সাতক্ষীরা জেলা আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ক মাসিক সভা অনুষ্ঠিত
সাতক্ষীরা জেলার মাসিক আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার (১৬ জুন) সকাল সাড়ে ১০টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোস্তাক আহমেদ।
সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম, সেনাবাহিনী সাতক্ষীরা ক্যাম্পের কমান্ডার মেজর ফাহিম, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সাতক্ষীরার উপ-পরিচালক মাসরুবা ফেরদৌস, সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আবুল হাসেম, সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর বাসুদেব বসু, জেলা সিভিল সার্জন ডা.আব্দুস সালাম, জামায়াতের জেলা আমীর উপাধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম মুকুল, সেক্রেটারী মাওলানা আজিজুর রহমান, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক রহমাতুল্লাহ পলাশ, সদস্য সচিব আবু জাহিদ ডাবলু, সাবেক মেয়র তাসকিন আহমেদ চিসতি, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বারী।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকরতা, জেলা তথ্য অফিসার জাহেরুল ইসলাম, জেলা মহিলা দলের সভানেত্রী ফরিদা আখতার বিউটি, জামায়াতের মহিলা বিভাগীয় সেক্রেটারী জয়নাব পারভীন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক আরাফাত হোসেন, সদস্য সচিব সুহাইল মাহদিন , মুখপাত্র মোহিনী তাবাসসুমসহ জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সকল সদস্যরা।
এছাড়া সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সুপার জেলার সার্বিক আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় অপরাধ দামনে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। জেলা আইন শৃঙ্খলা বিষয়ক সভায় বাল্যবিবাহ ও মানব পাচার প্রতিরোধ, শহরে যানজট নিরসন, সড়ক ব্যবস্থার উন্নয়ন মাদক বিরোধী অভিযান, নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, নিরিবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ, বাজার মনিটরিং সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।
সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন জেলার বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা বৃন্দ, রাজনৈতিক ব্যক্তি, সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।
এসময় জেলার উন্নয়নে সার্বিক বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। এছাড়া জেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সকলের সহযোগিতা কামনা করা হয়।
ভোরের আকাশ/জাআ
সংশ্লিষ্ট
প্রায় আড়াই ফুট গভীর একটি গর্তে শিশু সন্তান গোপালকে ঢুকিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। শিশুটির মাথা ও হাত দুটি যাতে বাইরে থাকে এমন করে গর্তটি করা হয়েছে। ক্ষুধার সময় প্রচণ্ড কান্নাকাটি করলে মা শিশুটিকে গর্তে ঢুকিয়ে খাওয়ান। দিনের বেশিরভাগ সময় কান্না করলে তাকে ওই গর্তের ভেতরে রেখে বিভিন্ন বিনোদন দেখিয়ে কান্না থামানোর চেষ্টা করেন মা। এমনি একটি ঘটনা ঘটেছে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নে।