তাকী মোহাম্মদ জোবায়ের
প্রকাশ : ২৩ এপ্রিল ২০২৫ ১১:২১ এএম
ডলারের পতনে স্বর্ণের উত্থান
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক যুদ্ধ, ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বাণিজ্যে বিশ্বজুড়ে অনিশ্চয়তার কারণে বিনিয়োগের মাধ্যম হিসেবে আকর্ষণ হারাচ্ছে মার্কিন ডলার। বিনিয়োগের বিকল্প মাধ্যম হিসেবে স্বর্ণকে বেছে নেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। এতে লাফিয়ে বাড়ছে এ ধাতুর দাম। এই ধারা অব্যাহত থাকার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে গবেষণা সংস্থাগুলোর বিশ্লেষণে। বাংলাদেশে স্বর্ণের দাম প্রতি ভরি ১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা হতে পারে।
জানা গেছে, গত সোমবার আন্তর্জাতিক স্পট মার্কেটে প্রতি আউন্স (২.৪৩ ভরি) স্বর্ণের দাম ৩ হাজার ৪১৫ দশমিক ২৪ ডলারে পৌঁছায়। টাকার অঙ্কে যা ৪ লাখ ১৪ হাজার ৯৫২ টাকা। ওইদিন কার্যদিবসের শুরুতে দাম ছিল আরও বেশি। ৩ হাজার ৪২৪ ডলার যা ইতিহাসে রেকর্ড সৃষ্টি করে। ফিউচার মার্কেটেও দামে বড় লাফ দিয়েছিল স্বর্ণ। প্রতি আউন্স বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ৪২৬ ডলারে। চলতি বছরের শেষে এই দাম ৩ হাজার ৭শ ডলার পেরোতে পারে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেছে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো। এই হিসেবে বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম বেড়ে হতে পারে ১ লাখ ৮৫ হাজার টাকার কাছাকাছি। বাংলাদেশের বাজারে বর্তমানে প্রতি ভরি স্বার্ণের দাম ১ লাখ ৭২ হাজার ৫৪৬ টাকা। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সোমবার ভরিতে ৪ হাজার ৭১৩ টাকা দাম বেড়েছে বাংলাদেশে।
জানা গেছে, বিশ্বজুড়ে চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এই দর বৃদ্ধির পেছনে মূল চালক। যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য উত্তেজনা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং ইসরায়েল-গাজা সংকট বাজারে নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করেছে। এই পরিস্থিতিতে বহু বিনিয়োগকারী ঝুঁকছেন স্বর্ণের দিকে, যেটিকে তারা দীর্ঘদিন ধরেই নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে দেখছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ডলারের মান এখন তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে নিচে। বিশ্বের প্রধান ছয়টি মুদ্রার বিনিময় হারের বিপরীতে ডলারের মান এখন একশর মধ্যে ৯৮ এর নিচে। গত তিন বছরে ডলারের মানে এত পতন হয়নি। অন্যদিকে ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার নিয়ে অনিশ্চয়তা ডলারের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে। সাধারণত ডলার দুর্বল হলে স্বর্ণের দাম বাড়ে। বর্তমানে এটাই ঘটছে বিশ্ববাজারে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতাও বাজারে প্রভাব ফেলেছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে ফেড চেয়ারম্যানের সম্পর্ক নিয়ে জল্পনা এবং তাকে অপসারণের গুঞ্জন বিনিয়োগকারীদের আরও শঙ্কিত করেছে। সব মিলিয়ে বিশ্বজুড়ে মানুষ ডলারে সঞ্চয়ের পরিবর্তে স্বর্ণে সঞ্চয়ের দিকে ঝুঁকছে। শুধু ব্যক্তি পর্যায়ের নয়, অনেক দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকও এখন বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ কিনছে।
আন্তর্জাতিক স্বর্ণ কাউন্সিলের তথ্য বলছে, ২০২৪ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো রেকর্ড হারে স্বর্ণ কিনেছে এবং ২০২৫ সালেও এই ধারা অব্যাহত আছে। বিশেষ করে চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়মিত স্বর্ণের মজুত বাড়াচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, চীন চায় ডলারনির্ভরতা কমিয়ে একটি বিকল্প বৈশ্বিক মুদ্রাভিত্তি গড়ে তুলতে। আর সে জন্য স্বর্ণকে কেন্দ্র করে নতুন ভিত্তি তৈরির চেষ্টা করছে। চীনের বলয়ে থাকা অনেক দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকও স্বর্ণে রিজার্ভ সংরক্ষণ বাড়িয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকও স্বর্ণে রিজার্ভ বাড়াচ্ছে দিন দিন। ২০২৪ সালের হিসাবে, বাংলাদেশের রিজার্ভে ১৪ দশমিক ২৬ টন স্বর্ণ রয়েছে (১ টনে ৭৭,৮০৩ ভরি)।
ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের তথ্য অনুযায়ী, রিজার্ভ হিসেবে স্বর্ণ মজুতে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে ৬৬তম। সব মিলিয়ে স্বর্ণের বাজার এখন রমরমা। বিশ্বজুড়ে ব্যাপক চাহিদা বাড়ায় মূল্যবান এই ধাতবটির দরবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।
সিঙ্গাপুরভিত্তিক বাজার বিশ্লেষক ইয়াপ জুন রং এক প্রতিবেদনে লিখেছেন, বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যিক অনিশ্চয়তা এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর টেকসই চাহিদা স্বর্ণের দাম বাড়াচ্ছে।
তিনি বলেন, দামের পরবর্তী লক্ষ্য হতে পারে ৩ হাজার ৫০০ ডলার। তবে ‘টেকনিক্যালি’ দাম কিছুটা বেশি বেড়ে গেছে বলেও স্বীকার করেন তিনি।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইউবিএসের বাজার বিশ্লেষক জিওভান্নি স্টাউনোভো বলেছেন, ডলারের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা এবং শেয়ারবাজারে মন্দার আশঙ্কা বিনিয়োগকারীদের স্বর্ণে টেনে এনেছে।
বিনিয়োগ ব্যাংক গোল্ডম্যান স্যাকস পূর্বাভাস দিয়েছে, চলতি বছরের শেষ নাগাদ স্বর্ণের দাম ৩ হাজার ৭শ ডলারে পৌঁছাতে পারে।
প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, স্বর্ণ এখন শুধু নিরাপদ নয়, বরং লাভজনক বিনিয়োগ হিসেবেও বিবেচিত। এই বৈশ্বিক ধাক্কা লেগেছে বাংলাদেশের বাজারেও। ২০২৫ সালের শুরু থেকেই বাংলাদেশে স্বর্ণের দাম সমন্বয় করা হয়েছে ২৪ বার। এর মধ্যে ১৮ বার দাম বেড়েছে, আর কমেছে মাত্র ৬ বার।
ডলারের মান কমছেই : ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যানকে আক্রমণ করার জেরে মার্কিন ডলারের মান গত সোমবার তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে গেছে। ট্রাম্প আগেও ফেডারেল রিজার্ভের সুদ হারের নীতি নিয়ে সমালোচনা করেছেন। সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেই সমালোচনার ধার আরও বৃদ্ধি করেন ট্রাম্প। বলেন, ‘ফেডের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলের বড় পরাজয় ঘটেছে। অবিলম্বে নীতি সুদহার কমানো হোক।’ একটি দেশের মুদ্রা প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের বড় একটি মাধ্যম নীতি সুদহার। কেন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারে অর্থপ্রবাহ কমাতে চাইলে নীতি সুদহার বাড়িয়ে থাকে। অর্থনৈতিক নীতি নিয়ে ফেডের সঙ্গে ট্রাম্পের দ্বন্দ্বের পাশাপাশি তার শুল্কনীতির কারণে সৃষ্ট অনিশ্চয়তার জেরে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন। সোমবার ইউএস ডলার ইনডেক্সের (বিশ্বের প্রধান ছয়টি মুদ্রার সাপেক্ষে ডলারের অবস্থান) মান ৯৭ দশমিক ৯২৩ এ নেমে আসে। এটি ২০২২ সালের মার্চ মাসের পর সর্বনিম্ন মান বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী এই মুদ্রাটির। এ ছাড়া সুইস ফ্রাঁর বিপরীতে ডলারের মান গত এক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে ওইদিন। সুইস ফ্রাঁর বিপরীতে ডলারের দরপতন হয়েছে ১ দশমিক ৫ শতাংশ। সেই সঙ্গে ইউরোর বিপরীতেই ডলার দুর্বল হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার প্রতি ইউরোর বিপরীতে পাওয়া গেছে ১ দশমিক ১৫ ডলার। জাপানি মুদ্রা ইয়েনের বিপরীতেও ডলারের দরপতন হয়েছে সাত মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। প্রতি ডলারের বিপরীতে এখন পাওয়া যাচ্ছে ১৪০ দশমিক ৬৬ ইয়েন। সেই সঙ্গে ব্রিটিশ মুদ্রা পাউন্ড স্টার্লিংয়ের মান সেপ্টেম্বর মাসের পর সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে। প্রতি পাউন্ডের বিনিময়ে এখন ১ দশমিক ৩৪ ডলার পাওয়া যাচ্ছে। অস্ট্রেলীয় ডলারের মানও চার মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে। ডলারের বিপরীতে নিউজিল্যান্ডের ডলারের মানও বেড়েছে।
ভোরের আকাশ/এসএইচ
