আকতার হোসেন
প্রকাশ : ২৫ এপ্রিল ২০২৫ ১০:৪১ এএম
কাজের সুযোগ কমছে বিদেশি নাগরিকদের
দেশের মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, বৈদেশিক মুদ্রার ব্যয় কমানো, রাজস্ব ফাঁকি বন্ধের লক্ষ্যে বিদেশি নাগরিকদের বাংলাদেশে কাজের সুযোগ কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। কল-কারখানার অপারেটর, টেকনিশিয়ান, মধ্যম পর্যায়ের ব্যবস্থাপক ও প্রকল্পের সাধারণ কর্মীসহ বাংলাদেশের শ্রমবাজারে যেসব কাজের জন্য পর্যাপ্ত জনবল পাওয়া যায়, ওইসব ক্ষেত্রে বিদেশি নাগরিকদের বাংলাদেশে কাজের অনুমোদন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। শুধু বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের কর্মী নিয়োগে সরকার অনুমোদন দেওয়া হবে। সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বর্তমানে যারা সাধারণ কর্মী হিসেবে ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে বাংলাদেশে কাজ করছেন, তাদের ওয়ার্ক পারমিটের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আর নবায়ন করা হবে না। পাশাপাশি কেউ ভিসার শর্ত ভঙ্গ করছে কি না, সেটি দেখার জন্য পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) তিনটি টিম মাঠে নেমেছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, কোনো বিদেশির ক্ষেত্রে ভিসার শর্ত ভঙ্গ হলে, অর্থাৎ যে প্রতিষ্ঠানে কাজের জন্য এসেছেন বা যে কাজের জন্য এসেছেন, সেই প্রতিষ্ঠানে বা সেই কাজ না করলে তাকে কালো তালিকাভুক্ত করে ফেরত পাঠানো হবে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন বিদেশিকে ভিসার শর্তভঙ্গ ও অপরাধে জড়িয়ে পড়ার কারণে কালো তালিকাভুক্ত করে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
এছাড়া যেসব দেশে বাংলাদেশের দূতাবাস রয়েছে, সেসব দেশের নাগরিকদের জন্য অন-অ্যারাইভাল ভিসা দেওয়া বন্ধ করা হবে। তবে সরকার আয়োজিত প্রোগ্রাম, আন্তর্জাতিক বা দ্বিপক্ষীয় টুর্নামেন্ট এবং প্রতিরক্ষা, জাতিসংঘ ও তাদের অধীনস্থ সংস্থার কর্মী ও কূটনৈতিক কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের অন-অ্যারাইভাল ভিসা দেওয়া অব্যাহত থাকবে। ক্রিকেট ছাড়া অন্য খেলার সঙ্গে সম্পৃক্তদের, বিশেষ করে ফুটবলারদের অন-অ্যারাইভাল ভিসা দেওয়া হবে না। পাশাপাশি বিদেশি কর্মীদের তথ্যভান্ডার তৈরি করতে একটি সফটওয়্যার সিস্টেম চালু করারও সিদ্ধান্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে অন-অ্যারাইভাল ভিসার জন্য অ্যাপ চালু করা হয়েছে। অন-অ্যারাইভাল ভিসা, সফটওয়্যার সিস্টেমে বিদেশি নাগরিক তথ্য অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে শীঘ্রই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরিপত্র জারি করবে বলে জানা গেছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিদেশি নাগরিকদের কর্মানুমতি, সফটওয়্যার বা অনলাইনভিত্তিক তথ্যভান্ডার তৈরি করা এবং অন-অ্যারাইভাল ভিসাসহ বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে পরিপত্র জারির আগ পর্যন্ত বর্তমান নিয়ম যথাযথভাবে পরিপালন করার জন্য সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
গত বছরের ৮ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশে অবৈধভাবে অবস্থানকারী বিদেশি নাগরিকদের কাগজপত্রসহ বৈধতা অর্জনের অনুরোধ করে। আরেক বিজ্ঞপ্তিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অবৈধভাবে অবস্থানরত বিদেশিদের চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত বৈধতা অর্জনের আবেদন করার সময় দেয়। এরপর গত ৩ ফেব্রুয়ারি অতিরিক্ত সচিব শামীম খানকে প্রধান করে বাংলাদেশে অবৈধভাবে অবস্থানরত বিদেশি নাগরিকদের বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে ১১ সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করে সরকার।
