ছবি: সংগৃহীত
দেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতিকে সম্মান জানাতে সরকার নতুন দুটি জাতীয় দিবস ঘোষণা করেছে। প্রতিবার ৭ অক্টোবর এবং ২৫ ফেব্রুয়ারি এই দিনগুলো বিশেষভাবে পালিত হবে।
প্রধান উপদেষ্টা অফিসের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে সোমবার বিকেলে জানানো হয়, শহীদ আবরার ফাহাদের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আগামী মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৭টায় ঢাকাসহ দেশের সকল শিল্পকলা একাডেমিতে প্রামাণ্যচিত্র ‘ইউ ফেইলড টু কিল আবরার ফাহাদ’ প্রদর্শিত হবে। ঢাকার প্রদর্শনীতে উপস্থিত থাকবেন আবরার ফাহাদের বাবা।
পোস্টে আরও জানানো হয়েছে, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় বর্তমানে দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ও তাদের সৃষ্টিকে উদযাপন করার জন্য একটি ক্যালেন্ডার তৈরির কাজ করছে। এই ক্যালেন্ডারে সাংস্কৃতিক উৎসবের পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলোও অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে আবরার ফাহাদের মৃত্যুবার্ষিকী ও বিডিআর ম্যাসাকার দিবসকে এবার থেকে সরকারিভাবে প্রতি বছর পালিত হবে।
ভোরের আকাশ//হ.র
সংশ্লিষ্ট
২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে দেশের সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ব্যাচেলর অব মেডিসিন, ব্যাচেলর অব সার্জারি (এমবিবিএস) কোর্সের ভর্তি পরীক্ষা আগামী ১২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে।সোমবার (৬ অক্টোবর) স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় এ তারিখ চূড়ান্ত করা হয়।স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক রুবীনা ইয়াসমীন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও রমজান মাসের সময় বিবেচনায় এনে এবার এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা আগেভাগে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।সভায় উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নাজমুল হোসেন, বিএমডিসি সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. সাইফুল ইসলাম, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের যুগ্ম সচিব মল্লিকা খাতুন, এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক মহিউদ্দিন মাতুব্বরসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে ৫ হাজার ৩৮০টি এবং ৬৭টি অনুমোদিত বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ৬ হাজার ২৯৩টি আসন রয়েছে। এছাড়া একটি আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজ ও পাঁচটি বেসরকারি আর্মি মেডিকেল কলেজ কার্যক্রম পরিচালনা করছে।উল্লেখ্য, গত শিক্ষাবর্ষে (২০২৪-২৫) এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৭ জানুয়ারি। এবার তা এক মাসেরও বেশি আগে নেওয়া হচ্ছে।ভোরের আকাশ//হ.র
ভবিষ্যতে বাংলাদেশে বজ্রপাতের ঘনত্ব ও তীব্রতা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড. মো. আব্দুল মান্নান। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, প্রাথমিক সতর্কতামূলক ব্যবস্থা এবং প্রতিরক্ষা অবকাঠামোর অভাবে গ্রামীণ অঞ্চলের মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়বে।সোমবার (৬ অক্টোবর) বাসসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ড. মান্নান বলেন, “গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের যারা কৃষিকাজ বা মাছ ধরার মতো খোলা আকাশের নিচে কাজ করেন, তারা বজ্রপাতের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছেন। সতর্কতামূলক প্রযুক্তি ও আশ্রয়কেন্দ্রের অভাব তাদের ঝুঁকি আরও বাড়াচ্ছে।”তার মতে, চলমান জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দেশে বজ্রপাতজনিত দুর্যোগের আশঙ্কা ক্রমেই বাড়ছে। বর্ষা মৌসুমের আগে বজ্রসহ বৃষ্টিপাত এবং বিজলি চমকানোর প্রবণতা বাড়বে বলে তিনি পূর্বাভাস দিয়েছেন। আগে যেসব এলাকায় বজ্রপাতের ঘটনা কম ঘটত, ভবিষ্যতে সেসব অঞ্চলেও বজ্রপাত বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।