তাকী মোহাম্মদ জোবায়ের
প্রকাশ : ২৫ এপ্রিল ২০২৫ ১১:২৫ এএম
জনজীবন সহজ করাই লক্ষ্য, বাড়তি করের বোঝা চাপবে না
সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দেওয়ার বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়েই তৈরি হচ্ছে আগামী অর্থবছরের জাতীয় বাজেট। পাশাপাশি অর্থনীতি চাঙ্গা করার বিষয়টিও প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। এজন্য টাস্কফোর্সের সুপারিশ অনুসরণ করা হচ্ছে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নে। জনজীবন সহজ করতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে প্রথম অগ্রাধিকারে রাখছে সরকার। সামাজিক কর্মসূচিতে বরাদ্দ বাড়িয়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে আরও বেশি সুরক্ষার আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে। লক্ষ্য রয়েছে গ্রামাঞ্চলে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির। এজন্য কৌশল হিসেবে বড় উন্নয়ন প্রকল্প না নিয়ে গ্রামীণ রাস্তাঘাট এবং অবকাঠামো নির্মাণ ও সংস্কারে জোর দেওয়া হবে আগামী বাজেটে। পাশাপাশি ছোট করা হচ্ছে বাজেটের আকার। এতে বাড়তি করের বোঝা চাপবে না জনগণের ওপর। ফলে বাজেট ঘোষণার পর খুব বেশি পণ্যের দাম বাড়বে না। বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপকালে এসব তথ্য জানা গেছে।
তারা জানিয়েছেন, রাজস্ব সংগ্রহের বড় কোনো উৎসের সন্ধান না পাওয়ায় আগামী বাজেট তেমন বড় করা হচ্ছে না। এ কারণেই চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের তুলনায় আগামী অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার কমানো হচ্ছে অন্তত সাত হাজার কোটি টাকা। অহেতুক উচ্চাভিলাষী নয়; বরং একটি বাস্তবভিত্তিক বাজেটের দিকেই এগোচ্ছে অন্তর্র্বতী সরকার। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ‘বৈষম্যহীন টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্র্নিধারণ’ শীর্ষক একটি টাস্কফোর্স তৈরি করেছিল। প্রতিটি মন্ত্রণালয়কে এই টাস্কফোর্সের অন্তত একটি করে সুপারিশ বাস্তবায়ন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এর প্রেক্ষিতে টাস্কফোর্সের সুপারিশের আলোকে বাজেট প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। রাজস্ব আদায় ও খরচের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হচ্ছে ওই সুপারিশমালার ওপর ভিত্তি করে।
গত বৃহস্পতিবার এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আগামী অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হতে পারে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা। এটি চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার থেকে ১৯ হাজার কোটি টাকা বেশি। তবে এ বছরের সংশোধিত লক্ষ্যের তুলনায় ৩৫ হাজার ৫শ কোটি টাকা বেশি। গত অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে এনবিআরকে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছিল। পরে এটি কমিয়ে ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫শ কোটি টাকা নির্ধারণ করে অন্তর্বর্তী সরকার। আগামী বাজেটে জনমনে স্বস্তি দিতে দ্রব্যমূল্য কমানোকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে যা ৯ থেকে ১০ শতাংশের ঘরে ওঠানামা করছে। নতুন বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হচ্ছে। তবে শুরুতে এই হার ৭ শতাংশ নির্ধারণ করার পরিকল্পনা ছিল বলে জানা গেছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থসরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে সাফল্য দেখানোয় আত্মবিশ্বাস বেড়েছে সরকারের।
বাজেট নিয়ে সম্প্রতি গণমাধ্যমের সামনে কথা বলেছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে প্রথম অগ্রাধিকার দিয়ে বাজেট করতে যাচ্ছি। এ ছাড়া নজর থাকবে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, জ্বালানি সাশ্রয় ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরিতে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, দক্ষতা উন্নয়ন, তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে বাজেটে। চাইব মানুষের জীবনযাত্রা যেন সহজ হয়।
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, আগামী অর্থবছরে রাজস্ব বাড়বে। তবে মানুষের ওপর অহেতুক করের বোঝা বাড়াব না।
জানা গেছে, অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন ২ জুন সোমবার। প্রতি অর্থবছরে জুন মাসের কোনো বৃহস্পতিবারকে বাজেট ঘোষণার জন্য বেছে নেওয়া হলেও এবারই এর ব্যতিক্রম হচ্ছে। তবে বাজেট ঘোষণার পরদিন রেওয়াজ অনুযায়ী অন্য উপদেষ্টাদের সঙ্গে নিয়ে বাজেট-উত্তর সংবাদ সম্মেলন করবেন অর্থ উপদেষ্টা।