ওই টাস্কফোর্সের প্রথম সভায় জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা জানায়, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১ লাখ ৩৯ হাজার বিদেশি নাগরিক বৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। এর বাইরে প্রায় ৪৬ হাজার বিদেশি নাগরিক অবৈধভাবে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে। এই তথ্য গত বছরের ডিসেম্বরে সরকারকে জানানো হয়েছে। তবে অবৈধ বিদেশিদের উদ্দেশ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তি জারির পর প্রায় ১৫ হাজার বিদেশি এক্সিট পাস নিয়ে বাংলাদেশ ছেড়েছেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র বলছে, বিভিন্ন উৎস থেকে বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি নাগরিকদের যে হিসাব পাওয়া যায়, তার সঠিকতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। কারণ ডাবল কাউন্টিং হয়, অনেকে অন-অ্যারাইভাল ভিসা নিয়ে এসে অবস্থান করছেন নাকি ফিরে গেছেন তা নিশ্চিত হওয়া যায় না। এসব কারণে বাংলাদেশে কত সংখ্যক বিদেশি কাজ করছেন তার সুনির্দিষ্ট হিসাব বলা মুশকিল। তবে বাংলাদেশে যেসব বিদেশি রয়েছেন, তাদের ৫০ শতাংশের বেশি সাধারণ কাজের সঙ্গে জড়িত বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ২০২০ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত এক জরিপে জানিয়েছিল বাংলাদেশে বৈধ ও অবৈধভাবে কর্মরত বিদেশি কর্মীর সংখ্যা কমপক্ষে ২ লাখ ৫০ হাজার। এই সংখ্যার হিসাবে, বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর কমপক্ষে ৩ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স অবৈধভাবে পাচার হয়ে যায়। তাদের কর ফাঁকির ফলে বছরে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হয়।
টিআইবির গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে ৪৪টিরও বেশি দেশের নাগরিক বিভিন্ন খাতে কর্মরত। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য দেশগুলো হচ্ছে- ভারত, চীন, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, তুরস্ক, সিঙ্গাপুর, ফ্রান্স, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইনস, নরওয়ে ও নাইজেরিয়া। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য বাংলাদেশে রুশ নাগরিকদের উপস্থিতিও বেড়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি বিদেশি কর্মী কাজ করছেন তৈরি পোশাক (আরএমজি) ও টেক্সটাইল খাতে। এছাড়া সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প, বিভিন্ন বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, আন্তর্জাতিক এনজিও, চামড়া শিল্প, চিকিৎসা সেবা এবং হোটেল ও রেস্তোরাঁয় উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বিদেশি কাজ করছেন। শিক্ষার্থী ও খোলোয়াড় রয়েছেন কয়েক হাজার।
আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী, বিদেশি নাগরিকদের আয়ের ওপর করহার ৩০ শতাংশ, অর্থাৎ কোনো বিদেশি ১০০ টাকা আয় করলে ৩০ টাকা কর দিতে হবে। যে প্রতিষ্ঠানে ওই বিদেশি চাকরি করেন, প্রতি মাসে বেতন-ভাতা দেওয়ার সময় এই কর কেটে রাখবে চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান। বিদেশিদের ওপর কর পুরোটাই উৎসে কেটে রাখতে হবে।
যথাসময়ে যথাযথভাবে কর না দিলে চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান বা ওই বিদেশি নাগরিককে শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। আয়কর আইনে ওই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ৫ লাখ বা প্রদেয় করের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত জরিমানা করার বিধান আছে। এছাড়া তিন বছরের জেল দেওয়ার সুযোগ আছে।
ভোরের আকাশ/এসএইচ