ড. মান্নান জানান, প্রতি বছর বাংলাদেশে গড়ে ৩০০ জনেরও বেশি মানুষ বজ্রপাতে প্রাণ হারাচ্ছেন। বিশ্বের সবচেয়ে বজ্রপাতপ্রবণ দেশগুলোর অন্যতম হলো বাংলাদেশ। তিনি বলেন, “বজ্রপাত বৃদ্ধির এ প্রবণতা জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে বজ্রপাতের আওতা ও তীব্রতা দুই-ই বাড়ছে।”তিনি আরও বলেন, “বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে বায়ুমণ্ডলে শক্তি সঞ্চয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের প্রাক-বর্ষা মৌসুমে ‘কনভেক্টিভ অ্যাভেইলেবল পটেনশিয়াল অ্যানার্জি (CAPE)’ প্রায় ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে—যা বজ্রপাতের তীব্রতা বৃদ্ধির স্পষ্ট ইঙ্গিত।”আঞ্চলিকভাবে দূষণের হার বাড়াও বজ্রপাত বৃদ্ধির অন্যতম কারণ বলে মনে করেন এই আবহাওয়াবিদ। তিনি জানান, “বায়ুদূষণের কারণে বায়ুমণ্ডলের কণার ঘনত্ব বেড়ে যাচ্ছে, যা বজ্রপাত সৃষ্টির প্রক্রিয়ায় ভূমিকা রাখছে। গবেষণায় দূষণের মাত্রা এবং বজ্রপাত বৃদ্ধির মধ্যে শক্তিশালী যোগসূত্র পাওয়া গেছে।”ড. মান্নান আরও উল্লেখ করেন, গ্রামীণ এলাকায় লম্বা গাছ নির্বিচারে কেটে ফেলার ফলে প্রাকৃতিকভাবে বজ্রপাত থেকে সুরক্ষা কমে গেছে। “গাছ বজ্রপাতের বিদ্যুৎকে মাটিতে নামিয়ে আনে—কিন্তু গাছ কমে যাওয়ায় মানুষ সরাসরি ঝুঁকিতে পড়ছে,” বলেন তিনি।ভৌগোলিক কারণেও বাংলাদেশ বজ্রপাতের ক্ষেত্রে নাজুক অবস্থানে রয়েছে বলে জানান এই বিশেষজ্ঞ। প্রাক-বর্ষা মৌসুমে উচ্চ তাপমাত্রা, আর্দ্রতা ও বায়ুমণ্ডলীয় অস্থিরতা বজ্রপাতের আদর্শ পরিবেশ তৈরি করে।সাম্প্রতিক গবেষণা অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বজ্রপাতে মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশে। এর প্রধান কারণ গ্রামীণ অঞ্চলে ঘনবসতি এবং মাঠে কর্মরত মানুষের সংখ্যা বেশি হওয়া। গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, প্রাক-বর্ষা মৌসুমে বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে বজ্রপাতের ঘটনা সবচেয়ে ঘন ঘন ঘটে।বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, ২০১৬ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত দেশে প্রতি বর্গকিলোমিটারে বছরে গড়ে ১২০টি বজ্রপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যার এক-তৃতীয়াংশ মাটিতে আঘাত হেনেছে। সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা ও সিলেট এলাকায় বজ্রপাতে মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি।উল্লেখ্য, গত রোববার (৫ অক্টোবর) দেশের চার জেলায় বজ্রপাতে অন্তত আটজনের প্রাণহানি ঘটে।ভোরের আকাশ//হ.র
আগামী ১০ অক্টোবরের মধ্যে সুপারিশসহ জুলাই সনদ সরকারের কাছে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এরপর সরকারের মতামতের ভিত্তিতে সনদ স্বাক্ষরের দিন নির্ধারণ করা হবে। আর আগামী ১৫ অক্টোবরের মধ্যে সনদ স্বাক্ষর সম্ভব হতে পারে বলে আশা করছে কমিশন। কিন্তু শেষ বেলাতেও সংস্কারের সব বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছতে পারেনি সব দল। মোট ৮৪টি বিষয়ের ওপর রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতৈক্য হয়েছে। কিন্তু এর কিছু বিষয়ের ক্ষেত্রে নোট অব ডিসেন্ট (আপত্তি) রয়েছে। আর গণভোটের সময় নিয়ে এখনও বিপরীত অবস্থানে বিএনপি ও জামায়াত। সব মিলিয়ে দলগুলোর ঐকমত্যের পূর্ণাঙ্গ সনদ সরকারের হাতে তুলে দিতে পারছে না ঐক্য কমিশন। ঐকমত্য কমিশনের তৃতীয় মেয়াদের বর্ধিত সময় শেষ হবে আগামী ১৫ অক্টোবর। আর এই মধ্যেই সুপারিশ চূড়ান্ত করে সরকারের কাছে দেওয়ার বিষয়ে কমিশন আশাবাদী বলে জানিয়েছেন ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।তিনি বলেন, এরই মধ্যে আলোচনায় যুক্ত ৩০টি দলের তিন-চতুর্থাংশ দলের পক্ষ থেকে সনদে স্বাক্ষরের জন্য প্রতিনিধিদের নামও পাঠানো হয়েছে। আগামীকাল বুধবার বিকেলে আবারও রাজনৈতিক দল ও জোটগুলোকে নিয়ে বৈঠক হবে। পাশাপাশি আইনি ও সাংবিধানিক কাঠামো স্পষ্ট করার জন্য বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সঙ্গেও পৃথকভাবে বৈঠক করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান আলী রীয়াজ।