দেশে প্রথম যাত্রা শুরু হলো স্টুডেন্টস হেলথ কার্ড
দেশ প্রথম যাত্রা শুরু হলো স্টুডেন্টস হেলথ কার্ড কার্যক্রমের চট্টগ্রামে । প্রাথমিক পর্যায়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) পরিচালিত ৫টি বিদ্যালয়ে এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পরবর্তীতে চসিকের অন্যান্য স্কুলে এই কার্যক্রম চাল করা হবে।
বুধবার (২১ মে) সকালে নগরের কাপাসগোলা সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে এ কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।
উদ্বোধনী বক্তৃতায় মেয়র বলেন, শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা শুধু অভিভাবকের দায়িত্ব নয়, প্রতিষ্ঠান এবং সিটি করপোরেশনকেও সে দায়িত্ব নিতে হবে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে শুধু স্বাস্থ্য নয়, শিক্ষার্থীদের মধ্যে পরিচ্ছন্নতা, স্বাস্থ্যবিধি এবং দায়িত্ববোধের মতো মূল্যবোধ গড়ে তোলা সম্ভব হবে। ‘ক্লিন, গ্রিন ও হেলদি চট্টগ্রাম’ বাস্তবায়নে এ কর্মসূচি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হবে।
মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, হেলথ কার্ডের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, টিকাদান এবং চিকিৎসাসংক্রান্ত তথ্য সংরক্ষণ করা যাবে। কার্ডে শিক্ষার্থীর নাম, জন্মতারিখ, বিদ্যালয়ের নাম, শ্রেণি, অভিভাবকের নাম ও যোগাযোগের তথ্য সংরক্ষণের সুযোগ থাকবে। ৫ থেকে ১৭ বছর বয়স পর্যন্ত সর্বমোট ১৪ বার স্বাস্থ্য পরীক্ষার রেকর্ড রাখা যাবে। প্রতি পরীক্ষায় ওজন, উচ্চতা, চোখ-কান, দাঁত, ত্বক-চুলের অবস্থা, রক্তচাপ ও হিমোগ্লোবিনসহ প্রয়োজনীয় তথ্য অন্তর্ভুক্ত থাকবে। কার্ডে একটি পৃথক অংশে টিকাদান সংক্রান্ত তথ্য সংরক্ষণের ব্যবস্থাও থাকবে। এতে বিসিজি, পোলিও, হেপাটাইটিস-বি, এমআর, পেন্টাভ্যালেন্ট, টাইফয়েড, ইনফ্লুয়েঞ্জা ও র্যাবিসসহ গুরুত্বপূর্ণ টিকার রেকর্ড রাখা যাবে। এর মাধ্যমে একটি সুস্থ ও সচেতন প্রজন্ম গড়ে তোলা সম্ভব হবে। চট্টগ্রামের এই মডেল ভবিষ্যতে দেশের অন্যান্য সিটি করপোরেশন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও অনুসরণীয় হবে। এই প্রকল্পের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টাকেও অবহিত করা হয়েছে এবং তিনি এই উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন।
শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও চিকিৎসকদের মতে, এটি চসিকের এক অনন্য উদ্যোগ।
চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মুখ্য আলোচক ছিলেন শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী। সম্মানিত আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ইলিয়াছ উদ্দিন আহম্মদ। স্বাগত বক্তব্য দেন চসিকের প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা ড. কিসিঞ্জার চাকমা।
বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. শরীফ উদ্দিন। আরও উপস্থিত ছিলেন চসিক সচিব মো. আশরাফুল আমিন, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. ইমাম হোসেন (রানা), কাপাসগোলা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রোমা বড়ুয়া এবং ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নুর বানু চৌধুরী।
হেলথ কার্ড চালু করা পাঁচটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলো-পাথরঘাটা সিটি কর্পোরেশন বালক উচ্চ বিদ্যালয়, গুল এজার বেগম সিটি কর্পোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়, ইমারাতুন্নেসা কিন্ডারগার্টেন, পাঁচলাইশ কিন্ডারগার্টেন এবং কাপাসগোলা সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের।
ভোরের আকাশ/এসআই
সংশ্লিষ্ট