অর্থ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট দেওয়া হতে পারে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের মতো আগামী অর্থবছরেও বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৫ শতাংশের নিচে রাখা হবে। আগামী অর্থবছরের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হারের লক্ষ্য ধরা হচ্ছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য কিছুটা কমিয়ে ইতিমধ্যে ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। যদিও বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বলছে, চলতি অর্থবছরের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৪ শতাংশের নিচে থাকবে।
জানা গেছে, এডিপিতে বরাদ্দ রাখা হবে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার মতো। বরাদ্দের দিক থেকে আগামী বাজেটে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, তথ্যপ্রযুক্তি ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের চেতনা এবং শ্বেতপত্র কমিটি ও টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনের সুপারিশের প্রতিফলন থাকবে বাজেটে। তবে বাজেটের আকার আরও কমানোর পক্ষে মত দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।
এ প্রসঙ্গে অর্থনীতি বিশ্লেষক মো. মাজেদুল হক বলেন, রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার হিসাব ধরলে আগামী অর্থবছরের বাজেটও উচ্চাভিলাষী হয়ে যায়। তবে নতুন করের বোঝা না বাড়িয়ে আদায় বাড়িয়ে যদি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারে এনবিআর, সেটা খুবই ভালো হবে। যদি আমরা ধরে নেই রাজস্ব আদায় বাড়বে, এরপরও বাজেটের আকার আরও ছোট হওয়া দরকার। কারণ, আগের সরকার যে বড় বড় বাজেট ঘোষণা করত, তার অনেকটাই অবাস্তবায়িত থাকত। তাই চলতি অর্থবছরের তুলনায় বাজেটের আকার মাত্র ৭ হাজার কোটি টাকা না কমিয়ে আরো বড় পরিসরে কমালে সার্বিকভাবে ভালো হতো।
বাজাটে অগ্রাধিকার পাচ্ছে যেসব খাত : আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) জন্য একগুচ্ছ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কৃষি, কৃষিভিত্তিক শিল্প, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ উৎপাদন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা ও ক্ষয়ক্ষতি পুনর্বাসন সংক্রান্ত প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। একই সঙ্গে সবুজ ও জলবায়ুসংক্রান্ত প্রকল্প বিশেষ গুরুত্ব পাবে। একই সঙ্গে নতুন বাজেটে অগ্রাধিকার পাচ্ছে কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাত। সমাজে বৈষম্য কমানোর পরিকল্পনা এবং তা বাস্তবায়নের অঙ্গীকারও থাকবে। নতুন বাজেটে থাকছে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় মূল্যস্ফীতির চাপে নিম্ন আয়ের মানুষদের বিশেষ করে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে উপকারভোগীর সংখ্যা ও কিছু ক্ষেত্রে ভাতার পরিমাণ বাড়ানোর উদ্যোগ।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, সরকারের নতুন অর্থবছরের এডিপি বাস্তবায়নের পরিকল্পনায় আসন্ন বাজেটে বৈদেশিক ঋণ কিংবা অনুদানে বাস্তবায়ন হচ্ছে এসব প্রকল্পে এডিপিতে অর্থ বরাদ্দের চাহিদা প্রস্তাব করতে হবে। পাশাপাশি দারিদ্র্য নিরসন, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, জিডিপি প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে এসব প্রকল্পের জন্য অগ্রাধিকার বিবেচনায় আনতে হবে। এ ছাড়াও মানবসম্পদ উন্নয়নের সঙ্গে সরাসরি সংশ্লিষ্ট এমন সব প্রকল্পে এডিপির আওতায় আনা । তবে এসব প্রকল্পের জন্য অর্থ বরাদ্দের চাহিদা প্রস্তাব করতে হবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে। এছাড়া প্রকল্পভিত্তিক চাহিদা প্রস্তাবের ক্ষেত্রে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দের পাশাপাশি আগামী ২০২৬-২৭, ২০২৭-২৮ অর্থবছরের বরাদ্দের প্রক্ষেপণ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
প্রাথমিকভাবে শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবা, কৃষি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, পরিবহন ও যোগাযোগ, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন, পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন ও পানিসম্পদ, স্বাস্থ্য সেক্টরের আওতাধীন ৩৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের এসব সেক্টরের মাল্টি ইয়ার পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম তেরি হবে। যে কারণে বেশকিছু বিবেচনায় নিতে হবে বলে সরকারের নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।
ভোরের আকাশ/এসএইচ