জুলাই সনদকেন্দ্রিক জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ও রাজনৈতিকগুলোর গত কয়েক মাসের সিরিজ বৈঠক পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে চলমান দীর্ঘ সংলাপপ্রক্রিয়ায় সমঝোতার অংশ হিসেবেই বেশ কয়েকটি বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছিল কয়েকটি রাজনৈতিক দল। ওই বিষয়গুলো বাস্তবায়নের কথা জুলাই সনদের চূড়ান্ত ভাষ্যের অঙ্গীকারনামায় ছিল না। কারও কারও দ্বিমত থাকা এই বিষয়গুলোর নিষ্পত্তি কীভাবে হবে, তার উল্লেখ না থাকায় প্রশ্ন তুলেছে কয়েকটি দল। এমন অবস্থায় চূড়ান্ত ভাষ্য সংশোধন করে নোট অব ডিসেন্ট বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচনে বিজয়ী দলের ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি যুক্ত করা হচ্ছে।জুলাই সনদের অঙ্গীকারনামায় সাতটি ধারা রয়েছে। নতুনভাবে যুক্ত হওয়া আট নম্বর ধারায় বলা আছে, সনদের যেসব ক্ষেত্রে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দেওয়া হয়েছে, জাতীয় নির্বাচনে জনগণের ম্যান্ডেট পাওয়া রাজনৈতিক দল সে মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে পারবে।ঐক্য-অনৈক্যের সনদ : জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি ড. আলী রীয়াজ জানিয়েছেন, ‘মোট ৮৪টি বিষয়ের ওপর রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতৈক্য হয়েছে, যদিও কিছু বিষয়ের ক্ষেত্রে ভিন্নমত রয়েছে।’জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, অভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন বাংলাদেশ গঠনে এবং সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারগুলোতে বিএনপি ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে। অনেকগুলো সংস্কার প্রস্তাব ছিল। তার মধ্যে এই জায়গায় গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারগুলোতে বিএনপি ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে। মনে করেন ৫০টি সংস্কারের চেয়ে ৫টি সংস্কার বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিএনপি সেখানে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে।তিনি বলেন, কিন্তু ‘নোট অব ডিসেন্ট’ মানে এমন না যে ঐক্যমত কমিশন সেগুলো বাদ দিয়ে দিবে। এখন পর্যন্ত আমরা ওগুলোকে পাচ্ছি, দেখছি। যেগুলো ঐক্যমত কমিশনে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে এগুলো তারা জুলাই সনদে দেখতে চায় এবং জুলাই সনদের ড্রাফট (খসড়া) তৈরি হয়েছে। আমরা মনে করি ওইগুলো যদি আইনগত ভিত্তি দেওয়া হয়।’সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের আগে গণভোট ও পিআর (প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) দাবিতে জাতি বিভক্ত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। গতকাল সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের একটি অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, ‘নির্বাচনের আগে গণভোট ও পিআরের দাবিতে জাতিকে বিভক্ত করা হচ্ছে, তা মোকাবিলাই নির্বাচনী চ্যালেঞ্জ।’সনদ বাস্তবায়নে নির্বাচনের আগে গণভোট দাবি করেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ। গত রোববার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আইনিভিত্তির জন্য গণভোটে বিএনপিসহ সব দল একমত। জনগণ গণভোটে অভ্যস্ত নয়। তবে জামায়াত মনে করে, জাতীয় নির্বাচন কোনো ধরনের সমস্যা ছাড়া করতে গণভোট নভেম্বর অথবা ডিসেম্বরে হতে পারে। সংসদ নির্বাচনের তপশিলের আগেও হতে পারে। গণভোট হয়ে গেলে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হতে কোনো বাধা নেই। এতে আমরাও বাঁচি, জাতিও বাঁচে। তবে গণভোট আগে না পরে– এটি নিয়ে আলোচনার সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।বিএনপির সঙ্গে দূরত্ব নেই দাবি করে তিনি বলেন, গণভোটের ফল বিপক্ষে গেলেও জামায়াত মেনে নেবে। গণভোটের মাধ্যমে সংস্কারের জন্য জামায়াত সব সময় সোচ্চার ছিল। সনদের আইনি ভিত্তির জন্য গণভোটের পক্ষে সবাই মত দিয়েছে।