সংগৃহীত ছবি
গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গীতে একটি রাসায়নিকের গুদামে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে তিনজন ফায়ার ফাইটারসহ চারজনের মৃত্যুতে গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) এক শোকবার্তায় তিনি বলেন, অগ্নিকাণ্ডে জীবন রক্ষার মহৎ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমাদের তিনজন সাহসী ফায়ার ফাইটারসহ চারজন প্রাণ হারিয়েছেন। এটি একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা। আমি নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।
ড. ইউনূস বলেন, অগ্নি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা দিনরাত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষায় নিয়োজিত থাকেন। নিজেদের জীবনের মায়া ত্যাগ করে তারা অন্যের জীবন বাঁচানোর জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েন। তাদের এই আত্মত্যাগের কাছে জাতি চিরঋণী। আজকের এই দুর্ঘটনা আমাদের স্মরণ করিয়ে দিল যে দায়িত্ব পালনের সময় তারা কত বড় ঝুঁকি বহন করেন। তাদের এ মহৎ ত্যাগ জাতির ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
তিনি বলেন, এই দুর্ঘটনায় আমরা শুধু কয়েকজন প্রাণ হারাইনি, বরং দৃষ্টান্ত দেখলাম আমাদের সাহস, মানবিকতা আর কর্তব্যনিষ্ঠার প্রতীকের। ফায়ার সার্ভিস দেশের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য এবং সাহসী বাহিনী। সংকটময় সময়ে তারাই প্রথম ঝাঁপিয়ে পড়ে মানুষের পাশে দাঁড়ায়। আজ সেই মহৎ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তাদের জীবন দিতে হয়েছে। এটি সমগ্র জাতির জন্য গভীর শোকের বিষয়।
প্রধান উপদেষ্টা শোকসন্তপ্ত পরিবারগুলোর প্রতি সান্ত্বনা জানিয়ে বলেন, আপনাদের প্রিয়জনরা নিছক প্রাণ হারাননি, তারা জাতির জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। দেশের প্রতিটি মানুষ তাদের আত্মত্যাগকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। আমি আপনাদের বেদনা ভাগ করে নিচ্ছি এবং দোয়া করছি আল্লাহ যেন আপনাদের ধৈর্য ও শক্তি দেন এই কঠিন সময়ে।
নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে তিনি বলেন, এই বেদনাবহ ক্ষতি কখনো পূরণ হওয়ার নয়। তবে তাদের আত্মত্যাগ আমাদের অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে, যাতে আমরা একটি নিরাপদ বাংলাদেশ গড়তে পারি।
উল্লেখ্য, গত ২২ সেপ্টেম্বর বিকেলে টঙ্গীর সাহারা মার্কেট টিনশেড সেমিপাকা ভবনে অবস্থিত একটি কেমিক্যালের গুদামে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিটের ৫৩ জন সদস্য আগুন নিয়ন্ত্রণ করে। তবে, প্রতিষ্ঠানটিতে থাকা কেমিক্যালের ড্রাম বিস্ফোরণে ফায়ার সার্ভিসের চারজন ও স্থানীয় একজনসহ পাঁচজন দগ্ধ হন। এরমধ্যে চারজনই মারা গেছেন।
তারা হলেন ফায়ার সার্ভিসের ওয়্যারহাউজ ইন্সপেক্টর জান্নাতুল নাঈম, ফায়ার ফাইটার নুরুল হুদা, ফায়ার ফাইটার মো. শামীম ও দোকান কর্মচারী বাবু হাওলাদার।
ভোরের আকাশ/তা.কা
সংশ্লিষ্ট
বাংলাদেশের সঙ্গে একটি বিশেষায়িত প্রতিরক্ষা চুক্তি করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে জাপান। চলতি বছরের মধ্যেই এ চুক্তি সইয়ের প্রাথমিক উদ্যোগ চলছে।কূটনৈতিক সূত্রের মতে, চুক্তিটি বাস্তবায়িত হলে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহ, প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং যৌথ গবেষণার মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার নতুন অধ্যায় সূচিত হবে।ড. ইউনূসের টোকিও সফরের পর আলোচনা অগ্রসরগত মে মাসে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস টোকিও সফর করেন। সেখানে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। দুই নেতার আলোচনায় প্রতিরক্ষা সহযোগিতার প্রসঙ্গ বিশেষ গুরুত্ব পায়। বৈঠকের ধারাবাহিকতায় নীতিগতভাবে বাংলাদেশ ও জাপান প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি ও সমরাস্ত্র বিনিময়–সংক্রান্ত চুক্তি সইয়ে সম্মত হয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।২০২৩ সালের এপ্রিলে দুই দেশ প্রতিরক্ষা সহযোগিতাবিষয়ক সম্মতিপত্রে সই করেছিল। সে সময় থেকেই বিস্তারিত প্রতিরক্ষা চুক্তির প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল।চুক্তিতে কী কী থাকছেজাপানের প্রতিরক্ষা নীতি অনুসারে বাংলাদেশের সঙ্গে প্রস্তাবিত সমঝোতা তিনটি মূল উপাদানের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হচ্ছে—১. প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম হস্তান্তর: নৌ টহলযান, যোগাযোগব্যবস্থা, নজরদারির প্রযুক্তি ও অপ্রাণঘাতী সামরিক সরঞ্জাম।২. যৌথ গবেষণা: সাইবার নিরাপত্তা, স্যাটেলাইট প্রযুক্তি, উপকূলীয় নজরদারি ইত্যাদি ক্ষেত্রে সহযোগিতা। ৩. কঠোর নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা: সরবরাহকৃত সমরাস্ত্র তৃতীয় কোনো দেশে হস্তান্তর করা যাবে না এবং ব্যবহারের ক্ষেত্র নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।বিশ্লেষকদের মতে, এসব উপাদান বাংলাদেশকে সামুদ্রিক নিরাপত্তা ও সাইবার প্রতিরক্ষায় আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ করে দেবে।চীন–জাপান প্রতিযোগিতা ও বাংলাদেশের ভারসাম্যনিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা বলছেন, বাংলাদেশের জন্য এ চুক্তি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক হলেও এর ভূরাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। কারণ, বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে চীনের কাছ থেকে সমরাস্ত্র সংগ্রহ করে আসছে। জাপানের সঙ্গে কৌশলগত সহযোগিতা বাড়লে চীন কিছুটা অস্বস্তি বোধ করতে পারে। তাই ঢাকাকে বড় শক্তিগুলোর মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে এগোতে হবে।জাপানের নতুন প্রতিরক্ষা নীতি ও ব্যবসায়িক আগ্রহজাপান সামরিক সরঞ্জাম রপ্তানির ক্ষেত্রে আইন শিথিল করার পর এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশে তাদের প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠান বাজার খুঁজছে। জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি ২০২২ সালে ঢাকায় দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্ভাব্য সহযোগিতার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। সে সময় মিৎসুবিশি ইলেকট্রনিকসের প্রতিনিধিদল ঢাকা সফর করে বিমানবাহিনীর রাডার ও আকাশ প্রতিরক্ষাবিষয়ক প্রযুক্তি নিয়ে আলোচনা করেছিল।অর্থায়ন ও বাস্তবায়নসূত্র মতে, জাপান প্রয়োজনে আর্থিক সহায়তার ভিত্তিতে সমরাস্ত্র বিক্রির প্রস্তাবও বিবেচনা করছে। এর আগে শেখ হাসিনার টোকিও সফরের প্রস্তুতিকালে এ বিষয়টি আলোচনায় আসে, যদিও সফরটি স্থগিত হয়েছিল।বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের (বিআইপিএসএস) প্রেসিডেন্ট মেজর জেনারেল (অব.) আ. ন. ম. মুনীরুজ্জামান মনে করেন, “এই চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ শুধু সমরাস্ত্র নয়, প্রযুক্তিগত সহায়তাও পাবে। এটি সশস্ত্র বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু এতে বাধ্যতামূলক কোনো রাজনৈতিক শর্ত নেই, তাই বাংলাদেশ এ থেকে অনেকটাই উপকৃত হবে।”অন্যান্য দেশের সঙ্গে জাপানের চুক্তি২০১৩ সালে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি সইয়ের মধ্য দিয়ে জাপান এ উদ্যোগ শুরু করে। এ পর্যন্ত ভারত, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন ও মঙ্গোলিয়াসহ ১২টি দেশের সঙ্গে জাপান প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি বিনিময়ের চুক্তি করেছে।বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত ১১টি দেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষাবিষয়ক ২০টি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করেছে। সর্বশেষ এ বছরের আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে মালয়েশিয়ার সঙ্গে একটি এমওইউ সই হয়।বাংলাদেশের জন্য লাভ ও চ্যালেঞ্জপ্রস্তাবিত বাংলাদেশ–জাপান প্রতিরক্ষা চুক্তি একদিকে সশস্ত্র বাহিনীকে আধুনিক প্রযুক্তি ও সরঞ্জামে সমৃদ্ধ করবে, অন্যদিকে সামুদ্রিক নিরাপত্তা ও সাইবার প্রতিরক্ষায় নতুন সক্ষমতা তৈরি করবে। তবে একই সঙ্গে কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও আঞ্চলিক ভূরাজনীতিতে ভারসাম্য রক্ষার চ্যালেঞ্জও থাকবে।সব মিলিয়ে এ চুক্তি বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা কূটনীতিতে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে বলে মনে করছেন কূটনীতিক ও বিশেষজ্ঞরা। সূত্র: প্রথম আলোভোরের আকাশ/মো.আ.