জানা গেছে, চা শ্রমিক দম্পতির একমাত্র সন্তান গোপাল সাঁওতাল। শিশুটির বয়স মাত্র সাড়ে তিন বছর। জন্ম থেকে সে শারীরিক প্রতিবন্ধী। শিশুটি স্বাভাবিকভাবে দাঁড়াতে বা বসতে পারে না। বসিয়ে রাখলে সে ভাঁজ হয়ে পড়ে থাকে। তাই খাওয়ানো ও অন্যান্য পরিচর্যার জন্য মা সনচড়িয়া সাঁওতাল প্রায় ৬ মাস আগে ঘরের মেঝেতে ছোট একটা গোলাকার গর্ত করেছেন। আর এ কাজে সহযোগিতা করেন গোপালের দাদি কল্পনা সাঁওতাল। মা ঘরের কাজ সামলানোর পাশাপাশি সারাক্ষণ ছেলেকে দেখে রাখেন। বাবা অনিল সাঁওতাল মুরইছড়া চা বাগানে ১৭০ টাকা মজুরিতে কাজ করেন। সম্প্রতি কুলাউড়ার অগ্রণী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাংবাদিক সঞ্জয় দেবনাথ ব্যক্তিগত ফেসবুকে এই সংক্রান্ত একটি স্ট্যাটাস দেন। এরই সূত্র ধরে রোববার বিকেলে মুরইছড়া চা বাগানের স্কুল টিলা এলাকায় যান ভোরের আকাশ প্রতিবেদক।সরেজমিনে গিয়ে তিনি দেখেন, রোদ, ঝড় কিংবা বৃষ্টি মাড়িয়ে একটি জীর্ণশীর্ণ ঘরের ভেতর তাদের বসবাস। ঘরের বাহিরে একমাত্র সম্বল কয়েকটি গবাদিপশু রয়েছে। কখনো খেয়ে, কখনো না খেয়ে প্রতিবন্ধী শিশু গোপালকে নিয়ে জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।আলাপকালে শিশু সন্তান গোপাল সাঁওতালের মা সনচড়িয়া সাঁওতাল জানান, জন্ম থেকেই তার সন্তান শারীরিক, বুদ্ধি, বাক ও মানসিক প্রতিবন্ধী। চিকিৎসকরা বলেছেন শিশুটিকে নিয়মিত ফিজিওথেরাপি দিতে হবে। কিন্তু নিয়মিত নেওয়ার মতো আর্থিক সামর্থ্য নেই তাদের। ছেলেটির কান্না আর কষ্ট আমি কী করে সহ্য করি। তাই বাচ্চাকে শান্ত রাখার জন্য আড়াই ফুট গভীর এই গর্তটি করেছি। সেখানে ঢুকালে ছেলেটি একটু দাঁড়াতে পারে।কুলাউড়ার অগ্রণী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাংবাদিক সঞ্জয় দেবনাথ বলেন, নুন আনতে পান্তা ফুরানোর পরিবারে প্রতিবন্ধী ছোট্ট শিশুটি বিনা চিকিৎসায় পড়ে থাকবে সেটা কারও কাম্য হতে পারে না। তার চিকিৎসার জন্য সরকারি-বেসরকারি পর্যায় ছাড়াও সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার জন্য বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।স্থানীয় কর্মধা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সিলভেস্টার পাটাং বলেন, শিক্ষকের মাধ্যমে জেনে ওই পরিবারের খোঁজ নিয়ে উপজেলা সমাজসেবা অফিসারের সঙ্গে বিষয়টি আলোচনা করেছি। আশা করছি খুব দ্রুত সরকারিভাবে প্রতিবন্ধী ভাতা পাওয়া যাবে।উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা প্রানেশ চন্দ্র বর্মা ভোরের আকাশকে বলেন, আমি বিষয়টি জেনেছি, শিশুর প্রতিবন্ধী ভাতার কাজ প্রক্রিয়াধীন এবং এ মাসেই ভাতার টাকা পাবে। রোগী কল্যাণ সমিতি থেকে চিকিৎসা সংক্রান্ত সাহায্য করা হবে। প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র মৌলভীবাজার থেকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও উপকরণ সরবরাহ করা হবে।কুলাউড়ার ইউএনও মো. মহিউদ্দিন ভোরের আকাশকে বলেন, বিষয়টি খুবই মানবিক। প্রতিবন্ধী শিশু গোপাল সাঁওতালের খোঁজ নিয়ে সমাজসেবা অফিসারের সঙ্গে কথা বলে সরকারের পক্ষ থেকে ভাতার ব্যবস্থা করব।ভোরের আকাশ/এসএইচ
