা বজ্রপাতের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছেন। সতর্কতামূলক প্রযুক্তি ও আশ্রয়কেন্দ্রের অভাব তাদের ঝুঁকি আরও বাড়াচ্ছে।”তার মতে, চলমান জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দেশে বজ্রপাতজনিত দুর্যোগের আশঙ্কা ক্রমেই বাড়ছে। বর্ষা মৌসুমের আগে বজ্রসহ বৃষ্টিপাত এবং বিজলি চমকানোর প্রবণতা বাড়বে বলে তিনি পূর্বাভাস দিয়েছেন। আগে যেসব এলাকায় বজ্রপাতের ঘটনা কম ঘটত, ভবিষ্যতে সেসব অঞ্চলেও বজ্রপাত বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।ড. মান্নান জানান, প্রতি বছর বাংলাদেশে গড়ে ৩০০ জনেরও বেশি মানুষ বজ্রপাতে প্রাণ হারাচ্ছেন। বিশ্বের সবচেয়ে বজ্রপাতপ্রবণ দেশগুলোর অন্যতম হলো বাংলাদেশ। তিনি বলেন, “বজ্রপাত বৃদ্ধির এ প্রবণতা জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে বজ্রপাতের আওতা ও তীব্রতা দুই-ই বাড়ছে।”তিনি আরও বলেন, “বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে বায়ুমণ্ডলে শক্তি সঞ্চয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের প্রাক-বর্ষা মৌসুমে ‘কনভেক্টিভ অ্যাভেইলেবল পটেনশিয়াল অ্যানার্জি (CAPE)’ প্রায় ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে—যা বজ্রপাতের তীব্রতা বৃদ্ধির স্পষ্ট ইঙ্গিত।”আঞ্চলিকভাবে দূষণের হার বাড়াও বজ্রপাত বৃদ্ধির অন্যতম কারণ বলে মনে করেন এই আবহাওয়াবিদ। তিনি জানান, “বায়ুদূষণের কারণে বায়ুমণ্ডলের কণার ঘনত্ব বেড়ে যাচ্ছে, যা বজ্রপাত সৃষ্টির প্রক্রিয়ায় ভূমিকা রাখছে। গবেষণায় দূষণের মাত্রা এবং বজ্রপাত বৃদ্ধির মধ্যে শক্তিশালী যোগসূত্র পাওয়া গেছে।”ড. মান্নান আরও উল্লেখ করেন, গ্রামীণ এলাকায় লম্বা গাছ নির্বিচারে কেটে ফেলার ফলে প্রাকৃতিকভাবে বজ্রপাত থেকে সুরক্ষা কমে গেছে। “গাছ বজ্রপাতের বিদ্যুৎকে মাটিতে নামিয়ে আনে—কিন্তু গাছ কমে যাওয়ায় মানুষ সরাসরি ঝুঁকিতে পড়ছে,” বলেন তিনি।ভৌগোলিক কারণেও বাংলাদেশ বজ্রপাতের ক্ষেত্রে নাজুক অবস্থানে রয়েছে বলে জানান এই বিশেষজ্ঞ। প্রাক-বর্ষা মৌসুমে উচ্চ তাপমাত্রা, আর্দ্রতা ও বায়ুমণ্ডলীয় অস্থিরতা বজ্রপাতের আদর্শ পরিবেশ তৈরি করে।সাম্প্রতিক গবেষণা অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বজ্রপাতে মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশে। এর প্রধান কারণ গ্রামীণ অঞ্চলে ঘনবসতি এবং মাঠে কর্মরত মানুষের সংখ্যা বেশি হওয়া। গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, প্রাক-বর্ষা মৌসুমে বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে বজ্রপাতের ঘটনা সবচেয়ে ঘন ঘন ঘটে।বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, ২০১৬ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত দেশে প্রতি বর্গকিলোমিটারে বছরে গড়ে ১২০টি বজ্রপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যার এক-তৃতীয়াংশ মাটিতে আঘাত হেনেছে। সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা ও সিলেট এলাকায় বজ্রপাতে মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি।উল্লেখ্য, গত রোববার (৫ অক্টোবর) দেশের চার জেলায় বজ্রপাতে অন্তত আটজনের প্রাণহানি ঘটে।ভোরের আকাশ//হ.র
আগামী ১০ অক্টোবরের মধ্যে সুপারিশসহ জুলাই সনদ সরকারের কাছে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এরপর সরকারের মতামতের ভিত্তিতে সনদ স্বাক্ষরের দিন নির্ধারণ করা হবে। আর আগামী ১৫ অক্টোবরের মধ্যে সনদ স্বাক্ষর সম্ভব হতে পারে বলে আশা করছে কমিশন। কিন্তু শেষ বেলাতেও সংস্কারের সব বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছতে পারেনি সব দল। মোট ৮৪টি বিষয়ের ওপর রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতৈক্য হয়েছে। কিন্তু এর কিছু বিষয়ের ক্ষেত্রে নোট অব ডিসেন্ট (আপত্তি) রয়েছে। আর গণভোটের সময় নিয়ে এখনও বিপরীত অবস্থানে বিএনপি ও জামায়াত। সব মিলিয়ে দলগুলোর ঐকমত্যের পূর্ণাঙ্গ সনদ সরকারের হাতে তুলে দিতে পারছে না ঐক্য কমিশন। ঐকমত্য কমিশনের তৃতীয় মেয়াদের বর্ধিত সময় শেষ হবে আগামী ১৫ অক্টোবর। আর এই মধ্যেই সুপারিশ চূড়ান্ত করে সরকারের কাছে দেওয়ার বিষয়ে কমিশন আশাবাদী বলে জানিয়েছেন ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।