প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেশ পুনর্গঠনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।প্রবাসীদের বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা নিজ নিজ সামর্থ্যে অবদান রেখে জুলাই অভ্যুত্থানের ফলে সৃষ্ট পরিবর্তনকে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন।শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কে ‘এনআরবি কানেক্ট ডে: এমপাওয়ারিং গ্লোবাল বাংলাদেশিস’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান।ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমরা সর্বদা আপনাদের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করার উপায় খুঁজে বের করার পরিকল্পনা করছি। আপনাদের দেখে আমরা নতুন সংকল্প নিয়ে দেশে ফেরার আত্মবিশ্বাস পাই।’তিনি বলেন, দর্শকসারি থেকে কথা বলা খুব সহজ, কিন্তু আমরা চাই আপনারা মাঠে আমাদের সঙ্গে যোগ দিন এবং একসঙ্গে কাজ করুন।প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমার আত্মবিশ্বাস আরও বেড়ে গেছে; যখন দেখলাম যে রাজনৈতিক নেতারা এই সফরে আমাদের সঙ্গে যোগ দিতে রাজি হয়েছেন।বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুনের একটি প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। এ সময় তিনি জুলাই অভ্যুত্থানের পর থেকে গত ১৫ মাসে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি তুলে ধরেন। তিনি রেমিট্যান্সে ২১ শতাংশেরও বেশি প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখার জন্য বাংলাদেশি প্রবাসীদের প্রশংসা করেন এবং বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে সরকারি উদ্যোগের রূপরেখা তুলে ধরেন।বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান প্রবাসীদের অব্যাহত সমর্থন কামনা করেন এবং আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটদান পদ্ধতির বিষয়ে তাদের অবহিত করেন।অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফি সিদ্দিকী ‘ব্রিজিং বর্ডারস: কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড ডায়াসপোরা এনগেজমেন্ট’ শীর্ষক একটি ইন্টারেক্টিভ প্যানেল আলোচনা সঞ্চালনা করেন। আরও তিনজন প্যানেলিস্টের সঙ্গে এ আলোচনায় অংশ নেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ড. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন অনুষ্ঠানে অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের জন্য তাদের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বক্তব্য রাখেন।ভোরের আকাশ/মো.আ.
গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গীতে একটি রাসায়নিকের গুদামে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে তিনজন ফায়ার ফাইটারসহ চারজনের মৃত্যুতে গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) এক শোকবার্তায় তিনি বলেন, অগ্নিকাণ্ডে জীবন রক্ষার মহৎ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমাদের তিনজন সাহসী ফায়ার ফাইটারসহ চারজন প্রাণ হারিয়েছেন। এটি একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা। আমি নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।ড. ইউনূস বলেন, অগ্নি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা দিনরাত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষায় নিয়োজিত থাকেন। নিজেদের জীবনের মায়া ত্যাগ করে তারা অন্যের জীবন বাঁচানোর জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েন। তাদের এই আত্মত্যাগের কাছে জাতি চিরঋণী। আজকের এই দুর্ঘটনা আমাদের স্মরণ করিয়ে দিল যে দায়িত্ব পালনের সময় তারা কত বড় ঝুঁকি বহন করেন। তাদের এ মহৎ ত্যাগ জাতির ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।তিনি বলেন, এই দুর্ঘটনায় আমরা শুধু কয়েকজন প্রাণ হারাইনি, বরং দৃষ্টান্ত দেখলাম আমাদের সাহস, মানবিকতা আর কর্তব্যনিষ্ঠার প্রতীকের। ফায়ার সার্ভিস দেশের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য এবং সাহসী বাহিনী। সংকটময় সময়ে তারাই প্রথম ঝাঁপিয়ে পড়ে মানুষের পাশে দাঁড়ায়। আজ সেই মহৎ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তাদের জীবন দিতে হয়েছে। এটি সমগ্র জাতির জন্য গভীর শোকের বিষয়।প্রধান উপদেষ্টা শোকসন্তপ্ত পরিবারগুলোর প্রতি সান্ত্বনা জানিয়ে বলেন, আপনাদের প্রিয়জনরা নিছক প্রাণ হারাননি, তারা জাতির জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। দেশের প্রতিটি মানুষ তাদের আত্মত্যাগকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। আমি আপনাদের বেদনা ভাগ করে নিচ্ছি এবং দোয়া করছি আল্লাহ যেন আপনাদের ধৈর্য ও শক্তি দেন এই কঠিন সময়ে।নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে তিনি বলেন, এই বেদনাবহ ক্ষতি কখনো পূরণ হওয়ার নয়। তবে তাদের আত্মত্যাগ আমাদের অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে, যাতে আমরা একটি নিরাপদ বাংলাদেশ গড়তে পারি।উল্লেখ্য, গত ২২ সেপ্টেম্বর বিকেলে টঙ্গীর সাহারা মার্কেট টিনশেড সেমিপাকা ভবনে অবস্থিত একটি কেমিক্যালের গুদামে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিটের ৫৩ জন সদস্য আগুন নিয়ন্ত্রণ করে। তবে, প্রতিষ্ঠানটিতে থাকা কেমিক্যালের ড্রাম বিস্ফোরণে ফায়ার সার্ভিসের চারজন ও স্থানীয় একজনসহ পাঁচজন দগ্ধ হন। এরমধ্যে চারজনই মারা গেছেন।তারা হলেন ফায়ার সার্ভিসের ওয়্যারহাউজ ইন্সপেক্টর জান্নাতুল নাঈম, ফায়ার ফাইটার নুরুল হুদা, ফায়ার ফাইটার মো. শামীম ও দোকান কর্মচারী বাবু হাওলাদার।ভোরের আকাশ/তা.কা
ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে সর্বাত্মক প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে সরকার ও নির্বাচন কমিশন। নির্ধারিত মাসে নির্বাচন না হলে জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়তে পারে- অনেক দায়িত্বশীল ব্যক্তির মন্তব্যে এমন শঙ্কাও প্রকাশ পাচ্ছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ ইতোমধ্যে চলতি মাসে দু’বার স্পষ্টভাবে এমন শঙ্কার কথা জানিয়েছেন। বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দলের দায়িত্বশীল নেতারাও একই সুরে ঝুঁকির কথা বলছেন।এর মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিরাজ করছে পারস্পরিক টানাপোড়েন। কঠিন শর্তজুড়ে দিয়ে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নিচ্ছেন তারা। এমন পরিস্থিতিতে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ও জাতীয় নিরাপত্তার ঝুঁকির বিষয়টি দেশবাসীকে ভাবিয়ে তুলেছে।রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ঘনিয়ে আসছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। পাল্টে যাচ্ছে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জুলাই অভ্যুত্থানের অভিন্ন ঐক্য ভুলে দলীয় স্বার্থ রক্ষায় বেশি ঝুঁকছে দলগুলো। শুধু জুলাই সনদে নয়, বিভিন্ন কর্মসূচিতে পরস্পরের প্রতি দলগুলোর মন্তব্য ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে আক্রমণাত্মক আচরণ ও মনোভাব ফুটে উঠছে। দাবি পূরণ না হলে ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার হুমকিও নানাভাবে দিয়ে যাচ্ছে অনেক রাজনৈতিক দল। টেবিলে আলোচনা রেখেই ইতোমধ্যে রাজপথে কর্মসূচি শুরু করেছে জামায়াতসহ সাতটি রাজনৈতিক দল। দলগুলোর মাঝে সৃষ্ট এমন গোলযোগপূর্ণ পরিস্থিতি ‘নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ’কে পুনর্বাসিত হওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি করে দিতে পারে- এমন আতঙ্কও করছেন বিশ্লেষকরা।ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে সরকার ও নির্বাচন কমিশন (ইসি)। প্রধান উপদেষ্টা থেকে শুরু করে অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা প্রায় প্রতিদিনই ঘোষিত নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই নির্বাচন আয়োজন করতে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে যাচ্ছেন। কোনো শক্তিই নির্বাচন ব্যাহত করতে পারবে না বলেও দেশবাসীকে আশ্বস্ত করছেন তারা। নির্বাচন আয়োজনে সরকারের আন্তরিকতা থাকলেও জুলাই সনদসহ বিভিন্ন ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর অনৈক্যে স্বস্তিবোধ করছেন না সাধারণ মানুষ। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সামনের দিনগুলোতে বিপদের অশনি সংকেত দেখতে পাচ্ছেন তারা।জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকির শঙ্কানির্ধারিত মাসে নির্বাচন না হলে জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়তে পারে- অনেক দায়িত্বশীল ব্যক্তির মন্তব্যে এমন শঙ্কাও প্রকাশ পাচ্ছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ ইতোমধ্যে চলতি মাসে দু’বার স্পষ্টভাবে এমন শঙ্কার কথা জানিয়েছেন। গতকাল শনিবার ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন নিয়ে কোনো অনিশ্চয়তা দেখেন কিনা- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমি এখন পর্যন্ত কোনো অনিশ্চয়তা দেখি না। আমি যেটা মনে করি, ফেব্রুয়ারিতে অবশ্যই নির্বাচন হওয়া দরকার। নির্বাচন না হলে দেশে যে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা অভ্যন্তরীণভাবে তৈরি হওয়ার আশঙ্কা আছে, সে রকম পরিস্থিতিতে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য এটা একধরনের হুমকি তৈরি করতে পারে। একধরনের বিপদ তৈরি করতে পারে। এটা রাজনৈতিক দলগুলোকে বুঝতে হবে। সবাইকেই একসঙ্গে আসতে হবে। সরকারকে কঠোর অবস্থান নিয়ে, রাজনৈতিক দলগুলোকে একত্র করে, সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনটা যেন অবশ্যই অনুষ্ঠিত হয়।’এর আগে গত ১৩ সেপ্টেম্বর রাজধানীতে ‘নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক সমঝোতার পথ’ শিরোনামের গোলটেবিল বৈঠকে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন না হলে বাংলাদেশে কেবল অভ্যন্তরীণ অস্থিতিশীলতা তৈরি হবে, তা নয়; জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। আমি তা-ই মনে করি। সেই কারণে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রয়োজন এ জিনিসটা মোকাবিলা করা।’গত ১৫ সেপ্টেম্বর জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘সংস্কার সংস্কারের মতো চলবে, এটি কনটিনিউ প্রসেস। বিচারেও টাইম লিমিট করা যায় না, তাতে অবিচার হবে। সেটা (বিচার) চলবে, যে সরকারই আসুক। কিন্তু নির্বাচনকে কন্ডিশনাল করা যাবে না। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন না হলে রিজিওনাল সিকিউরিটির জন্য থ্রেড হতে পারে।’তিনি বলেন, ‘ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠান যেন না হতে পারে, যেন একটি অনিশ্চিত পরিবেশ সৃষ্টি হয়, ফ্যাসিবাদী শক্তি সেই চেষ্টা করছে। ফ্যাসিবাদী শক্তি সুযোগ পেলে, আস্কারা পেলে জাতীয় জীবনের জন্য, এমনকি জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হবে। আমি বলছি, এটি রিজিওনাল সিকিউরিটির জন্য থ্রেড হতে পারে। প্রতিবেশী শক্তিধর দেশগুলোর প্রতি ইঙ্গিত করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘এখানে দুটি রিজিওনাল শক্তি। আমরা বাংলাদেশকে সেখানে নিতে চাই না। নির্ধারিত টাইম লাইনে নির্বাচন হতেই হবে।’