কয়দিন আগে সাতোয়া (সাতদিন ব্যাপী বৃষ্টি) নাগচিলো। সাতোয়ায় সিদ্ধ ধান টানাটানি করতে করতে ধান গুল্যা প্রায় নষ্ট। খড় গুল্যায় অর্ধেক পচে গেছে। বাড়ির উঠানে পঁচা খড় উল্টাতে উল্টাতে এসব কথা বলছিলেন গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার ঘুড়িদহ ইউনিয়নের চিনিরপটল পাকারমাথা এলাকার বাসিন্দা লতিফা বেগম।এবার ভয়েস কল আসলে হামার (আমার) এই ক্ষতি হলো না হয়- যোগ করেন লতিফা। ভয়েস কল কি- জানতে চাইলে তিনি বলেন- আগে মাসে মাসে মোবাইলে ভয়েস কল আসতো। ভয়েস কলে বন্যা, খড়া, বৃষ্টি, আবহাওয়ার আগাম খবর দিতো। জমিতে কখন কোন সার, কি বীজ দিতে হবে সব বলে দিতো। এতে আমাদের অনেক উপকার হতো।লতিফার মতো উত্তরের জনপদ গাইবান্ধার সাঘাটা ও ফুলছড়ি এ দুই উপজেলার অসংখ্য মানুষ ভয়েস কলের উপকার পেয়েছেন। কেননা, গাইবান্ধার সাতটি উপজেলার মধ্যে চারটি যমুনা-ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তা নদীর অববাহিকায় অবস্থিত। বিশেষ করে সাঘাটা ও ফুলছড়ি দুই উপজেলা বেশী দূর্যোগ প্রবণ।সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলার মানুষ অকাল কিংবা প্রলম্বিত বন্যা-খড়া, অনাবৃষ্টি, নদীভাঙ্গনসহ নানা রকম প্রাকৃতিক দূর্যোগ তাদের নিত্যসঙ্গী। তারপরও প্রাকৃতিক দূর্যোগ সম্পর্কে তাদের মধ্যে তেমন কোন ধারণা ছিল না। মূলত: অনুমানের ওপর ভর করে যেমন- পিঁপড়ার সারি দেখে বৃষ্টি, উত্তুরে কিংবা দখিনা বাতাসে বন্যার কমা-বাড়তি অনুমান করতো তারা।এখন অনুমানের সেই দিন আর নেই। সাঘাটার খামার পবনতাইড় বালুবাড়ি গ্রামের রুমি বেগম, চিনিরপটল ঝোলাপাড়ার পুতুল রানী, মাঝিপাড়ার সোনালী রানী, খামার পবনতাইড় পালপাড়ার শিরিনা বেগমের মতো অনেকেই এখন প্রাকৃতিক দূর্যোগ সম্পর্কে শুধু সচেতন নয়। কোন দূর্যোগের আগে কিংবা পরে কি করতে হবে সবই এখন তাদের জানা। আর তারা এসব সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেছেন গাইবান্ধার বেসরকারী সংগঠন এসকেএস ফাউন্ডেশন বাস্তবায়িত প্রকল্প সুফলের কল্যাণে।চিনিরপটল ঝোলাপাড়ার পুতুল রানী বলেন, প্রাকৃতিক দূর্যোগ সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য গ্রামে গ্রামে ২০ থেকে ২২ জন নারী-পুরুষ নিয়ে এসকেএস ফাউন্ডেশন থেকে গ্রুপ তৈরি করা হয়। তারপর উঠান বৈঠক, আলোচনা, সভা, সেমিনার, হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ নিয়ে আমরা গ্রামের অনেক নিরক্ষর মানুষ প্রাকৃতিক দূর্যোগ সম্পর্কে সচেতন হই।এরপর গ্রামের প্রতিটি গ্রুপের সদস্যের কাছে সুফল প্রকল্পের মাধ্যমে আসতে শুরু করে ভয়েস কল। ভয়েস কলে জানানো হয় বন্যার আগাম বার্তা। সেই বার্তা পেয়ে আশেপাশের মানুষকে মাইকে ঘোষণার মাধ্যমে বার্তা পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগ নেয় স্ব স্ব এলাকার গ্রুপের সদস্যরা।বার্তা পাওয়ার পরপরই শুরু হয় নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুতির কাজ। নারী, পুরুষ ও কিশোরীদের জন্য তৈরি হয় আলাদা আলাদা থাকার জায়গা। যেখানে শিশু, বয়স্ক, গর্ভবতী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য রাখা হয় বিশেষ ব্যবস্থা। এলাকা থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে যাবার রাস্তা সংস্কার, আশ্রয়কেন্দ্রে সুপেয় পানি, পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা এবং গবাদী পশু রাখার জন্য নির্মাণ করা হয় অস্থায়ী শেড। আবার বন্যা পরবর্তী সময়ে ঘড়বাড়ি মেরামত, জীবানুমুক্ত করার কাজে ঝাপিয়ে পড়েন তারা। কথাগুলো বলছিলেন, পালপাড়ার শিরিনা বেগম।