তাকী মোহাম্মদ জোবায়ের
প্রকাশ : ১ দিন আগে
আপডেট : ১ মিনিট আগে
জনজীবন সহজ করাই লক্ষ্য, বাড়তি করের বোঝা চাপবে না
সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দেওয়ার বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়েই তৈরি হচ্ছে আগামী অর্থবছরের জাতীয় বাজেট। পাশাপাশি অর্থনীতি চাঙ্গা করার বিষয়টিও প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। এজন্য টাস্কফোর্সের সুপারিশ অনুসরণ করা হচ্ছে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নে। জনজীবন সহজ করতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে প্রথম অগ্রাধিকারে রাখছে সরকার। সামাজিক কর্মসূচিতে বরাদ্দ বাড়িয়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে আরও বেশি সুরক্ষার আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে। লক্ষ্য রয়েছে গ্রামাঞ্চলে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির। এজন্য কৌশল হিসেবে বড় উন্নয়ন প্রকল্প না নিয়ে গ্রামীণ রাস্তাঘাট এবং অবকাঠামো নির্মাণ ও সংস্কারে জোর দেওয়া হবে আগামী বাজেটে। পাশাপাশি ছোট করা হচ্ছে বাজেটের আকার। এতে বাড়তি করের বোঝা চাপবে না জনগণের ওপর। ফলে বাজেট ঘোষণার পর খুব বেশি পণ্যের দাম বাড়বে না। বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপকালে এসব তথ্য জানা গেছে।
তারা জানিয়েছেন, রাজস্ব সংগ্রহের বড় কোনো উৎসের সন্ধান না পাওয়ায় আগামী বাজেট তেমন বড় করা হচ্ছে না। এ কারণেই চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের তুলনায় আগামী অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার কমানো হচ্ছে অন্তত সাত হাজার কোটি টাকা। অহেতুক উচ্চাভিলাষী নয়; বরং একটি বাস্তবভিত্তিক বাজেটের দিকেই এগোচ্ছে অন্তর্র্বতী সরকার। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ‘বৈষম্যহীন টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্র্নিধারণ’ শীর্ষক একটি টাস্কফোর্স তৈরি করেছিল। প্রতিটি মন্ত্রণালয়কে এই টাস্কফোর্সের অন্তত একটি করে সুপারিশ বাস্তবায়ন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এর প্রেক্ষিতে টাস্কফোর্সের সুপারিশের আলোকে বাজেট প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। রাজস্ব আদায় ও খরচের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হচ্ছে ওই সুপারিশমালার ওপর ভিত্তি করে।
গত বৃহস্পতিবার এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আগামী অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হতে পারে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা। এটি চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার থেকে ১৯ হাজার কোটি টাকা বেশি। তবে এ বছরের সংশোধিত লক্ষ্যের তুলনায় ৩৫ হাজার ৫শ কোটি টাকা বেশি। গত অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে এনবিআরকে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছিল। পরে এটি কমিয়ে ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫শ কোটি টাকা নির্ধারণ করে অন্তর্বর্তী সরকার। আগামী বাজেটে জনমনে স্বস্তি দিতে দ্রব্যমূল্য কমানোকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে যা ৯ থেকে ১০ শতাংশের ঘরে ওঠানামা করছে। নতুন বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হচ্ছে। তবে শুরুতে এই হার ৭ শতাংশ নির্ধারণ করার পরিকল্পনা ছিল বলে জানা গেছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থসরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে সাফল্য দেখানোয় আত্মবিশ্বাস বেড়েছে সরকারের।
বাজেট নিয়ে সম্প্রতি গণমাধ্যমের সামনে কথা বলেছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে প্রথম অগ্রাধিকার দিয়ে বাজেট করতে যাচ্ছি। এ ছাড়া নজর থাকবে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, জ্বালানি সাশ্রয় ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরিতে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, দক্ষতা উন্নয়ন, তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে বাজেটে। চাইব মানুষের জীবনযাত্রা যেন সহজ হয়।
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, আগামী অর্থবছরে রাজস্ব বাড়বে। তবে মানুষের ওপর অহেতুক করের বোঝা বাড়াব না।
জানা গেছে, অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন ২ জুন সোমবার। প্রতি অর্থবছরে জুন মাসের কোনো বৃহস্পতিবারকে বাজেট ঘোষণার জন্য বেছে নেওয়া হলেও এবারই এর ব্যতিক্রম হচ্ছে। তবে বাজেট ঘোষণার পরদিন রেওয়াজ অনুযায়ী অন্য উপদেষ্টাদের সঙ্গে নিয়ে বাজেট-উত্তর সংবাদ সম্মেলন করবেন অর্থ উপদেষ্টা।