নারীদের একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা হলো জরায়ু ফাইব্রয়েড, যা চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় “লিওমায়োমা” নামে পরিচিত। জরায়ুর দেয়ালে গঠিত এই অগানিক টিউমার সাধারণত মাংসপেশি ও তন্তুযুক্ত টিস্যু দিয়ে তৈরি হয়। গবেষণা বলছে, ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ নারী জীবনের কোনো এক পর্যায়ে এই সমস্যায় ভোগেন, যদিও সবার ক্ষেত্রে উপসর্গ দেখা দেয় না। তবে খাদ্যাভ্যাসে সামান্য পরিবর্তন আনলে এই রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।সবুজ শাকসবজি ও ফলই হতে পারে প্রথম অস্ত্র:জরায়ু ফাইব্রয়েডের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ফল ও সবুজ শাকসবজি রাখতে হবে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায়। এসব খাবারে থাকা ফাইবার হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং শরীরের প্রদাহ কমায়। পালং শাক, গাজর, মুলা, টমেটো, বেল মরিচ ও ব্রুকলি—এই সবজিগুলো বিশেষভাবে উপকারী। তাজা ফল ও শাকসবজি শরীরে অতিরিক্ত ইস্ট্রোজেনের মাত্রা কমিয়ে ফাইব্রয়েডের বৃদ্ধি রোধে ভূমিকা রাখে।লাল মাংস নয়, বেছে নিন সাদা মাংস:গরু ও মহিষের মাংস ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা বাড়িয়ে ফাইব্রয়েড বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে পারে। তাই এই রোগে আক্রান্ত নারীদের জন্য হাঁস-মুরগি কিংবা সামুদ্রিক মাছের মতো সাদা মাংস খাওয়া বেশি উপকারী। এতে পেটব্যথা বা অস্বাভাবিক রক্তপাতের ঝুঁকি কমে।ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ মাছ রাখুন খাদ্যতালিকায়:ফাইব্রয়েড আক্রান্তদের জন্য ফ্যাটি ফিশ যেমন স্যামন, টুনা, সার্ডিন খাওয়া ভালো। এসব মাছে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড প্রদাহ কমাতে এবং ইস্ট্রোজেনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক।পুরো শস্য এবং বাদামি খাবার:সাদা চাল বা আটা নয়, বরং বাদামি চাল, গম, ওটস ও বার্লির মতো গোটা শস্যভিত্তিক খাবার ফাইব্রয়েড প্রতিরোধে কার্যকর। এগুলোতে ফাইবার, প্রোটিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা শরীর থেকে অতিরিক্ত ইস্ট্রোজেন বের করে দিতে সহায়তা করে।গ্রিন টি: ছোট একটি কাপ, বড় উপকার:প্রতিদিন এক থেকে দুই কাপ গ্রিন টি ফাইব্রয়েডের লক্ষণ কমাতে পারে। এতে থাকা এপিগ্যালোকাটেচিন গ্যালেট নামক উপাদান প্রদাহ কমায় এবং টিউমার সঙ্কুচিত করতে সাহায্য করে। তাছাড়া গ্রিন টি অতিরিক্ত রক্তপাতও নিয়ন্ত্রণে রাখে।আপেল সাইডার ভিনেগারেও মিলতে পারে উপকার:শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে এবং জরায়ু সুস্থ রাখতে কার্যকর হতে পারে আপেল সাইডার ভিনেগার। সরাসরি খেতে সমস্যা হলে সালাদের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে এটি।পরিশেষে:জরায়ু ফাইব্রয়েড চিকিৎসার পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলাই হতে পারে টেকসই সমাধান। প্রাকৃতিক ও সুষম খাবারের মাধ্যমে এই রোগের জটিলতা যেমন কমানো যায়, তেমনি ভবিষ্যতে নতুন ফাইব্রয়েড গঠনের ঝুঁকিও হ্রাস পায়। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাদ্য তালিকায় পরিবর্তন আনাই হতে পারে প্রথম পদক্ষেপ।ভোরের আকাশ।।হ.র