তিনি বলেন, এরই মধ্যে আলোচনায় যুক্ত ৩০টি দলের তিন-চতুর্থাংশ দলের পক্ষ থেকে সনদে স্বাক্ষরের জন্য প্রতিনিধিদের নামও পাঠানো হয়েছে। আগামীকাল বুধবার বিকেলে আবারও রাজনৈতিক দল ও জোটগুলোকে নিয়ে বৈঠক হবে। পাশাপাশি আইনি ও সাংবিধানিক কাঠামো স্পষ্ট করার জন্য বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সঙ্গেও পৃথকভাবে বৈঠক করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান আলী রীয়াজ।জুলাই সনদকেন্দ্রিক জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ও রাজনৈতিকগুলোর গত কয়েক মাসের সিরিজ বৈঠক পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে চলমান দীর্ঘ সংলাপপ্রক্রিয়ায় সমঝোতার অংশ হিসেবেই বেশ কয়েকটি বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছিল কয়েকটি রাজনৈতিক দল। ওই বিষয়গুলো বাস্তবায়নের কথা জুলাই সনদের চূড়ান্ত ভাষ্যের অঙ্গীকারনামায় ছিল না। কারও কারও দ্বিমত থাকা এই বিষয়গুলোর নিষ্পত্তি কীভাবে হবে, তার উল্লেখ না থাকায় প্রশ্ন তুলেছে কয়েকটি দল। এমন অবস্থায় চূড়ান্ত ভাষ্য সংশোধন করে নোট অব ডিসেন্ট বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচনে বিজয়ী দলের ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি যুক্ত করা হচ্ছে।জুলাই সনদের অঙ্গীকারনামায় সাতটি ধারা রয়েছে। নতুনভাবে যুক্ত হওয়া আট নম্বর ধারায় বলা আছে, সনদের যেসব ক্ষেত্রে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দেওয়া হয়েছে, জাতীয় নির্বাচনে জনগণের ম্যান্ডেট পাওয়া রাজনৈতিক দল সে মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে পারবে।ঐক্য-অনৈক্যের সনদ : জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি ড. আলী রীয়াজ জানিয়েছেন, ‘মোট ৮৪টি বিষয়ের ওপর রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতৈক্য হয়েছে, যদিও কিছু বিষয়ের ক্ষেত্রে ভিন্নমত রয়েছে।’জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, অভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন বাংলাদেশ গঠনে এবং সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারগুলোতে বিএনপি ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে। অনেকগুলো সংস্কার প্রস্তাব ছিল। তার মধ্যে এই জায়গায় গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারগুলোতে বিএনপি ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে। মনে করেন ৫০টি সংস্কারের চেয়ে ৫টি সংস্কার বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিএনপি সেখানে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে।তিনি বলেন, কিন্তু ‘নোট অব ডিসেন্ট’ মানে এমন না যে ঐক্যমত কমিশন সেগুলো বাদ দিয়ে দিবে। এখন পর্যন্ত আমরা ওগুলোকে পাচ্ছি, দেখছি। যেগুলো ঐক্যমত কমিশনে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে এগুলো তারা জুলাই সনদে দেখতে চায় এবং জুলাই সনদের ড্রাফট (খসড়া) তৈরি হয়েছে। আমরা মনে করি ওইগুলো যদি আইনগত ভিত্তি দেওয়া হয়।’সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের আগে গণভোট ও পিআর (প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) দাবিতে জাতি বিভক্ত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। গতকাল সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের একটি অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, ‘নির্বাচনের আগে গণভোট ও পিআরের দাবিতে জাতিকে বিভক্ত করা হচ্ছে, তা মোকাবিলাই নির্বাচনী চ্যালেঞ্জ।’সনদ বাস্তবায়নে নির্বাচনের আগে গণভোট দাবি করেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ। গত রোববার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আইনিভিত্তির জন্য গণভোটে বিএনপিসহ সব দল একমত। জনগণ গণভোটে অভ্যস্ত নয়। তবে জামায়াত মনে করে, জাতীয় নির্বাচন কোনো ধরনের সমস্যা ছাড়া করতে গণভোট নভেম্বর অথবা ডিসেম্বরে হতে পারে। সংসদ নির্বাচনের তপশিলের আগেও হতে পারে। গণভোট হয়ে গেলে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হতে কোনো বাধা নেই। এতে আমরাও বাঁচি, জাতিও বাঁচে। তবে গণভোট আগে না পরে– এটি নিয়ে আলোচনার সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।