ঐকমত্য কমিশনের প্রেক্ষাপট : সাড়ে সাত মাস ধরে অনৈক্যের একই আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে জুলাই সনদ। সিরিজ বৈঠকেও মিলছে না সফলতা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, চলমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় জুলাই সনদের ওপরই নির্ভর করছে ফেব্রুয়ারির অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের সফলতা। কিন্তু নিজেদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে দলগুলো। শুধু তাই নয়, সনদকেন্দ্রিক নিজেদের দাবি পূরণ না হলে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার হুমকি প্রদান করে চলেছে অনেক রাজনৈতিক দল। আগামী ১৫ অক্টোবর ঐকমত্য কমিশনের তৃতীয় দফার বর্ধিত মেয়াদ শেষ হবে। জুলাই সনদ ঘোষণা নিয়ে ঘটছে একের পর এক অপ্রত্যাশিত ঘটনা। জুলাই সনদের ভিত্তিতেই জাতীয় নির্বাচন- অনেক আগে থেকেই এমন দাবিতে শক্ত অবস্থানে রয়েছে- এনসিপি ও জামায়াত। এই সনদেই সংস্কার, বিচার, সংবিধানসহ বিভিন্ন মৌলিক ইস্যুর সমাধান থাকতে হবে বলে দল দুটির দাবি। আর এই জুলাই সনদ বাস্তবায়ন না হওয়ায় ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে এনসিপি ও জামায়াতের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ততা ফুটে উঠছে না। ইস্যুটি নিয়ে দলগুলোর বাগযুদ্ধ শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক মাঠযুদ্ধে গড়ানোর পরিস্থিতিও সৃষ্টি হয়েছে। শুধু তাই নয়, জুলাই সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ কয়েকটি অভিন্ন দাবিতে মাঠে নেমেছে জামায়াতে ইসলামীসহ সাতটি দল।রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, শুরু থেকেই জুলাই সনদ বাস্তবায়নে আন্তরিকতা দেখিয়ে আসছে অন্তর্বর্তী সরকার। দলগুলোর অনৈক্য দূর করতে একের পর এক উদ্যোগ ব্যাহত রয়েছে। শুধু ঐকমত্য কমিশন নয়, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিজেও একাধিক সংলাপের মাধ্যমে দলগুলোকে ঐকমত্যে পৌঁছানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ছাত্র-জনতার ‘জুলাই সনদ’ ঘোষণার ঘটনা ঘটলে দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা ছিল। দেশকে এমন অস্থিতিশীল অবস্থা থেকে রক্ষা করতে জুলাই সনদ ঘোষণার দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তী সরকার।এভাবে চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় মাসের জন্য কাজ শুরু করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রথম দফার আনুষ্ঠানিক আলোচনা গত ৩১ জুলাই শেষ হয়েছে। পূর্বঘোষিত জুলাইয়ের মধ্যে সনদ ঘোষণা করতে পারেনি কমিশন। তারপর আগস্টের প্রথমার্ধেও সনদ ঘোষণার প্রস্তুতি নিয়েছিল কমিশন। দলগুলোর মধ্যে অনৈক্য থাকায় কমিশনের মেয়াদ বাড়ানো হয় ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এই মেয়াদেও ঐকমত্যে পৌঁছতে পারেনি রাজনৈতিক দলগুলো। ফলে আগামী ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত তৃতীয় দফা মেয়াদ বেড়েছে ঐকমত্য কমিশনের। কিন্তু দলগুলোর মধ্যে ঐক্যের তুলনায় অনৈক্যের তীব্রতাই যেন বেড়েছে।এর আগে, গত ১২ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে সাত সদস্যের জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়। সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজকে এই কমিশনের সহ-সভাপতি করা হয়। প্রতিবেদন দাখিলের জন্য কমিশনকে ছয় মাস সময় দেওয়া হয়। সেই সময় শেষ হওয়ার তারিখ ছিল আগামী ১৫ আগস্ট। তার পর থেকেই দফায় দফায় বাড়ানো হচ্ছে ঐকমত্য কমিশনের।ভোরের আকাশ/এসএইচ