তাকী মোহাম্মদ জোবায়ের
প্রকাশ : ৩ দিন আগে
আপডেট : ২০ ঘন্টা আগে
ডলারের পতনে স্বর্ণের উত্থান
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক যুদ্ধ, ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বাণিজ্যে বিশ্বজুড়ে অনিশ্চয়তার কারণে বিনিয়োগের মাধ্যম হিসেবে আকর্ষণ হারাচ্ছে মার্কিন ডলার। বিনিয়োগের বিকল্প মাধ্যম হিসেবে স্বর্ণকে বেছে নেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। এতে লাফিয়ে বাড়ছে এ ধাতুর দাম। এই ধারা অব্যাহত থাকার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে গবেষণা সংস্থাগুলোর বিশ্লেষণে। বাংলাদেশে স্বর্ণের দাম প্রতি ভরি ১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা হতে পারে।
জানা গেছে, গত সোমবার আন্তর্জাতিক স্পট মার্কেটে প্রতি আউন্স (২.৪৩ ভরি) স্বর্ণের দাম ৩ হাজার ৪১৫ দশমিক ২৪ ডলারে পৌঁছায়। টাকার অঙ্কে যা ৪ লাখ ১৪ হাজার ৯৫২ টাকা। ওইদিন কার্যদিবসের শুরুতে দাম ছিল আরও বেশি। ৩ হাজার ৪২৪ ডলার যা ইতিহাসে রেকর্ড সৃষ্টি করে। ফিউচার মার্কেটেও দামে বড় লাফ দিয়েছিল স্বর্ণ। প্রতি আউন্স বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ৪২৬ ডলারে। চলতি বছরের শেষে এই দাম ৩ হাজার ৭শ ডলার পেরোতে পারে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেছে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো। এই হিসেবে বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম বেড়ে হতে পারে ১ লাখ ৮৫ হাজার টাকার কাছাকাছি। বাংলাদেশের বাজারে বর্তমানে প্রতি ভরি স্বার্ণের দাম ১ লাখ ৭২ হাজার ৫৪৬ টাকা। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সোমবার ভরিতে ৪ হাজার ৭১৩ টাকা দাম বেড়েছে বাংলাদেশে।
জানা গেছে, বিশ্বজুড়ে চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এই দর বৃদ্ধির পেছনে মূল চালক। যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য উত্তেজনা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং ইসরায়েল-গাজা সংকট বাজারে নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করেছে। এই পরিস্থিতিতে বহু বিনিয়োগকারী ঝুঁকছেন স্বর্ণের দিকে, যেটিকে তারা দীর্ঘদিন ধরেই নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে দেখছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ডলারের মান এখন তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে নিচে। বিশ্বের প্রধান ছয়টি মুদ্রার বিনিময় হারের বিপরীতে ডলারের মান এখন একশর মধ্যে ৯৮ এর নিচে। গত তিন বছরে ডলারের মানে এত পতন হয়নি। অন্যদিকে ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার নিয়ে অনিশ্চয়তা ডলারের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে। সাধারণত ডলার দুর্বল হলে স্বর্ণের দাম বাড়ে। বর্তমানে এটাই ঘটছে বিশ্ববাজারে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতাও বাজারে প্রভাব ফেলেছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে ফেড চেয়ারম্যানের সম্পর্ক নিয়ে জল্পনা এবং তাকে অপসারণের গুঞ্জন বিনিয়োগকারীদের আরও শঙ্কিত করেছে। সব মিলিয়ে বিশ্বজুড়ে মানুষ ডলারে সঞ্চয়ের পরিবর্তে স্বর্ণে সঞ্চয়ের দিকে ঝুঁকছে। শুধু ব্যক্তি পর্যায়ের নয়, অনেক দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকও এখন বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ কিনছে।
আন্তর্জাতিক স্বর্ণ কাউন্সিলের তথ্য বলছে, ২০২৪ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো রেকর্ড হারে স্বর্ণ কিনেছে এবং ২০২৫ সালেও এই ধারা অব্যাহত আছে। বিশেষ করে চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়মিত স্বর্ণের মজুত বাড়াচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, চীন চায় ডলারনির্ভরতা কমিয়ে একটি বিকল্প বৈশ্বিক মুদ্রাভিত্তি গড়ে তুলতে। আর সে জন্য স্বর্ণকে কেন্দ্র করে নতুন ভিত্তি তৈরির চেষ্টা করছে। চীনের বলয়ে থাকা অনেক দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকও স্বর্ণে রিজার্ভ সংরক্ষণ বাড়িয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকও স্বর্ণে রিজার্ভ বাড়াচ্ছে দিন দিন। ২০২৪ সালের হিসাবে, বাংলাদেশের রিজার্ভে ১৪ দশমিক ২৬ টন স্বর্ণ রয়েছে (১ টনে ৭৭,৮০৩ ভরি)।
ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের তথ্য অনুযায়ী, রিজার্ভ হিসেবে স্বর্ণ মজুতে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে ৬৬তম। সব মিলিয়ে স্বর্ণের বাজার এখন রমরমা। বিশ্বজুড়ে ব্যাপক চাহিদা বাড়ায় মূল্যবান এই ধাতবটির দরবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।
সিঙ্গাপুরভিত্তিক বাজার বিশ্লেষক ইয়াপ জুন রং এক প্রতিবেদনে লিখেছেন, বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যিক অনিশ্চয়তা এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর টেকসই চাহিদা স্বর্ণের দাম বাড়াচ্ছে।
তিনি বলেন, দামের পরবর্তী লক্ষ্য হতে পারে ৩ হাজার ৫০০ ডলার। তবে ‘টেকনিক্যালি’ দাম কিছুটা বেশি বেড়ে গেছে বলেও স্বীকার করেন তিনি।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইউবিএসের বাজার বিশ্লেষক জিওভান্নি স্টাউনোভো বলেছেন, ডলারের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা এবং শেয়ারবাজারে মন্দার আশঙ্কা বিনিয়োগকারীদের স্বর্ণে টেনে এনেছে।
বিনিয়োগ ব্যাংক গোল্ডম্যান স্যাকস পূর্বাভাস দিয়েছে, চলতি বছরের শেষ নাগাদ স্বর্ণের দাম ৩ হাজার ৭শ ডলারে পৌঁছাতে পারে।
প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, স্বর্ণ এখন শুধু নিরাপদ নয়, বরং লাভজনক বিনিয়োগ হিসেবেও বিবেচিত। এই বৈশ্বিক ধাক্কা লেগেছে বাংলাদেশের বাজারেও। ২০২৫ সালের শুরু থেকেই বাংলাদেশে স্বর্ণের দাম সমন্বয় করা হয়েছে ২৪ বার। এর মধ্যে ১৮ বার দাম বেড়েছে, আর কমেছে মাত্র ৬ বার।
ডলারের মান কমছেই : ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যানকে আক্রমণ করার জেরে মার্কিন ডলারের মান গত সোমবার তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে গেছে। ট্রাম্প আগেও ফেডারেল রিজার্ভের সুদ হারের নীতি নিয়ে সমালোচনা করেছেন। সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেই সমালোচনার ধার আরও বৃদ্ধি করেন ট্রাম্প। বলেন, ‘ফেডের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলের বড় পরাজয় ঘটেছে। অবিলম্বে নীতি সুদহার কমানো হোক।’ একটি দেশের মুদ্রা প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের বড় একটি মাধ্যম নীতি সুদহার। কেন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারে অর্থপ্রবাহ কমাতে চাইলে নীতি সুদহার বাড়িয়ে থাকে। অর্থনৈতিক নীতি নিয়ে ফেডের সঙ্গে ট্রাম্পের দ্বন্দ্বের পাশাপাশি তার শুল্কনীতির কারণে সৃষ্ট অনিশ্চয়তার জেরে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন। সোমবার ইউএস ডলার ইনডেক্সের (বিশ্বের প্রধান ছয়টি মুদ্রার সাপেক্ষে ডলারের অবস্থান) মান ৯৭ দশমিক ৯২৩ এ নেমে আসে। এটি ২০২২ সালের মার্চ মাসের পর সর্বনিম্ন মান বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী এই মুদ্রাটির। এ ছাড়া সুইস ফ্রাঁর বিপরীতে ডলারের মান গত এক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে ওইদিন। সুইস ফ্রাঁর বিপরীতে ডলারের দরপতন হয়েছে ১ দশমিক ৫ শতাংশ। সেই সঙ্গে ইউরোর বিপরীতেই ডলার দুর্বল হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার প্রতি ইউরোর বিপরীতে পাওয়া গেছে ১ দশমিক ১৫ ডলার। জাপানি মুদ্রা ইয়েনের বিপরীতেও ডলারের দরপতন হয়েছে সাত মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। প্রতি ডলারের বিপরীতে এখন পাওয়া যাচ্ছে ১৪০ দশমিক ৬৬ ইয়েন। সেই সঙ্গে ব্রিটিশ মুদ্রা পাউন্ড স্টার্লিংয়ের মান সেপ্টেম্বর মাসের পর সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে। প্রতি পাউন্ডের বিনিময়ে এখন ১ দশমিক ৩৪ ডলার পাওয়া যাচ্ছে। অস্ট্রেলীয় ডলারের মানও চার মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে। ডলারের বিপরীতে নিউজিল্যান্ডের ডলারের মানও বেড়েছে।
ভোরের আকাশ/এসএইচ