ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০২ অক্টোবর ২০২৫ ০৬:১৪ পিএম
ছবি: ভোরের আকাশ
গাজীপুরের শ্রীপুরে দেড় শতাধিক অবৈধ করাতকলে দিনরাত চলছে কাঠ চেরাই। বৈধ কাঠ চেরাইয়ে ফাঁকে ফাঁকে চলছে বনবিভাগের শাল,গজারী ও আকাশমনি কাঠ চেরাই।করাতকল গুলো বনভূমির খুব কাছাকাছি হওয়ায় সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে বনখেকুরা।প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় চলছে এসব অবৈধ করাতকল। যে কারনে বনবিভাগ অনেকটাই নিরব দর্শক।
উপজেলার দু’টি রেঞ্জের অধিন চলছে ১৮১টি করাতকল। ১৯টির লাইসেন্স থাকলেও অবৈধ ভাবে চলছে ১৬২টি। সম্প্রতি উচ্ছেদ করা হয়েছে তিনটি। নানা কারণে বন্ধ রয়েছে পাঁচটি। মামলা রয়েছে অর্ধ শতাধিক করাত কলের বিরুদ্ধে । অবৈধ করাতকল গুলো স্থাপনে মানা হয়নি কোন সরকারি বিধি । সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বছরের পর বছর অবৈধ ভাবে চলছে করাতকল গুলো।
প্রশাসনের নাকের ডগায় অবৈধ ভাবে চলা করাতকল গুলোর বিরুদ্ধে নেয়া হয়না কার্যকরি ব্যবস্থা। নির্বিঞ্জে চলা করাতকল গুলো ধ্বংস করছে সরকারি বেসরকারি গাছ পালা। বিনষ্ট করছে প্রাকৃতিক পরিবেশ। রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
সরেজমিনে খোঁজনিয়ে বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জানাযায়, উপজেলায় বন বিভাগের দু’টি রেঞ্জ অফিস রয়েছে। শ্রীপুর রেঞ্জের অধিন রয়েছে শ্রীপুর পৌরসভা সহ ছয়টি ইউনিয়ন ও কাপাসিয়া উপজেলার রায়েদ ও কড়িহাতা ইউনিয়ন এলাকা। অপর রাজেন্দ্রপুর রেঞ্জের অধিন রয়েছে উপজেলার রাজাবাড়ি ও প্রহলাদপুর ইউনিয়ন।
শ্রীপুর রেঞ্জের অধিন সদর বিটে রয়েছে ৩৬টি করাত কল। ১৯টির লাইসেন্স থাকলেও অবৈধ ভাবে চলছে ১৭টি। গোসিংগা বিট ও পাকিয়াব সাব বিটে রয়েছে ৩৮টি অবৈধ করাত কল। এর মধ্যে বনবিভাগের অভিযানে গোসিংগা এলাকা থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে তিনটি। কাপাসিয়া উপজেলার রায়েদ ও কড়িহাতা ইউনিয়নের পাকিয়াব সাব বিটে রয়েছে ৩৫টি অবৈধ করাতকল।
কাওরাইদ বিটে রয়েছে অবৈধ ১২টি করাত কল।এদের মধ্যে পাঁচটি সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে। শিমলাপাড়া বিটে রয়েছে অবৈধ ৪০টি । একটিরও লাইসেন্স নেই। রাথুরা বিটের অধিন গাজীপুর সদর উপজেলার পিরুজালী ইউনিয়নরে পিরুজালীতে রয়েছে ১১টি অবৈধ করাত কল। সাতখামাইর বিটে রয়েছে ২১টি অবৈধ করাত কল। শিংড়াতলি বিটে কোন করাত কল নেই।
অপরদিকে রাজেন্দ্রপুর রেঞ্জের অধিন উপজেলা প্রহলাদপুর ও রাজাবাড়ি ইউনিয়নে রয়েছে ২৩টি অবৈধ করাত কল। উপজেলার দু’টি রেঞ্জে এলাকায় অবৈধ ভাবে পরিচালিত ১৬২টি অবৈধ করাতকল। এতে সরকার বিপুল পরিমান রাজস্ব হারাচ্ছে।
স্থানীয় ভাবে বিভিন্ন ব্যক্তির সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রভাবশালীরা চালাচ্ছে এসব অবৈধ করাতকল। তদারকি না থাকায় দেদারসে কাটছে শাল গজারী সহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। যে কারণে বনজ দ্রব্য ও প্রাকৃতিক পরিবেশের ব্যপক ক্ষতি হচ্ছে। বিধি বিধান না মেনে পরিচালিত হচ্ছে এসব করাত কল। গ্রাম প্রান্তরে পরিচালিত করাতকল গুলো বিধি মালা ভঙ্গ করে বন এলাকার দুই-তিন কিমির মধ্যে পরিচালিত হচ্ছে।
সুত্র মতে “করাতকল বিধি মালা ২০১২ এর ৭ এর “ক” উপধার মতে পৌর এলাকা ব্যতিত সংরক্ষিত,রক্ষিত,অর্পিত বা অন্য যে কোন ধরনের সরকারি বন ভূমির সীমানা হইতে দশ কিলোমিটারের মধ্যে করাত কল স্থাপন নিষেধ।” উপজেলার অবৈধ করাতকল গুলোর ক্ষেত্রে মানা হয়নি করাতকল বিধি মালা। যেনো তেনো ভাবে যে যার সুবিধা মতো এলাকায় এসব করাত কল স্থাপন করেছে। করাতকলের মালিকগন অনেকেই লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেই রয়েছেন বহাল তবিয়তে। বিধি ভঙ্গ করায় তারা পাচ্ছে না লাইসেন্স।
উপজেলার বরমী বাজারের ব্যবসায়ী মো. মোকলেছোর রহমান গাজীপুরের ব্যবসায়ী আবুল কাশেম সহ বিভিন্ন স্থানের করাতকল মালিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, করাতকল বিধি মালা প্রকাশিত হওয়ার আগে থেকে অনেকেই ব্যবসা করছেন। ২০১২সালে বিধি মালা জারির পরেও অনেক করাতকল স্থাপিত হয়েছে। অনেক মালিক লাইসেন্সের জন্য আবেদন করে ঝুলে আছেন।
দীর্ঘ বছরেও বিধিমালার দূরত্বের কারণে মিলছেনা তাদের লাইসেন্স। এতে করে ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন ভাবে হয়রানী হতে হচ্ছে। বিধি মালার দূরত্ব শিথিল করলে অনেকেই লাইসেন্স নিয়ে বৈধ ভাবে ব্যবসা করতে পারবে। এতে সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে।
রাজেন্দ্রপুর রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা জুয়েল রানা জানান, অবৈধ করাত কলের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্টের অভিযান অব্যাহত আছে। আমরা মামলা ও দিয়ে থাকি।
শ্রীপুর রেঞ্জের দায়ীত্ব প্রাপ্ত সহকারী বন সংরক্ষক মোখলেছুর রহমান জানান, অবৈধ করাতকলের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত আছে। সম্প্রতি গোসিংগা থেকে তিনটি করাতকল উচ্ছেদ করা হয়েছে। এটি চলমান প্রক্রিয়া। পর্যায় ক্রমে সকল অবৈধ করাত কলের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে।
ঢাকা বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক মো. সামসুল আরেফিন জানান, সম্প্রতি ঢাকা বিভাগে পাঁচটি করাত কল উচ্ছেদ করা হয়েছে। বিধি না মেনে পরিচালিত সকল করাতকলের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া।
ভোরের আকাশ/তা.কা