দেশের মাঠ ও কেন্দ্রীয় প্রশাসনে চলছে এক ধরনের অস্থির অবস্থা। সেই সঙ্গে আমলাদের মধ্যে রয়েছে বদলি ও অবসর আদেশের আতঙ্ক। কারণ আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রশাসনের রূপরেখা ও কার্যক্রম কি হবে এবং প্রশাসনের ভূমিকা কি হবে-রাজনীতিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যেও এ নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। ফলে বর্তমানে মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রশাসনের পরিবর্তন এবং চলমান অস্থিরতা।এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবের পদও প্রায় ১ মাস শূন্য। ফলে অনেকেরই আগ্রহ রয়েছে এই গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের সচিব পদটির দিকে। অন্যদিকে, কোনো কোনো রাজনৈতিক দল মাঠ ও কেন্দ্রীয় প্রশাসনের বিশেষ করে ডিসি, ইউএনও এবং অধিদপ্তরগুলোর মহাপরিচালক পদ এবং সচিব পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে তাদের অনুগত ও দলীয় ঘরানার কর্মকর্তাদের নিয়োগ করতে জোর তৎপরতা শুরু করেছে। আর সার্বিক পরিস্থিতিতে থমকে আছে অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিব পদের পদোন্নতি প্রক্রিয়াও। এছাড়া নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠ প্রশাসন এবং কেন্দ্রীয় প্রশাসনে আরো বড় পরিবর্তন আসছে বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সহ একাধিক সূত্রে জানা গেছে।প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, জনপ্রশাসন সচিব পদে কোন কর্মকর্তাকে পোস্টিং দেওয়া হচ্ছে- বর্তমানে প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয় থেকে শুরু করে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মধ্যে এ বিষয়ে রয়েছে ব্যাপক আলোচনা ও আগ্রহ। এছাড়া বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও বেশ তৎপরতা চালোচ্ছে।সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের বিগত ১৪ মাসে মাঠ ও কেন্দ্রীয় প্রশাসনে কর্মকর্তাদের বারংবার বদলি-পদায়ন-অবসর-বাধ্যতামূলক অবসর এবং পদোন্নতি দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শুরু থেকেই দুবৃত্তায়নমুক্ত প্রশাসন গড়তে আওয়ামী ঘরানার এবং দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ থাকা কর্মকর্তাদের সরিয়ে নিরপেক্ষ, সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তাদের বিভিন্ন পদে নিয়োগে ও বদলি করার ওপর বাড়তি জোর দিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় সচিবদের মধ্যে যিনি গ্রহণযোগ্য, সৎ, যোগ্য এবং প্রশাসন পরিচালনায় দক্ষ কোন কর্মকর্তাকে জনপ্রশাসনের সচিব পদে নিয়োগ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার।অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ বিভিন্ন পদে নিয়োগ নিয়ে কিছুটা বিতর্ক থাকলেও সরকার যোগ্যদের বিভিন্ন পদে নিয়োগের বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে। আর অন্যদিকে, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে জনপ্রশাসন সচিব পদে নিয়োগের বিষয়টি বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে কয়েকজন উপদেষ্টা একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের পক্ষের অনুগত কর্মকর্তাদের জনপ্রশাসন সচিবসহ বিভিন্ন পদে নিয়োগের জন্য জোর তৎপরতা চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জনপ্রশাসন সচিবসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে নিয়োগ দেশের স্বার্থে অতি গুরুত্বপূর্ণ। আর এজন্য নিরপেক্ষ, সৎ, গ্রহণযোগ্য ও জনপ্রশাসন ও মাঠ পর্যায়ে অভিজ্ঞ পেশাদার কর্মকর্তাদের এসব পদে নিয়োগ দিতে সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে।সূত্র জানায়, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে যাওয়ার আগেই প্রধান উপদেষ্টা সম্ভাব্য বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে নিয়োগের বিষয়ে সরকারের কয়েকজন নীতিনির্ধারকের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের চাকরিজীবনের সার্বিক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে ‘খোঁজ-খবর’ নেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। আর এরপর এ সংক্রান্ত সার-সংক্ষেপ প্রস্তুত করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। বিষয়টি অনুমোদনের জন্য শিগগির প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে পাঠানো হবে।