সালমা (রা.)
ভোরের আকাশ ডেস্ক
প্রকাশ : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৯:২৫ এএম
ছবি : সংগৃহীত
নবীযুগে সালমা (রা.) বিশেষ কৃতিত্ব অর্জন করেছিলেন ধাত্রী বা প্রসূতিসেবায়। এটি নিছক পেশা নয়, বরং এক মহান দায়িত্ব, যেখানে ধাত্রী গর্ভবতী নারীর যত্ন নেন, প্রসবের সংকটময় মুহূর্তে পাশে দাঁড়ান এবং সন্তান জন্মের পর মা ও নবজাতকের সেবা-শুশ্রূষা করেন।
নবী করিম (সা.)-এর যুগে এই কাজ ছিল একদিকে চিকিৎসা, অন্যদিকে মানবসেবার এক অমূল্য পাথেয়।
সালমা (রা.) নবী করিম (সা.)-এর আজাদকৃত দাসী ছিলেন। এই মহীয়সী নারী খাদিজা (রা.) এবং মারিয়াহ কিবতিয়া (রা.)-এর সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় তাদের দেখাশোনা ও যত্ন করেছিলেন। (আল-তাবাকাতুল কুবরা : ১০/২১৬, ক্রম নং : ৪৯৮৭)
তিনি খদিজা (রা.)-এর সমস্ত সন্তানদের ধাত্রীত্ব গ্রহণ করেছিলেন। এই নৈতিক ও মানবিক দায়িত্ব তাঁর অন্তরের গভীরতা এবং ইসলামের প্রতি নিবেদিত চেতনারই পরিচয় বহন করে।
হিজরত করে মক্কা থেকে মদিনায় যাওয়া এবং নবী করিম (সা.)-এর সঙ্গে সময় কাটানো ছিল তাঁর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো, তিনি গাজওয়া খাইবার-এ সরাসরি অংশগ্রহণ করেছিলেন। ইবনে সাদ (রহ.) লিখেছেন : 'সাহস ও নিষ্ঠার প্রতীক এই নারী গাজওয়ায়ে খাইবার-এ নবী করিম (সা.)-এর সাথে অংশগ্রহণ করেছিলেন।' (আত-তাবাকাতুল কুবরা, খণ্ড ১০, পৃষ্ঠা ২১৬)
তাঁর সাহস ও ইসলামের প্রতি আনুগত্য কেবল খাইবারেই সীমাবদ্ধ ছিল না। ইতিহাসে উল্লেখ আছে, তিনি গাজওয়ায়ে হুনাইন-এও উপস্থিত ছিলেন। মুহাম্মাদ সাদিক কারবাসি (রহ.) লিখেছেন : 'কথিত আছে, তিনি ৮ হিজরিতে গাজওয়ায়ে হুনাইনে অংশগ্রহণ করেছিলেন।' (মুজামু আনসারিল হুসাইন, পৃ. ৮৪)
তিনি কেবল দাই ও প্রসূতি নার্স ছিলেন না, বরং নার্সিংয়েও পারদর্শী ছিলেন। মুহাম্মদ আল হাসান (রহ.) লিখেছেন : 'তিনি একজন ধাত্রী এবং নার্স ছিলেন যিনি ফাতিমা (রা.)-এর প্রসূতির পরবর্তী সময়ের পরিচর্যা ও সেবা করেছিলেন। বলা হয়, তিনি ফাতিমা (রা.)-এর মৃত্যুর সময়ের অসুস্থতার মধ্যেও তাঁর সেবা করেছিলেন।' (আলামুন নিসায়িল মৃত্যুর, পৃষ্ঠা ৫১৫)
ড. হুসেইন ফালাহ কাসাসবা (রহ.) উল্লেখ করেছেন : 'এদের মধ্যে কিছু নারীও ছিলেন, যারা প্রসূতি ও শিশুসন্তান জন্মদান সংক্রান্ত পেশায় নিয়োজিত ছিলেন, যেমন সালমা (রা.), যিনি সাফিয়া বিনতে আব্দুল মুত্তালিব (রা.)-এর আজাদকৃত দাসী ছিলেন। মারিয়াহ কিবতিয়া (রা.)-এর তঁার তত্ত্বাবধানে ইব্রাহিম (রা.)-কে জন্ম দিয়েছেন।' (Educational & Social Science Journal, খণ্ড ৬/১, পৃষ্ঠা ৬৮২)
ড. আমিমাহ আবুবকর ও ড. হাদি সাআদি তঁাকে 'যুদ্ধক্ষেত্রের শল্যচিকিৎসক' হিসেবে উল্লেখ করেছেন। (আন নিসা ওয়া মাহনাতুত তিব ফিল মুজতামাআতিল ইসলামিয়্যাহ, পৃষ্ঠা : ১৯)
এ প্রসঙ্গে তঁার থেকে বর্ণিত একটি হাদিস রয়েছে, যেখানে তিনি বলেন : 'যখনই রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কোনো ক্ষত বা আঘাত হতো, তখন তিনি আমাকে নির্দেশ দিতেন সেটিতে মেহেদি লাগানোর।' (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২০৫৪)
এর পেছনের কারণ হলো মেহেদির বহুমুখী চিকিৎসাগত গুণাবলি :
১. মেহেদির মধ্যে এন্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং এন্টি-ফাঙ্গাল গুণ থাকে, যা ক্ষতকে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
২. এটি প্রাকৃতিকভাবে শীতলতা দেয়, ফলে আরামদায়ক অনুভূতি সৃষ্টি হয়।
৩. এর মধ্যে প্রদাহ-নাশক গুণ আছে, যা ক্ষতের ব্যথা ও ফোলা কমায়।
৪. এটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপ্টিক হিসেবে কাজ করে, যা ত্বকের রোগ ও ক্ষত দ্রুত আরোগ্য করতে সহায়ক।
এই কারণগুলোর জন্য নবী করীম (সা.) ক্ষতের ওপর মেহেদি লাগানোর নির্দেশ দিয়েছেন। (ফাতওয়ায়ে রশিদিয়্যাহ, পৃষ্ঠা ৫৮৯)
সালমা (রা.)-এর মৃতু্য কখন ঘটেছে এই বিষয়টি নিয়ে অধিকাংশ গ্রন্থে কোনো উল্লেখ নেই। তবে মুহাম্মাদ সাদিক কারবাসি (রহ.) তাঁর মৃত্যুর সাল ২০ হিজরি বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি লিখেছেন : 'তিনি ২০ হিজরিতে ইনে্তকাল করেছেন।' (মুজামু আনসার হুসাইন, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৯৫)
ভোরের আকাশ/মো.আ.