আকতার হোসেন
প্রকাশ : ১ দিন আগে
আপডেট : ৩ মিনিট আগে
কাজের সুযোগ কমছে বিদেশি নাগরিকদের
দেশের মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, বৈদেশিক মুদ্রার ব্যয় কমানো, রাজস্ব ফাঁকি বন্ধের লক্ষ্যে বিদেশি নাগরিকদের বাংলাদেশে কাজের সুযোগ কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। কল-কারখানার অপারেটর, টেকনিশিয়ান, মধ্যম পর্যায়ের ব্যবস্থাপক ও প্রকল্পের সাধারণ কর্মীসহ বাংলাদেশের শ্রমবাজারে যেসব কাজের জন্য পর্যাপ্ত জনবল পাওয়া যায়, ওইসব ক্ষেত্রে বিদেশি নাগরিকদের বাংলাদেশে কাজের অনুমোদন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। শুধু বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের কর্মী নিয়োগে সরকার অনুমোদন দেওয়া হবে। সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বর্তমানে যারা সাধারণ কর্মী হিসেবে ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে বাংলাদেশে কাজ করছেন, তাদের ওয়ার্ক পারমিটের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আর নবায়ন করা হবে না। পাশাপাশি কেউ ভিসার শর্ত ভঙ্গ করছে কি না, সেটি দেখার জন্য পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) তিনটি টিম মাঠে নেমেছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, কোনো বিদেশির ক্ষেত্রে ভিসার শর্ত ভঙ্গ হলে, অর্থাৎ যে প্রতিষ্ঠানে কাজের জন্য এসেছেন বা যে কাজের জন্য এসেছেন, সেই প্রতিষ্ঠানে বা সেই কাজ না করলে তাকে কালো তালিকাভুক্ত করে ফেরত পাঠানো হবে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন বিদেশিকে ভিসার শর্তভঙ্গ ও অপরাধে জড়িয়ে পড়ার কারণে কালো তালিকাভুক্ত করে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
এছাড়া যেসব দেশে বাংলাদেশের দূতাবাস রয়েছে, সেসব দেশের নাগরিকদের জন্য অন-অ্যারাইভাল ভিসা দেওয়া বন্ধ করা হবে। তবে সরকার আয়োজিত প্রোগ্রাম, আন্তর্জাতিক বা দ্বিপক্ষীয় টুর্নামেন্ট এবং প্রতিরক্ষা, জাতিসংঘ ও তাদের অধীনস্থ সংস্থার কর্মী ও কূটনৈতিক কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের অন-অ্যারাইভাল ভিসা দেওয়া অব্যাহত থাকবে। ক্রিকেট ছাড়া অন্য খেলার সঙ্গে সম্পৃক্তদের, বিশেষ করে ফুটবলারদের অন-অ্যারাইভাল ভিসা দেওয়া হবে না। পাশাপাশি বিদেশি কর্মীদের তথ্যভান্ডার তৈরি করতে একটি সফটওয়্যার সিস্টেম চালু করারও সিদ্ধান্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে অন-অ্যারাইভাল ভিসার জন্য অ্যাপ চালু করা হয়েছে। অন-অ্যারাইভাল ভিসা, সফটওয়্যার সিস্টেমে বিদেশি নাগরিক তথ্য অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে শীঘ্রই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরিপত্র জারি করবে বলে জানা গেছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিদেশি নাগরিকদের কর্মানুমতি, সফটওয়্যার বা অনলাইনভিত্তিক তথ্যভান্ডার তৈরি করা এবং অন-অ্যারাইভাল ভিসাসহ বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে পরিপত্র জারির আগ পর্যন্ত বর্তমান নিয়ম যথাযথভাবে পরিপালন করার জন্য সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
গত বছরের ৮ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশে অবৈধভাবে অবস্থানকারী বিদেশি নাগরিকদের কাগজপত্রসহ বৈধতা অর্জনের অনুরোধ করে। আরেক বিজ্ঞপ্তিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অবৈধভাবে অবস্থানরত বিদেশিদের চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত বৈধতা অর্জনের আবেদন করার সময় দেয়। এরপর গত ৩ ফেব্রুয়ারি অতিরিক্ত সচিব শামীম খানকে প্রধান করে বাংলাদেশে অবৈধভাবে অবস্থানরত বিদেশি নাগরিকদের বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে ১১ সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করে সরকার।