করোনা ও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু ও করোনায় একজন করে মারা গেছেন। আর সময়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৪৯ জন ডেঙ্গুরোগী এবং শনাক্ত হয়েছেন ২৬ জন করোনা রোগী। পর্যান্ত শনাক্তের ব্যবস্থা থাকলে করোনা রোগীর সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, এ বছর ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া ৩০ জনের মধ্যে ১৬ জন পুরুষ ও ১৪ জন নারী। তাদের মধ্যে বরিশাল বিভাগের ৭ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৫ জন, চট্টগ্রাম বিভাগের ৩ জন, খুলনা বিভাগের ২ জন, আর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ও ময়মনসিংহ বিভাগে একজন করে মৃত্যু হয়েছে। ৩০ জনের মধ্যে জানুয়ারি মাসে মৃত্যু হয়েছে ১০ জনের, ফেব্রুয়ারি আর মে মাসে ৩ জন করে, মার্চে কারও মৃত্যু হয়নি, এপ্রিলে ৭ জনের এবং চলতি মাসে এখনও পর্যন্ত ৭ জন মারা গেছেন।স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত ২৪৯ জনসহ চলতি বছর এখনও পর্যন্ত সরকারি হিসাবে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৫ হাজার ৯৮৮ জন।গত ২৪ ঘণ্টায় যে ২৪৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, তাদের মধ্যে বরিশাল বিভাগের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৩৪ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৩৯ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি এলাকার হাসপাতালে ৩৫ জন, ঢাকা বিভাগে ৯ জন, ঢাকা উত্তর সিটি এলাকা ও খুলনা বিভাগে ৮ জন করে, ময়মনসিংহ বিভাগে ৭ জন, রাজশাহী বিভাগে ৫ জন, রংপুরে ৩ জন এবং সিলেট বিভাগের হাসপাতালে ১ জন ভর্তি হয়েছেন।চলতি বছরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৫ হাজার ৯৮৮ জনের মধ্যে জানুয়ারি মাসে ভর্তি হয়েছেন ১১৬১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪ জন, মার্চে ৩৩৬ জন, এপ্রিলে ৭০১ জন, মে মাসে ১৭৭৩ জন এবং চলতি মাসে এখনও পর্যন্ত ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১৬৪৩ জন। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন ৫ হাজার ২৯৯ জন।এদিকে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময় আরও ২৬ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এ পর্যন্ত দেশে করোনায় মোট আক্রান্ত হয়েছেন ২০ লাখ ৫১ হাজার ৮৩৩ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় চারজন করোনা রোগী সুস্থ হয়েছেন। এ যাবত সুস্থ হয়েছেন ২০ লাখ ১৯ হাজার ৪১০ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ২৯১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ যাবত এক কোটি ৫৭ লাখ ২৭ হাজার ২২৪ জনের করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ৮ দশমিক ৯৩ শতাংশ। এই যাবত শনাক্তের হার ১৩ দশমিক শূন্য পাঁচ শতাংশ। সুস্থতার হার ৯৮ দশমিক ৪২ শতাংশ ও মৃত্যুর হার এক দশমিক ৪৪ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত একজন পুরুষ। তার বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে। তিনি ঢাকা বিভাগের সরকারি হাসপাতালে হাসপাতালে মারা গেছেন। ৫ জুন দেশে প্রায় এক বছরের অধিক সময় পর করোনায় একজনের মৃত্যু হয়েছিল।এর আগে ২০২৪ সালের ২৬ জুলাই করোনা আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছিল। এরপর থেকে করোনা আক্রান্ত হলেও দীর্ঘ সময়ে আর কেউ মারা যায়নি। ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম তিনজনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রথম একজনের মৃত্যু হয়।করোনা প্রতিরোধে বিশেষ ব্যবস্থা : অধ্যাপক সায়েদুর রহমানকরোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করছে সরকার। পজিটিভ রোগীদের স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে আগামী এক মাস ফলোআপ করা হবে। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে করোনাভাইরাসের নতুন ভেরিয়েন্টগুলো সম্পর্কে অবহিত হওয়া যাবে। রোববার স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদায়) অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান এ তথ্য জানান।তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে এখনও আতঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু নেই। তবে সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে আগাম সাবধানতার কোনো বিকল্প নেই। বিশেষ করে যারা বয়স্ক মানুষ ও বিভিন্ন অসংক্রামক রোগে ভুগছেন তাদের বেশি সাবধানতা অবলম্বনে পরামর্শ দেন তিনি।রাজধানীসহ সারাদেশে বর্তমানে কত শতাংশ রোগী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক সায়েদুর রহমান বলেন, এখন পর্যন্ত খুবই কম সংখ্যক ব্যক্তি নমুনা পরীক্ষার জন্য আসছেন। এই সংখ্যা শতাধিকের বেশি হবে না। এত অল্পসংখ্যক ব্যক্তির নমুনা দিয়ে শতাংশের হিসেব করলে সঠিক চিত্র পাওয়া যাবে না।তিনি বলেন, স্বল্প সংখ্যক নমুনা হিসেবে আক্রান্ত রোগীর হার শতকরা ৮ থেকে ১২ শতাংশের মধ্যে থাকছে। শুধু একদিন ১৩ শতাংশের বেশি আক্রান্ত ছিল। তবে এই শতাংশের হিসাব দিয়ে সঠিক চিত্র পাওয়া যাবে না বলে তিনি পুনরায় উল্লেখ করেন।তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগের হিসাব অনুযায়ী সত্যিকার অর্থে করোনায় আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যু সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তিনিসহ আরও যে কয়েকজন মারা গেছেন তাদের সবারই বয়স ৬০ বছরের বেশি। করোনাভাইরাস সংক্রমণের ক্ষেত্রে আগের মতোই বয়স্ক ব্যক্তিরা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বলে তিনি জানান।ভোরের আকাশ/এসএইচ
অবশেষে চালু হলো রাজধানীর জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সব সেবা। টানা ১৭ দিন পর এ অচলাবস্থার অবসান হলো। গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে হাসপাতালটির বহির্বিভাগে চিকিৎসাসেবার টিকিট দেওয়া শুরু হয়েছে। হাসপাতালের বহির্বিভাগের দুটি কাউন্টার থেকে রোগীদের দেড় হাজারের বেশি টিকিট দেওয়া হয়েছে। সকাল থেকেই চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফদের কর্মচঞ্চলে মুখর হয়ে ওঠে হাসপাতাল ভবন। পাশাপাশি রোগী ও তাদের স্বজনদের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো। বহির্বিভাগ, ওয়ার্ড এবং জরুরি বিভাগে চিকিৎসকদের সেবা দিতে দেখা গেছে।গতকাল শনিবার সকালে হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, বহির্বিভাগ, জরুরি বিভাগসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে এক হাজারের বেশি রোগী চিকিৎসা নিতে এসেছেন। টিকেট কেটে চিকিৎসকের অপেক্ষা আছেন রাজধানীর মিরপুরের সেনপাড়াবাসী মো. লিয়াকত আলী। তিনি ভোরের আকাশকে বলেন, হাসপাতাল চালু হওয়ায় খুব ভালো লাগছে। বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে অনেক খরচ। আমাদের মতো দরিদ্র মানুষের পক্ষে ওই জায়গায় চিকিৎসা নেয়া সম্ভব হয়ে উঠে না। কিছুটা দুর্ভোগ থাকলেও সরকারি হাসপাতালেই নামমাত্র খরচে চিকিৎসা পাওয়া যায় সন্তোষ প্রকাশ করেন লিয়াকত আলী।ফলো-আপ করাতে এসেছেন সাজেদা বেগম। ফার্মগেটের পূর্ব তেজতুরি বাজার এলাকায় তার বাসা। তিনি ভোরের আকাশকে বলেন, দেড় মাস আগে চোখের ছানি অপারেশন করিয়েছি। ফলো-আপ করানোর সময় চলে গেছে। হাসপাতাল বন্ধ থাকায় অনেক দিন ফিরে গেছি। সরকারি হাসপাতাল এতদিন বন্ধ রাখা উচিত নয় বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সাজেদা বেগম।হাসপাতালের ভেতরে গিয়ে কথা হয় রোগী মো. আসলামের সঙ্গে। দাদি আজমা খাতুনের চোখের চিকিৎসার জন্য তিনি কেরানীগঞ্জ থেকে এসেছেন। চক্ষুবিজ্ঞান হাসপাতালে আসার পর চিকিৎসক তাদের ভর্তি করান। মো. আসলাম জানান, ‘দাদির চোখের অস্ত্রোপচার করাতে হবে। মাঝে একবার এসে ফিরে যেতে হয়েছে। আজ সব সেবা চালুর খবর পেয়ে আবার আসি। সব কাগজ জমা দিয়েছি। আসনের ব্যবস্থা হলে নার্স জানাবে বলল, তাই অপেক্ষা করছি।’