দিনাজপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৬ জুন ২০২৫ ০৬:০৮ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলায় মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনি থেকে বর্তমানে সর্বোচ্চ পরিমাণ পাথর উত্তোলনে এক নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। পেট্রোবাংলার অধীন দিনাজপুর পার্বতীপুর উপজেলার মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিংকোম্পানি লিমিটেড পরিচালিত এই খনি থেকে প্রতি মাসে পাথর উত্তোলনের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা একলাখ ২৪ হাজার মেট্রিক টন।
মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডিএম জোবায়েদ হোসেন বলেন, গত ৮ মাসে লক্ষ্যমাত্রার অতিরিক্ত প্রায় ৪ লাখ মেট্রিক টন পাথর উত্তোলন করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, দিনাজপুর পার্বতীপুর উপজেলায় অবস্থিত মধ্যপাড়া পাথর খনিটির পরিচালনা, উৎপাদন এবং উন্নয়নের দায়িত্ব-প্রাপ্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জার্মানিয়া ট্রেস্ট কনসোর্টিয়াম (জিটিসি) এর সাথে গত ২০২১ সালে ৩ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয়-দফা চুক্তি অনুযায়ী প্রতি-মাসের পাথর উত্তোলনের লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ২৪ হাজার মেট্রিক টন নির্ধারণ করা হয়েছিল। সেখানে গত বছর অক্টোবর মাস থেকে চলতি বছর মে মাস পর্যন্ত গত ৮ মাসে লক্ষ্যমাত্রার অতিরিক্ত ৪ লাখ মেট্রিক টন পাথর উত্তোলন করা সম্ভব হয়েছে।
খনি কর্তৃপক্ষ জানায়, মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনির উৎপাদন বৃদ্ধির ফলে বর্তমানে মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।পাশাপাশি এর মাধ্যমে সরকারের বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে।
মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী ডিএম জোবায়েদ হোসেন বলেন, পাথরের উত্তোলন ও মজুদের পরিমাণ ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত বাড়ছে। পাথর বিক্রি বাড়াতে সরকারি প্রকল্পগুলোর সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করা হচ্ছে। অল্প-সময়ের মধ্যে পাথর বিক্রি বাড়লে খনি লাভজনক অবস্থায় ফিরে আসবে বলে তিনি আশা করছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে খনির দায়িত্বশীল দুই কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশে প্রতি বছর পাথরের চাহিদা ২ কোটি ১৬ লাখ টন। এর সিংহভাগ পাথর আমদানি করা হয় ভারত, ভূটান ও দুবাই থেকে। স্থানীয়ভাবে পঞ্চগড় জেলার মহানন্দা নদী ও সিলেটের ভোলাগঞ্জ থেকে কিছু পাথর আহরণ করা হয়, যা পরিমাণে নগণ্য। বর্তমানে খনিটিতে প্রায় ১২ লাখ মেট্রিক টনের অধিক পাথর মজুদ রয়েছে। খনি কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে দেশের বিভিন্ন চলমান প্রকল্পে ব্যবহারের জন্য বিদেশ থেকে পাথর আমাদনি না করে মধ্যপাড়ার কঠিন শিলা খনির পাথর ব্যবহারে আহবান জানানো হয়েছে।
দেশের একমাত্র ভূগর্ভস্থ খনি মধ্যপাড়া থেকে প্রতি বছর পাথর উত্তোলন হয় ১৫ লাখ মেট্রিক টন। এখানকার পাথর আন্তর্জাতিক মান-সম্পন্ন হওয়ার পরও নানা অজুহাতে তা প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবহারে অনীহা রয়েছে। পাথর আমদানির ওপর শুল্ক বৃদ্ধি ও মধ্যপাড়ার পাথরের ট্যারিফ ভ্যালু বাড়ানো প্রয়োজন।
এছাড়া সড়ক ও জনপথ বিভাগ, সেতু বিভাগ, বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি), গণপূর্ত, রেলওয়ে ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নদী শাসন প্রকল্পে মধ্যপাড়ার পাথর ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় এবং খনির যথাযথ উন্নয়ন করা সম্ভব হবে ।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, মধ্যপাড়া খনি থেকে প্রতিদিন সাড়ে ৫ হাজার মেট্রিক টন পাথর উত্তোলন করা হয়, যা বছরে প্রায় ১৫ লাখ টনের অধিক। আর বিক্রি হয় বছরে ৯ লাখ টনের মতো। উত্তোলিত পাথরের মধ্যে ৫ থেকে ২০ মিলিমিটার আকারের ১৮ শতাংশ, ২০ থেকে ৪০ মিলিমিটার আকারের ৫ শতাংশ, ৪০ থেকে ৬০ মিলিমিটার (ব্লাস্ট) আকারের ৩৪ শতাংশ, ৬০ থেকে ৮০ মিলিমিটার আকারের ১১ শতাংশ, বোল্ডার আকারের ১৭ শতাংশ ও শূন্য থেকে ৫ মিলিমিটার (স্টোন ডাস্ট) আকারের ১৫ শতাংশ। তবে অধিকাংশ নির্মাণ কাজে ৮ থেকে ১২ মিলিমিটার আকারের পাথর ব্যবহৃত হয়। এ আকারের পাথর মধ্যপাড়া খনিতে উৎপাদন হয় না। বাধ্য হয়ে অনেকে ৫ থেকে ২০ মিলিমিটার আকারের পাথর ব্যবহার করেন। এ আকারের পাথরের চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম। আবার মোট উৎপাদনের ৫১ শতাংশ ব্লাস্ট ও বোল্ডার পাথর তৈরি হয়। ব্লাস্ট ও বোল্ডারের ক্রেতা রেলওয়ে, পাউবো ও এলজিইডি।
মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী ডিএম জোবায়েদ হোসেন জানান, গত ৩১ মে পর্যন্ত খনি ইয়ার্ডে মজুদ পাথরের পরিমাণ ১২ লাখ ৩২ হাজার টন। এর মধ্যে রেলপথে ব্যবহারযোগ্য ৭ লাখ ৮০ হাজার টন ব্লাস্ট পাথর এবং নদী শাসন কাজে ব্যবহারযোগ্য ৪ লাখ ৫২ হাজার টন বোল্ডার মজুদ রয়েছে। এসব মজুূদ পাথরের বিক্রি নেই।
গত এক বছরে ৯ লাখ ২৬ হাজার ৭৭০ টন পাথর বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে রেলওয়ে বিভাগের সাথে কথা বলে ৩০ হাজার মেট্রিক টন পাথর বাকিতে সরবরাহ দেওয়া হয়েছে। চলতি জুন মাসে এ পযন্ত বিভিন্ন আকারের পাথর বিক্রি হয়েছে ১৫ হাজার মেট্রিক টন।
ভোরের আকাশ/এসএইচ