ভোরের আকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৩ জুন ২০২৫ ০৮:৫৪ পিএম
নির্বাচনী মাঠ সমতল থাকলে নির্বাচনে প্রস্তুত জামায়াত: শফিকুর রহমান
জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, নির্বাচনের জন্যে ভোটের মাঠ সমতল থাকলে যেকোনো সময় নির্বাচনের জন্যে প্রস্তুত তার দল। মঙ্গলবার (৩ জুন) রাজধানীর একটি হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
বিএনপির পক্ষ থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে থেকে নির্বাচনের জোর দাবি জানানো হচ্ছে, ডিসেম্বরে নির্বাচন হলে জামায়াত প্রস্তুত কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, না, ডিসেম্বর কেন, আজও যদি দেখি যে সমতল মাঠ তৈরি হয়ে গেছে, একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে জাতি প্রস্তুত, সব অঙ্গ প্রস্তুত, তাহলে তো আমরাও নির্বাচনে যাবো। আমাদের নির্বাচনে যেতে কোনো সমস্যা নেই। এই বিষয়গুলো পরিষ্কার না করে, ডিসেম্বর কিংবা এপ্রিলে বলে কোনো লাভ হবে না।
নিবন্ধন কেড়ে নেওয়া ও এর সঙ্গে যারা সংশ্লিষ্ট ছিল তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবেন কি না- জানতে চাইলে জামায়াত আমির বলেন, তাদের বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার এখন কোনো পরিকল্পনা নেই। এ বিষয়ে আমরা চিন্তা করবো।
নির্বাচন কমিশনের ওপর আপনাদের আস্থা আছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা নির্বাচন কমিশনকে সময় দিতে চাই। আমরা তাদের পারফরম্যান্স আরও দেখতে চাই। তারা কর্ম দিয়েই নিজেদের অবস্থার পরিষ্কার করবে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের ইউনিয়ন কমিশনার ছাড়া আর কোনো পর্যায়ে কার্যক্রম নেই। এ কারণে জনগণ কষ্টে আছে। তাই স্থানীয় নির্বাচন আগে হওয়া দরকার বলে মনে করি। এর মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন তাদের সামর্থ্য প্রমাণ দেবে।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ফ্যাসিজমকে পুরোপুরি বিদায়ের লক্ষ্যে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দরকার। যার মধ্য দিয়ে একটা ন্যায্য সরকার গঠিত হবে। যারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে। কিন্তু নির্বাচনটা কীভাবে হবে? এই নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামীর রয়েছে ঐতিহাসিক অবদান।
জামায়াত আমির বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে গ্রহণযোগ্য ফর্মুলার জন্য জামায়াতে ইসলামীর অবদানকে জাতি এখনো স্মরণ করে। বিশেষ করে এই মুহূর্তে। এই জাতি স্বাধীনতার পর যখন ভোটের অধিকার প্রয়োগ করতে পারছিল না, একটা স্লোগান ছিল, হোন্ডা, গুণ্ডা, ঠাণ্ডা। তখন জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন আমির ডাকসুর সাবেক জিএস অধ্যাপক গোলাম আজম প্রথম জাতির সামনে কেয়ারটেকার সরকারের ফর্মুলা দিয়েছিলেন। হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদের পতনের পর যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল কার্যত সেটা ছিল তার দেওয়া ফর্মুলায় এবং বলা হয়, সেটাই ইতিহাসের সবচেয়ে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। এরপর আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৯৬ সালে বিশেষ সংসদ অধিবেশনের মধ্য দিয়ে। এর ভিত্তিতে ১৯৯৬, ২০০১ ও কিছুটা ব্যতিক্রম হলেও ২০০৮ সালে একই ফর্মুলায় জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলো, আদালতকে ব্যবহার করে কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা সংবিধান থেকে খতম করে দেওয়া হলো। যদিও আদালতের ওই রায়ে যে রিকমেন্ডেশন ছিল তাও আওয়ামী লীগ মানেনি।
পরবর্তীতে কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা থাকবে কি থাকবে না সেজন্য এমিকাস কিউরিদের মতামত চাওয়া হয়েছিল। অধিকাংশ এমিকাস কিউরি মতামত দিয়েছিলেন কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা থাকা উচিত, বাঞ্ছনীয়। আদালত তার তোয়াক্কা করেনি। বরং সরকারের অসৎ ইচ্ছে করে পূরণ করেছে। উদ্দেশ্য একটাই কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত করে আওয়ামী লীগকে চিরতরে বাংলাদেশের ক্ষমতার মালিক বানানো। যাতে জনগণ তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে না পারে। ভোটের মাঠে যেন সমতল মাঠ তৈরি না হয়। কার্যত তারই দুঃখজনক পরিণতি গত ১৫ বছর দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছে।
ভোরের আকাশ/এসএইচ