আরও ১০ জনের করোনা শনাক্ত
ভোরের আকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১২ জুন ২০২৫ ১০:০৪ এএম
ফাইল ছবি
অবশেষে করোনা মোকাবিলায় নড়েচড়ে বসেছে দেশের স্বাস্থ্য বিভাগ। প্রতিরোধে ১১ দফার নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। হাসপাতালগুলোতে ফের করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থাগ্রহণ করতে যাচ্ছে সরকার। দেশে বর্তমানে করোনা ভাইরাস শনাক্তের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। রাজধানীর কয়েকটি হাসপাতালে ব্যবস্থা থাকলেও রয়েছে তীব্র কীট সংকট। এমন পরিস্থিতিতেও গতকাল বুধবার করোনা শনাক্ত হয়েছে ১০ জনের।
গতকাল বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ১০ জনের শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে। ১০৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করে এই ১০ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। তবে ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত কারোর মৃত্যু হয়নি। এ নিয়ে মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৫১ হাজার ৭৭০ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তদের প্রত্যেকেই ঢাকা মহানগরী এলাকার বাসিন্দা। এর আগে গত মঙ্গলবার ১০১ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১৩ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস পাওয়া যায়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন দুজন। এর ফলে এ সংখ্যা ২০ লাখ ১৯ হাজার ৩৮০ জনে দাঁড়িয়েছে। মহামারির শুরু থেকে এখন পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ। আর গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ০৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
অধিদপ্তরের ১১ দফা নির্দেশনা : বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে গেছে। দেশেও করোনাভাইরাসের নতুন একটি উপধরনে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা বাড়ছে। এটি ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধে ১১ দফা নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গতকাল বুধবার দুপুরে বর্তমানে দেশের করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর ১১ দফা নির্দেশনা পড়ে শোনান।
লিখিত বক্তব্যে মো. আবু জাফর বলেন, ভাইরাসজনিত সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। করোনাভাইরাসের কয়েকটি নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট এরই মধ্যে চিহ্নিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের বিস্তার প্রতিরোধে দেশের সব স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরের আইএইচআর ডেস্কগুলোয় নজরদারি ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়গুলো জোরদার করার বিষয়ে এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেগুলো হলো- জনসমাগম যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন এবং উপস্থিত হতেই হলে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করুন। শ্বাসতন্ত্রের রোগগুলো থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য মাস্ক ব্যবহার করুন। হাঁচি বা কাশির সময় বাহু বা টিস্যু দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে রাখুন। ব্যবহৃত টিস্যুটি অবিলম্বে ঢাকনাযুক্ত ময়লা ফেলার ঝুড়িতে ফেলুন। ঘন ঘন সাবান ও পানি কিংবা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলুন (অন্তত ২০ সেকেন্ড)। অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক ও মুখ ধরবেন না। আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন এবং কমপক্ষে ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখুন।
সন্দেহজনক রোগীদের ক্ষেত্রে করণীয়
জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হলে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত বাড়িতে থাকুন। রোগীর নাক–মুখ ঢাকার জন্য মাস্ক ব্যবহার করতে বলুন। রোগীর সেবাদানকারীরাও সতর্কতা হিসেবে মাস্ক ব্যবহার করুন। প্রয়োজন হলে কাছের হাসপাতালে অথবা আইইডিসিআর (০১৪০১-১৯৬২৯৩) অথবা স্বাস্থ্য বাতায়ন (১৬২৬৩)-এর নম্বরে যোগাযোগ করুন।
হাসপাতালগুলোতে ফের শুরু হচ্ছে করোনা পরীক্ষা : দেশে আবারো উদ্বেগ বাড়াচ্ছে করোনা ভাইরাস। গত মাসে কভিড সংক্রমণের হার ১৭ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ এবং দীর্ঘ বিরতির পর গত ৫ জুন করোনায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। ফলে আগামী ১০ দিনের মধ্যে দেশের প্রধান হাসপাতালগুলোতে করোনা পরীক্ষার সুবিধা বাড়াতে কাজ করছে সরকার।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক হালিমুর রশীদ বলেন, যেসব হাসপাতালে আরটি-পিসিআর ল্যাব রয়েছে, করোনা পরীক্ষা পুনরায় চালু করার প্রস্তুতি নিতে তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, স্থানীয় কোম্পানিগুলো থেকে করোনা পরীক্ষার কীট সংগ্রহ করা হচ্ছে। পাশাপাশি বিদেশ থেকে টেস্ট কিট আনতে সেন্ট্রাল মেডিক্যাল স্টোরস ডিপোকে (সিএমএসডি) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী ১০ দিনের মধ্যে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা পুনরায় চালু করা যাবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
তিনি বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে শুধু আরটি-পিসিআর সুবিধাসম্পন্ন মেডিকেল কলেজ ও জেলা হাসপাতালে করোনা পরীক্ষা শুরু হবে। যেসব রোগীর কোভিড-১৯-এর উপসর্গ থাকবে বা যাদের ডাক্তাররা পরীক্ষার পরামর্শ দেবেন, শুধুমাত্র তারাই পরীক্ষা করাতে পারবেন।
যেসব জায়গায় পরীক্ষা করা যাবে : দেশে করোনা সংক্রমণ আবারও বাড়তে থাকায় হাসপাতালগুলোতে সীমিত পরিসরে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। প্রাথমিকভাবে যেসব মেডিকেল কলেজ ও জেলা হাসপাতালে আরটি-পিসিআর ল্যাব রয়েছে সেখানেই এ পরীক্ষা শুরু হবে বলে জানানো হয়েছে। করোনা সংক্রমণ বাড়ায় সরকারি হাসপাতালগুলোতে সীমিত পরিসরে পরীক্ষার ব্যবস্থা চালুর সিদ্ধান্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের।
গতকাল বুধবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক হালিমুর রশীদ গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানান। প্রাথমিকভাবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগীয় শহরের হাসপাতালগুলোতে পরীক্ষা চালু হবে। যেসব হাসপাতালে আরটি-পিসিআর ল্যাব রয়েছে, শুধু সেখানেই শুরুতে এ সুবিধা মিলবে বলেও জানানো হয়।
ভোরের আকাশ/এসএইচ