এদিকে, জনপ্রশাসন সচিব পদ শূন্য থাকায় অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিব পদোন্নতি প্রক্রিয়া থমকে গেছে। নতুন সচিব যোগ না দেওয়া পর্যন্ত পরবর্তী সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের (এসএসবি) বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। যে কারণে পদোন্নতিপ্রত্যাশী কর্মকর্তা পড়েছেন বিড়ম্বনায়। চলতি সপ্তাহে নতুন জনপ্রশাসন সচিব নিয়োগ হতে পারে। তবে সচিব নিয়োগে খুব সতর্কতা অনুসরণ করছে সরকার। সম্ভাব্য সচিবদের সম্পর্কে গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে তথ্যও সংগ্রহ করা হচ্ছে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রশাসনের বদলি-নিয়োগে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।এছাড়া এবার এমন কর্মকর্তা ডিসি-ইউএনও হিসেবে নিয়োগ পেতে মাঠ প্রশাসনে অভিজ্ঞ ও সাহসীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে, যারা যুগ্ম সচিব পদোন্নতি পেয়ে এখনও ডিসি হিসেবে রয়েছেন, তাদের দ্রুত প্রত্যাহার করা হবে। ইতোমধ্যে ৯ জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। জেলাগুলো হলো- পটুয়াখালী, কুষ্টিয়া, কুড়িগ্রাম, মেহেরপুর, নেত্রকোনা ও খুলনা।এর মধ্যে তিনজন কর্মকর্তাকে নতুন ডিসি ও তিনজন ডিসিকে বদলি করা হয়েছে। গত ২৫ আগস্ট এসব জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ দিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এ ছাড়া চট্টগ্রাম, নরসিংদী ও নওগাঁয় নতুন জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ দিয়েছে সরকার। গত ২১ সেপ্টেম্বর এ তিন জেলায় ডিসি নিয়োগ দিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ ফিরোজ মিয়া ভোরের আকাশকে বলেন, জনস্বার্থে যোগ্য, নিরপেক্ষ, অভিজ্ঞ, দক্ষ, কৌশলী ও সাহসী কর্মকর্তাদের মাঠ প্রশাসনসহ সর্বস্তরে নিয়োগ দেওয়া জরুরি। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে দক্ষ ও সৎ কর্মকর্তাদের সর্বস্তরে নিয়োগের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেওয়া প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন তিনি।এদিকে, জনপ্রশাসন সচিব কে হচ্ছেন-রাজনৈতিক দলগুলোর বিষয়টি বিশেষ আগ্রহ। আর বদলি-পদায়নের ক্ষেত্রে এ পদটির ভূমিকা মুখ্য হওয়ায় তারা এই নিয়োগের দিকে তীক্ষè দৃষ্টি রাখছেন বলেও জানা গেছে। রাজনীতি সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, নির্বাচনের আগে বিভিন্ন নিয়োগ-বদলি অতি গুরুত্বপূর্ণ।বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, জনপ্রশাসন সচিবসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে নিয়োগ দেশের স্বার্থে অতি গুরুত্বপূর্ণ। আর এজন্য নিরপেক্ষ, সৎ, গ্রহণযোগ্য ও জনপ্রশাসন ও মাঠ পর্যায়ে অভিজ্ঞ পেশাদার কর্মকর্তাকে এসব পদে নিয়োগ দিতে হবে।সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্রে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে যাওয়ার আগেই প্রধান উপদেষ্টা সম্ভাব্য এমন একজন কর্মকর্তাকে নিয়ে সরকারের এক নীতিনির্ধারকের সঙ্গে কথা বলে গেছেন-যিনি অভিজ্ঞ ও পেশাদার কর্মকর্তা। এর পরপরই এ সংক্রান্ত সার-সংক্ষেপ প্রস্তুত করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।উল্লেখ্য, চুক্তিতে নিয়োগ পাওয়া প্রশাসনের ৮২ ব্যাচের কর্মকর্তা ড. মো. মোখলেস উর রহমানকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব পদ থেকে ব্যাপক অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগে গত ২১ সেপ্টেম্বর পরিকল্পনা কমিশনে সদস্য হিসেবে বদলি করা হয়। এরপর থেকে প্রশাসনের অতি গুরুত্বপূর্ণ এ পদটি শূন্য রয়েছে। এ মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসনের নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতিসহ গুরুত্বপূর্ণ সব প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।