ওই টাস্কফোর্সের প্রথম সভায় জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা জানায়, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১ লাখ ৩৯ হাজার বিদেশি নাগরিক বৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। এর বাইরে প্রায় ৪৬ হাজার বিদেশি নাগরিক অবৈধভাবে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে। এই তথ্য গত বছরের ডিসেম্বরে সরকারকে জানানো হয়েছে। তবে অবৈধ বিদেশিদের উদ্দেশ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তি জারির পর প্রায় ১৫ হাজার বিদেশি এক্সিট পাস নিয়ে বাংলাদেশ ছেড়েছেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র বলছে, বিভিন্ন উৎস থেকে বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি নাগরিকদের যে হিসাব পাওয়া যায়, তার সঠিকতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। কারণ ডাবল কাউন্টিং হয়, অনেকে অন-অ্যারাইভাল ভিসা নিয়ে এসে অবস্থান করছেন নাকি ফিরে গেছেন তা নিশ্চিত হওয়া যায় না। এসব কারণে বাংলাদেশে কত সংখ্যক বিদেশি কাজ করছেন তার সুনির্দিষ্ট হিসাব বলা মুশকিল। তবে বাংলাদেশে যেসব বিদেশি রয়েছেন, তাদের ৫০ শতাংশের বেশি সাধারণ কাজের সঙ্গে জড়িত বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ২০২০ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত এক জরিপে জানিয়েছিল বাংলাদেশে বৈধ ও অবৈধভাবে কর্মরত বিদেশি কর্মীর সংখ্যা কমপক্ষে ২ লাখ ৫০ হাজার। এই সংখ্যার হিসাবে, বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর কমপক্ষে ৩ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স অবৈধভাবে পাচার হয়ে যায়। তাদের কর ফাঁকির ফলে বছরে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হয়।
টিআইবির গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে ৪৪টিরও বেশি দেশের নাগরিক বিভিন্ন খাতে কর্মরত। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য দেশগুলো হচ্ছে- ভারত, চীন, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, তুরস্ক, সিঙ্গাপুর, ফ্রান্স, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইনস, নরওয়ে ও নাইজেরিয়া। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য বাংলাদেশে রুশ নাগরিকদের উপস্থিতিও বেড়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি বিদেশি কর্মী কাজ করছেন তৈরি পোশাক (আরএমজি) ও টেক্সটাইল খাতে। এছাড়া সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প, বিভিন্ন বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, আন্তর্জাতিক এনজিও, চামড়া শিল্প, চিকিৎসা সেবা এবং হোটেল ও রেস্তোরাঁয় উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বিদেশি কাজ করছেন। শিক্ষার্থী ও খোলোয়াড় রয়েছেন কয়েক হাজার।
আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী, বিদেশি নাগরিকদের আয়ের ওপর করহার ৩০ শতাংশ, অর্থাৎ কোনো বিদেশি ১০০ টাকা আয় করলে ৩০ টাকা কর দিতে হবে। যে প্রতিষ্ঠানে ওই বিদেশি চাকরি করেন, প্রতি মাসে বেতন-ভাতা দেওয়ার সময় এই কর কেটে রাখবে চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান। বিদেশিদের ওপর কর পুরোটাই উৎসে কেটে রাখতে হবে।
যথাসময়ে যথাযথভাবে কর না দিলে চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান বা ওই বিদেশি নাগরিককে শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। আয়কর আইনে ওই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ৫ লাখ বা প্রদেয় করের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত জরিমানা করার বিধান আছে। এছাড়া তিন বছরের জেল দেওয়ার সুযোগ আছে।
ভোরের আকাশ/এসএইচ