গাজীপুর থেকে মায়ের চিকিৎসা করাতে আসেন সাইফুল ইসলাম। আজ চক্ষু বিজ্ঞান হাসপাতালে আসার পর প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে চিকিৎসক জানিয়েছেন, তার মায়ের চোখে রক্ত জমাট বেঁধেছে। চোখের পরীক্ষা করাতে তারা আরওপি স্ক্রিনিং রুমের সামনে অপেক্ষা করছিলেন।এর আগে গত ২৮ মে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের সঙ্গে হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্স-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংঘর্ষ ও মারামারি হয়। এর জেরে দেশের সবচেয়ে বড় বিশেষায়িত চক্ষু হাসপাতালের সব ধরনের চিকিৎসাসেবা বন্ধ হয়ে যায়। ভর্তি রোগীদের বেশির ভাগ হাসপাতাল ছেড়ে চলে যান।পরে ৪ জুন হাসপাতালটির জরুরি বিভাগে সীমিত পরিসরে চিকিৎসাসেবা (জরুরিসেবা) চালু হয়। আর গত বৃহস্পতিবার সীমিত পরিসরে বহির্বিভাগের চিকিৎসাসেবা চালু হয়। হাসপাতালের ভেতরে কর্মরত চিকিৎসক ও নার্সদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রোগীদের প্রয়োজন অনুযায়ী সেবা দেওয়া হচ্ছে। যাদের পরীক্ষার প্রয়োজন তাদের পরীক্ষা করানো হচ্ছে।হাসপাতালের ফটকে কর্মরত আনসার ও পুলিশ সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সকাল থেকে অন্তত পাঁচজন জুলাই আহত রোগী হাসপাতালে প্রবেশ করতে চেয়েছেন। তারা ঈদের ছুটিতে বাড়িতে গিয়েছিলেন। কিন্তু ফটকে দায়িত্বরত নিরাপত্তাকর্মীরা পরিচয় পেয়ে তাদের ভেতরে ঢুকতে দেননি।মোক্তারুল ইসলাম নামের এক আনসার সদস্য বলেন, ‘আমাদের ওপর নির্দেশনা রয়েছে। জুলাই আহতদের কেউ এলে তাদের আর প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। তাই যারা আসছেন, তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’এ বিষয়ে হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জানে আলম বলেন, ‘সরকারি আদেশ হলো, এই হাসপাতালে জুলাই আহত আর কোনো রোগীর ভর্তি নেওয়া হবে না। জুলাই আহতদের চারজন রোগী এখনো ভর্তি আছেন। যদিও সরকারের গঠিত কমিটি তাদের ছাড়পত্র দেওয়ার কথা বলেছে। আর একজন ভর্তি ছাড়া হাসপাতালে অবস্থান করছেন। আমরা সবাইকে ছাড়পত্র দিয়ে দেওয়ার কাজ করছি।’হাসপাতালে ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, জুলাই আহতদের পাঁচজন এখনো অবস্থান করছেন। তবে ভর্তি থাকা চারজন ছাড়া বাকি একজনের খাবার দিচ্ছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ও আহতদের চিকিৎসা সমন্বয়ক ডা. যাকিয়া সুলতানা নীলা বলেন, ‘আজ (গতকাল) সকাল থেকেই সব বিভাগে চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু করেছি। চিকিৎসক ও নার্সরাও কাজ করছেন আগের মতোই। এখন সবকিছু স্বাভাবিক। আশা করছি, আর কোনো বিভ্রান্তি বা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটবে না। রোগী ও চিকিৎসকদের মধ্যে আবার সেই আস্থা ফিরিয়ে আনতে আমরা কাজ করছি।’ভোরের আকাশ/এসএইচ
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় করোনা শনাক্ত হয়েছে আরও ১৫ জনের শরীরে।শুক্রবার (১৩ জুন) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় মোট ১৭৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। সেই হিসেবে শনাক্তের হার আট দশমিক ৬২ শতাংশ। একই সময়ে সুস্থ হয়েছেন তিনজন।স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া দুইজনই নারী। তাদের মধ্যে একজনের বয়স ২১-৩০ ও অপরজনের বয়স ৭১-৮০ বছরের মধ্যে। দুইজনের একজন ঢাকা বিভাগ, অপরজন চট্টগ্রাম বিভাগের। একজন সরকারি হাসপাতালে ও অপরজন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে ২৯ হাজার ৫০২ জন মারা গেছেন। এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ২০ লাখ ৫১ হাজার ৮০০ জন।ভোরের আকাশ/আজাসা