আগামী নির্বাচনে ডিসি-ইউএনওসহ মাঠ প্রশাসনে কারা দায়িত্ব পালন করবেন, সেটিও এখন সর্বক্ষেত্রে আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অপসারণের পর গত দু’সপ্তাহে এ মন্ত্রণালয়ে সচিব পদে কাউকে নিয়োগ দিতে পারেনি সরকার। মূলত প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ছিলেন জাতিসংঘে। কেউ কেউ বলছেন, বাংলাদেশের প্রশাসনিক ইতিহাসে সচিব নিয়োগ নিয়ে এমন টানাপোড়েন এর আগে খুব কমই দেখা গেছে। এসব কারণে এখনও কয়েকটি শূন্য সচিব পদে নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হয়নি।সূত্র জানায়, একটি বিশেষ রাজনৈতিক দল তাদের পছন্দের একজন সচিবকে গুরুত্বপূর্ণ একটি মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসনে বদলি করার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে এ উদ্যোগে পুরোপুরি উল্টো অবস্থানে আছে দেশের বৃহত্তম একটি রাজনৈতিক দল।জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ভোরের আকাশ’কে জানান, জনপ্রশাসন সচিব পদে নিয়োগের জন্য ৫-৬ জন কর্মকর্তার নাম আলোচনায় রয়েছে। যাদের মধ্যে বর্তমানে চুক্তিতে নিয়োজিত ২-৩ জন সিনিয়র সচিবও আছেন। এ ছাড়া বাকিরা নিয়মিত ব্যাচের।বিভিন্ন কারণে জনপ্রশাসন সচিব নিয়োগের বিষয়টি জটিল অবস্থায় রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখনও এ পদে নিয়োগের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি, তবে চলতি সপ্তাহেই বিষয়টি চূড়ান্ত হতে পারে বলে জানান তিনি।বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়মিত ব্যাচ থেকে নিরপেক্ষ, যোগ্য ও সৎ কাউকে নিয়োগ দেওয়া হলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে। পেশাদার আমলা ছাড়া দলীয়ভাবে চিহ্নিত কাউকে নিয়োগ দেওয়া অনুচিত। অপরদিকে বর্তমানে চুক্তিতে নিয়োজিত সচিবদের মধ্যে যারা নিজ মন্ত্রণালয়ে উল্লেখযোগ্য সফলতা দেখাতে পারেননি তাদেরকেও জনপ্রশাসনসহ কোনো মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ গ্রহণযোগ্য হবে না বলে মনে করেন তারা।অন্যদিকে, নির্বাচনকে সামনে রেখে যদি বিশেষ একটি রাজনৈতিক দলের ইচ্ছায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ অন্যসব সচিবের শুন্য পদে নিয়োগ দেওয়া হয়, সে ক্ষেত্রে বিএনপি কঠোর অবস্থানে যাবে- বলেছে বিএনপি।গত শনিবার ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এ্যাব) নবগঠিত কমিটির সদস্যদের নিয়ে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা শেষে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করে বলেছেন, প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে একটি ধর্মভিত্তিক দলের অনুগতদের বসানো হচ্ছে। দল অনুগত প্রশাসন দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে না। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের জন্য জনগণ প্রস্তুত, তারা পূর্বের মতো ডামি নির্বাচন চান না।নতুন ইস্যু তৈরি করে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের ১৪ মাসে প্রশাসন দখলের জন্য তারা যেটা করছে দেশের মানুষ তা ভালোভাবে নেয়নি।সূত্র জানায়, অন্তর্বর্তী সরকারের গত ১৪ মাসে সচিব ও জেলা প্রশাসক নিয়োগে একটি ‘সিন্ডিকেট সংস্কৃতি‘ তৈরি হয়েছে-এমন অভিযোগ রয়েছে। তারা এতটাই প্রভাবশালী যে, তাদের ইচ্ছার বাইরে কেউ কিছু করতে পারে না। ফলে সচিব ও ডিসি নিয়োগ এখন প্রশাসনে একটি জটিল পর্যায়ে রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইনি কাঠামো ও ভেটোর প্রশ্নে সরকারি কর্মচারী (চাকরি শর্তাবলি) আইন ২০১৮ অনুযায়ী, সচিব পদে নিয়োগের চূড়ান্ত ক্ষমতা প্রধান উপদেষ্টা বা প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধির হাতে। উপদেষ্টা কমিটি কেবল পরামর্শমূলক।এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সচিব ভোরের আকাশকে বলেন, তত্ত্বাবধায়ক বা অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে প্রশাসন নিরপেক্ষভাবে চলবে, এটাই স্বাভাবিক কিন্তু এবারের উপদেষ্টা কমিটির কয়েকজনের কার্যক্রমে কিছুটা ধোয়াশার সৃষ্টি হয়েছে।