বিএনপির সঙ্গে দূরত্ব নেই দাবি করে তিনি বলেন, গণভোটের ফল বিপক্ষে গেলেও জামায়াত মেনে নেবে। গণভোটের মাধ্যমে সংস্কারের জন্য জামায়াত সব সময় সোচ্চার ছিল। সনদের আইনি ভিত্তির জন্য গণভোটের পক্ষে সবাই মত দিয়েছে।ঐকমত্য কমিশনের প্রেক্ষাপট : সাড়ে সাত মাস ধরে অনৈক্যের একই আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে জুলাই সনদ। সিরিজ বৈঠকেও মিলছে না সফলতা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, চলমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় জুলাই সনদের ওপরই নির্ভর করছে ফেব্রুয়ারির অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের সফলতা। কিন্তু নিজেদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে দলগুলো। শুধু তাই নয়, সনদকেন্দ্রিক নিজেদের দাবি পূরণ না হলে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার হুমকি প্রদান করে চলেছে অনেক রাজনৈতিক দল। আগামী ১৫ অক্টোবর ঐকমত্য কমিশনের তৃতীয় দফার বর্ধিত মেয়াদ শেষ হবে। জুলাই সনদ ঘোষণা নিয়ে ঘটছে একের পর এক অপ্রত্যাশিত ঘটনা। জুলাই সনদের ভিত্তিতেই জাতীয় নির্বাচন- অনেক আগে থেকেই এমন দাবিতে শক্ত অবস্থানে রয়েছে- এনসিপি ও জামায়াত। এই সনদেই সংস্কার, বিচার, সংবিধানসহ বিভিন্ন মৌলিক ইস্যুর সমাধান থাকতে হবে বলে দল দুটির দাবি। আর এই জুলাই সনদ বাস্তবায়ন না হওয়ায় ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে এনসিপি ও জামায়াতের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ততা ফুটে উঠছে না। ইস্যুটি নিয়ে দলগুলোর বাগযুদ্ধ শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক মাঠযুদ্ধে গড়ানোর পরিস্থিতিও সৃষ্টি হয়েছে। শুধু তাই নয়, জুলাই সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ কয়েকটি অভিন্ন দাবিতে মাঠে নেমেছে জামায়াতে ইসলামীসহ সাতটি দল।রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, শুরু থেকেই জুলাই সনদ বাস্তবায়নে আন্তরিকতা দেখিয়ে আসছে অন্তর্বর্তী সরকার। দলগুলোর অনৈক্য দূর করতে একের পর এক উদ্যোগ ব্যাহত রয়েছে। শুধু ঐকমত্য কমিশন নয়, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিজেও একাধিক সংলাপের মাধ্যমে দলগুলোকে ঐকমত্যে পৌঁছানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ছাত্র-জনতার ‘জুলাই সনদ’ ঘোষণার ঘটনা ঘটলে দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা ছিল। দেশকে এমন অস্থিতিশীল অবস্থা থেকে রক্ষা করতে জুলাই সনদ ঘোষণার দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তী সরকার।এভাবে চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় মাসের জন্য কাজ শুরু করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রথম দফার আনুষ্ঠানিক আলোচনা গত ৩১ জুলাই শেষ হয়েছে। পূর্বঘোষিত জুলাইয়ের মধ্যে সনদ ঘোষণা করতে পারেনি কমিশন। তারপর আগস্টের প্রথমার্ধেও সনদ ঘোষণার প্রস্তুতি নিয়েছিল কমিশন। দলগুলোর মধ্যে অনৈক্য থাকায় কমিশনের মেয়াদ বাড়ানো হয় ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এই মেয়াদেও ঐকমত্যে পৌঁছতে পারেনি রাজনৈতিক দলগুলো। ফলে আগামী ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত তৃতীয় দফা মেয়াদ বেড়েছে ঐকমত্য কমিশনের। কিন্তু দলগুলোর মধ্যে ঐক্যের তুলনায় অনৈক্যের তীব্রতাই যেন বেড়েছে।এর আগে, গত ১২ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে সাত সদস্যের জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়। সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজকে এই কমিশনের সহ-সভাপতি করা হয়। প্রতিবেদন দাখিলের জন্য কমিশনকে ছয় মাস সময় দেওয়া হয়। সেই সময় শেষ হওয়ার তারিখ ছিল আগামী ১৫ আগস্ট। তার পর থেকেই দফায় দফায় বাড়ানো হচ্ছে ঐকমত্য কমিশনের।ভোরের আকাশ/এসএইচ