বন্যা পূর্বাভাস বা ভয়েস কল পাওয়ার আগে অর্থাৎ বর্ষা আসার আগেই আলগা চুলা তৈরি করা, শুকনো খাবার সংরক্ষণ, কাপড়, গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র সংরক্ষণের ব্যাপারে সচেতন করা হয় গ্রামের মানুষকে। বন্যা-ভাঙ্গনের মতো নিদানকালের জন্য টাকা জমানোর ব্যাপারেও সজাগ করা হয় তাদের। নদ-নদী তীরবর্তী এসব এলাকার মানুষের একমাত্র সম্বল গবাদী পশু। বিশেষ করে বন্যার সময় গোখাদ্য নিয়ে চরম বিপাকে পড়তে হয় তাদের। মাঠ-ঘাট তলিয়ে যাওয়ায় প্রাকৃতিক খাবারের সব উৎস হারিয়ে টাকা দিয়ে গোখাদ্য কেনার সামর্থ থাকেনা তাদের। সেজন্য প্রতিটি গ্রুপের সদস্যকে হাতে কলমে গোখাদ্য তৈরি ও সংরক্ষনের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।শুধু বন্যার সময় নয়, মাঝে মধ্যেই সুফল প্রকল্প থেকে ভয়েস কল আসতো গ্রুপের সদস্যদের কাছে। আসতো আবহাওয়ার খবর। যেমন জমিতে কোন আবহাওয়ায় সেচ, কীটনাশক বা সার প্রয়োগ করা যাবে আর কখন প্রয়োগ করা যাবে না- সে সম্পর্কে আগাম খবর আসতো ভয়েস কলে। সারের পাশাপাশি শৈত প্রবাহ ও খড়ার আগাম বার্তা এবং কোন মৌসুমে কোন ফসল আর কোন ধরনের বীজ বপন করতে হবে; সে বিষয়েও আগাম জানিয়ে দেয়া হতো এই ভয়েস কলে।সুফল-২ প্রকল্পের সহকারী প্রকল্প ব্যবস্থাপক (সাবেক) নুরুন্নাহার বলেন, এ প্রকল্পের আওতায় জেলার সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলার ৬ হাজার ৭শ ৫৭ জন মানুষকে ভয়েস কল সেবা পৌঁছে দেয়া হয়। ২ হাজার ৭শ ১০ জনকে আর্থিক সহায়তা, দুইটি ড্রামের ভেলা তৈরি, ৫টি বাঁশের সাঁকো, ৫টি আশ্রয় কেন্দ্রের রাস্তা মেরামত, এগারোটি ল্যান্ডগেজ ও একটি রিভার গেজ স্থাপন, ১০টি স্কুল কাম ফ্লাড শেল্টার মেরামত এবং হাইজিন কিডস বিতরণ করা হয়।এছাড়া দুইশ জনকে সাইলেজ ও হেলেজ পদ্ধতিতে গোখাদ্য তৈরির প্রশিক্ষণ এবং গবাদী পশুর জন্য ২২টি ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্পে গবাদী পশুর সেবা দেয়া হয়।সাঘাটা উপজেলার উত্তর উল্যা বালুচর এলাকার কৃষক সবুজ মিয়া। কৃষি কাজ করে কোনো মতো স্ত্রী সন্তান নিয়ে জীবন যাপন করেন। এই অভাবের সংসারে জন্মগ্রহন এক নবজাতক ছেলে সন্তান। নাম রাখেন নাঈম ইসলাম। বয়স যতই বাড়তে থাকে ততই নানা রকম সমস্যা দেখেন নাঈমের। বিশেষ করে হাত-পা বিকল অবস্থা দেখা দেয়। এই নাঈম বড় হওয়ার পর চলাফেরা করতে পারতেন না। তাই বন্যার সময় এলেই কষ্টে পড়েন সে। ঠিক তখনই তার পাশে এসে দাঁড়ায় সুফল। তাকে বন্যা কবলিত স্থান থেকে উদ্ধার করে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন ভূমিকা পালন করে। যা এই প্রতিবন্দী নাঈমেরর জীবনে বড় সহায়ক হিসাবে কাজ করেছে।উপজেলার ঘুড়িদহ ইউনিয়নের চিনিরপটল গ্রামের ঝুমি বেগম বলেন, আগে বন্যা এলেই আমরা সব থেকে বেশি বিপাকে পড়তাম গরু ছাগল নিয়ে। কারণ বন্যা আসায় গোখাদ্য নিয়ে তেমন চিন্তা চেতনা থাকতো না। নিজের জীবন আগে বাঁচাবো, না গরু ছাগল বাঁচাবো। সেই দিক থেকে গোখাদ্য নিয়ে কিছুই অগ্রিম জানতাম না। পরে সুফল আসার পরে গোখাদ্য কি ভাবে বন্যার পূর্বে বানাতে হয় সে বিষয়ে জেনেছি। এখন বন্যা আসলেও আগের মতো আর গোখাদ্য নিয়ে চিন্তা করতে হয় না।