সূত্রে জানা গেছে, গত রোববার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির সভাপতি ও অর্থ উপদেষ্টাকে নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় বসেন। রাজনৈতিক দলসমূহের মতামত এবং সার্বিক বিবেচনায় প্রধান উপদেষ্টা বর্তমান চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্য হতে অপেক্ষাকৃত যোগ্যকে জনপ্রশাসন সচিব হিসেবে নিয়োগের নির্দেশনা দেন। এর পর পরই দ্রুত এ-সংক্রান্ত একটি সারসংক্ষেপ পাঠানো হয় প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে।এদিকে জনপ্রশাসন সচিব হিসেবে সারসংক্ষেপে দুটি নাম চূড়ান্ত করা হয়। কিন্তু তার আগেই জনপ্রশাসনবিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির কয়েকজন সদস্য আপত্তি তোলেন। তারা জানান, কমিটির সিদ্ধান্ত ছাড়া কোনো সচিব নিয়োগ হবে না।সূত্র জানায়, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া দুজনকে জনপ্রশাসন সচিব হিসেবে নামের প্রস্তাব আসায় জনপ্রশাসনবিষয়ক উপদেষ্টা কমিটি ভেটো দেয়। তাদের যুক্তি হচ্ছে, আর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়াদের নতুনভাবে নিয়োগ না দিয়ে চাকরিতে রয়েছেন এমন-কর্মকর্তাদের সচিব নিয়োগ দিতে হবে। চাকরিরত সচিবদের মধ্য থেকে আলোচনায় রয়েছেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব মো নজরুল ইসলাম (১১তম ব্যাচ) ও স্থানীয় সরকার সচিব রেজাউল মাকসুদ জাহিদ (১৩তম ব্যাচ)। বিশেষজ্ঞদের মতে, জনপ্রশাসনের সর্বস্তরে গতিশীলতা বৃদ্ধি, দুর্বৃত্তায়নমুক্ত ও জনকল্যাণমুখী প্রশাসন গড়তে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সচিব পর্যায়ে কর্মরতদের দায়বদ্ধতা-জবাবদিহি-স্বচ্ছতার ক্ষেত্রে স্থিতাবস্থা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সরকারের সদিচ্ছা জরুরি। এজন্য সরকারকে ফিস্টলিস্ট থেকে জেলা প্রশাসক নিয়োগ দিতে হবে। সচিব এবং জেলা প্রশাসক-এ দুটো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদ। কিন্তু প্রশাসন রাজনৈতিক নির্ভরতার দিকে বেশি ঝুঁকে পড়লে তখনই সমস্যা প্রকট হয়। আর এ ধরনের সমস্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশের মানুষ, যা কাম্য নয়। এদিকে জনপ্রশাসন সচিব পদ শূন্য থাকায় অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিব পদোন্নতি প্রক্রিয়া থমকে গেছে। নতুন সচিব যোগ না দেওয়া পর্যন্ত পরবর্তী এসএসবির বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। যে কারণে পদোন্নতিপ্রত্যাশীদের অপেক্ষার সময় দীর্ঘায়িত হচ্ছে। চলতি সপ্তাহে নতুন জনপ্রশাসন সচিব নিয়োগ হতে পারে। এবার সচিব নিয়োগে খুব সতর্কতা অনুসরণ করছে সরকার। সম্ভাব্য সচিবদের সম্পর্কে গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রশাসনের বদলি-নিয়োগে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এবার এমন কর্মকর্তা ডিসি হিসেবে নিয়োগ পেতে পারেন, যারা মাঠ প্রশাসনে অভিজ্ঞ ও সাহসী হিসেবে পরিচিত। তাদের জীবনবৃত্তান্ত সম্পর্কে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ইতোমধ্যেই খোঁজখবর নিয়েছে।অন্যদিকে, যারা যুগ্ম সচিব পদোন্নতি পেয়ে এখনও ডিসি হিসেবে রয়েছেন, তাদের দ্রুত প্রত্যাহার করা হবে। ইতোমধ্যে ৯ জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে তিনজন কর্মকর্তাকে নতুন ডিসি ও তিনজন ডিসিকে বদলি করা হয়েছে।গত ২৫ আগস্ট এসব জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ দিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এ ছাড়া চট্টগ্রাম, নরসিংদী ও নওগাঁয় নতুন ডিসি নিয়োগ দিয়েছে সরকার। গত ২১ সেপ্টেম্বর এ তিন জেলায় ডিসি নিয়োগ দিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।এদিকে, এবার নতুন করে ২৮তম বিসিএসের প্রশাসন ক্যাডারের কিছুসংখ্যক কর্মকর্তাকে ডিসি পদে নিয়োগের চিন্তাভাবনা চলছে। ইতিমধ্যে এই ব্যাচের বেশ কিছুসংখ্যক কর্মকর্তার সাক্ষাৎকারও নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ২৪, ২৫ ও ২৭তম বিসিএসের কর্মকর্তারা ডিসি পদে দায়িত্বে আছেন।জানা গেছে, ২৪তম বিসিএসের কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করে সেখানে নতুন ডিসি নিয়োগের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে।ভোরের আকাশ/এসএইচ