অর্থ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট দেওয়া হতে পারে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের মতো আগামী অর্থবছরেও বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৫ শতাংশের নিচে রাখা হবে। আগামী অর্থবছরের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হারের লক্ষ্য ধরা হচ্ছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য কিছুটা কমিয়ে ইতিমধ্যে ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। যদিও বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বলছে, চলতি অর্থবছরের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৪ শতাংশের নিচে থাকবে।
জানা গেছে, এডিপিতে বরাদ্দ রাখা হবে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার মতো। বরাদ্দের দিক থেকে আগামী বাজেটে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, তথ্যপ্রযুক্তি ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের চেতনা এবং শ্বেতপত্র কমিটি ও টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনের সুপারিশের প্রতিফলন থাকবে বাজেটে। তবে বাজেটের আকার আরও কমানোর পক্ষে মত দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।
এ প্রসঙ্গে অর্থনীতি বিশ্লেষক মো. মাজেদুল হক বলেন, রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার হিসাব ধরলে আগামী অর্থবছরের বাজেটও উচ্চাভিলাষী হয়ে যায়। তবে নতুন করের বোঝা না বাড়িয়ে আদায় বাড়িয়ে যদি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারে এনবিআর, সেটা খুবই ভালো হবে। যদি আমরা ধরে নেই রাজস্ব আদায় বাড়বে, এরপরও বাজেটের আকার আরও ছোট হওয়া দরকার। কারণ, আগের সরকার যে বড় বড় বাজেট ঘোষণা করত, তার অনেকটাই অবাস্তবায়িত থাকত। তাই চলতি অর্থবছরের তুলনায় বাজেটের আকার মাত্র ৭ হাজার কোটি টাকা না কমিয়ে আরো বড় পরিসরে কমালে সার্বিকভাবে ভালো হতো।
বাজাটে অগ্রাধিকার পাচ্ছে যেসব খাত : আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) জন্য একগুচ্ছ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কৃষি, কৃষিভিত্তিক শিল্প, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ উৎপাদন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা ও ক্ষয়ক্ষতি পুনর্বাসন সংক্রান্ত প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। একই সঙ্গে সবুজ ও জলবায়ুসংক্রান্ত প্রকল্প বিশেষ গুরুত্ব পাবে। একই সঙ্গে নতুন বাজেটে অগ্রাধিকার পাচ্ছে কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাত। সমাজে বৈষম্য কমানোর পরিকল্পনা এবং তা বাস্তবায়নের অঙ্গীকারও থাকবে। নতুন বাজেটে থাকছে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় মূল্যস্ফীতির চাপে নিম্ন আয়ের মানুষদের বিশেষ করে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে উপকারভোগীর সংখ্যা ও কিছু ক্ষেত্রে ভাতার পরিমাণ বাড়ানোর উদ্যোগ।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, সরকারের নতুন অর্থবছরের এডিপি বাস্তবায়নের পরিকল্পনায় আসন্ন বাজেটে বৈদেশিক ঋণ কিংবা অনুদানে বাস্তবায়ন হচ্ছে এসব প্রকল্পে এডিপিতে অর্থ বরাদ্দের চাহিদা প্রস্তাব করতে হবে। পাশাপাশি দারিদ্র্য নিরসন, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, জিডিপি প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে এসব প্রকল্পের জন্য অগ্রাধিকার বিবেচনায় আনতে হবে। এ ছাড়াও মানবসম্পদ উন্নয়নের সঙ্গে সরাসরি সংশ্লিষ্ট এমন সব প্রকল্পে এডিপির আওতায় আনা । তবে এসব প্রকল্পের জন্য অর্থ বরাদ্দের চাহিদা প্রস্তাব করতে হবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে। এছাড়া প্রকল্পভিত্তিক চাহিদা প্রস্তাবের ক্ষেত্রে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দের পাশাপাশি আগামী ২০২৬-২৭, ২০২৭-২৮ অর্থবছরের বরাদ্দের প্রক্ষেপণ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
প্রাথমিকভাবে শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবা, কৃষি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, পরিবহন ও যোগাযোগ, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন, পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন ও পানিসম্পদ, স্বাস্থ্য সেক্টরের আওতাধীন ৩৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের এসব সেক্টরের মাল্টি ইয়ার পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম তেরি হবে। যে কারণে বেশকিছু বিবেচনায় নিতে হবে বলে সরকারের নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।
ভোরের আকাশ/এসএইচ