একই গ্রামের শিল্পী বেগম বলেন, আগে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর পরেই আমরা যখন বাড়ি ঘড়ে চলে যেতাম, গিয়ে দেখতাম ছোট-বড় বিভিন্ন রকমের সাপ দেখা যেত। তখন এই সাপের আতঙ্ক থেকে রক্ষা পেতে শুকনো মরিচের গুড়া বাড়ির চারপাশে ছিটিয়ে দেয়া হতো। কিন্তু তারপরেও সাপের উপদ্রব কমতো না। আর এখন সুফল প্রকল্পের প্রশিক্ষণে আমাদের বলা হয়, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরপরই মিটিং করা হয় এবং বন্যার পানি যুক্ত স্থানে ব্লিচিং পাউডার, লাইফবয় সাবান টুকরো করে ঘরের চারপাশে ছড়িয়ে দিলে সাপ থেকে নিরাপদ থাকা যায়।খামার পবনতাইড় গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আগে বন্যা যখন আসতো কোনো খবরেই পেতাম না। ফলে কষ্টে ফলানো ফসলগুলো পানিতে তলিয়ে যেত। লক্ষ লক্ষ টাকার ফসল এমনি ভাবে বানের জলে ভেঁসে যেত চোঁখের সামনে। কিন্তু সুফল আসার পরে তারা পেতে শুরু করেন ভয়েস কল। আর এই ভয়েস কলের মাধ্যমে আগাম আবহাওয়ার খবর পাওয়ার কারণে কৃষি ফসল চাষাবাদে তেমন আর ক্ষতি হয় না। তাই তো ভয়েস কলে খুশি এসব এলাকার কৃষকরা। এছাড়া বস্তায় এবং ঝুলন্ত পদ্ধতিতে সবজি চাষ সম্পর্কেও এখন গ্রামের মানুষ সচেতন। গত বছরের ডিসেম্বরে সুফল প্রকল্পের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। সাথে বন্ধ হয় ভয়েস কলও। প্রকল্প বন্ধ হলেও বন্যার আগে ও পরে করনীয় সম্পর্কে গ্রামের মানুষ বেশ সচেতন। প্রকল্প থেকে পাওয়া জ্ঞান কাজে লাগিয়ে প্রাকৃতিক দূর্যোগ মোকাবেলার ফলে আর্থিক ক্ষতি কম হচ্ছে। তবে ভয়েস কল বন্ধ হবার কারণে এখন আর প্রাকৃতিক দূর্যোগ কিংবা আবহাওয়ার আগাম কোন খবর পাচ্ছেন না তারা।সুফল প্রকল্পের ফোকাল পার্সন খন্দকার জাহিদ সরওয়ার সোহেল জানান, এসকেএস ফাউন্ডেশন ২০১৯ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়কালে গাইবান্ধার সাঘাটা, বগুড়ার সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা উপজেলায় সুফল প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। এ প্রকল্প থেকে অন্তত: দুই লক্ষাধিক মানুষ প্রাকৃতিক দূর্যোগ সম্পর্কে সচেতন হয়েছেন এবং পরোক্ষ প্রত্যক্ষভাবে উপকৃত হয়েছেন। ভয়েস কল চালুর বিষয়ে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।ভোরের আকাশ/জাআ
সাতক্ষীরা জেলার মাসিক আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।সোমবার (১৬ জুন) সকাল সাড়ে ১০টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোস্তাক আহমেদ।সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম, সেনাবাহিনী সাতক্ষীরা ক্যাম্পের কমান্ডার মেজর ফাহিম, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সাতক্ষীরার উপ-পরিচালক মাসরুবা ফেরদৌস, সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আবুল হাসেম, সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর বাসুদেব বসু, জেলা সিভিল সার্জন ডা.আব্দুস সালাম, জামায়াতের জেলা আমীর উপাধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম মুকুল, সেক্রেটারী মাওলানা আজিজুর রহমান, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক রহমাতুল্লাহ পলাশ, সদস্য সচিব আবু জাহিদ ডাবলু, সাবেক মেয়র তাসকিন আহমেদ চিসতি, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বারী।সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকরতা, জেলা তথ্য অফিসার জাহেরুল ইসলাম, জেলা মহিলা দলের সভানেত্রী ফরিদা আখতার বিউটি, জামায়াতের মহিলা বিভাগীয় সেক্রেটারী জয়নাব পারভীন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক আরাফাত হোসেন, সদস্য সচিব সুহাইল মাহদিন , মুখপাত্র মোহিনী তাবাসসুমসহ জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সকল সদস্যরা।এছাড়া সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সুপার জেলার সার্বিক আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় অপরাধ দামনে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। জেলা আইন শৃঙ্খলা বিষয়ক সভায় বাল্যবিবাহ ও মানব পাচার প্রতিরোধ, শহরে যানজট নিরসন, সড়ক ব্যবস্থার উন্নয়ন মাদক বিরোধী অভিযান, নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, নিরিবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ, বাজার মনিটরিং সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন জেলার বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা বৃন্দ, রাজনৈতিক ব্যক্তি, সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।এসময় জেলার উন্নয়নে সার্বিক বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। এছাড়া জেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সকলের সহযোগিতা কামনা করা হয়।ভোরের আকাশ/জাআ
দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলায় মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনি থেকে বর্তমানে সর্বোচ্চ পরিমাণ পাথর উত্তোলনে এক নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। পেট্রোবাংলার অধীন দিনাজপুর পার্বতীপুর উপজেলার মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিংকোম্পানি লিমিটেড পরিচালিত এই খনি থেকে প্রতি মাসে পাথর উত্তোলনের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা একলাখ ২৪ হাজার মেট্রিক টন।মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডিএম জোবায়েদ হোসেন বলেন, গত ৮ মাসে লক্ষ্যমাত্রার অতিরিক্ত প্রায় ৪ লাখ মেট্রিক টন পাথর উত্তোলন করা হয়েছে।তিনি আরও জানান, দিনাজপুর পার্বতীপুর উপজেলায় অবস্থিত মধ্যপাড়া পাথর খনিটির পরিচালনা, উৎপাদন এবং উন্নয়নের দায়িত্ব-প্রাপ্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জার্মানিয়া ট্রেস্ট কনসোর্টিয়াম (জিটিসি) এর সাথে গত ২০২১ সালে ৩ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয়-দফা চুক্তি অনুযায়ী প্রতি-মাসের পাথর উত্তোলনের লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ২৪ হাজার মেট্রিক টন নির্ধারণ করা হয়েছিল। সেখানে গত বছর অক্টোবর মাস থেকে চলতি বছর মে মাস পর্যন্ত গত ৮ মাসে লক্ষ্যমাত্রার অতিরিক্ত ৪ লাখ মেট্রিক টন পাথর উত্তোলন করা সম্ভব হয়েছে।খনি কর্তৃপক্ষ জানায়, মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনির উৎপাদন বৃদ্ধির ফলে বর্তমানে মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।পাশাপাশি এর মাধ্যমে সরকারের বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে।মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী ডিএম জোবায়েদ হোসেন বলেন, পাথরের উত্তোলন ও মজুদের পরিমাণ ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত বাড়ছে। পাথর বিক্রি বাড়াতে সরকারি প্রকল্পগুলোর সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করা হচ্ছে। অল্প-সময়ের মধ্যে পাথর বিক্রি বাড়লে খনি লাভজনক অবস্থায় ফিরে আসবে বলে তিনি আশা করছেন।নাম প্রকাশ না করার শর্তে খনির দায়িত্বশীল দুই কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশে প্রতি বছর পাথরের চাহিদা ২ কোটি ১৬ লাখ টন। এর সিংহভাগ পাথর আমদানি করা হয় ভারত, ভূটান ও দুবাই থেকে। স্থানীয়ভাবে পঞ্চগড় জেলার মহানন্দা নদী ও সিলেটের ভোলাগঞ্জ থেকে কিছু পাথর আহরণ করা হয়, যা পরিমাণে নগণ্য। বর্তমানে খনিটিতে প্রায় ১২ লাখ মেট্রিক টনের অধিক পাথর মজুদ রয়েছে। খনি কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে দেশের বিভিন্ন চলমান প্রকল্পে ব্যবহারের জন্য বিদেশ থেকে পাথর আমাদনি না করে মধ্যপাড়ার কঠিন শিলা খনির পাথর ব্যবহারে আহবান জানানো হয়েছে।দেশের একমাত্র ভূগর্ভস্থ খনি মধ্যপাড়া থেকে প্রতি বছর পাথর উত্তোলন হয় ১৫ লাখ মেট্রিক টন। এখানকার পাথর আন্তর্জাতিক মান-সম্পন্ন হওয়ার পরও নানা অজুহাতে তা প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবহারে অনীহা রয়েছে। পাথর আমদানির ওপর শুল্ক বৃদ্ধি ও মধ্যপাড়ার পাথরের ট্যারিফ ভ্যালু বাড়ানো প্রয়োজন।এছাড়া সড়ক ও জনপথ বিভাগ, সেতু বিভাগ, বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি), গণপূর্ত, রেলওয়ে ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নদী শাসন প্রকল্পে মধ্যপাড়ার পাথর ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় এবং খনির যথাযথ উন্নয়ন করা সম্ভব হবে ।প্রাপ্ত তথ্যমতে, মধ্যপাড়া খনি থেকে প্রতিদিন সাড়ে ৫ হাজার মেট্রিক টন পাথর উত্তোলন করা হয়, যা বছরে প্রায় ১৫ লাখ টনের অধিক। আর বিক্রি হয় বছরে ৯ লাখ টনের মতো। উত্তোলিত পাথরের মধ্যে ৫ থেকে ২০ মিলিমিটার আকারের ১৮ শতাংশ, ২০ থেকে ৪০ মিলিমিটার আকারের ৫ শতাংশ, ৪০ থেকে ৬০ মিলিমিটার (ব্লাস্ট) আকারের ৩৪ শতাংশ, ৬০ থেকে ৮০ মিলিমিটার আকারের ১১ শতাংশ, বোল্ডার আকারের ১৭ শতাংশ ও শূন্য থেকে ৫ মিলিমিটার (স্টোন ডাস্ট) আকারের ১৫ শতাংশ। তবে অধিকাংশ নির্মাণ কাজে ৮ থেকে ১২ মিলিমিটার আকারের পাথর ব্যবহৃত হয়। এ আকারের পাথর মধ্যপাড়া খনিতে উৎপাদন হয় না। বাধ্য হয়ে অনেকে ৫ থেকে ২০ মিলিমিটার আকারের পাথর ব্যবহার করেন। এ আকারের পাথরের চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম। আবার মোট উৎপাদনের ৫১ শতাংশ ব্লাস্ট ও বোল্ডার পাথর তৈরি হয়। ব্লাস্ট ও বোল্ডারের ক্রেতা রেলওয়ে, পাউবো ও এলজিইডি।মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী ডিএম জোবায়েদ হোসেন জানান, গত ৩১ মে পর্যন্ত খনি ইয়ার্ডে মজুদ পাথরের পরিমাণ ১২ লাখ ৩২ হাজার টন। এর মধ্যে রেলপথে ব্যবহারযোগ্য ৭ লাখ ৮০ হাজার টন ব্লাস্ট পাথর এবং নদী শাসন কাজে ব্যবহারযোগ্য ৪ লাখ ৫২ হাজার টন বোল্ডার মজুদ রয়েছে। এসব মজুূদ পাথরের বিক্রি নেই।গত এক বছরে ৯ লাখ ২৬ হাজার ৭৭০ টন পাথর বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে রেলওয়ে বিভাগের সাথে কথা বলে ৩০ হাজার মেট্রিক টন পাথর বাকিতে সরবরাহ দেওয়া হয়েছে। চলতি জুন মাসে এ পযন্ত বিভিন্ন আকারের পাথর বিক্রি হয়েছে ১৫ হাজার মেট্রিক টন।ভোরের আকাশ/এসএইচ