সম্প্রতি এক টেলিভিশন টক শোতে চিকিৎসক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডা. সাখাওয়াত হোসেন সায়ন্থ বলেছেন, দেশের গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে, অর্থনৈতিক অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে এবং উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের নিরাপদে দায়িত্ব থেকে সরে আসতে নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। তিনি সতর্ক করে বলেন, নির্বাচন না হলে দেশে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, যা ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠীর উত্থানের সুযোগ করে দেবে এবং গৃহযুদ্ধের ঝুঁকি সৃষ্টি করবে। সরকারের তরফ থেকে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়ে এতদূর এগিয়ে আসার পর যদি নির্বাচন না হয়, তবে তা একটি অস্বাভাবিক অবস্থা হবে, যা দেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।’তিনি আরও বলেন,‘এই ধরনের অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি হলে ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠী সুযোগ নেবে। এই পরিস্থিতি সরকার বনাম কোনো রাজনৈতিক দল বা দলগুলোর মধ্যে সংঘাতের জন্ম দেবে, যা কেবল ঘরের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। গৃহযুদ্ধ হলে তা গৃহের ভেতরে সীমিত থাকবে না, বরং গৃহে গৃহে ছড়িয়ে পড়বে। এতে মধ্যবর্তী স্থান আর নিরাপদ থাকবে না।’সম্প্রতি বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেছেন, ‘দলীয় এজেন্ডার কারণে ফেব্রুয়ারির নির্বাচন অনিশ্চিত হয়ে গেলে গণঅভ্যুত্থানের অর্জন বিপর্যয়ের মধ্যে পড়বে। দেশের বিদ্যমান নিরাপত্তা ঝুঁকি আরও আরও বৃদ্ধি পাবে এবং সে রকম পরিস্থিতিতে আম-ছালা দুটোই চলে যেতে পারে।’অনিশ্চয়তা কাটেনি জুলাই সনদের চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় মাসের জন্য কাজ শুরু করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রথম দফার আনুষ্ঠানিক আলোচনা গত ৩১ জুলাই শেষ হয়েছে। পূর্বঘোষিত জুলাইয়ের মধ্যে সনদ ঘোষণা করতে পারেনি কমিশন। তারপর আগস্টের প্রথমার্ধেও সনদ ঘোষণার প্রস্তুতি নিয়েছিল কমিশন। দলগুলোর মধ্যে অনৈক্য থাকায় কমিশনের মেয়াদ বাড়ানো হয় ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এই মেয়াদেও ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি রাজনৈতিক দলগুলো। ফলে আগামী ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত তৃতীয় দফা মেয়াদ বেড়েছে ঐকমত্য কমিশনের। কিন্ত দলগুলোর মধ্যে ঐক্যের তুলনায় অনৈক্যের তীব্রতাই যেন বেড়েছে।অস্থিরতার শঙ্কা বাড়ছে প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা অনুসারে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর পাঁচ মাস বাকি। কিন্ত বিষয়টি নিয়ে জনমনে এখনো অনিশ্চয়তা কাটেনি। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে- ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন হবে। কিন্ত দলগুলোর মতবিরোধ এবং জটিল জটিল শর্তজুড়ে দেওয়ার মধ্যে দেশে সম্ভাব্য অস্থিরতার আশঙ্কা করছেন সাধারণ মানুষ।বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, ‘দাবিগুলোর বিষয়ে রাজনৈতিক পক্ষগুলো একে অপরকে ছাড় দিতে হবে। অন্যথায় দেশের জন্য সমূহ সংকট তৈরি করবে। আর সেই সংকট সবার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। তাই রাজনৈতিক দলগুলোকে সবকিছু চিন্তা-ভাবনা করেই সব করা উচিত।’গত ১৫ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘জুলাই জাতীয় সনদসহ সংশ্লিষ্ট অন্য বিষয়গুলোতে সমঝোতা না হলে রাজনৈতিক অচলাবস্থা তৈরি হতে পারে।’রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেন, ‘দেশে যখন একটা সংকট হয়, তখন সব রাজনৈতিক শক্তি একত্র হয়ে সেই সংকট থেকে উত্তরণের চেষ্টা করে। নেপালে যে ঘটনা ঘটল, আমরা জানলাম, সেখানে দ্রুত একজনকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী এবং তিন-চারজনের একটি মন্ত্রিসভা গঠন করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে- ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন হবে। সে দেশের জনগণ এতে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে। কিন্ত আমাদের এখানে তেমনটা হয়নি। আমাদের রাজনৈতিক শক্তিগুলো কোনো বিষয়েই তো একমত হতে পারছে না। তারা যদি একমত না হয় তাহলে নির্বাচন ঝুলে যাবে এবং দেশে ভয়ানক অনিশ্চয়তা দেখা দেবে।’ভোরের আকাশ/এসএইচ